আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৩৬: বদরে যুদ্ধের দিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপ ধ্বংস করার বর্ণনা কী সহিহ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৩৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম মুফতি সাহেব,বদরের যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর যে কুপগুলা ছিল সেই কূপগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধ্বংস করেন। এটা কি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা অমানবিকতা নয়? আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? একজনে প্রশ্নটি করেছেন।

তারিখ: ২৫/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  ফজলুল করিম ফেনী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, বদরে যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কূপ গুলো সিলগালা বা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই বর্ণনাটি সহিহ নয় এবং অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা তা টিকে না। হাদিসটি নিম্নরূপ:

أخرجه ابن سعد في "الطبقات الكبرى" (3/567) فقال :" أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ قَالَ: حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي حَبِيبَةَ ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ الْحُصَيْنِ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم نَزَلَ مَنْزِلًا يَوْمَ بَدْرٍ ، فَقَالَ الْحُبَابُ بْنُ الْمُنْذِرِ: لَيْسَ هَذَا بِمَنْزِلٍ ، انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أَدْنَى مَاءٍ إِلَى الْقَوْمِ ، ثُمَّ نَبْنِي عَلَيْهِ حَوْضًا ، وَنَقْذِفُ فِيهِ الْآنِيَةَ ، فَنَشْرَبُ وَنُقَاتِلُ ، وَنُغَوِّرُ مَا سِوَاهَا مِنَ الْقُلُبِ ، قَالَ: فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم فَقَالَ: الرَّأْيُ مَا أَشَارَ بِهِ الْحُبَابُ بْنُ الْمُنْذِرِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم: يَا حُبَابُ ، أَشَرْتَ بِالرَّأْيِ فَنَهَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم فَفَعَلَ ذَلِكَ " .

অর্থাৎ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের একটি প্রান্তে সৈন্যশিবির স্থাপন করেন। তখন হুবাব বিন মুনযির (রাযি.) বললেন, " সেনাছাউনি ফেলার এটা যথাযথ স্থান নয়। বরং পানিপ্রবাহের যে অংশটি শত্রুপক্ষের সবচাইতে নিকটবর্তী স্থান, ঠিক সেখানেই আমরা যুদ্ধঘাঁটি স্থাপন করব। আর সেখানেই আমরা কুয়া খনন করবো। এবং বালতি দিয়ে পানি উত্তোলন করবো। যার ফলে আমাদের পানির কোন সংকট দেখা দিবেনা। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে এককভাবে পানির সুবিধা গ্রহণ করে নির্বিঘ্নে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবো। এছাড়া অন্যসকল কুয়াগুলো অকেজো করে দেবো। সেখানকার সমগ্র জলরাশি ভুগর্ভে বিলীন করে সেগুলোকে পরিত্যক্ত কুয়ায় পরিণত করে দেবো।" তার ঠিক পরেই জিবরাইল (আ.) এর আগমন ঘটলো। তিনি এসে বললেন, "হুবাব বিন মুনযির যে পরামর্শ দিয়েছে, সেটাই হলো আল্লাহর সিদ্ধান্ত।" তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "হে হুবাব, আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত মোতাবেকই তুমি পরামর্শ প্রদান করেছো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গিয়ে সেই নির্দেশনা মোতাবেকই কার্যক্রম গ্রহণ করলেন।" সূত্র: তবকাতুল কুবরা-৩/৫৬৭


 হাদিসটির সনদের মান নিম্নরূপ:

روَت العامّةُ في كُتبِهم خبرَ إشارةِ الحبّابِ بنِ المُنذرِ على النبيّ بمنعِ المُشركينَ مِن ماءِ آبارِ بدرٍ فأخذَ برأيه. ولم تروهِ كُتبُنا فقد رواه: ابنُ إسحاقَ في المغازي كما في سيرةِ ابنِ هشام (2/ 272) بإسنادٍ مُنقطِعٍ، وأخرجَه البيهقيُّ في الدلائل (3/ 31 - 35).


والحديثُ مِن روايةِ ابنِ هشامٍ ضعيفٌ جدّاً، لأنّهُ مُعضِلٌ مُنقطِعٌ.

অর্থাৎ, বদর প্রান্তরের কুয়াগুলো থেকে কাফেরদের উপর মুসলমানদের পানি অবরোধ আরোপ করার যে পরামর্শ 

হাব্বাব বিন মুনজির (রাযি.) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছিলেন, এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, 

 ঐতিহাসিকগণ এ ঘটনাটি ব্যাপকহারে ফলাওভাবে নিজনিজ গ্রন্থগুলোতে সন্নিবেশিত করেছেন। তবে আমাদের নির্ভরযোগ্য কোন গ্রন্থে এই ঘটনাটি স্থান পায়নি। সিরাতে ইবনে হিসাম (২/২৭২) থেকে জানা যায় যে, ইবনে ইসহাক স্বীয় মাগাজি গ্রন্থে এই ঘটনাটির বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করেছেন। এছাড়া ইমাম বায়হাকী (রাহি.) স্বীয় দালায়েলুন নবুওয়াহ গ্রন্থে ( ৩/৩১-৩৫) এ প্রসঙ্গের অবতারণা ঘটিয়েছেন। 

 ইবনে হিশামের রিওয়াতে বর্ণিত হাদীসের মান খুবই দূর্বল। কারণ তা একাধারে দুইয়ের অধিক বর্ণনাকারী হতে সূত্র বিচ্ছিন্নতা সাব্যস্ত হয়েছে।


ব্যাখ্যা:

ومتنُ الروايةِ مردودٌ لأسباب:

অর্থাৎ, বর্ণনাটির মতন বা মূলভাষ্যই একাধিক কারণে পরিত্যাজ্য। এবং নিম্নোক্ত যুক্তিগুলোর নিরিখে এই ঘটনার সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ও বাস্তবতা বিবর্জিত-


أوّلُها: متى كانَ النبيُّ صلّى اللهُ عليهِ وآله مُحتاجاً إلى مَن يُرشِدُه منَ الناسِ فإنَّ اللهَ تعالى دائمُ الرعايةِ لنبيّهِ صلّى اللهُ عليهِ وآله، والتسديدِ له بألطافِه وبجبريلَ وبالملائكةِ المُقرّبينَ، فغيرُ مُحتاجٍ لأحدٍ كي يُصحّحَ خطأه فإِن كَانَ فِي اَلأُمَّةِ مَن يُنَبِّهُ النبيَّ كَانَ هَذَا اَلمُنَبِّهُ إمَّا مَعصُوماً أَو مِمَّن يَجُوزُ عَلَيهِ اَلخَطَأُ فَإِن كَانَ اَلثَّانِيَ اِفتَقَرَ النبيُّ لِغَيرِهِ ولَزِمَ اَلتَّسَلسُلُ.


وَمَن لَا يَهدِي إِلَّا أَن يُهدَى خَلِيقٌ أَلَّا يُتبَعَ لِمَا دَلَّ إِنكَارُ اَللَّهِ تَعَالَى ذَلِكَ وَوَبَّخَ عَلَيهِ بِقَولِهِ تَعَالَى: (أَفَمَن يَهدِي إِلَى الحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لاَّ يَهِدِّيَ إِلاَّ أَن يُهدَى فَمَا لَكُم كَيفَ تَحكُمُونَ) [يُونُس: 35].  

প্রথমত. এমন কোন সময় ছিলো? যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্রষ্টাকে ছেড়ে সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী হতে হয়েছিলো? কিংবা কোন মানুষের দিকনির্দেশনায় তাঁকে পথ চলতে হয়েছিলো? অথচ তিনি ছিলেন সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে! আল্লাহ তায়ালা কখনো কখনো কোন প্রকার মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি নিজেই তাকে সঠিক পথের দিশা প্রদান করতেন, কখনো কখনো জিবরাঈল ( আ.) কিংবা অন্য কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের কাজে লাগাতেন। বস্তুত, উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে প্রকৃতঅর্থেই যদি এমন কোন ব্যক্তি থেকে থাকেন, যিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম, তাহলে তাকে অবশ্যই ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নিষ্পাপ,মাসূম হতে হবে। তা না হলে দিকনির্দেশনা গ্রহণের জন্য তাকে ছেড়ে

 মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দ্বিতীয় অন্য কোন ব্যক্তির শরণাপন্ন হতে হবে। যা অপরিহার্যভাবে ( ইলমে ফালসাফার পরিভাষায়) "তাসালসুল" ( ফলাফলবিহীন অনিঃশেষ ঘূর্ণিপাক) কে অবধারিত করে তোলে।   


ثانيها: النبيُّ كريمٌ لا يمنعُ الماءَ حتّى لأعدائِه لأنّهُ خلافُ المروءةِ والخُلقِ المُحمّديّ الأصيل الذي قالَ اللهُ تعالى فيه:《وإنّكَ لعُلى خُلقٍ عظيم》[القلم:4] .

كيفَ والعفو سجيّتُه وهوَ الذي قالَ يومَ الفتحِ اذهبوا فأنتُم الطّلقاء..

দ্বিতীয়ত. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতিক, মহানুভবতার আধার। সুতরাং কোন শত্রুকেও তিনি পানি পানকরা থেকে থেকে বঞ্চিত করবেন, এটা কল্পনাতীত। কারণ এটি রাসূলের উচ্চতর কল্যাণমুখী মানসিকতা ও উৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। এবং তাঁর সহজাত মানবীয় বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক মাধুর্যতার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। একারণেই তাঁর ব্যাপারে আল কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা হল, " আপনি অবশ্যই সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত"। ( সূরা কলাম-৪) 

সুতরাং তিনি কিভাবে এহেন মানবতা বিবর্জিত কর্ম সাধন করতে পারেন, অথচ সার্বজনীন ক্ষমাই ছিল যার সহজাত বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত! তিনিই তো সেই মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি মক্কা বিজয়ের দিন শত্রুপক্ষের উদ্দেশ্যে এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন, "যাও, তোমাদের সকলকেই সাধারণ ক্ষমা প্রদান করা হলো!" 


ثالثها: لا يخفى على كلِّ ذي فطنةٍ أنَّ القومَ يضعونَ مثلَ تلكَ الأكاذيبِ على النبيّ تبريراً لأفعالِ أئمّتِهم فمعاويةُ منعَ الماءَ عن جيشِ أميرِ المؤمنينَ عليهِ السلام في صفّينَ بينَما الأميرُ عليهِ السلام عندَما كشفَ الماءَ لم يمنَع جيشَ الشامِ عَنه.

وكذا ولدُه الحسينُ الشهيد عليهِ السلام قد ارتوى مِن مائِه جيشُ يزيد بنِ معاوية بينَما هُم منعوهُ وعيالَهُ عنه.

তৃতীয়ত. একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে যে, মূলত একদল স্বার্থান্বেষী মহল নিজনিজ ইমামদের গৃহিত সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়ার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তারা এই জাতীয় মিথ্যাচারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিকৃতভাবে ভিন্নধারায় উপস্থাপন করে। 

কারণ সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়া (রাযি.) চতুর্থ খলিফা আলী (রাযি.) এর সৈন্যদলকে পানিপান থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। অপরদিকে পানিপান সুবিধা হস্তগত হওয়ার পরে আলী (রাযি.) শামবাসীকে পানিপান থেকে বিরত রাখেননি। 

অনুরূপভাবে তাঁর সন্তান শহীদ হোসাইন (রাযি.) এর নিজস্ব পানিপানের স্থান থেকে ইয়াজিদ ইবনে মুওয়াবিয়ার সৈন্যদল পানি পান করেছিল। অথচ তারাই কিন্তু হোসাইন ( রাযি.) ও তাঁর পরিবারবর্গকে পানিপান করা থেকে বিরত রেখেছিল।


দ্বিতীয় কথা হলো, ইসলাম মানবতার ধর্ম। উপরোক্ত বর্ণনার বিপরীত সহিহ হাদিস রয়েছে। যেমন জনস্বার্থে কূপ খনন করার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দলিল- 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَعَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّورِيُّ، وَغَيْرُ وَاحِدٍ المَعْنَى وَاحِدٌ، قَالُوا: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَامِرٍ، قَالَ: عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا سَعِيدُ بْنُ عَامِرٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي الحَجَّاجِ المَنْقَرِيِّ، عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الجُرَيْرِيِّ، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ حَزْنٍ القُشَيْرِيِّ، قَالَ: شَهِدْتُ الدَّارَ حِينَ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ عُثْمَانُ، فَقَالَ: ائْتُونِي بِصَاحِبَيْكُمُ اللَّذَيْنِ أَلَّبَاكُمْ عَلَيَّ. قَالَ: فَجِيءَ بِهِمَا فَكَأَنَّهُمَا جَمَلَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا حِمَارَانِ، قَالَ: فَأَشْرَفَ عَلَيْهِمْ عُثْمَانُ، فَقَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ وَالإِسْلَامِ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ المَدِينَةَ وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ يُسْتَعْذَبُ غَيْرَ بِئْرِ رُومَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَشْتَرِي بِئْرَ رُومَةَ فَيَجْعَلَ دَلْوَهُ مَعَ دِلَاءِ المُسْلِمِينَ بِخَيْرٍ لَهُ مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ»؟ فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي فَأَنْتُمُ اليَوْمَ تَمْنَعُونِي أَنْ أَشْرَبَ مِنْهَا حَتَّى أَشْرَبَ مِنْ مَاءِ الْبَحْرِ. قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. فَقَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ وَالْإِسْلَامِ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ المَسْجِدَ ضَاقَ بِأَهْلِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَشْتَرِي بُقْعَةَ آلِ فُلَانٍ فَيَزِيدَهَا فِي المَسْجِدِ بِخَيْرٍ لَهُ مِنْهَا فِي الجَنَّةِ»؟ فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي فَأَنْتُمُ اليَوْمَ تَمْنَعُونِي أَنْ أُصَلِّيَ فِيهَا رَكْعَتَيْنِ؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ، نَعَمْ. قَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ وَبِالْإِسْلَامِ، هَلْ تَعْلَمُونَ أَنِّي جَهَّزْتُ جَيْشَ العُسْرَةِ مِنْ مَالِي؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. ثُمَّ قَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ وَالإِسْلَامِ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى ثَبِيرِ مَكَّةَ وَمَعَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَأَنَا فَتَحَرَّكَ الجَبَلُ حَتَّى تَسَاقَطَتْ حِجَارَتُهُ بِالحَضِيضِ قَالَ: فَرَكَضَهُ بِرِجْلِهِ وَقَالَ: «اسْكُنْ ثَبِيرُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ؟» قَالُوا: اللَّهُمَّ، نَعَمْ. قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ شَهِدُوا لِي وَرَبِّ الكَعْبَةِ أَنِّي شَهِيدٌ، ثَلَاثًا: «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ عُثْمَانَ»

৩৭০৩। আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান, আব্বাস ইবন মুহাম্মাদ দাওরী প্রমুখ (রাহঃ)... ছুমামা ইন হাযন কুশায়র (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ উছমান (রাযিঃ) যখন (অবরুদ্ধ ) বাড়িটি থেকে মাথা বের করে তাদের (অবরোধকারী বিদ্রোহীদের) দিকে তাকালেন, তখন আমি হাযির ছিলাম। তিনি বলেছিলেনঃ তোমাদের সেই দুই সঙ্গীকে নিয়ে এস যারা আমার বিরুদ্ধে তোমাদের জমায়েত করেছে।


ছুমামা (রাযিঃ) বলেন তাদের দু'জনকে নিয়ে আসা হল যেন দুটো উট কিংবা দুটো গর্দভ। উছমান (রাযিঃ) তাদের দিকে তাকালেন। বললেনঃ তোমাদের আমি আল্লাহ্ ও ইসলামের দোহাই দিয়ে বলছি, তোমরা কি জান রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনায় আগমন করলেন সেখানে তখন রূমা কূপ ছাড়া মিষ্টি পানির ব্যবস্থা আর কোথাও ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ কে আছে যে রমা কূপটি ক্রয় করে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু জান্নাতের বিনিময়ে এতে তার ও মুসলিমদের সমান অধিকার নিরূপণ করে (তা ওয়াক্ফ করে) দিবে? আমি তখন আমার নিজ মাল থেকে তা ক্রয় করে দেই, আর আজ তোমরা আমাকে এর পানি পান করতে বাধ্য দিচ্ছ। এমনকি সমুদ্রের পানি (-এর মত লোনা পানি) আমাকে পান করতে হচ্ছে। লোকেরা বলল : হ্যাঁ, তা ঠিক। জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭০৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭০৩)


তৃতীয় কথা হল, হাদিসটি যদি আমরা সহিহও ধরে নেয়, তাহলে এর জবাব হলো যুদ্ধ হল ধোকা এবং শত্রু বাহিনীকে ভীতি সঞ্চার করার নাম। হয়তো রাসূলুল্লাহ সবাই সাল্লাম সাময়িকভাবে সিলগালা বা কূপ থেকে পানি শত্রু বাহিনীকে বন্ধ করে রেখেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু বাহিনীর রসদ গোলাবারুদ ধ্বংস করা যুদ্ধে সর্বজনীন রীতি। দলিল-


Surah Al-Hashr, Verse 2:

هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنتُمْ أَن يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُم مَّانِعَتُهُمْ حُصُونُهُم مِّنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُم بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ


তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। সূরা হাশর-০২



وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «الْحَرْب خدعة»

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুদ্ধ হলো ছল-কৌশল। তাখরিজ: সহীহ : বুখারী ৩০৩০, মুসলিম ১৮৩৯, আবূ দাঊদ ২৬৩৬, তিরমিযী ১৬৭৫, আহমাদ ১৪৩০৮


ব্যাখ্যা:

الحَرْبُ خَدْعَة أي أن خداع الكفار والمَكر بهم في الحرب جائز، لأجل إصابتهم وإلحاق الضرر بهم، مع انعدام الخسائر بين المسلمين، ولا يُعَدُّ هذا مذموما ًفي الشرع، بل هو من الأمور المطلوبة. قال ابن المنيّر رحمه الله : "الحرب الجيدة لصاحبها الكاملة في مقصودها إنما هي المخادعة لا المواجهة، وذلك لخَطِر المواجهة وحصول الظَفَر مع المخادعة بغير خطر".

অর্থাৎ: যুদ্ধ হলো একপ্রকার কৌশলী আচরণের নাম। অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে অনিবার্য ক্ষতিকে এড়িয়ে কুফরি শক্তিকে নাস্তানাবুদ করার উদ্দেশ্যে ছলচাতুর্যের সাহায্যে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ছলে-বলে-কৌশলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা বৈধ। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে এটি কার্যকরী অপরিহার্য সুদূরপ্রসারী যুদ্ধ কৌশলও বটে। আল্লামা ইবনে মুনায়্যির ( রাহি.) বলেন, "একজন সফল যোদ্ধার পারঙ্গমতা তখনই ফুটে ওঠে, যখন সে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে দূরদর্শী কৌশল এর প্রয়োগ ঘটিয়ে বিজয়ের বরমাল্য পরিধান করে। তার কারণ হলো, সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণনাশ, অঙ্গহানীসহ নানারকম ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিরেকে বিজয় অর্জন করা যায়।" সূত্র: ফাতহুল বারী -৬/১৮৩ , ইবনে হাজার আসকালানি রহ.


সারকথা হলো,  বদরে যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাঃ কাফেরদের কূপ গুলো ধ্বংস বা সেখান থেকে পানি নিতে বাধা দেওয়ার বর্ণনাটি সহিহ নয়। আর যদি সহিহ ধরেও নেওয়া হয়, তাহলে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে তিনি এটা করেছিলেন।



  والله اعلم بالصواب