জিজ্ঞাসা-১৩০৩১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করার বিধান কি?
তারিখ:২০/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শাহ আলম (অব.) ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, একাকি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা জরুরি এ বিষয়ে কোন ইমামদের মধ্যে দ্বিমত নেই।
কিন্তু ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে কি না। এ বিষয়ে আহলে ইলমের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন শায়েখ ইবনে বাজ রহ. বলেন,
هذه المسألة فيها خلاف بين أهل العلم على أقوال ثلاثة:
من أهل العلم من قال: إن الإمام يتحمل الفاتحة، ولا يلزم المأموم القراءة مطلقًا، لا في السرية، ولا في الجهرية.
وقول ثان: أن على المأموم أن يقرأ مطلقًا في السرية والجهرية.
قول ثالث: أنه يقرأ في السرية، دون الجهرية
অর্থ: এই বিষয়ে তিনটি মতের ভিত্তিতে আহলে ইলমের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে:
প্রথম মত: শুধু ইমামের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক এবং মুক্তাদির জন্য এটি আদৌ পাঠ করা বাধ্য নয়, নীরবে বা উচ্চস্বরেও নয়।
দ্বিতীয় মতামত: মুক্তাদির জন্য অবশ্যই এটি নিম্নস্বরে এবং উচ্চস্বরে নামাজে পাঠ করা আবশ্যক।
তৃতীয় একটি উক্তি: এটি উচ্চস্বরে নামাজে নয়, নীরবে নামাজে পাঠ করতে হবে।
প্রশ্ন: ক। উচ্চস্বরে কিরাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করার হুকুম?
উত্তর: ক।
حُكمُ قراءةِ الفاتحةِ للمأمومِ في الصَّلاةِ الجَهريَّةِ
لا تجبُ قراءةُ الفاتحةِ على المأمومِ في الصَّلاةِ الجَهريَّةِ، وهذا مذهبُ الحنفيَّةِ، والمالكيَّةِ، والحنابلةِ، والقديمُ عند الشافعيَّةِ، وهو قولُ أكثرِ السَّلفِ، وبه قال ابنُ تيميَّةَ
الأدلَّة:
ইমামের পিছনে উচ্চস্বরে কেরাতের সময় সুরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব নয় আর এটা মাজহাবে হানাফি, মালেকি, হাম্বলি, শাফিয়ির পুরাতন মত, অধিকাংশ সালাফের এবং শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ় এর মত। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে কাবির-২/২৮৬; মাজমুউল ফাতাওয়া-২২/২৯৪-২৯৫
জমহুরের দলিল-
আয়াত নং-০১
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ [٧:٢٠٤
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। {সূরা আরাফ-২০৪}
তাফসির:
০১.
এ আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য তাফসীরে তাবারী (৯খ. ১০৩পৃ.) ও তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২খ. ২৮পৃ.) এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে-
وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ” يعني في الصلاة المفروضة
অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় অর্থাৎ ফরজ নামাযে।
০২.
হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই। তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে:
صلى ابن مسعود، فسمع أناسا يقرءون مع الامام، فلما انصرف، قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا كما أمركم الله
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)
০৩.
যায়দ ইবনে আসলাম ও আবুল আলিয়া র. বলেছেন:
كانوا يقرأون خلف الإمام فنزلت : { وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون }
অর্থাৎ তাঁরা (সাহাবীগণ) ইমামের পেছনে কেরাত পড়তেন, তখন অবতীর্ণ হয়
وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون
অর্থ :যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ সহকারে শোনো এবং চুপ থাকো।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল র. বলেছেন:
أجمع الناس على أن هذه الآية في الصلاة
অর্থাৎ এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, উক্ত আয়াত নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (মাসাইলে আহমদ লি আবী দাউদ, পৃ. ৪৮)
হাদিস নং-০১
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا قرأ الإمام فأنصتوا، فإذا كان عند القعدة فليكن أوّل ذكر أحدكم التشهد. أخرجه مسلم (৪০৪) في باب التشهد في الصلاة، وأحمد في المسند ৪/৪১৫ (১৯৯৬১)، وأبو داود (৯৭৩) وابن ماجه (৮৪৭) واللفظ له. كلهم من طريق سليمان التيمي عن قتاده عن يونس بن جبير (أبي غَلَّاب) عن حَطّان بن عبد الله الرقَّاشي عنه. وليس سليمان متفردا فيه بل تابعه عمر بن عامر وسعيد بن أبي عروبة عند الدارقطني والبيهقي، وأبو عبيدة مجّاعة بن الزبير العتابي الأزدي أحد الثقات عند أبي عوانة. وقال مسلم – لما سأله أبو بكر ابن أخت أبي النضر عن تفرد سليمان-: تريد أحفظ من سليمان؟
অর্থ: হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেছেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম কুরআন পড়বে, তোমরা তখন চুপ করে থাকবে। আর বৈঠকের সময় তাশাহহুদ-ই প্রথম পড়তে হবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪০৪;
হাদিস নং-০২
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ»
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০
ইমাম আহমাদ র. কত জোর দিয়ে বলেছেন,
ما سمعنا أحدا من أهل الإسلام يقول إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ وقال هذا النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه والتابعون وهذا مالك في أهل الحجاز وهذا الثوري في اهل العراق وهذا الأوزاعي في أهل الشام وهذا الليث في أهل مصر ما قالوا لرجل صلى وقرأ إمامه ولم يقرأ هو صلاته باطلة . المغني لابن قدامة (١/٣٣٠
অর্থাৎ ইমাম যখন উচ্চস্বরে কেরাত পড়ে, তখন তার পেছনে মুকতাদী যদি কেরাত না পড়ে তবে মুকতাদীর নামায হবে না: এমন কথা আহলে ইসলামের কাউকে আমরা বলতে শুনিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবীগণ, ও তাবেয়ীগণ, মদীনাবাসীদের মধ্যে ইমাম মালেক, ইরাকবাসীদের মধ্যে সুফিয়ান ছাওরী, শামবাসীদের মধ্যে ইমাম আওযায়ী, ও মিসরবাসীদের মধ্যে লায়ছ ইবনে সা’দ, এঁদের কেউই একথা বলেননি – ইমাম যখন কুরআন পড়বে, তখন পেছনে মুকতাদী যদি না পড়ে তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে কুদামা কৃত আল-মুগনী, ১খ, ৩৩০পৃ)
ইমাম ইবনে তায়মিয়া র. বলেছেন,
فَإِنَّ لِلْعُلَمَاءِ فِيهِ ثَلَاثَةَ أَقْوَالٍ . قِيلَ : لَيْسَ لَهُ أَنْ يَقْرَأَ حَالَ جَهْرِ الْإِمَامِ إذَا كَانَ يَسْمَعُ لَا بِالْفَاتِحَةِ وَلَا غَيْرِهَا وَهَذَا قَوْلُ الْجُمْهُورِ مِنْ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ وَهَذَا مَذْهَبُ مَالِكٍ وَأَحْمَد وَأَبِي حَنِيفَةَ وَغَيْرِهِمْ وَأَحَدُ قَوْلَيْ الشَّافِعِيِّ . وَقِيلَ : بَلْ يَجُوزُ الْأَمْرَانِ وَالْقِرَاءَةُ أَفْضَلُ . وَيُرْوَى هَذَا عَنْ الأوزاعي وَأَهْلِ الشَّامِ وَاللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ وَهُوَ اخْتِيَارُ طَائِفَةٍ مِنْ أَصْحَابِ أَحْمَد وَغَيْرِهِمْ . وَقِيلَ : بَلْ الْقِرَاءَةُ وَاجِبَةٌ وَهُوَ الْقَوْلُ الْآخَرُ لِلشَّافِعِيِّ . وَقَوْلُ الْجُمْهُورِ هُوَ الصَّحِيحُ فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ قَالَ : { وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ } قَالَ أَحْمَد : أَجْمَعَ النَّاسُ عَلَى أَنَّهَا نَزَلَتْ فِي الصَّلَاةِ
অর্থাৎ এক্ষেত্রে আলেমগণের তিনটি মত রয়েছে। এক, কেউ কেউ বলেছেন, ইমাম যখন জোরে কেরাত পড়বেন আর মুকতাদী তা শুনবে তখন সে কোন কেরাতই পড়তে পারবে না। সূরা ফাতেহাও না, অন্য কোন সূরাও না।
পূর্বসুরী ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ আলেমের মত এটাই। ইমাম মালেক র., ইমাম আহমাদ র. ও ইমাম আবূ হানীফা র. প্রমুখের মাযহাবও তাই। আর ইমাম শাফেয়ী র. এর দুটি মতের একটিও অনুরূপ।
অতঃপর অন্য দুটি মত উল্লেখ করার পর ইবনে তায়মিয়া র. আরও বলেন, অধিকাংশ আলেমের মতটিই সঠিক। কারণ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থাৎ যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবন কর এবং নীরব থাক। তাহলে তোমাদের প্রতিও করুণা করা হবে। আর ইমাম আহমাদ বলেছেন, আয়াতটি সকলের মতে নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। মাজমুউল ফাতাওয়া-২২/২৯৪-২৯৫
প্রশ্ন: খ। ইমাম যখন নিরবে কেরাত পাঠ করবে, তখন মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পাঠ করার হুকুম কি?
উত্তর: খ। এ ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন -
প্রথম মত:
حُكمُ قِراءةِ الفاتحةِ للمأمومِ في الصَّلاةِ السِّرِّيَّةِ
يجبُ على المأمومِ قراءةُ الفاتحةِ في الصَّلاةِ السِّرِّيَّةِ، وهذا مذهبُ الشَّافعيَّةِ ، واختيارُ ابنِ العَربيِّ من المالِكيَّةِ ، وبه قال ابنُ حزمٍ ، والصَّنعانيُّ ، والشَّوكانيُّ ، وابنُ بازٍ ، وابنُ عُثَيمين ، والألبانيُّ ، وأفتت به اللَّجنةُ الدَّائمةُ
নামাযে ইমাম নিরবে কেরাত পাঠ করার সময় পিছনে নামাযরত ব্যক্তির জন্য আল-ফাতিহা পড়া ওয়াজিব/বাধ্যতামূলক। এটিই শাফিদের মতবাদ এবং মালেকী মাযহাবের ইবন আল-আরাবির পছন্দ, এবং এটিই ইবন। হাযম, আল-সানআনী, আল-শাওকানী, ইবনে বায, ইবনে উসাইমিন এবং আল-আলবানী বলেছেন। সূত্র: মুগনিল মুহতাজ-১/১৫৬
দলিল-
হাদিস নং-০১
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ»
উবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না। তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-৭৫৬
দ্বিতীয় মত:
وأما المأموم فلا يقرأ عند الحنفية لا في سرية ولا في جهرية لا في الأوليين ولا الأخريين، بل عليه الإنصات في وقت القراءة ولو لم يسمع قراءة الإمام.
হানাফী মাযহাবের মতানুযায়ী মুক্তাদি তার প্রথম দুরাকাতে বা শেষ দুরাকাতে নীরবে বা উচ্চস্বরে কিরাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না, বরং তাকে অবশ্যই ইমাম তেলাওয়াত করার সময় শুনতে হবে, যদিও ইমামের পড়া শুনতে পায় না। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, সিফাতুস সালাত-৬২২৭২ (ফতোয়া নং)
দলিল-
হাদিস নং-০১
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : كل من كان له إمام فقراءته له قراءة. أخرجه ابن أبي شيبة (٣٨٢٣) قال حدثنا مالك بن إسماعيل عن حسن بن صالح عن أبي الزبير عنه. وإسناده صحيح
হযরত জাবির রা. বলেছেন, : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, তার ইমামের কেরাতই তার কেরাত বলে গণ্য হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৮২৩। এ সনদটি সহীহ।
মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমায়দে ভিন্ন সনদে এটি উদ্ধৃত হয়েছে। বূসিরী র. বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিম এর শর্ত মোতাবেক সহীহ
হাদিস/আসার নং-০২
হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ . أخرجه أبو داود عن مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْحَكَمِ حَدَّثَهُمْ أَخْبَرَنَا نَافِعُ بْنُ يَزِيدَ حَدَّثَنِى يَحْيَى بْنُ أَبِى سُلَيْمَانَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِى الْعَتَّابِ وَابْنِ الْمَقْبُرِىِّ عنه(٨٩٣) وأخرجه نحوه عبد الرزاق عن شيخ من الأنصار . ٢/٢٨١
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা নামাযে শরীক হও তবে তোমরাও সেজদা করবে। সেটাকে কিছু গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায (অর্থাৎ ঐ রাকাত ) পেল। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২/২৮১।
এ হাদীস থেকেও বোঝা গেল, মুকতাদীর ফাতেহা পড়ার প্রয়োজন নেই । ইমামের সঙ্গে রুকু পেলেই তার রাকাত পূর্ণ হবে।
হাদিস/আসার নং -০৩
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে হযরত যায়দ ইবনে ছাবিত রা. ও হযরত ইবনে উমর রা. উভয় থেকে এই ফতোয়া বর্ণিত হয়েছে –
الرجل إذا انتهى إلى القوم وهم ركوع أن يكبر تكبيرة وقد أدرك الركعة وإن وجدهم سجودا سجد معهم ، ولم يعتد بذلك .
অর্থাৎ নামাযে আগত ব্যক্তি যদি দেখে, জামাত রুকু অবস্থায় রয়েছে, তবে তাকবীর দিয়ে নামাযে শরীক হবে। এতে করে সে রাকাতটি পেয়ে যাবে। কিন্তু তাদেরকে সেজদা অবস্থায় পেলে সেজদা করবে বটে, তবে সেটাকে রাকাতরূপে গণ্য করবে না। (দ্র, ২খ, ২৭৮ পৃ)
হাদিস আসার নং -০৪
أَنَّهُ سَأَلَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الإِمَامِ فَقَالَ لاَ قِرَاءَةَ مَعَ الإِمَامِ فِى شَىْءٍ . أخرجه مسلم (٥٧٧) في باب سجود التلاوة. والنسائي في باب ترك السجود في النجم. (٩٦٠)
অর্থ: আতা ইবনে ইয়াসার র. বলেছেন, তিনি ইমামের সঙ্গে কুরআন পড়া সম্পর্কে যায়দ ইবনে ছাবিত রা.কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জবাব দিলেন, কোন নামাযেই ইমামের সঙ্গে কোন কিছু পড়বে না। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৫৭৭, নাসাঈ শরীফ (৯৬০), আবু আওয়ানা (১৯৫১), বায়হাকী (২৯১১)
হাদিস আসার নং -০৫
أن عبد الله بن عمر كان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام. موطا مالك صـ ٢٩
অর্থ: নাফে র. থেকে বর্ণিত: হযরত ইবনে উমর রা.কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, ইমামের পেছনে কুরআন পড়া যাবে কিনা? তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পেছনে নামায পড়ে তখন ইমামের পড়াই তার জন্য যথেষ্ট হয়। আর যখন একাকী পড়ে, তখন যেন নিজেই কেরাত পড়ে। নাফে বলেন, ইবনে উমর রা. ইমামের পেছনে কুরআন পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক, পৃ২৯, (৪৩), আব্দুর রাযযাক (২৮১৪), মুসনাদে ইবনুল জাদ (১১৫০), তাহাবী (১৩১২, ১৩১৭) দারাকুতনী (১৫০৩), বায়হাকী (২৯০১, ২৯০৩)
হাদিস আসার নং-০৬
عن أبي وائل : جاء رجل إلى عبد الله فقال: اقرأ خلف الإمام؟ فقال له عبد الله إن في الصلاة شغلا وسيكفيك ذلك الإمام
আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি ইমামের পেছনে কেরাত পড়বো? তিনি বললেন, নামাযে খুবই মগ্নতা আছে। কেরাত পড়ার জন্য ইমামই তোমার পক্ষে যথেষ্ট। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৭৮০), মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৮০৩), তাহাবী (১৩০৭), তাবারানী কৃত আল আওসাত (৪০৪৯), মুজামে কাবীর (৯৩১১)
সারকথা হলো, ইমাম শাফি, শায়েখ আলবানি মতে নিরবে কেরাতের সময় মুসল্লিরা সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
আর ফিকহি হানিফির মতে কোন অবস্থাতেই মুসল্লি ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করবে না। কেননা যদি কোন ব্যক্তি রুকু পায়; তাহলে আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে সে ওই রাকাত পেল। তাহলে বোঝা গেল মুসল্লিদের জন্য সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক নয়। যেমন,
হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী র. তাঁর ফাতহুল বারী নামক বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,
من أدرك الركوع مع الإمام فقد أدرك الركعة، وإن فاته معه القيام وقراءة الفاتحة . وهذا قول جمهور العلماء ، وقد حكاه إسحاق بن راهويه وغيره إجماعا من العلماء . وذكر الإمام أحمد في رواية أبي طالب أنه لم يخالف في ذلك أحد من أهل الإسلام ، هذا مع كثرة اطلاعه وشدة ورعه في العلم وتحريه . وقد روي هذا عن عليٍ وابن مسعود وابن عمر وزيد بن ثابتٍ وأبي هريرة – في رواية عنه رواها عبد الرحمن بن إسحاق المديني ، عن المقبري ، عنه . وذكر مالك في الموطأ أنه بلغه عن أبي هريرة ، أنه قال : من أدرك الركعة فقد أدرك السجدة . وهو قول عامة علماء الأمصار .
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু করতে পারল সে ঐ রাকাত পেয়ে গেল, যদিও ইমামের সঙ্গে তার কিয়াম (দাঁড়ানো ) ও ফাতেহা পাঠ ছুটে গেল। এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মত ।
ইমাম ইসহাক র. (ইমাম বুখারীর উস্তাদ) প্রমুখ এটাকে আলেমগণের ইজমা বা ঐকমত্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু তালিব এর বর্ণনানুসারে ইমাম আহমদ র. বলেছেন যে, এ ব্যাপারে কোন মুসলমানের দ্বিমত নেই।
(দ্র. ৪খ. ২৩০ পৃ.)
والله اعلم بالصواب