জিজ্ঞাসা-১৩০৪২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
শায়েখের কাছে আমার জানার বিষয় হলো-পত্রিকায় আলোচিত নিউজ গুলো নিয়ে কয়েকজন মিলে আলোচনা করলে কি গিবত হবে?
যেমন -রাজস্বের মতিউর রহমানের দুর্নীতি কাণ্ড।
তারিখ: ০৩/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম কক্সবাজার থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পবিত্র কোরআন-সুন্নায় গিবাত হারাম এর বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, আবার ক্ষেত্রবিশেষে গীবত করা জায়েজের সরাসরি বা ইশারাতুন পাওয়া যায়। বিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা সৈয়দ আলুসি বাগদাদি রহ. সূরা হুজুরাতের ১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
হুজরাত-১২}
وقد تجب الغيبة لغرض صحيح شرعي لا يتوصل إليه إلا بها وتنحصر في ستة أسباب الأول : التظلم فلمن ظلم أن يشكو لمن يظن له قدرة على إزالة ظلمه أو تخفيفه . الثاني : الاستعانة على تغيير المنكر بذكره لمن يظن قدرته على إزالته . الثالث : الاستفتاء فيجوز للمستفتي أن يقول للمفتي : ظلمني فلان بكذا فهل يجوز له أو ما طريق تحصيل حقي أو نحو ذلك؛ والأفضل أن يبهمه .الرابع : تحذير المسلمين من الشر كجرح الشهود والرواة والمصنفين والمتصدين لإفتاء أو إقراء مع عدم أهلية فتجوز إجماعاً بل تحب ، وكأن يشير وإن لم يستشر على مريد تزوج أو مخالطة لغيره في أمر ديني أو دنيوي ويقتصر على ما يكفي فإن كفى نحو لا يصلح لك فذاك وإن احتاج إلى ذكر عيب ذكره أو عيبين فكذلك وهكذا ولا يجوز الزيادة على ما يكفي ، ومن ذلك أن يعلم من ذي ولاية قادحاً فيها كفسق أو تغفل فيجب ذكر ذلك لمن له قدرة على عزله وتولية غيره الخالي من ذلك أو على نصحه وحثه للاستقامة ، والخامس : أن يتجاهر بفسقه كالمكاسين وشربة الخمر ظاهراً فيجوز ذكرهم بما تجاهروا فيه دون غيره إلا أن يكون له سبب آخر مما مر . السادس : للتعريف بنحو لقب كالأعور . والأعمش . فيجوز وإن أمكن تعريفه بغيره (روح المعاني في تفسير القرآن العظيم والسبع المثاني، سورة حجرات- 12)
অর্থাৎ ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে। যথা-
১- জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।
২- খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
৩- বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি
৪- সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। উদাহরণতঃ মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ।
৫- প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।
৬- কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। সূত্র: তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২
তৃতীয় কথা হলো, কারো ব্যক্তিগত দোষ বর্ণনা করা অবশ্যই গিবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে দোষটা যদি জাতীয় পর্যায়ে, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে তার গিবত করা যাবে। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরণ করেছেন, আর রাষ্ট্রের সম্পদের মালিক আমরা সকলে, সেই হিসেবে আমরা মজলুম, তাই তার গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। দলিল-
Surah An-Nisa, Verse 148:
لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। সূরা নিসা-১৪৮
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا عِنْدَهُ فَقَالَ " بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ أَوْ أَخُو الْعَشِيرَةِ " . ثُمَّ أَذِنَ لَهُ فَأَلاَنَ لَهُ الْقَوْلَ فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ مَا قُلْتَ ثُمَّ أَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ . فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ أَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
২০০২। ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসার অনুমতি প্রার্থনা করল। আমি সে সময় তাঁর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, ’‘কবীলার এই লোকটি বড় খারাপ’’। যা হোক এর পর তিনি তাঁকে আসতে অনুমতি দিলেন এবং তার সাথে নম্রতার সাথে কথা-বার্তা বললেন। লোকটি বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই লোকটি সম্পর্কে তো আপনি যা বলার বলেছিলেন অথচ পরে তার সাথে নম্রতার সঙ্গে কথা-বার্তা বললেন। তিনি বললেন, হে আয়িশা! লোকদের মধ্যে সবচে খারাপ হল সেই ব্যক্তি যার অশ্লীল কথা থেকে আত্মরক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা তাকে ত্যাগ করে।
Aisha narrated:
"A man sought permission to enter upon the Messenger of Allah while I was with him, so he said: ’What an evil son of his tribe, or brother of his tribe.’ Then he admitted him and spoke with him. When he left, I said: ’O Messenger of Allah! You said what you said about him. Then you talked politely with him?’ He said: ’O ’Aishah! Indeed among the evilest of people are those whom the people avoid, or who the people leave, fearing his filthy speech.’"
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৯৬ (আন্তর্জাতিক নং ১৯৯৬)
নোট: হাদীসটি হাসান-সহীহ।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত রাজস্বের মতিউর রহমানের দুর্নীতি কাণ্ডের আলোচনা হবে। তবে একান্তর প্রয়োজন না হলে পরিহার করাই উচিত। মুমিনের সিফাত হলো,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত। সূরা মুমিনূন-০৩
শেষ কথা, সর্বপ্রকার গিবত থেকে বাঁচার জন্য হাকিমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভি রহ এর কথা খুবই স্মরণযোগ, স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত,
তিনি বলেছেন, গিবত থেকে বাঁচা সর্বত্র পন্থ হলো একান্তর প্রয়োজন ছাড়া মানুষের ভালো-মন্দ কোন বিষয়ে আলোচনা করার দরকার নেই। একজন ভালো বললে আরেকজন মন্দ বলে আলোচনা শুরু করবে। এভাবে গিবতে জড়িয়ে পড়বে।
والله اعلم بالصواب