সময়ের মূল্য বুঝতেন যারা [পৃ: ৩০-৩১]
~ শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রাহি.)
বুখারী, তিরমিযী ও ইবন মাজায় ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
نعمتان مغبون فيهما كثير من الناس : الصحة والفراغ -
দু'টি নিঅ'মাতের ব্যাপারে বহু মানুষ প্রতারিত হয়,
(সে দু'টি হল) সুস্থতা ও অবসর।
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, হাদীছে غبن শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ হল- ঠকা, প্রতারিত হওয়া। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন জিনিস অধিক বা দ্বিগুণ দামে কিনলে অথবা ন্যায্য মূল্যের কমে বিক্রি করে ঠকলে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। হাদীছে এই শব্দটি উপমারূপে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, যে শারীরিকভাবে সুস্থ এবং বিশেষ কোন কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরকালীন কল্যাণে তেমন কিছু করল না, বা করতে পারল না সেও ঠিক বেচা-কেনায় প্রতারিত ব্যক্তির মতই প্রতারিত হল। (ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে) বেশীরভাগ মানুষই (ব্যাধিমুক্ত ও কর্মশূন্য) সময়ের সদ্ব্যবহার করতে ও তা থেকে উপকৃত হতে পারে না; বরং তা অপাত্রে ব্যয় করে। ফলে তা শুভ না হয়ে অশুভ হয়ে যায়, নিঅ'মাত না হয়ে আপদ হয়ে দাঁড়ায়।
পক্ষান্তরে যারা এই সুযোগ ও নিআ'মাতগুলোকে কাজে লাগাতে এবং সেগুলো নিংড়ে তার নির্যাস আস্বাদন করতে পারে তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর হয়ে যায়।
ইবনুল জাওযী (রাহি.) বলেন, কখনো মানুষ সুস্থ থাকে, কিন্তু অবসর থাকে না; জীবিকা নির্বাহে থাকে ব্যস্ত। আবার কখনো সে অবসর থাকে, কিন্তু সুস্থ থাকে না; অসুস্থতায় হয়ে পড়ে শয্যাশ্রিত। যদি কখনো তার মাঝে উভয়টি একত্র হয়, কিন্তু আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে অলসতা তার উপর প্রবল হয় তাহলে তাকে প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত ছাড়া আর কী-ই-বা বলা হবে!
মোটকথা, দুনিয়া হল আখেরাতের শস্যক্ষেত্র ও ব্যবসাকেন্দ্র। এখানে যা আবাদ করা হবে তার ফসল আখেরাতে পাওয়া যাবে। এখানে যে ব্যবসা করা হবে তার লাভ অবশ্যই পরকালে ভোগ করা যাবে। সুতরাং যে সুস্থতা ও অবসরকে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যবহার করবে সে হবে ঈর্ষার পাত্র। আর যে ব্যক্তি তা ব্যবহার করবে আল্লাহর নাফরমানিতে সেই হল প্রতারিত। কেননা অবসরের পর ব্যস্ততা এবং সুস্থতার পর অসুস্থতা আসে। আর যদি অন্য কোন অসুস্থতা নাও দেখা দেয়, তবুও অবশেষে মৃত্যুসংবাদবাহী বার্ধক্য তো দেখা দেবেই।
সুতরাং সময় থাকতেই সতর্ক হও- বন্ধু!
────⊱◈🌼◈⊰─────