জিজ্ঞাসা-১৩০১৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুফতি সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, কোন ব্যক্তি কোরবানি দেওয়ার নিয়তে একটি গরু ক্রয় করে পরবর্তিতে ঐ পশু ক্রয়ের চেয়ে বেশী দাম ধরে অন্য কাউকে শরীক করতে পারবে কিনা?
তারিখ: ১১/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
وان كان فقيرا معسرا فقد أوجب بالشراء فلا يجوز أن يشرك فيها، وكذا لو أشرك فيها ستة بعد ما أوجبها لنفسه لم يسعه لأنه أوجبها كلها لله تعالى، وإن أشرك جاز ويضمن ستة أسباعها (الفتاوى الهندية-5\304، جديد-5\351
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি অর্থসংকটে নিপতিত হতদরিদ্র হয়ে থাকে, (তাহলে প্রাথমিকভাবে তার উপর কুরবানী আদায় করা আবশ্যক হবেনা।) তবে কুরবানির জন্য পশু ক্রয় করা মাত্রই পশুটিকে কুরবানি করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়বে। তখন সেই এই পশুতে অন্য কাউকে অংশীদার বা শরীকানা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেনা। এটি করা তার জন্য বৈধ নয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি কুরবানীর পশুর সম্পূর্ণ অংশ নিজের জন্য ক্রয় করার পর আরো ৬ জনকে শেয়ারার বা অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে তার জন্য এমনটা করার অবকাশ নেই। তাসত্ত্বেও সে আরো ছয়জনকে তার কুরবানীর পশুর শেয়ারার বা অংশীদার বানালে কুরবানী তো আদায় হয়ে যাবে বিলক্ষণ, তবে তাকে সেই অবশিষ্ট ছয়ভাগের অর্থদন্ড (সাদাকা আদায়ের মাধ্যমে) দেয়া লাগবে। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৩০৪/৫, জাদীদ-৩৫১/৫)
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তি যদি গরিব তথা সাহেবে নিসাব না হয়, তাহলে অন্য কাউকে শরিক করতে পারবে না এবং বেশি দাম নির্ধারণ করা প্রশ্নই আসে না।
আর যদি ধনী বা সাহেবে নিসাব হয়, তাহলে অন্য কাউকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যে দামে ক্রয় করেছে সে মূল্যই নির্ধারণ করা উচিত,
এবং বেশি দাম নির্ধারণ করে অন্যকে শরিক করার ব্যাপারে, শরিকরা যদি রাজি হয়, তাহলে জায়েজ হবে।
উদাহরণ: তিনি বলবে আমি গরুটি ৬০ হাজার টাকায় কিনেছি, ৭০ হাজার দাম ধরে শরিক হতে চাইলে শরিক হতে পারবে, এখন অন্য শরিকরা যদি স্বেচ্ছায় শরিক হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। আর মিথ্যা কথা বলে দাম বেশি নির্ধারণ করলে, তিনি গুনাগার হবে।
তবে বেশি দাম নির্ধারণ না করাই উচিত। দলিল -
وَإِذَا اشْتَرَى أُضْحِيَّةً، ثُمَّ بَاعَهَا فَاشْتَرَى مِثْلَهَا فَلَا بَأْسَ بِذَلِكَ)؛……. وَالْأَصْلُ فِيهِ مَا رُوِيَ أَنَّ «النَّبِيَّ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – دَفَعَ دِينَارًا إلَى حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – لِيَشْتَرِيَ لَهُ شَاةً لِلْأُضْحِيَّةِ فَاشْتَرَى شَاةً، ثُمَّ بَاعَهَا بِدِينَارَيْنِ، ثُمَّ اشْتَرَى شَاةً بِدِينَارٍ وَجَاءَ بِالشَّاةِ وَالدِّينَارِ إلَى رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَأَخْبَرَهُ بِذَلِكَ. فَقَالَ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – بَارَكَ اللَّهُ فِي صَفْقَتِك أَمَّا الشَّاةُ فَضَحِّ بِهَا وَأَمَّا الدِّينَارُ فَتَصَدَّقْ بِهِ» فَقَدْ جَوَّزَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – بَيْعَهُ بَعْدَ مَا اشْتَرَاهَا لِلْأُضْحِيَّةِ، وَإِنْ كَانَتْ الثَّانِيَةُ شَرًّا مِنْ الْأُولَى، وَقَدْ كَانَ أَوْجَبَ الْأُولَى فَتَصَدَّقَ بِالْفَضْلِ فِيمَا بَيْنَ الْقِيمَتَيْنِ (المبسوط للسرخسى-12/13)
অর্থ: অর্থাৎ কোরবানির পশু ক্রয় করার পর কেউ যদি তা পুনরায় বিক্রি করে দেয়। অতঃপর তার অনুরূপ আরেকটি পশু ক্রয় করে। তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই এমন ঘটনার প্রমাণ রয়েছে।
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا شَبِيبُ بْنُ غَرْقَدَةَ، قَالَ سَمِعْتُ الْحَىَّ، يُحَدِّثُونَ عَنْ عُرْوَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَعْطَاهُ دِينَارًا يَشْتَرِي بِهِ شَاةً، فَاشْتَرَى لَهُ بِهِ شَاتَيْنِ، فَبَاعَ إِحْدَاهُمَا بِدِينَارٍ وَجَاءَهُ بِدِينَارٍ وَشَاةٍ، فَدَعَا لَهُ بِالْبَرَكَةِ فِي بَيْعِهِ، وَكَانَ لَوِ اشْتَرَى التُّرَابَ لَرَبِحَ فِيهِ. قَالَ سُفْيَانُ كَانَ الْحَسَنُ بْنُ عُمَارَةَ جَاءَنَا بِهَذَا الْحَدِيثِ عَنْهُ، قَالَ سَمِعَهُ شَبِيبٌ مِنْ عُرْوَةَ، فَأَتَيْتُهُ فَقَالَ شَبِيبٌ إِنِّي لَمْ أَسْمَعْهُ مِنْ عُرْوَةَ، قَالَ سَمِعْتُ الْحَىَّ يُخْبِرُونَهُ عَنْهُ. وَلَكِنْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " الْخَيْرُ مَعْقُودٌ بِنَوَاصِي الْخَيْلِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ". قَالَ وَقَدْ رَأَيْتُ فِي دَارِهِ سَبْعِينَ فَرَسًا. قَالَ سُفْيَانُ يَشْتَرِي لَهُ شَاةً كَأَنَّهَا أُضْحِيَّةٌ.
৩৩৮১। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... উরওয়া বারিকী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম (ﷺ) একটি বকরী ক্রয় করে দেয়ার জন্য তাঁকে একটি দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) দিলেন। তিনি ঐ দীনার দিয়ে দুটি বকরী ক্রয় করলেন। তারপর এক দীনার মূল্যে একটি বকরী বিক্রি করে দিলেন এবং নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে হাযির হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত হওয়ার জন্য দুআ করে দিলেন। এরপর তার অবস্থা এমন হল যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি খরীদ করতেন তাতেও তিনি লাভবান হতেন।
সুফিয়ান (রাহঃ) শাবীব (রাহঃ) (একজন রাবী) বলেন, আমি উরওয়া (রাযিঃ)- কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম (ﷺ)- কে বলতে শুনেছি, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। রাবী বলেন, আমি তাঁর গৃহে সত্তরটি ঘোড়া দেখেছি। সুফিয়ান (রাহঃ) বলেন, নবী কারীম (ﷺ)- এর জন্য যে বকরীটি ক্রয় করা হয়েছিল, তা ছিল কুরবানীর উদ্দেশ্যে।
Narrated `Urwa:
That the Prophet (ﷺ) gave him one Dinar so as to buy a sheep for him. `Urwa bought two sheep for him with the money. Then he sold one of the sheep for one Dinar, and brought one Dinar and a sheep to the Prophet. On that, the Prophet (ﷺ) invoked Allah to bless him in his deals. So `Urwa used to gain (from any deal) even if he bought dust. (In another narration) `Urwa said, "I heard Allah’s Messenger (ﷺ) saying, "There is always goodness in horses till the Day of Resurrection." (The subnarrator added, "I saw 70 horses in `Urwa’s house.’) (Sufyan said, "The Prophet (ﷺ) asked `Urwa to buy a sheep for him as a sacrifice.")
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৮১ (আন্তর্জাতিক নং ৩৬৪২-৩৬৪৩)
হাদিসে বর্ণিত এই ঘটনা থেকে দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জন্তুকে পুনরায় বিক্রি করে দেওয়ার বৈধতা দিয়েছেন। যদিও এরূপ করা অনুত্তম। তবে যেহেতু প্রথম পশুটি অবধারিতভাবেই কোরবানি করার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ক্রয় করা হয়েছিল, তাই( সেই পশু বিক্রির লভ্যাংশের অর্থ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করা যাবে না, বরং ) উভয়ে মূল্যের মধ্যকার লভ্যাংশটি সাদাকাহ করে দিতে হবে। (মাবসুত- ১২/১৩)
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক লোকটি যদি গরিব হয়, ক্রয়ের সময় অন্যকে শরিক করার নিয়ত থাকে, তাহলে শরিক করতে পারবে। নিয়ত না করলে পারবে না।
আর ধনী হলে নিয়ত করুক বা করুক উভয় অবস্থায় অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে নিয়ত না করলে, শরীক না করাই উত্তম।
আর বেশি মূল্য নির্ধারণ করে পরিষ্কারভাবে বলে অন্যরা জেনে শুনে অংশগ্রহণ করলে কুরবানির কোন অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب