জিজ্ঞাসা-১৩০৩৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম। জনাব!আমার জানার বিষয় হচ্ছে,পাঁচটি বিশেষ জায়গায় কথা বললে আল্লাহ তায়ালা তার সে বান্দার চল্লিশ বছরের ইবাদাত নষ্ট করে দিবেন,,,,,উল্লেখিত হাদিসটি কি সহিহ?হাদিসটির এবারত কিতাবের নামসহ দিলে উপকৃত হতাম।
তারিখ: ৩০/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ ছাব্বির হোসাইন, সিলেট থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
قال النبي صلى الله عليه وآله: "من تكلّم بكلام الدنيا في خمسة مواضع أبطل الله تعالى عمله خمسة وعشرين سنة: الأوّل في المسجد، والثاني عند قراءة القران، والثالث عند الأذان، والرابع عند خلف الجنايز، والخامس في المقابر
انظر الأسرار المرفوعة: 338، تذكرة الموضوعات: 36، كشف الخفاء 2: 433.
الصفحة 16
নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তা'য়ালা তার পঁচিশ বছরের (নফল) ইবাদত নষ্ট করে দিবেন, এক মসজিদ, দুই. কুরানুল কারীম তিলাওয়াতের কালে, তিন, আযানের সময়, চার, জানাযায় পিছনে , পাঁচ, কবরে যিয়ারতকালে।” সূত্র: কাশফুল খুফা-২/৪৩৩; তাজকিরাতুল মাওজুআ-৩৬
নোট: সনদের মান:
لم نعثر على هكذا روايه بهذا اللفظ صحيحة السند في مصادرنا المعتبرة ، وانما وردت في كتب المخالفين بعضها سندها معتبر وبعضها سندها فيه اشكال كما نقل ابن الجوزي ذلك في كتابه الموضوعات
ولكن المعنى الوارد في الروايه لا اشكال فيه قد وردت روايات فيه و انه عد الكلام في هذه المواقف من المكروهات …
অর্থাৎ আলোচ্য হাদিসটি হুবহু শব্দে আমাদের নির্ভরযোগ্য কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থে আমরা খুঁজে পাইনি। তবে বিরোধীপক্ষের কোন কোন কিতাবে এই হাদিসটির বর্ণনা পাওয়া যায়। যার কিছু সনদ গ্রহণযোগ্য। আবার কিছু সনদের ব্যাপারে শাস্ত্রীয়ভাবে আপত্তি রয়েছে। যেমনটি আল্লামা ইবনুল জাওযি ( রাহি.) স্বীয় "আল-মাওযুআত" কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তবে অর্থগত বিবেচনায় হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে কোন প্রকার আপত্তি থাকতে পারেনা। কারণ এই প্রসঙ্গে হাদীসের একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। সেসকল রিওয়ায়াতে এসকল স্থানে অপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতায় মত্ত হওয়াকে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় কর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
হাদিস নং-০২
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻦ ﺗﻜﻠﻢ ﺑﻜﻼﻡ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻲ ﺧﻤﺴﺔ ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﺣﺒﻂ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﻨﻪ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺍﺭﺑﻌﻴﻦ ﺳﻨﺔ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺗﻼﻭﺓ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻭ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻓﻲ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ .
“নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তা'য়ালা তার চল্লিশ বছরের (নফল) ইবাদত নষ্ট করে দিবেন, এক মসজিদ, দুই. কুরানুল কারীম তিলাওয়াতের কালে, তিন, আযানের সময়, চার, জ্ঞানী আলিমদের মজলিসে, পাঁচ, কবরে যিয়ারতকালে।”
[আল্লামা মােল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়া, পৃ-৭২৪]
নোট: হাদিসটির সনদ সম্পর্কে জানা যায়নি, তবে নুরুল আনওয়ার এর লেখক আল্লামা শায়খ আহমদ মােল্লা জিওন (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে আহমদিয়াতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন- মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা অবৈধ। তারপর এ হাদিস শরীফ ব্যক্ত করেন।
সারকথা হলো, উপরোক্ত হাদিসগুলোর সনদের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। সহিহ/শক্তিশালী সনদ নেই, তবে হাদিসটির প্রথম অংশ সম্পর্কে সহিহ হাদিস ও আসার রয়েছে। যেমন -
ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻣﺮﺳﻼ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻳﺎﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺯﻣﺎﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺣﺪﻳﺜﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺩﻧﻴﺎﻫﻢ . ﻓﻼ ﺗﺠﺎﻟﺴﻮﻫﻢ ﻓﻠﻴﺲ ﺇﻟﻲ ﻓﻴﻬﻢ ﺣﺎﺟﺔ » . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ
হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান
"ওহে লােকেরা, শুন! এমন এক যমানারও আগমন ঘটবে যখন মানুষেরা মসজিদে তাদের দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে। যখন এ ধরনের যামানা এসে যাবে, তখন তােমরা তাদের সাথে বসিও না। মহান আল্লাহ এহেন লােকদের থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।"
১ বায়হাকি,শুয়াবুল ঈমান:8/৩৮৭পৃ.হাদিস:২৭০১২
২ খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুল মাসাজিদ : ১/১৫৬ পূ, হাদিস : ৭৪৩
৩ মােল্লা আলী কারী: মিরকাত : কিতাবুল মাসাজিদ : ২/১৪০ পূ, হাদিস: ৭৪৩
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﺳﻴﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺃﺧﺪ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻗﻮﻡ ﻳﻜﻮﻥ ﺣﺪﻳﺜﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻟﻴﺲ ﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﻢ ﺣﺎﺟﺔ »
"রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,শেষ যমানায় কিছু মানুষ এরূপ হবে যে, তাদের কথাবার্তা তাদের মসজিদ গুলাের মধ্যে হবে।এদের মধ্যে আল্লাহর কোন আবশ্যকতা নেই। ইবনে হিব্বান তার আস্- সহিহ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
১ মুফতি আমিমুল ইহসান ঃ ফিকহুস সুনানি কাবির ওয়াল আছার; ১/২৮৩ পূহাদিসঃ৭৯৩,
২ ইমাম হায়সামী, মাওয়ারি-যামান ঃ ২/৮-৯পৃ.
৩ তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১০/১৯৮পৃ. হাদিস : ১০৪৫২,
والله اعلم بالصواب