আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০২৫: পোস্টমর্টেমের শরয়ি বিধান কী?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০২৫: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ আমার এই মাসআলার উওর দিলে উপকৃত হব। পোস্টমর্টেমের শরয়ি বিধান কি। কোরআন হাদিসের আলোকে জানতে চাই?

তারিখ: ১৪/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মোঃ মাহবুব আলম সিলেট থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মুসলিম মাইয়েত জীবিত ব্যক্তির ন্যায় সম্মানিত। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় তাকে কবর থেকে বের করা এবং পোস্টমর্টেম করা হারাম। এ বিষয়ে আইম্মায়ে আরবা একমত। যেমন -

لا يجوزُ كَسرُ عِظامِ المَيِّت، وهذا باتِّفاقِ المذاهِبِ الفقهيَّةِ الأربعةِ: الحَنفيَّة، والمالِكيَّة، والشَّافعيَّة، والحَنابِلَةالجليل)) لعليش (1/505). ويُنظر: ((المدخل)) لابن الحاج (3/242).

((الفروع)) لابن مفلح (1/148). ويُنظر: ((المغني)) لابن قدامة (2/343).

অর্থ: মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা (কাটাছেঁড়া, পোস্টমর্টেম) জায়েয নয় এবং এটি চারটি মাযহাবের সাথে সম্মত: হানাফী, মালিকি, শাফেয়ী এবং হাম্বলী। সূত্র: আলমুগনি-২/৩৪৩; ইবনে কুদামা রহ .


দলিল- 

হাদিস নং-০১

وعن عائشة رضي الله عنها: أن رسول الله ﷺ قال: كسر عظم الميت ككسره حيًّا.

رواه أبو داود بإسنادٍ على شرط مسلم.

অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সমান। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩২০৭


অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল বারী ৯/১১৩)


হাদিস নং-০২

وقد أخرج ابن أبي شيبة عن ابن مسعود قال " أذى المؤمن في موته كأذاه في حياته "

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘মৃত মুমিনকে কষ্ট দেওয়া তাকে জীবিত অবস্থায় কষ্ট দেওয়ার ন্যায়’ । আওনুল মা‘বূদ হা/৩১৯১, ৯/২৪ পৃঃ ; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা 


 দ্বিতীয় কথা হলো, অপরাধী চিহ্নিতকরণের উদ্দেশ্যে বাধ্যগত অবস্থায় ও আদালতের নির্দেশে লাশের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন সাপেক্ষে কবরস্থ লাশ উত্তোলন করা বা ময়না তদন্ত করা যাবে। দলিল- 

1351 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، أَخْبَرَنَا بِشْرُ بْنُ المُفَضَّلِ، حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ المُعَلِّمُ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا حَضَرَ أُحُدٌ دَعَانِي أَبِي مِنَ اللَّيْلِ، فَقَالَ: مَا أُرَانِي إِلَّا مَقْتُولًا فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ، غَيْرَ نَفْسِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِنَّ عَلَيَّ دَيْنًا فَاقْضِ، وَاسْتَوْصِ بِأَخَوَاتِكَ خَيْرًا، «فَأَصْبَحْنَا، فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ وَدُفِنَ مَعَهُ آخَرُ فِي قَبْرٍ، ثُمَّ لَمْ تَطِبْ نَفْسِي أَنْ أَتْرُكَهُ مَعَ الآخَرِ، فَاسْتَخْرَجْتُهُ بَعْدَ سِتَّةِ أَشْهُرٍ، فَإِذَا هُوَ كَيَوْمِ وَضَعْتُهُ هُنَيَّةً غَيْرَ أُذُنِهِ»

১২৬৯। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হল, তখন রাতের বেলা আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, আমার এমনই মনে হয় যে, নবী (ﷺ) এর সাহাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথমে শহীদ হবেন, আমি তাঁদের মধ্যে একজন হব। আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত তোমার চাইতে অধিকতর প্রিয় কাউকে রেখে যাচ্ছি না। আমার যিম্মায় করয রয়েছে। তুমি তা পরিশোধ করবে। তোমার বোনদের ব্যাপারে সদুপদেশ গ্রহণ করবে। (জাবির (রাযিঃ) বলেন) পরদিন সকাল হলে (আমরা দেখলাম যে) তিনিই প্রথম শহীদ। তাঁর কবরে আর একজন সাহাবীকে তাঁর সাথে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে অন্য একজনের সাথে (একই) কবরে তাঁকে রাখা আমার মনে ভাল লাগল না। তাই ছয় মাস পর আমি তাঁকে (কবর থেকে) বের করলাম এবং দেখলাম যে, তাঁর কানে সামান্য চিহ্ন ব্যতীত তিনি সেই দিনের মতই (অক্ষত ও অবিকৃত) রয়েছেন, যেদিন তাঁকে (কবরে) রেখেছিলাম।

Narrated Jabir:

When the time of the Battle of Uhud approached, my father called me at night and said, "I think that I will be the first amongst the companions of the Prophet (ﷺ) to be martyred. I do not leave anyone after me dearer to me than you, except Allah’s Messenger (ﷺ)’s soul and I owe some debt and you should repay it and treat your sisters favorably (nicely and politely)." So in the morning he was the first to be martyred and was buried along with another (martyr). I did not like to leave him with the other (martyr) so I took him out of the grave after six months of his burial and he was in the same condition as he was on the day of burial, except a slight change near his ear.

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৯ (আন্তর্জাতিক নং ১৩৫১)


সারকথা হলো,  সাধারণত মাইয়েতকে কবরস্থ করার পর কবর থেকে উঠানো এবং তাকে কাটাছেড়া করা জায়েজ নেই, তবে একান্তর আদালতের আদেশে অপরাধীকে শনাক্ত, ময়না তদন্তের  জন্য  পোস্টমর্টেম ওলামায়ে কেরাম জায়েজ বলেছেন।


  والله اعلم بالصواب