জিজ্ঞাসা-১৩০৩৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
কোন মহিলার স্বামী মাজুর জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি শুন্য এই স্বামী তার স্ত্রীর জন্য একদম অযোগ্য স্বামী। এতই বিবেক শূন্য যে, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার মতো বিবেক বুদ্ধি ও তার নেই, এই অবস্থায় স্ত্রী কি অন্য কারো সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। কোরআন হাদিসের আলোকে জানাবেন।
তারিখ:২৩/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসেন মৌলভীবাজার থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সাধারণত শরীয়তে তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীকে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর জন্যে স্বামীকে তালাক দেয়ার কোন অনুমতি নাই। দলিল-
عن ابن المسيب رض قال: الطلاق بالرجال والعدة بالنساء (مصنف عبد الرزاق-7/236، رقم-12951)
অর্থ: ইবনে মুসায়্যিব রা বর্ণিত, তিনি বলেন, তালাক হলো পুরুষের জন্য তালাক এবং মহিলাদের জন্য ইদ্দত। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১২৯৫১
দ্বিতীয় কথা হলো, বিশেষ কারণে দুটি পদ্ধতিতে নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে।
১.তালাকে খুলা
২. তালাকে তাফবীজ। অর্থাৎ স্বামী যদি স্ত্রীকে অধিকার দিয়ে থাকে স্ত্রী স্বামীর দেয়া ইখতিয়ার বা ক্ষমতা অনুয়ায়ী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। শরীয়তের পরিভাষায় একে তালাকে তাফবীজ বলা হয়। দলিল-
يَصِحُّ للزَّوجِ أن يُفَوِّضَ امرأتَه في الطَّلاقِ، وذلك باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ الأربَعةِ: الحَنَفيَّةِ، والمالِكيَّةِ، والشَّافِعيَّةِ، والحَنابِلةِ، وحُكي فيه الإجماعُ
الأدِلَّةُ:
أوَّلًا: مِنَ الكِتابِ
قال تعالى: يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا * وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآَخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا [الأحزاب: 28، 29]
ثانيًا: مِنَ السُّنَّةِ
عن عائشةَ رَضِيَ الله عنها قالت: ((خَيَّرَنا رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم، فاختَرْنا اللهَ ورَسولَه، فلم يَعُدَّ ذلك علينا شَيئًا
অর্থ: স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করা জায়েজ আছে। আরে এ বিষয়ে চার ইমাম একমত পোষণ করেছেন। আর এ বিষয়ে ইজমা বর্ণিত হয়েছে। দলিল-
Surah Al-Ahzab, Verse 28:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ إِن كُنتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا
হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় নেই। সূরা আহযাব-২৮
5262 - حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «خَيَّرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاخْتَرْنَا اللَّهَ وَرَسُولَهُ، فَلَمْ يَعُدَّ ذَلِكَ عَلَيْنَا شَيْئًا»
৪৮৮৫। ‘উমর ইবনে হাফস (রাহঃ) ......... ‘আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের ইখতিয়ার দিলে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকেই গ্রহণ করলাম। আর এতে আমাদের প্রতি তালাক সাব্যস্ত হয়নি।
Narrated `Aisha:
Allah’s Messenger (ﷺ) gave us the option (to remain with him or to be divorced) and we selected Allah and His Apostle . So, giving us that option was not regarded as divorce.
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৮৫ (আন্তর্জাতিক নং ৫২৬২)
তৃতীয় কথা হলো, বিবাহের কাবিন নামায়-১৮ নং কলামে যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।
আর যদি না থাকে, তাহলে স্ত্রী মুসলিম বিচারকের/আদালতে নিকট অথবা মুফতী বোর্ডের নিকট মামলা দায়ের করবে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অথবা মুফতী বোর্ড উপযুত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিবে।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত নারীটির বিবাহ কাবিন নামায়-১৮ নং কলামে যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ করা থাকে, তাহলে তিনি তালাক দিতে পারবে, তারপর ইদ্দত শেষ হলে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে।
আর যদি ১৮ নং কলামে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ না থাকে, তাহলে আদালত বা মুফতি বোর্ডের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবে।
والله اعلم بالصواب