আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১৬৬: সুদি কারবার লোকের সাথে কুরবানি হবে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৬৬: কেউ যদি ব্যাংক থেকে লোন নেয় বা অন্য কোন ভাবে সুদের সাথে জড়িত থাকে কিন্তু বেতনের টাকা থেকেই কুরবানী করে তাহলে তার সাথে কি ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে? তারিখ -১৩/০৬/২০২২ ইংরেজি 


মাওলানা মো:মিজানুর রহমান, খোলাহাটি, দিনাজপুর থেকে--- 


জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার বর্ণিত ছুরতে অর্থাৎ সে যেহেতু কুরবানিটা বেতনের টাকা দিয়ে দিবে, এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে কুরবানি জায়েজ আছে। সূত্র: কুরবানির বিধান, আহসানুল ফাতওয়া, খণ্ড: ৫; মুসনাদে আহমাদ, ৫/২২৫, হা/২১৯৫৭

عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا،

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র (মালই) কবুল করে থাকেন। তাখরিজ: মুসলিম ২৩৯৩, তিরমিযী ২৯৮৯, দারেমী ২৭১৭


আল্লাহ্‌ বলেন: احل الله البيع و حرم الربا আমি ব্যবসায়কে হালাল করেছি এবং সুদকে করেছি হারাম।’ (সূরা বাক্বারাহ: ২৭৫)


তবে ভাল লোক পাওয়া অবস্থায় ঐ ব্যক্তির সঙ্গে কুরবানি দেওয়া তাকওয়ার খেলাফ।  



والله اعلم بالصواب

আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

আমল ও দুআ-১৯৫: ফিতনা যামানা থেকে পানাহ চাওয়া

No Comments

 



দু‘আ-১৪৮

اَللّٰهُمَّ لَا يُدْرِكُنِيْ زَمَانٌ وَّلَا يُدْرِكُوْا زَمَانًا لَّا يُتَّبَعُ فِيْهِ الْعَلِيْمُ، وَلَا يُسْتَحْيٰى فِيْهِ مِنَ الْحَلِيْمِ، قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الْأَعَاجِمِ، وَأَلْسِنَتُهُمْ أَلْسِنَةُ الْعَرَبِ.

ইয়া আল্লাহ! ঐ যুগ যেন আমাকে না পায় এবং এরাও যেন ঐ যুগ পর্যন্ত না পৌঁছায়, যে যুগে না ইলমওয়ালার অনুসরণ করা হবে, না ভদ্র ও সহনশীলের লেহায করা হবে। তাদের অন্তর হবে আজমীদের আর ভাষা আরবীদের।১৪৩

-কানযুল উম্মাল; মুসনাদে আহমদ -২২৮৭৯



১৪৩. আল্লাহর রাসূল নিজের জন্য ও নিজের সাহাবীদের জন্য ঐ যমানা থেকে পানাহ চেয়েছেন, যা হবে দুনিয়ার সব দিকে ফিতনা-ফাসাদের যমানা। যখন না থাকবে ইলমের সম্মান, না ভদ্রতার মর্যাদা। না মারিফাত ও আল্লাহ-পরিচয়ের মূল্য, না সুন্দর চরিত্র ও আত্মিক শুদ্ধতার। অন্তরসমূহে জন্ম নিবে আজমী কপটতা ও কঠোরতা আর মুখের ভাষায় বিরাজ করবে আরবি বিনয় ও ভদ্রতা।

আমল ও দুআ-১৯৪: ইয়া আল্লাহ! আমাকে ইলম দ্বারা সাহায্য করুন এবং স্থিরতা ও সহনশীলতা দ্বারা সজ্জিত করুন

No Comments

 



দু‘আ-১৪৭

اَللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ بِالْعِلْمِ وَزَيِّنِّيْ بِالْحِلْمِ، وَأَكْرِمْنِيْ بِالتَّقْوٰى وَجَمِّلْنِيْ بِالْعَافِيَةِ.

ইয়া আল্লাহ! আমাকে ইলম দ্বারা সাহায্য করুন এবং স্থিরতা ও সহনশীলতা দ্বারা সজ্জিত করুন। আর তাকওয়ার দ্বারা মর্যাদা দান করুন এবং সুস্থতা ও নিরাপত্তার দ্বারা শোভন করুন।১৪২


-কানযুল উম্মাল, ফায়জুল কাদির -২/১৪৪



সনদসহ মতন:

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ مِنْ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "اللَّهُمَّ أَعِنِّي -وفي رواية-:"أَغْنِنِي" بِالْعِلْمِ، وَزَيِّنِّي بِالْحِلْمِ، وَكَرِّمْنِي بِالتَّقْوَى، وَجَمِّلْنِي بِالْعَافِيَةِ". وفي رواية عن علي رضي الله عنه: "وَحَلِّنِي بِالْعَافِيَةِ". رواه الرافعي في (التدوين في أخبار قزوين).

2 - روايات الحديث:

1 - رواية عبد الله بن عمر رضي الله عنهما:

التدوين في أخبار قزوين للرافعي (2/ 324):



১৪২. অর্থাৎ আপনার সাহায্য এই যে, আমাকে ইলম ও মারিফাত দিন আর স্থিরতা ও সহনশীলতার অলংকার দ্বারা আমাকে সভ্য-সুন্দর করুন। আর আমার মাঝে যদি ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়, তাহলে তা যেন হয় তাকওয়ার দ্বারা আর আমার মাঝে জামাল-সৌন্দর্য যদি পয়দা হয়, তা যেন হয় সুস্থতা ও নিরাপত্তার দ্বারা।

গবেষণামূলক প্রবন্ধ- ০৩: যে ১০ কারণে সব দেশে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন সম্ভব নয়

No Comments

 




যে ১০ কারণে সব দেশে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন সম্ভব নয়

হাসান আল মাহমুদ ||


রোজা ও ঈদ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই ইবাদাত। সমগ্র বিশ্বের মুসলমান এই দুই ইবাদত গুরুত্ব সহকারেই পালন করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই দুই ইবাদত সমগ্র বিশ্বে একই সাথে পালিত হয় না।কোথাও একদিন আগে পালন হয়, কোথাও পালন হয় এক দিন পরে। তবে, কেউ কেউ প্রশ্ন ছুঁড়ে- কেন এই অমিল, সমগ্র বিশ্বের সব দেশের মুসলমান কেন এক সাথে এই দুই ইবাদাত পালন করতে পারে না?


বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশ্বের পরিমন্ডলে একই সময়ে কোথাও দিন হয় আবার কোথাও হয় রাত। কোথাও বিকেল হলে অন্য জায়গায় ঠিক একই সময়ে দেখা যাচ্ছে সন্ধা। কোথাও শীত হলে অন্যখানে দেখা যায় গরম। তাই, যেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সারা বিশ্বের মানুষ একই সাথে পালন করতে পারে না, বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে, তদ্রুপ রোজা ও ঈদও নিজ নিজ অঞ্চলে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পালন করে থাকে মুসলমানরা।


 


বিশেষজ্ঞদের মতে- সারা বিশ্বের সব দেশে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন কেন সম্ভব নয় এ ব্যাপারে অন্যতম ১০ টি কারণ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-


এক. যুক্তি অনির্ভর


তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে একই দিনে ঈদ পালনের যুক্তি দাঁড় করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ১০০ বছর আগেও যখন উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ছিল না, তাহলে কি এক হাজার ৩০০ বছর ধরে যেদিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ, সেদিন তথা ঈদের দিনেও রোজা রাখা হতো? শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবে এমনটা হতো? মহান আল্লাহ কি কিয়ামতের দিন মুসলিম উম্মাহর এক হাজার ৩০০ বছরের আমল ভুল ও বাতিল বলে ঘোষণা করবেন?


দুই. পাঁচ ওয়াক্ত নামায সব দেশে এক সাথে পড়া যায় না


সর্বক্ষেত্রে সৌদি আরব বা আন্তর্জাতিক অভিন্ন সময় মানা হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বেলায় কী হবে? অঞ্চলগত ব্যবধানে দেখা যায়, আমরা যখন ফজরের নামাজ আদায় করি, সৌদির মানুষ তখন ঘুমিয়ে। আমাদের দেশে যখন এশার ওয়াক্ত, তখন ওই দেশে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয় না। মাসের ক্ষেত্রে এক-দুই দিনের পার্থক্য খুবই স্বভাবিক নয় কি?


তিন. বিজ্ঞান অসমর্থিত


ইসলামে মাসের সময় নির্ধারক হলো চাঁদ, দিনের সময় নির্ধারক সূর্য। ঈদ, রোজা ইত্যাদির সময়কাল নির্ধারিত হয় চন্দ্রোদয়ের হিসাবে। রোজা/ঈদ পালনের Natural cycle (প্রাকৃতিক চক্র) অস্বীকার করা অবৈজ্ঞানিক। কোনো স্থানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দিনের শুরু হয়, তেমনি অমাবস্যার পর চন্দ্রোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাস গণনা শুরু হয়ে যায়।


চার. আলেমেদের ইজমা


উদয়স্থলের বিভিন্নতা বেশির ভাগ আলেমের কাছেই গ্রহণীয়। ইমাম ইবনু আব্দিল বার এ বিষয়ে ‘ইজমা’ (মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত ঐকমত্য) উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে ‘দূরবর্তী শহর থেকে একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না। যেমন—স্পেন ও খোরাসানের মধ্যকার দূরত্ব বা ভৌগোলিক ব্যবধান।


পাঁচ. নববী যুগের আমল


রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদ দেখার জন্য অথবা চাঁদের সংবাদ বা সাক্ষ্য সংগ্রহ করার জন্য এক/দুই দিন দূরত্ব নয়; পাঁচ-দশ মাইল দূরত্বের কোনো এলাকায়ও কোনো লোক পাঠিয়েছেন? হাদীস, সীরাত ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলীতে এর একটিও কি দৃষ্টান্তও কেউ দেখাতে পারবে না।


এখানে একটি বিষয় বুঝতে হবে যে, এক হল সাক্ষ্য এসে গেলে সাক্ষ্য কবুল করা, আরেক হল সাক্ষ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। একই হিলাল এবং প্রথম হিলালের ভিত্তিতে রোযা ও ঈদ করা যদি কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য অঞ্চল থেকে নতুন চাঁদের সংবাদ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করাও তো ফরয হবে। কিন্তু নবী-যুগে এর উপর আমল হল না কেন? এসে যাওয়া সাক্ষ্য গ্রহণেই কেন ক্ষ্যান্ত থাকা হল?


ছয়. সাহাবায়ে কেরামের আমল


হাদীসের বিখ্যাত কিতাব তিরমিযী শরীফে ইমাম তিরমিযী রাহ. স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় এনেছেন, যার শিরোনাম দিয়েছেন- باب ما جاء لكل أهل بلد رؤيتهم


অর্থাৎ প্রত্যেক অঞ্চলের লোকেরা তাদের চাঁদ দেখা অনুযায়ী রোযা-ঈদ পালন করবে। এই অধ্যায়ে তিনি সহীহ সনদে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি এই-


عن كريب أن أم الفضل بنت الحارث، بعثته إلى معاوية بالشام قال: فقدمت الشام، فقضيت حاجتها، واستهل علي هلال رمضان وأنا بالشام، فرأينا الهلال ليلة الجمعة، ثم قدمت المدينة في آخر الشهر، فسألني ابن عباس، ثم ذكر الهلال، فقال: متى رأيتم الهلال، فقلت رأيناه ليلة الجمعة، فقال: أأنت رأيته ليلة الجمعة؟ فقلت: رآه الناس، وصاموا، وصام معاوية، قال: فقلت: ألا تكتفي برؤية معاوية وصيامه، قال: لا، هكذا أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم


অর্থাৎ বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কুরাইব রাহ. কে উম্মুল ফযল বিনতুল হারিছ রাযি. কোন একটি কাজে দামেস্ক, যা তখন ইসলামী খেলাফতের রাজধানী ছিল, সেখানে পাঠান। তখন আমীরুল মুমিনীন ছিলেন হযরত মুআবিয়া রাযি.। তো দামেস্কে শুক্রবার চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমীরুল মুমিনীনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একদিন আগে রমযান শুরু হয়। তো কিছুদিন পর হযরত কুরাইব কাজ শেষে মদীনায় ফিরে আসলে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.কে দামেস্কে শুক্রবার চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার সংবাদ প্রদান করেন। ইবনে আব্বাস রাযি. সেদিকে মোটেই দৃষ্টিপাত করেননি। বরং তিনি বলেছেন-


لكن رأيناه ليلة السبت، فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين يوما، أو نراه،


আমরা তো শনিবার সন্ধ্যায় হিলাল দেখেছি। এইজন্য আমরা ত্রিশ রোযা পূর্ণ করব। তবে নিজেরা যদি হিলাল দেখি সেটা ভিন্ন কথা। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল-


ألا تكتفي برؤية معاوية وصيامه، قال: لا، هكذا أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم


মুআবিয়া রাযিআল্লাহু আনহুর হিলাল দেখা এবং রোযা রাখা কি আপনি যথেষ্ট মনে করেন না?


তিনি বললেন, না, আমাদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই আদেশ করেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৩)


ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলছেন-


والعمل على هذا الحديث عند أهل العلم أن لكل أهل بلد رؤيتهم.


অর্থাৎ প্রত্যেক অঞ্চলের লোকেরা স্ব স্ব চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা/ঈদ পালন করবে, এর উপরই সকল উলামায়ে কেরাম আমল করে আসছেন। এই হাদীসটি তিরমিযী শরীফ ছাড়াও মুসলিম শরীফেও এসেছে। হাদীস নং- ১০৮৭


সাহাবায়ে কেরামের এই আমল থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য রোজা ও ঈদের দলিল নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে দেশে চাঁদ দেখা না যায়। তাই নিজ দেশে চাঁদ না দেখে সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা রাখা বা ঈদ করার ধর্মীয় এখতিয়ার কারো নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন তোমরা সবাই রোজা রাখবে সেদিনই রোজা, যেদিন তোমরা সবাই রোজা ভঙ্গ করো সেদিনই হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং যেদিন তোমরা সবাই কোরবানি করো সেদিনই হচ্ছে কোরবানি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯৭)


সাত. নববী যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মুসলমানদের কর্মধারা


ইসলামের বয়স প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর হতে চলেছে। ইসলাম প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত বিশ্ব শাসন করেছে। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোন অঞ্চলের মুসলমানরা সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা বা ঈদ পালনের জন্য কোন চিন্তা করেছেন বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর কোন ইতিহাস নেই। প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলমানরা স্ব স্ব অঞ্চলের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা/ঈদ পালন করেছেন। এটাকে তারা কোন সমস্যা মনে করেননি। যদি সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা বা ঈদ পালন জরুরী বা কমপক্ষে উত্তম কোন আমল হতো তাহলে ৬৯/৭০ বছর আগ পর্যন্তও কেন এ ব্যাপারে কোন আওয়াজ উঠলো না? এর দ্বারাই বিষয়টির বাস্তবতা বুঝে আসে।


আট. সারা বিশ্বে একই নিয়মে ঋতুচক্র আবর্তিত হয় না


সাগরপারে জোয়ার-ভাটা স্থানীয় সময় অনুসারে হয়, যার সম্পর্ক চাঁদের সঙ্গে। পৃথিবীর সর্বত্র জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হয় না। সারা বিশ্বে তো একই নিয়মে ঋতুচক্র আবর্তিত হয় না। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাকাল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে শুরু হয়। যদি বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখামাত্রই সারা বিশ্বে ঈদ পালন যৌক্তিক হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে চাঁদ তো পশ্চিমাকাশে প্রথম উদিত হয় বিশ্বের সর্বপশ্চিমের ভূখণ্ড আমেরিকার আলাস্কা প্রদেশে? সৌদি আরবে নয়।


এতে পরিষ্কার বোঝা গেল, চান্দ্রমাস দেশে দেশে আলাদা এবং ঈদ, রোজাও এ জন্য একই দিনে বা একসঙ্গে হয় না বা হওয়া সম্ভব নয়।


নয়. রোজা শুরু অন্য দেশের চাঁদ উদয়ের খবরে আর সাহরি-ইফতার স্থানীয় সময়ে?


সাহরি ও ইফতার সম্পর্কে কোরআনের আয়াত দেখুন—মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে উষার শুভ্ররেখা প্রতিভাত না হয়। এরপর তোমরা রাতের শুরু (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত রোজাকে পূর্ণ করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)


এখানে দেখা যায়, সাহরি ও ইফতারের বিধান চাঁদকে কেন্দ্র করে। তাহলে এটা বলার সুযোগ নেই যে সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াত চাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ১৮৭ নম্বর আয়াত সূর্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি তা-ই হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে, মানুষ কি রোজা শুরু করবে অন্য দেশের চাঁদ উদয়ের খবরে? আর সাহরি ও ইফতার করবে স্থানীয় সময় অনুযায়ী? এটা হতে পারে না।


দশ. ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ কমিটি’র সিদ্ধান্ত


সব শেষে ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ কমিটি’র সিদ্ধান্ত হলো, ‘বিশ্বব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালনের আহ্বান জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং মুসলিম দেশগুলোর দারুল ইফতা (ফতোয়া বিভাগ) ও বিচার বিভাগের ওপর চাঁদ দেখার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উত্তম। এতে মুসলিম উম্মাহর জন্য অধিকতর কল্যাণ নিহিত আছে।’ (ইসলামী ফিকহ একাডেমি : ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১; রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী, জেদ্দা, সৌদি আরব)।


সূত্র: আওয়ার ইসলাম ২৪.কম

স্বাস্থ্য পরামর্শ -৩৮: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয় -ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ

No Comments

 




ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়

-ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ



বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই রোগ এখন মহামারী রূপ নিচ্ছে। আজ বুধবার ২৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস ২০২৪ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এই দিবস পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ১৯৫৬ সালের এ দিনে ডা: মো: ইব্রাহিমের উদ্যোগে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।


বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিক রোগী প্রায় ৫৪ কোটি। বছরে মারা যাচ্ছে ১৫ লাখ মানুষ। ২০৪৫ সালের মধ্যে রোগীর সংখ্যা ৭৮ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশই হবেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। বেশির ভাগ লোক জানে না যে, তার ডায়াবেটিস রোগ আছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। আগামী চার বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাদের ৬০ শতাংশ পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। মূলত সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য ডায়াবেটিস রোগী হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি, চোখ ও মাড়ির রোগে আক্রান্ত হন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করা ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতার শিকার হন, এমনকি মারাও যান।




অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নগরায়ন ও পরিবর্তিত জীবনযাত্রা প্রণালীর কারণে ডায়াবেটিস বাড়ছে।

ডায়াবেটিসের ইতিহাস সুপ্রাচীন। সর্বপ্রথম ডায়াবেটিসের ধারণা পাওয়া যায়, ১৮৬২ সালে মিসরের প্রাচীন নগরী থিবসের একটি পিরামিডের ভেতর থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ সালের প্যারিপাস গাছের ছালে একটি রোগ বিবরণী আবিষ্কার করেন। এই রোগ বিবরণীতে সর্বপ্রথম বহুমূত্র রোগের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক প্রাচীন গ্রিসের হিপোক্রেটিস কর্তৃক আবিষ্কৃত ইউনানী চিকিৎসাপদ্ধতিতে ডায়াবেটিসের ধারণা ছিল। তখন এটিকে বলা হতো ুরধ নবঃবফ যার অর্থ হচ্ছে সুমিষ্ট মূত্র নিঃসরণ।


ডায়াবেটিসের লক্ষণ : ডায়াবেটিস রোগীরা যে সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন তা হলো বারবার প্রস্রাব করা। ফলে শরীরে তরল কমে যায় এবং বেশি বেশি পানি তৃষ্ণা পায়। অপরদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের দেহে ‘কোষীয় অনাহার’ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে দেহ মস্তিষ্ককে ক্ষুধা লেগেছে বলে মেসেজ দেয়। এজন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষুধা লেগেই থাকে। প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও তাদের ওজন কমে যায়। সারাক্ষণ ক্লান্তি ঘিরে রাখে। কোথাও ক্ষত তৈরি হলে সহজে সারতে চায় না। বিভিন্ন চর্মরোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায় ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের।




হোমিও প্রতিকার : অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসক রোগীর পুরা লক্ষণ নির্বাচন করে ধাতুগত চিকিৎসা দিতে পারলে ডায়াবেটিসে নিরাময় সম্ভব।



ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন বেশি থাকলে তা খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো আবশ্যক। চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে। একটি খাদ্যতালিকা মেনে চললে সব থেকে ভালো হয়। কোনো ব্যক্তি যদি ইনসুলিন কিংবা অন্যান্য অষুধ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকে, তাহলে খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কেননা কোনো বেলার খাবার বাদ দিলে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।


সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বর্তমানে ডায়াবেটিস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এজন্য সবার মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ সচেতনতাই আমাদের এই বিভীষিকা থেকে দূরে রাখতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতন ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর এককভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, সরকার উদ্যোগ নেবে পাশাপাশি সব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। এখন যে হিসাব রয়েছে তাতে দেশে যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশই অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। এ রোগে আক্রান্তের এক নম্বর কারণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। দুই নম্বর কায়িক শ্রম বা হাঁটাহাঁটি করা। তিন নম্বর ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানতে হবে। ঝুঁকি অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।


লেখক : কলামিস্ট; প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

কবিতা-৩৫: ইবলিশের ভক্ত -মোঃ নূরুজ্জামান

No Comments

 



ইবলিশের ভক্ত

মোঃ নূরুজ্জামান হাফিজাহুল্লাহু 


মানুষ এখন ঈমান ভুলে

হাঁটছে পাপের পথে,

রবের হুকুম ছেড়ে দিয়ে

চলছে নিজের মতে।


ইবলিশেরই ভক্ত সেজে

কাটায় দিবস রাতি,

হর হামেশাই মন্দ কাজে

থাকছে সবাই মাতি।


মনের মাঝে শক্ত গুনাহ্

বেঁধেছে আজ বাসা,

প্রভুর ভীতি নেই যে কভু

শুধুই শান্তির আশা।


অসৎ কর্মের মালা নিয়ে

গলায় যখন পরি ।

ভাবি না কেউ কষ্ট পাবো

যখন যাবো মরি।


ওই পারেতে থাকতে সুখে

কামাও হেথায় নেকি,

খাঁটি দিলে করবো আমল 

ছেড়ে ভেজাল-মেকি।

আমল ও দুআ-১৯৩: যতক্ষণ আমাদের জীবিত রাখবেন আপন হেফাযতের মাঝে রাখবেন। আর যখন মৃত্যু দিবেন, খালিস রহমতের সাথে দিবেন।

No Comments

 




দু‘আ-১৪৬

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ خَلَقْتَ نَفْسِيْ وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا، لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا، إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ، وَإنْ أَمَتَّهَا فَاغْفِرْ لَهَا وَارْحَمْهَا.

ইয়া আল্লাহ! আপনিই আমার প্রাণ সৃষ্টি করেছেন আর আপনিই তাকে মৃত্যু দিবেন। আপনারই হাতে তার জীবন ও মরণ। তাকে যদি জীবিত রাখেন, তাহলে এমনভাবে রক্ষা করুন, যেভাবে আপন নেক বান্দাদের রক্ষা করে থাকেন। আর যদি মৃত্যু দেন, তাহলে তাকে ক্ষমা করুন ও রহম করুন।১৪১

-মুসলিম-২৭১২


১৪১. অর্থাৎ যতক্ষণ আমাদের জীবিত রাখবেন আপন হেফাযতের মাঝে রাখবেন। আর যখন মৃত্যু দিবেন, খালিস রহমতের সাথে দিবেন।

জিজ্ঞাসা-১২৫৪৮: ঋণের টাকা মাফ করে দিলেই কি জাকাত আদায় হবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৫৪৮:

এক ব্যক্তি যাকাত দিনে ওয়ালা অন্য একজন কে কোন কাজের জন্য সতের হাজার টাকা দিয়েছেন ঐব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ টাকা দিতে পারছে না এখন ঐটাকা যাকাত হিসেবে কেটে দিলে যাকাত হিসেবে গণ্য হবে কি না জানালে উপকৃত হব ধন্যবাদ সবাইকে।

তারিখ:  ১৬/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা নেছার উদ্দিন কঙ্গো থেকে



  জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

জাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিকে শুধু মাফ করে বা জাকাত হিসেবে কেটে দিলে নিয়ত করলেও জাকাত আদায় হবে না, বরং ঐ মাল বা টাকা আগে হস্তগত হতে হবে। উদাহরণ:


প্রথমে ঋণগ্রহীতাকে যাকাত বাবদ সতের টাকা প্রদান করতে হবে। তারপর তার কাছ থেকে ঋণ পরিশোধ হিসেবে তার কাছ থেকে নিয়ে নিবে।


এভাবে করলে যাকাত এবং ঋণ দু’টোই আদায় হবে। ঋণগ্রহীতাকে টাকা হস্তান্তর না করে শুধু মাফ করে দিলেই যাকাত আদায় হবে না। দলিল:


হাদিস/আসার নং-০১

عبد الرزاق ، عن هشيم بن بشير ، عن المجالد ، عن الشعبي ، أن شريحا ، ومسروقا " كانا لا يجيزان الصدقة حتى تقبض " .

অর্থ: আবদুর রাজ্জাক ------ শাবি রহ শারিহ এবং মাসরুক হতে বর্ণনা করেছেন যে, জাকাতের মাল হস্তগত হওয়া পর্যন্ত জাকাত অনুমোদন করে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১৬৫৯১




হাদিস/আসার নং -০২

16592 عبد الرزاق ، عن هشيم بن بشير ، عن إسماعيل بن أبي خالد ، عن الشعبي قال : " لا تجوز الصدقة إلا صدقة مقبوضة " .

অর্থাৎ হজরত শাবি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাকাত জায়েজ নেই জাকাতের মাল হস্তগত ব্যতিত। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১৬৫৯২


সারকথা হলো, আপনার মতে, এক ব্যক্তি যাকাত দিনে ওয়ালা অন্য একজনকে কোন কাজের জন্য সতের হাজার টাকা দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ টাকা দিতে পারছে না।  এখন ঐ টাকা যাকাত হিসেবে কেটে দিলে যাকাত হিসেবে গণ্য হবে না ।

প্রথমে হস্তগত হতে হবে, উপরে যে পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে আদায় করতে হবে।

 

 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা -১৬৫: ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর গুলো কেন দেওয়া হয়?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৬৫: সম্মানিত মুফতি সাহেবের কাছে আমার জিজ্ঞাসা! দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর গুলো কেন দেওয়া হয়? কারণ কি এ বিষয়ে জানতে চাই! তারিখ -৩১/০১/২০২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি 


মাওলানা আব্দুল হালিম রংপুর থেকে 


জবাব: প্রথমমত কথা হলো,

 ঈদুল ফিতরের তাকবীরের নির্দেশ:

 রমযান মাসের সমাপ্তি লগ্নে আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দার জন্য তাকবীর দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন: وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ" তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর) এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫] তাকবীর উচ্চারণ কর মানে: তোমাদের অন্তর দিয়ে ও মুখ দিয়ে আল্লাহ্‌র মহত্ব ঘোষণা কর। সেটি তাকবীরের শব্দাবলীর মাধ্যমে হতে পারে। যেমন আপনি এভাবে বলতে পারেন:


الله أكبر ، الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد 


(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)(অনুবাদ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।)


ঈদুল আযহারে তাকবীবের নির্দেশ : 

মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে নির্দেশ দেন-

وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

'আর তোমাদের আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫


সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন। হযরত ইবনে উমর রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের সুর তুলত। ইবনে ওমর রা. পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবীর বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তার তাকবীরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবীরে মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন।-বুখারী-ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬


হযরত ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট আমলের দিক থেকে আশরায়ে যিলহজ্ব হতে শ্রেষ্ঠ ও অধিক প্রিয় কোনো দিন নেই। অতএব তোমরা এতে তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ বেশি বেশি করো।-মুসনাদে আহমদ ২/৭৫ হাদীস : ৫৪৪৬; তাবারানী মুজামে কাবীর, হাদীস : ১১১১৬


 


দ্বিতীয়ত কথা হলো,

প্রিয় নবী (ﷺ) -এর কুরআন অবতীরর্ণ হয়েছেন, তিনি কুরআনের আদেশ-নিষেধ সবচেয়ে ভাল বুঝতেন। দলীল:  

  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দে বলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْأَنَ তাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন।’ তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনি চরিত্রমালার জীবন্ত প্রতীক।


আমার গবেষণায় মনে হয়, এই কারণেই তিনি দুই ঈদে বেশি বেশি তাকবীর বলতেন, আর সেই তাকবীবের অংশ হিসেবে ঈদের নামাজের মধ্যেও অতিরিক্ত তাকবীর বলেছেন।


এখন প্রশ্ন হলো আমরা কেন, ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর বললো, এর জবাব হলো, 


لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ [الاحزاب: ]

নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১


وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي،

অর্থ: আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস হতে , রসূল (ﷺ) বলেন, যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে। বুখারী, হাদীস নং-৬০০৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০


সুতরাং রসূল (ﷺ) যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, আমরাও মুসলিম উম্মাহও সেভাবে নামাজ পড়ি।


আসল কথা হলো,

الله أكبر ، الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر 

، الله أكبر ، ولله الحمد 

 বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহিদ, আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসার কথা; মুসলিম জাতি এ বাক্য/জিকির যা দ্বারা গুঞ্জরিত হয় দুই ঈদে সর্বত্র এটার অংশ হিসেবে নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর বলা হয়।

 


والله اعلم بالصواب

আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।



উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক 

দ্বীনি সচেতনতা-১২: উদারতা অর্থ আকীদা ও আদর্শের বিসর্জন নয়

No Comments

 



উদারতা অর্থ আকীদা ও আদর্শের বিসর্জন নয়


এক হল মুদারাত তথা উদারতা, যার অর্থ হল, নিজের প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও কোমল ব্যবহার করা এবং তার কোনো হক নষ্ট না করা; বরং তার সবধরনের হক ও অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা। উদারতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং অনেক বড় ঈমানী বৈশিষ্ট্য।

আরেক হল মুদাহানাত তথা শৈথিল্য প্রদর্শন। অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শিক বিষয়গুলোকে হালকা মনে করা। অন্যদের খুশি করতে গিয়ে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভ্রান্তি ও গোমরাহীগুলোকে সঠিক বা গ্রহণযোগ্য বলা। ই জজসলামের দৃষ্টিতে এটা নিষিদ্ধ এবং এটা মুনাফেকির অনেক ভয়াবহ প্রকার।

ইসলামী শিক্ষার অভাবে এবং অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতার কারণে আজকাল অনেকেই উদারতার নামে শৈথিল্যে লিপ্ত হচ্ছেন। এজন্য জরুরি হল, এই দুইয়ের সঠিক পরিচয় ও বাস্তবতা ব্যাপকভাবে চর্চা করা ।

ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি এই আদেশও করে, তারা যেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম ও কোমল আচরণ করে; এমনকি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় বিরোধী বরং শত্রু অমুসলিমদের প্রতিও যেন তারা কোমল ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করে এবং তাদের যাবতীয় হক ও অধিকার আদায় নিশ্চিত করে। খুলাফায়ে রাশেদীন, ন্যায়পরায়ণ খলীফা ও বাদশাগণ এবং প্রত্যেক যুগের দ্বীনদার রাষ্ট্রপ্রধানগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইসলামের এই হুকুম পালন করেছেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় সৌহার্দপূর্ণ ও উদার আচরণের নির্বাচিত কিছু ঘটনা সংকলন করেছেন; আর তাতেই বড় বড় কয়েক খণ্ডের কিতাব তৈরি হয়ে গেছে।

এই উদারতার বাস্তবতা হল, সকল অমুসলিম আল্লাহ তাআলার বিদ্রোহী হওয়া সত্ত্বেও শুধু আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যেসব হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেসব হকের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা। এদিকে মুসলমানগণ আল্লাহর ওয়াফাদার বান্দা হওয়ার কারণে তারা এ বিষয়ের আরো বেশি উপযুক্ত যে, তারা পক্ষের-বিপক্ষের সবার সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ, উত্তম ও সুন্দর আচরণ করবে। এর একটি বড় হেকমত এটাও যে, উত্তম আচরণের ফলে হতে পারে তাদের অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। অতপর তা তাদের হেদায়েত ও নাজাতের মাধ্যম হয়ে যাবে। এজন্য সৌহার্দপূর্ণ উদার আচরণ মূলত দ্বীনের প্রতি নীরব দাওয়াত। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আসলে ইনসাফ ও উত্তম আচরণেরই ফল।

আমাদের পূর্বসূরীদের মাঝে উদারতা তো পূর্ণ মাত্রায় ছিল; কিন্তু শৈথিল্য তাঁদের মধ্যে একদম ছিল না। ঈমান-আকীদার বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত মজবুত ছিলেন। চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ-ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে তাঁরা পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। শুধু শিরক নয়; বরং শিরকের সামান্য মিশ্রণ বা সন্দেহ আছে এমন সব বিষয় থেকে তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকতেন। বিধর্মীদের বেশ-ভূষা, চাল-চলন এবং তাদের উৎসব-পার্বণ থেকে অনেক দূরে থাকতেন। কারণ তাঁরা জানতেন, ইসলাম যেভাবে বিরোধীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখাকে ফরয করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে ফরয করেছে ঈমান-ইসলাম, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্য হেফাযত করাকে। যেভাবে উদারতার ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে কোনো অমুসলিমের উপর যুলুম করাকে ইসলাম হারাম করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে হারাম করেছে সত্য ও বাস্তবতার উপর যুলুম করাকে । এজন্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে, মন্দ পরিবেশ বা ভুল প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ঈমান-ইসলামের মৌলিক দাবিগুলো খুইয়ে বসা, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেয়া এবং সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা না বলাÑ এগুলো কখনো উদারতা নয়। এগুলো তো পরিষ্কার শৈথিল্য, যা একেবারে হারাম। আর সত্য কথা হল, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মুনাফেকির একটা শাখা।

যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলিম দেশে অমুসলিম নাগরিকদের মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সব ধরনের অধিকার সুসংরক্ষিত। নিজ নিজ ধর্ম পালন করা এবং আপন আপন গণ্ডিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, সে নিজে তাতে বাধা দেবে না এবং অন্য কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ দেবে না। কিন্তু তার অর্থ কখনো এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষঙ্গগুলো (যেগুলোর ভিত্তি স্পষ্টত তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের উপর) কোনো মুসলমান পালন করা শুরু করবে অথবা আগে বেড়ে তাদের ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কিংবা তাদের ধর্মীয় নিদর্শনগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে। এমনটা করা স্পষ্ট হারাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইসলাম তার অনুসারীদের উপর এ ধরনের শৈথিল্যকে হারাম করেছে, আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শৈথিল্যকে হারাম করার একমাত্র অধিকার সত্য ধর্ম ইসলামেরই আছে। সেজন্য যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই দ্বীন গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন তাদের জন্য এটা অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতার বিষয় যে, তারা চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ঈমান-আমলের বিষয়ে শৈথিল্যে লিপ্ত হবে।

আর এটাও বাস্তবতা ও ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার ফল যে, কেউ কেউ এই নজায়েয কাজের পক্ষে এই বলে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, ‘এটা তো ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং সংস্কৃতির বিষয়’ এবং ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’!!

প্রথমত এই কথাই তো ঠিক নয় যে, সংস্কৃতি দ্বীন, দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়। আর একথাও ঠিক নয় যে, কোনো জাতির ধর্মীয় উৎসব অপরাপর সব জাতির জন্যই উৎসব। এটা না সে জাতির ধর্মে গ্রহণযোগ্য হবে, না অন্যান্য জাতির ধর্মে। এটা তো না জেনে বলা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা।

দ্বিতীয়ত এই কথা মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এই উম্মত একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারী, যা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং যার রয়েছে নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাস ও শরীয়ত এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। এ দ্বীনের শরীয়তে পানাহার থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে।

এটা তো একমাত্র দ্বীন, যার যাবতীয় প্রমাণ ও উৎস হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং যার প্রথম যুগের মহামনীষীদের আমল ও কর্মপদ্ধতি সূত্রসহ বিদ্যমান রয়েছে। এই ধর্মে ঈদ ও উৎসবের বিষয়টি অনেক নাযুক। এ ধর্মে কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার অনুসারীরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের ঈদ-উৎসবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আর বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও উৎসব-পার্বণ থেকে দূরে থাকে।

তৃতীয়ত যে উৎসবের নামই হল ‘দুর্গাপূজা’ সেটা ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন নিছক উৎসব হয় কীভাবে? আর ‘পূজা’-ই যদি তাদের ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে তাদের ধর্ম আর কোন্ জিনিসের নাম?!

মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের জানা থাকা উচিত, আমাদের ধর্ম –
১. পূর্ণাঙ্গ।
২. জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার বিধি-বিধান ও দিকনিদের্শনা বিদ্যমান।
৩. এর দাওয়াত সবার জন্য বিস্তৃত। বংশ, বর্ণ, অঞ্চল ও ভাষা নির্বিশেষে সবধরনের মানুষের জন্য এর দাওয়াত সুবিস্তৃত।

যে-ই তা কবুল করবে, সফলতা লাভ করবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাবে। আর কবুল না করলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তবে বিধর্মীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ইসলাম কাউকে (আল্লাহ তাআলার নিকট তা একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও) তা গ্রহণে বাধ্য করে না। অবশ্য তা যে একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্যসব যে বাতিল ও মিথ্যা ধর্ম সে সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পেশ করে ‘হুজ্জত তাম’ করে দেওয়া হয়েছে এবং অজুহাত দাঁড় করানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

৪. চিরস্থায়ী ও চিরকালীন ধর্ম। এই ধর্ম রহিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধর্মের শরীয়ত ও হেদায়েতগ্রন্থ তো নাযিলই হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

৫. এর যাবতীয় শিক্ষা ও বিধি-বিধান এবং সেগুলোর সকল উৎস ও প্রমাণ হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এই দ্বীনের মাঝে সামান্যতম বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে এবং তা দ্বীন হিসাবে চালিয়ে দেবে- এটা সম্ভবই নয়।

দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত এমন যে কারো জানা আছে, এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি জিনিসের উপর-

ক. তাওহীদের আকীদা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।

খ. আল্লাহপ্রদত্ত শরীয়তের অনুসরণ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও উত্তম আদর্শের অনুকরণ।

তাওহীদ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন মানুষ সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে। শরীয়তের অনুসরণ তখনই বোঝা যাবে, যখন শরীয়ত পরিপন্থী সবধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন থেকে বেঁচে থাকবে। আর সুন্নাহর অনুসরণ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন সবধরনের বিদআত ও নতুন-পুরাতন জাহেলী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের মৌলিক দাওয়াত এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই। পাশাপাশি সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা। আর রাসূলের আনুগত্য করা, রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত শরীয়তকে নিজের উপর অত্যাবশ্যকীয় মেনে নেয়া এবং তাঁর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করা।

সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ হেদায়েতগ্রন্থ কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, তাঁকে সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন, দ্বীনে তাওহীদ (যা চিরকালীন দ্বীন) আর শরীয়তে মুহাম্মাদী (যা কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র শরীয়ত ও জীবনবিধান) হল এখন মুক্তি ও সফলতার একমাত্র মাধ্যম।

কুরআনে কারীমে বারবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْن.
আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করা।’ Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ২৫

وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ، فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ.
নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে১ পরিহার কর। তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। (সূরা নাহল (১৬) : ৩৬)।

আরও পড়তে পারেন-
কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
কুরআনে কারীমের বিভিন্ন সূরায় অনেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষত সূরা হূদ (সূরা নং ১১) এবং সূরা শুআরায় (সূরা নং ২৬) একেকজন রাসূলের নাম নিয়ে নিয়ে তাঁদের দাওয়াতের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। তাঁদের সবার দাওয়াত একই ছিল-

قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَیْرُهٗ.
হে আমার কওম! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। -সূরা হূদ (১১) : ৫০, ৬১, ৮৪

اَنْ لَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّا اللهَ.
তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। -সূরা হূদ (১১) : ২৬

فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوْنِ.
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। -সূরা শুআরা (২৬) : ১০৮, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯

সূরা আনকাবূতে আছে-

وَ اِبْرٰهِیْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا، اِنَّ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا یَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَ اعْبُدُوْهُ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ، اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.
এবং আমি ইবরাহীমকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের পক্ষে শ্রেয়, যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমাদেরই পূজা করছ এবং রচনা করছ মিথ্যা। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর, তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ১৬-১৭

আর সূরা শুআরায় আছে-

وَ اتْلُ عَلَیْهِمْ نَبَاَ اِبْرٰهِیْمَ، اِذْ قَالَ لِاَبِیْهِ وَ قَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ، قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِیْنَ، قَالَ هَلْ یَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ، اَوْ یَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ یَضُرُّوْنَ، قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ یَفْعَلُوْنَ، قَالَ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ، اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ، فَاِنَّهُمْ عَدُوّ لِّیْۤ اِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ، الَّذِیْ خَلَقَنِیْ فَهُوَ یَهْدِیْنِ، وَ الَّذِیْ هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ، وَ اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ یَشْفِیْنِ، وَ الَّذِیْ یُمِیْتُنِیْ ثُمَّ یُحْیِیْنِ، وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.
(হে নবী!) তাদেরকে শোনাও ইবরাহীমের বৃত্তান্ত। যখন সে তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কিসের ইবাদত কর। তারা বলল, আমরা প্রতিমাদের পূজা করি এবং তাদেরই সামনে ধরনা দিয়ে থাকি। ইবরাহীম বলল, তোমরা যখন তাদেরকে ডাক, তখন তারা কি তোমাদের কথা শোনে? কিংবা তারা কি তোমাদের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এমনই করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি কখনও গভীরভাবে লক্ষ করে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ? এরা সব আমার শত্রুÑ এক রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনিই আমার পথপ্রদর্শন করেন। এবং আমাকে খাওয়ান ও পান করান। এবং আমি যখন পীড়িত হই, আমাকে শেফা দান করেন। এবং যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, ফের আমাকে জীবিত করবেন। এবং যাঁর কাছে আমি আশা রাখি, হিসাব-নিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।-সূরা শুআরা (২৬) : ৬৯-৮২

সূরা ইউনুসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-

قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ شَكٍّ مِّنْ دِیْنِیْ فَلَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَ لٰكِنْ اَعْبُدُ اللهَ الَّذِیْ یَتَوَفّٰىكُمْ، وَ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ، وَ اَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا، وَ لَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ، فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ، وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ، قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنِ اهْتَدٰی فَاِنَّمَا یَهْتَدِیْ لِنَفْسِهٖ، وَ مَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیْهَا، وَ مَاۤ اَنَا عَلَیْكُمْ بِوَكِیْلٍ.
(হে নবী) তাদেরকে বল, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনও সন্দেহে থাক, তবে (শুনে রাখ) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ সংহার করেন। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, আমি যেন মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। এবং (আমাকে) এই (বলা হয়েছে) যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে এই দ্বীনের দিকেই কায়েম রাখবে এবং কিছুতেই নিজেকে সেইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত করবে না, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক মানে। আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে (অর্থাৎ মনগড়া মাবুদকে) ডাকবে না, যা তোমার কোনও উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি এরূপ কর (যদিও তোমার পক্ষে তা করা অসম্ভব), তবে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার কোনও মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (হে নবী!) বলে দাও, হে লোকসকল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজেরই মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে, তার পথভ্রষ্টতার ক্ষতি তার নিজেরই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কার্যাবলীর যিম্মাদার নই। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৪-১০৮

কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফে এই বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আসল দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। প্রথমে সব মানুষ এই দ্বীনের অনুসারীই ছিল। সবাই দ্বীনে তাওহীদের উম্মত ছিল। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণকে আদেশ করেন, তাঁরা যেন মানুষকে শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। এজন্য প্রাচীন দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। আর প্রাচীন উম্মত হল তাওহীদের উম্মত । দেখুন, সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২, সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২, সূরা ইউনুস (১০) : ১৯।

আর প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসীতে আছে-

وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلّهُمْ، وَإِنّهُمْ أَتَتْهُمُ الشّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.
আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি দ্বীনে হানীফের (তাওহীদের) উপর। শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর তাদের জন্য আমি যা হালাল করেছি সে তা হারাম করেছে এবং তাদেরকে আমার সঙ্গে এমন সব জিনিস শরীক করার আদেশ করেছে, যার স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৫

আরব মুশরিক হোক বা অনারব, অতীতের মুশরিক হোক বা বর্তমানের- সবার সব ধরনের শিরকী ধ্যান-ধারণার ব্যাপারে তাওহীদের অনুসারী একজন মুমিনের বক্তব্য সেটাই, যা কুরআন মাজীদে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের যবানীতে বিবৃত হয়েছে-

اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ، وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَیْء ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَیْنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ، یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، ماَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِله اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاه ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْن.
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও যারা আখেরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছি। আমি আমার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন অনুসরণ করেছি। আমাদের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকে শরীক করব। এটা (অর্থাৎ তাওহীদের আকীদা) আমাদের প্রতি ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহেরই অংশ। কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ নিআমতের) শোকর আদায় করে না। হে আমার কারা-সংগীদ্বয়! ভিন্ন-ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না সেই এক আল্লাহ, যাঁর ক্ষমতা সর্বব্যাপী? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামেরই ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে। আল্লাহ তার পক্ষে কোনও দলীল নাযিল করেননি। হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৩৭-৪০

মুশরিকদের সকল কাল্পনিক মাবুদের ব্যাপারে তাওহীদে বিশ্বাসী একজন মুমিন কুরআনের ভাষায় বলে-

اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথনির্দেশ। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ২৩

মুশরিকদের খুব ভালোভাবে বোঝা উচিত, তাদের কাল্পনিক উপাস্যদের কাছে কিছুই নেই যে, দুনিয়া-আখেরাতে তারা তাদের কোনো সাহায্য করবে। ইরশাদ হয়েছে-

قُلِ ادْعُوا الَّذِیْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِ الله لَا یَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا لَهُمْ فِیْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّ مَا لَهٗ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِیْر.
(হে রাসূল! ওই কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে তাদেরকে ডাক। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তারা অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয় এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে (কোনও বিষয়ে আল্লাহর সাথে) তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। -সূরা সাবা (৩৪) : ২২

অন্যত্র আল্লাহ তাআলার কুদরত ও নিআমতরাজির আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-

ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا یَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِیْرٍؕ، اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا یَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَ لَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ.
তিনি আল্লাহ- তোমাদের প্রতিপালক। সকল রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেসব অলীক প্রভুকে) তোমরা ডাক, তারা খেজুর বীচির আবরণের সমানও কিছুর অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তেমাদের ডাক শুনবেই না আর শুনলেও তোমাদেরকে কোনো সাড়া দিতে পারবে না। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই তোমাদের শিরককে অস্বীকার করবে। যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত সত্তার মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ১৩-১৪

এজন্য রিযিকের প্রার্থনা হোক বা নিরাপত্তার, রহমতের প্রার্থনা হোক বা যুলুম থেকে নিষ্কৃতিরÑ সর্বাবস্থায় সেই একমাত্র মাবুদের নিকটই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল আশা-প্রত্যাশা নিবেদন করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মালিক তো তিনিই। এজন্য শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-

فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِ الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ، وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ.
তারা যেন এই ঘরের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন। -সূরা কুরাইশ (১০৬) : ৩-৪)
তাছাড়া শিরকের মাধ্যমে কীভাবে যুলুম-ফাসাদ দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে? শিরক তো নিজেই অনেক বড় যুলুম-

اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩

শান্তি ও নিরাপত্তা তো সেই যুলুম থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই। আপন যুগের তাওহীদী মিল্লাতের ইমাম আল্লাহর রাসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বক্তব্য কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে-

وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَۘ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ۠.
তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়েছ, আমি কীভাবেইবা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওইসকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল) দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮১-৮২

দুআ ও প্রার্থনার একমাত্র হকদার তিনিই, যিনি সবকিছুর খালিক ও মালিক। আর কেবল সে দুআই যথার্থ ও কার্যকর হবে, যা শুধু তাঁরই দরবারে পেশ করা হবে। এর বাইরে সকল প্রার্থনা বেকার ও অর্থহীন। কারণ সেগুলো করা হয়েছে ভুল স্থানে। ইরশাদ হয়েছে-

لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যার কাছে দুআ করা সঠিক। তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করেÑ তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে নিজে তার মুখে পৌঁছাতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ করার ফল এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে। -সূরা রাআদ (১৩) : ১৪

এককথায়-
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَ اَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِیُّ الْكَبِیْرُ.

অর্থাৎ, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল। -সূরা হাজ্জ (২২) : ৬২
মোটকথা, তাওহীদের অনুসারী মুমিনের ঘোষণাই এটা-

এক.
اَغَیْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِیًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ یُطْعِمُ وَ لَا یُطْعَم.

আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর ¯্রষ্টা এবং যিনি (সকলকে) খাদ্য দান করেন, কারো থেকে খাদ্য গ্রহণ করেন না? -সূরা আনআম (৬) : ১৪

দুই.
یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓء مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.

হে আমার কওম! তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।-সূরা আনআম (৬) : ৭৮-৭৯

তিন.

اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْن ، …اَغَیْرَ اللهِ اَبْغِیْ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ كُلِّ شَیْءٍ وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْن.
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবং আনুগত্য স্বীকারকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।

…আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও প্রতিপালক সন্ধান করব, অথচ তিনি প্রতিটি জিনিসের মালিক? প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করতে, তখন তিনি সে সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবেন।-সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৪

তাওহীদের অনুসারী মুমিন সর্বদা এই প্রার্থনা করে-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَة اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّاب.

হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করো না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয়ই তুমিই মহা দাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮

رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ.

হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা করা হতে রক্ষা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৫

মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার নিকট শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। অন্যান্য গুনাহ তো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন, তবে শিরকের ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন, এই গুনাহ তিনি মাফ করবেনই না, যতক্ষণ না শিরককারী ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তওবা করে সব ধরনের শিরক থেকে ফিরে আসে এবং তাওহীদের দ্বীন ইসলাম কবুল করে মনে-প্রাণে শুধু এবং শুধু তাওহীদের উপর অবিচল থাকে। ইরশাদ হয়েছে-

اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের যে কোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, সে (সঠিক পথ থেকে) বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৬

আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.

নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭২

মোটকথা, দ্বীনে তাওহীদের অনুসারী এবং কালিমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্যদানকারী মুমিন-মুসলিমকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন যেন না হয় যে, উদারতার নামে স্পষ্ট শিরকী কর্মকা-গুলোকে ভুল ব্যাখ্যা করতে শুরু করল, নিছক উৎসব নাম দিয়ে সেগুলোর পক্ষে সাফাই এবং সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে লাগল। এমনটা করলে এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা আল্লাহর সঙ্গে আর কী হতে পারে? এবং ঈমান ও তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণের বিধান
বর্তমানে কিছু মানুষ কেবল অজ্ঞতার কারণে এমন মনে করছে যে, মুসলমানদের জন্য যেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বৈধ! এই ভাইদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত, এমন ধারণা একেবারে ভুল।

ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত এসব বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের কোনো অঙ্গনকে ‘ফকির’ ছেড়ে দেয়নি; বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও ক্ষেত্রে তাদেরকে বিধান দান করেছে এবং তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ বানিয়েছে। মুমিনদের লক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

আর পুরো দুনিয়ার প্রতি ইসলামের ঘোষণা-
اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ.
যেসকল লোক ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। -সূরা বাকারা (২) : ১৩

এবং
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
তারা যদি সেরকম ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।- সূরা বাকারা (২) : ১৩৭

জীবনের অন্যসব বিষয়ের মত উৎসবের ক্ষেত্রেও মুসলিম উম্মাহকে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দান করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের বিধান দেয়াই হয়েছে এ কথা বলে-

“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব থাকে। হে মুসলিম জাতি! তোমাদের উৎসব হল ‘ঈদ’।” অর্থাৎ সব জাহেলী উৎসব থেকে অমুখাপেক্ষী করে মুসলিম উম্মাহকে ‘ঈদ’ দান করা হয়েছে। তাই তাদের জন্য এটা বৈধই নয় যে, তারা নিজেরা কোনো জাহেলী উৎসব উদ্যাপন করবে বা তাতে অংশগ্রহণ করবে।

হাদীস শরীফে আছে, মদীনায় আগমনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেন, এখানকার অধিবাসীরা বছরে দু’দিন উৎসব পালন করে। তখন আল্লাহর রাসূল তাদের বললেন-

إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সেসবের পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দান করেছেন- আযহা এবং ফিতর। – সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪

এছাড়া একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে-
إِنّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا، وَهَذَا عِيدُنَا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই প্রত্যেক কওমের আপন আপন উৎসব আছে। আমাদের (অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর) উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯২)।

এজন্য কুরআনে কারীমে [সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে-
وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْر.
অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদ্যাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না।

(উল্লেখিত আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন- তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২)।

আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন-

هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيّةِ يُعْبَدُ؟
সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-

هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟
সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ…
তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। – সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু’মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি
সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হযরত উমর রা. বলেন-

اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ فِي عِيدِهِمْ.
তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে দূরে থাক। (আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, বর্ণনা ১৮৮৬২; ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, খ. ১ পৃ. ৪৫৬-৪৫৭)।

অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি মৌলিক হেদায়েত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১

কোনো জাতির উৎসব হচ্ছে সে জাতির শিআর বা নিদর্শন। অতএব বিজাতির নিদর্শনাবলীর ক্ষেত্রে যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে যে হাদীসে উল্লেখিত ধমকির অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?

আরেক হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা) আলমাতালিবুল ‘আলিয়া খ. ৪ পৃ. ৩১৫; কিতাবুয যুহদি ওর্য়ারাকাইক, ইবনুল মুবারক পৃ. ৪৪৭, অধ্যায় : বাবু ইসতিমায়িল লাহ্বি; নাসবুর রায়াহ, খ. ৪ পৃ. ৩৪৬-৩৪৭; আদ্দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদিসিল হিদায়া (দ্র. হিদায়া খ. ৪ পৃ. ৫৬৭, হিন্দুস্তানী সংস্করণ) ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার খ. ১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮, হাদীস ৭০৮৫ باب من كره أن يكثر سواد الفتن والظلم; আলমাকাসিদুল হাসানা খ. ৫ পৃ. ১৮১)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী গায়রত দান করুন। সকল শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং বিজাতীয় সকল আচার-অনুষ্ঠান ও পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সৌজন্যে- রিসালাতুল ইসলাম বিডি।

– মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, প্রতিষ্ঠাতা মসদস্- মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা, প্রধান পরিচালক- হাদীস অনুষদ এবং রচনা ও গবেষণা বিভাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক- মাসিক আলকাউসার।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর