আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১৬১: সৌদিতে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে অবস্থানরত কোন ব্যক্তির বদলি হজ্জ আদায় করেন, তাহলে তা কি যথেষ্ট হবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৬১:

১.সৌদিতে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে অবস্থানরত কোন ব্যক্তির বদলি হজ্জ আদায় করেন, তাহলে তা কি যথেষ্ট হবে? হজ্জ আদায়কারীকে কি পূর্ণ হজ্জ প্যাকেজের খরচ দিতে হবে?


২. এক ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে গেলেন তার ফরজ হজ্জ যেন আদায় করা হয়। তার ওয়ারিশদের মধ্যে দুইজন নাবালেগ রয়েছে এবং তিনি স্থাবর সম্পদ ব্যতীত কিছু রেখে যাননি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?


৩. এ বছর সৌদি সরকার 65 বছরের উর্ধ্বের প্রবীণদের হজ্জ করার সুযোগ দিচ্ছে না। তাঁরা কি বদলি হজ্জ করাবেন, নাকি অন্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবেন?


মাওলানা নূরুল আমীন, খোলাহাটী, দিনাজপুর থেকে---


জবাব:     

প্রশ্ন: ১। সৌদিতে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে অবস্থানরত কোন ব্যক্তির বদলি হজ্জ আদায় করেন তাহলে তা কি যথেষ্ট হবে? হজ্জ আদায়কারীকে কি পূর্ণ হজ্জ প্যাকেজের খরচ দিতে হবে?


 


উত্তর: ১। প্রথমে দেখতে হবে, প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি নিজেই হজ করতে সক্ষম কি না, যদি সক্ষম হয়, তাহলে বদলী হজ করালে এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।-হিদায়া ১/২৯৬; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৪


দ্বিতীয়ত, বদলী হজ্বের জন্য নিজ দেশ থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। নিজ দেশ থেকে কাউকে পাঠানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে অবস্থানরত কাউকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানো হলে প্রেরণকারীর ফরয হজ্ব আদায় হবে না। এক্ষেত্রে নিজ দেশ থেকে পুনরায় বদলী হজ্ব করাতে হবে।-মানাসিক ৪৪০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৫


 সুতরাং সৌদি আরবে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে অবস্থানকারী কারও পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করতে পারবে না।  


নোট: উক্ত ব্যক্তি (সৌদি আরবে অবস্থানরত) সম্পর্কে আরও জেনে নেওয়ার জন্য কোন বিজ্ঞ মুফতি বা ইফতা বিভাগে যোগযোগ করার অনুরোধ রইল। 


তৃতীয়ত কথা হলো, যার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করা হচ্ছে হজ্বের অধিকাংশ খরচ তাকেই বহন করতে হবে। যদি কেউ সম্পূর্ণ নিজের খরচে কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করে তাহলে এর দ্বারা প্রেরণকারীর ফরয হজ্ব আদায় হবে না। তবে প্রেরিত ব্যক্তি কিছু খরচ নিজের পক্ষ থেকে বহন করলে অসুবিধা নেই।


হযরত আলী রা. অতিশয় বৃদ্ধ লোকের সম্পর্কে বলেছেন, সে কাউকে তার পক্ষ থেকে হজ্বে পাঠাবে এবং হজ্বের খরচ বহন করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৫৯৯; সুনানে বায়হাকী ৫/২৬; মানাসিক ৪৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০


 আর সে শুধু হজ্বের খরচ নিতে পারবে। অতিরিক্ত কিছুই নিতে পারবে না।-আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৯; মানাসিক ৪৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০


চতুর্থত, হানাফি মাজহাব অনুযায়ী যে ব্যক্তি এখনো নিজের হজ করেনি, সে-ও কারো পক্ষ থেকে বদলি হজ করতে পারবে, তবে মাকরুহ হবে। (আপকে মাসায়েল : ৪/৬৯)


প্রশ্ন: ২। এক ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে গেলেন তার ফরজ হজ্জ যেন আদায় করা হয়। তার ওয়ারিশদের মধ্যে দুইজন নাবালেগ রয়েছে এবং তিনি স্থাবর সম্পদ ব্যতীত কিছু রেখে যাননি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?


উত্তর: ২। মৃত ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্বের অসিয়ত করে গেলে নিয়ম হল, তার কোনো ঋণ থাকলে প্রথমে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তা আদায় করা। এরপর অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে বদলী হজ্বের অসিয়ত কার্যকর করা। এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা মৃতের আবাসস্থল থেকে হজ্বের জন্য পাঠানো সম্ভব হলে তার এলাকা থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ থেকে কাউকে দিয়ে হজ্ব করালে মৃতের অসিয়ত ও ফরয হজ্ব আদায় হবে না। কিন্তু এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা যদি মৃতের এলাকা থেকে হজ্ব করানো সম্ভব না হয় তাহলে ঐ টাকা দিয়ে যেখান থেকে হজ্ব করানো যায় সেখান থেকেই করাবে। অবশ্য ওয়ারিশগণ চাইলে নিজ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে মৃতের এলাকা থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে।


তবে সতর্কতা হলো, ওয়ারিশগণ তাই উক্ত সম্পদ দ্বারা বদলী হজ্ব করাতে হলে সকল ওয়ারিশের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি থাকতে হবে। খ) ওয়ারিশদের কেউ যদি নাবালেগ হয় কিংবা কোনো ওয়ারিশের যদি সম্মতি না থাকে তাহলে তার অংশ থেকে বদলী হজ্বের জন্য কিছুই নেওয়া যাবে না। মানাসিক ৪৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২২, ৩২৮


ব্যাখ্যা, মৃত্যু ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর, নগদ টাকা-পয়সা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, পাওয়া টাকা সবই তার রেখে যাওয় সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে ।


প্রশ্ন: ৩। এ বছর সৌদি সরকার 65 বছরের উর্ধ্বের প্রবীণদের হজ্জ করার সুযোগ দিচ্ছে না। তাঁরা কি বদলি হজ্জ করাবেন, নাকি অন্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবেন?


উত্তর: ৩। প্রথম কথা হলো বদলি হজ ঐ ব্যক্তি করাত পারবে, যে অক্ষম। আবার হজ্ব আদায়ে অক্ষমতার ওজর দুই ধরনের হতে পারে : ক) যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খ) স্বাভাবিক অবস্থায় যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


যে ওজর দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে যেমন অসুস্থ, সরকারি বিধি নিষেধ, পাগল বা কারাবন্দি হওয়া; স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বদলী হজ্ব জায়েয হওয়ার জন্য শর্ত হল, ওজরটি মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হতে হবে। সুতরাং এ ধরনের ওজরে বদলী হজ্ব করানোর পর যদি ঐ ওজর অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয় তাহলে তার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বদলী হজ্ব করানোর পর মৃত্যুর আগে ওজর দূর হয়ে গেলে ঐ হজ্বটি নফল হয়ে যাবে এবং তাকে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।


আর দ্বিতীয় প্রকারের ওজর, অর্থাৎ যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, যেমন অন্ধ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া। এক্ষেত্রে বদলী হজ্ব জায়েয হওয়ার জন্য তা মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ এ জাতীয় ওজরের কারণে অন্যের দ্বারা বদলী হজ্ব করানোর পর আল্লাহ তাআলার খাছ কুদরতে যদি দৃষ্টিশক্তি বা চলৎশক্তি ফিরে পায় তাহলে তাকে পুনরায় ফরয হজ্ব করতে হবে না। পূর্বের বদলী হজ্বের মাধ্যমে তার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে।-আলবাহরুর রায়েক ৩/৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২১; যুবদাতুল মানাসিক ৪৪৮



সুতরাং ৬৫ বৎসরের বিধি-নিষেধ তো অস্থায়ী, সরকার শুধু এ বছরের জন্য, (করোনা, কোটা সীমিত)। তাকে বুঝে-শুনে বদলি হজ করাতে হবে।


 

 


والله اعلم بالصواب