আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৫৪: মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার আগে কি হজ করা যাবে না, এ কথাটি কি সঠিক?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৫৪:   বিবাহযোগ্য কন্যা থাকলে তাকে আগে বিবাহ দিতে হবে তারপর হজ্জে গমন করতে হবে। এ মর্মে সরাসরি কোনো হাদীস কারো জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ। তারিখ -১২/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি 


হাফেজ মাওলানা মোঃ রজিব উদ্দিন, পোস্তগোলা, ঢাকা------ 


জবাব:      আল্লাহ তাআলা রহম করুন আমার ভাই হাফেজ মাওরজিব উদ্দিনের প্রতিযিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা জিজ্ঞেস করেছেন। বিবাহযোগ্য কন্যা থাকলে তাকে আগে বিবাহ দিতে হবে তারপর হজ্জে গমন করতে হবে। এ মর্মে কোন সহিহ তো দূরের কথা জয়িফ/জাল হাদিস নেই?  সমাজের যে কথাগুলো কুসংস্কার প্রচলিত আছেতার মধ্যে একটি হলো এটা।  তবে ইসলামি শরীয়তে উক্ত দুটি বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়েছেন।

 

Ø  হজ দ্রুত/জলদি আদায় করার দলীল: 

 

হাদিস নং-০১

 

 রাসূলুল্লাহ () বলেছেন,

«تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ يَعْنِي الْفَرِيضَةَ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ».

তোমরা বিলম্ব না করে ফরয হজ আদায় কর। কারণ তোমাদের কেউ জানে নাকী বিপদাপদ তার সামনে আসবে। মুসনাদে আহমদ : ৭৬৮২ইবন মাজাহ্‌ : ৩৮৮২

 

হাদিস নং-০২

 

ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেনরাসূলে কারীম () ইরশাদ করেছেন-

من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.

যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করেসে যেনতাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যেকোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বাবাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবাঅন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতেপারে।-মুসনাদে আহমদহাদীস : ১৮৩৩সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস : ২৮৮৩সুনানে আবু দাউদহাদীস : ১৭৩২সুনানে দারিমীহাদীস : ১৭৮৪মুসতাদরাকে হাকেম-১৬৮৭তবারানী- ৭৩৮

 

হাদিস নং-০৩


لِيَمُتْ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّايَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّات-ٍ رَجُلٌ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ وَوَجَدَ لِذَلِكَ سَعَةً .

অর্থইহূদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে -তিনি কথাটি তিনবার বললেন- সেই ব্যক্তি যে আর্থিক স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও হজ না করে মারা গেল। বাইহাকী : ৪/৩৩৪

 

হাদিস নং-০৪

উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন,

لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوا كُلَّ مَنْ لَهُ جَدَةٌ وَلَمْ يَحُجَّ فَيَضْرِبُوا عَلَيْهِ الْجِزْيَةَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ.

আমার ইচ্ছা হয়এসব শহরে আমি লোক প্রেরণ করিতারা যেন দেখে কে সামর্থবান হওয়ার পরও হজ করেনি। অতপর তারা তার ওপর জিযিয়া। আরোপ করবে। কারণতারা মুসলিম নয়তারা মুসলিম নয়। ইবন হাজারআত-তালখীসুল হাবীর : ২/২২৩

 হাদিস নং-০৫

 হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেনযে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছিঅতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে নাসে অবশ্যই বঞ্চিত। ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩

 

Ø ইমামদের মতামত:


 হজ ইমাম আবু হানিফামালেকআহমদশাফেয়ি মাজহাবের কোনো ইমাম এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা আবশ্যক।

 

Ø তাড়াতাড়ি কন্যাকে বিবাহ দেওয়ার দলীল:

 

হাদিস নং-০১


عن على بن ابى طالب رضى الله عنه انّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قال له يا على ثلاث لاتؤخرها الصلوة اذا انت والجنازة اذا حضرت والايّم اذا وجدت لها كفوًا ـ
অর্থঃ হযরত আলী রা. সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (
) হযরত আলী রা. কে লক্ষ্য করে বলেনহে আলী! ৩টি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাযের যখন সময় আসবে তখন নামায আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাযা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না। তিরমিযী শরীফখ: ১পৃ: ২০৬

 

হাদিস নং-০২

রাসূল সা. বলেছেন,

তোমাদের নিকট যদি এমন পাত্র বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের নিকট পছন্দসইতবে তার সাথে তোমাদের কন্যাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে প্রত্যাখ্যান কর এবং তাদের সাথে কন্যাদের বিবাহ না দাও) তবে এর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। তিরমিযী-বিবাহ অধ্যায়

 

Ø  উভয় প্রকার হাদিসের সমন্বয় :


উপরোক্ত দুটি বিষয়ে আমরা হাদিস দেখলাম যে,  হজ ফরয হলে দ্রুত আদায় করার তাগিদ দেওয়া হয়েছেকেননা মানুষের বিপদ-মৃত্যু কোন সময় আসে কেউ জানে না। আবার কন্যাকে প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে তাড়াতাড়ি বিবাহ দেওয়াও নির্দেশ রয়েছে।

 

এখন প্রশ্ন হলো কন্যার বিবাহ  হতে যদি  দেরি হয় ( যেমনউপযুক্ত পাত্র না পাওয়াআর্থিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে), তাহলে কি হজ আদায় করতে দেরি করবে?  এর জবাব হলোমেয়েকে বিবাহ দিতে অবশ্যই চেষ্টা করবে। হজ যখনও ফরজ হবেতখনই আদায় করবে। মেয়ের বিবাহের অপেক্ষা করবে না।

فى رد المحتارالمسألة منقولة عن أبي حنيفة في تقديم الحج على التزوج ، والتفصيل المذكور ذكره صاحب الهداية في التجنيس ، وذكرها في الهداية مطلقة ، واستشهد بها على أن الحج على الفور عنده ومقتضاه تقديم الحج على التزوج ، وإن كان واجبا عند التوقان (رد المحتار على الدر المختار-كتاب الحج، قبيل مطلب فى قولهم يقدم حق العبد على حق الشرع-2/462

যার সারমর্ম হলো হজ্ব কে বিবাহের উপর মুকাদ্দম করতে হবে। 

ফাতওয়ায়ে শামী-২/৪৬২,ফাতহুল কাদীর-২/৪১১,ফাতওয়া তাতারখানিয়া-২/৪৩৭,ফাতওয়া মাহমুদিয়া-১৫/৩৫৭

 

 

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)