জিজ্ঞাসা-১২৫৬৯:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। হুজুর, আল্লাহর রহমতে এবার হজে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি, এখন আমার জানার বিষয় হলো, হজে (মিনায়) যে পশু কুরবানি করবো আবার দেশে কি আলাদা কুরবানি দিতে হবে? এ বিষয়ে সমাধান দিলে উপকৃত হতাম।
তারিখ: ০২/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হজে যে কুরবানি করা হয়ে থাকে, সেটি কুরবানি না। এটিকে বলা হয়ে থাকে হাদি, অর্থাৎ হাদি জবাই করা হয়ে থাকে। হজের বিধানের কারণে যেই পশু জবাই করা হয়ে থাকে, তাকে বলা হয় হাদি। হাদিটা মূলত কুরবানি নয়।
মূলত তারা যদি হজে তামাততু বা হজে কেরান করে থাকেন, তাহলে এই ব্যক্তিদের ওপর হাদি জবাই করা বাধ্যতামূলক। দলিল:
فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানি করাই তার উপর কর্তব্য। সূরা বাকারা-১৯৬
দ্বিতীয় কথা হলো, জমহুর ফোকাহার মতে, হাজিদের উপর নিজ দেশে কুরবানি ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম শাফিয়ি রহ এর মতে, মুকিম, মুসাফির সবার উপর সুন্নাত।
তৃতীয় কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে, সাধারণত মক্কার (আশেপাশে) লোক ব্যতিত হাজিরা (কুরবানির কয়েক দিন, ১০,১১,১২ তারিখ) মুসাফির থাকে আর মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, আর যদি মুকীম হয়; তাহলে কুরবানি ওয়াজিব। যেমন,
أن الحاج مسافر ، والأضحية مشروعة للمقيمين ، وهذا قول أبي حنيفة ، وعنده أن الحاج إن كان من أهل مكة : فهو غير مسافر ، وتجب عليه الأضحية . وذهب الإمام أبو حنيفة إلى أنه ليس على المسافر أضحية: فقد جاء في " المبسوط " ( 6 / 171 ) :
অর্থাৎ নিশ্চয়ই হাজি মুসাফির। কুরবানি মুকিমের জন্য জরুরি। এই মত হল আবু হানিফার রহ. । হাজি যদি আহলে মক্কা তথা মক্কার আদিবাসী হয় তাহলে সে মুসাফির নয়। আবু হানিফা রহ বলেন, মুসাফিরের জন্য কোন কুরবানি নেই। সূত্র: আলমাসবুত -৬/১৭১
وَالذَّبْحُ لَهُ أَفْضَلُ، وَيَجِبُ عَلَى الْقَارِنِ وَالْمُتَمَتِّعِ وَأَمَّا الْأُضْحِيَّةُ فَإِنْ كَانَ مُسَافِرًا فَلَا يَجِبُ عَلَيْهِ وَإِلَّا كَالْمَكِّيِّ فَتَجِبُ كَمَا فِي الْبَحْرِ (رد المحتار، كتاب الحج، مطلب فى رمى جمرة العقبة، زكريا-3/534، كرتاشى-2/515)
অর্থাৎ ইফরাদ তথা উমরা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র হজ্জ আদায়কারী ব্যক্তির জন্য পশু জবেহ করা উত্তম। তবে কিরান তথা অভিন্ন ইহরামে হজ্জ ও উমরা পালনকারী ব্যক্তি ও তামাত্তু তথা ভিন্ন ভিন্ন ইহরামে হজ্জ ও উমরা পালনকারী ব্যক্তির জন্য পশু কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। তবে সে যদি মুসাফির হয়, তাহলে কুরবানী দেয়া তার উপর আবশ্যক হবেনা। কিন্তু সে যদি মুসাফির না হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী দেয়া আবশ্যক হবে, যেমন মক্কাবাসীর উপর আবশ্যক হয়ে থাকে। বাহরুর রায়েকে এমনটিই বলা রয়েছে।( রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল হজ্জ, জামারায়ে আকাবায় পাথর নিক্ষেপ অনুচ্ছেদ - যাকারিয়া; ৩/৫৩৪, করাচি; ২/৫১৫)
সারকথা হলো, আপনি যদি কুরবানির কয়দিনে মুসাফির হন, তাহলে আপনার উপর দেশে কুরবানি দিতে হবে না। আর যদি মুকিম হন (একটানা ১৪ দিন থাকার নিয়ত করলে), তাহলে সাহেবে নিসাবের উপর কুরবানি ওয়াজিব। কুরবানি মক্কা বা দেশে এক জায়গায় দিলেই হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক