আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৯০৮: বর্তমান বাজারে সর্বনিম্ন মহর কত টাকা হতে হবে, এ কো দলিল আছে কী?

No Comments

 




জিজ্ঞাসা-১২৯০৮: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সর্বনিম্ন মহর কত টাকা হতে হবে, এর কোনো দলিল আছে কী?

তারিখ:  ২২/০২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  নুরুজ্জামান হাফিজাহুল্লাহু দিনাজপুর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। 

মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮

 তবে সর্বনিম্ন হাদিস-আসারে রয়েছে। তাই ইমামদের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম।

দলিল:

হাদিস নং-০১

عن علي -رضي الله عنه- قال: «لا تُقطع اليدُ إلا في عَشرة دَراهِم, ولا يكون المهرُ أقلَّ مِن عشرة دَراهِم سنن الدارقطني, ت: شعيب الارنؤوط وجماعة, مؤسسة الرسالة، بيروت - الطبعة الأولى، 1424هـ.

অর্থাৎ হজরত আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দশ দিরহামের নিচে (চোরের) হাত  কাটা যাবে না এবং দশ দিরহামের কম মহর নির্ধারণ করা যাবে না। তাখরিজ: সুনানে দারে কুতনি -১৪২৪

 

হাদিস নং-০২

لا مَهْرَ أَقَلُّ مِنْ عَشْرَةِ دَرَاهِمَ

“দশ দিরহামের কম মহর নেই। ” তাখরিজ: দারা কুতনী-৩৯২


ولأنه مال يستباح به عضو ، فوجب أن يكون مقدرا كالنصاب في قطع السرقة .

ولأنه أحد بدلي النكاح ، فوجب أن يكون مقدرا كالبضع ، ولأن ما كان من حقوق العقد يقدر أقله كالشهود .

অর্থাৎ, তাছাড়া মোহর হলো এমন একটি বিনিময়মূল্য, যার বিনিময়ে মানবদেহের একটি সম্ভোগ অঙ্গ বৈধভাবে ভোগ করার অধিকার অর্জিত হয়। সুতরাং মোহরের নূন্যতম মূল্যমান নির্ধারণ করতে হবে, মানুষের অন্য কোন অঙ্গের মূল্যমানের সাথে সঙ্গতি রেখে। আর সেই মূল্যমানটি হলো সেটি, যেই পরিমাণ অর্থমূল্যের সম্পদ চুরি করার শাস্তিস্বরূপ চোরের হাত কেটে নেয়া হয়। আর সেই পরিমাণ অর্থমূল্য হলো, দশ দিরহাম। যা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।


তাছাড়া মোহর হলো, বিবাহ নামক চুক্তিনামার দুটি বিনিময়মাধ্যমের অন্যতম একটি মাধ্যম। অন্যান্য চুক্তির মধ্যে যেমন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা আবশ্যক, বিবাহ নামক চুক্তির ক্ষেত্রেও মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করাটা আবশ্যক। এছাড়া সকল প্রকার চুক্তির সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সর্বনিম্ন পরিমাণ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যেমন লেনদেনের ক্ষেত্রে, সর্বনিম্ন দুইজন পুরুষ কিংবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারীকে সাক্ষী হিসেবে রাখতে আল কুরআনে ( সূরা বাকারা'র ২৮২ নং আয়াতে) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঠিক সেভাবেই বিবাহ নামক চুক্তির মূল্যমান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন দশ দিরহাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং কোনভাবেই দশ দিরহাম সমমূল্যের নীচে কোনপ্রকার মোহর ধার্য করা যাবেনা। সূত্র: আলহাবিল কাবির ফি ফিকহিল ইমামিশ শাফিয়ি -৯/৩৯৮


দশ দিরহামের পরিমাপ : প্রতি দিরহামে ৩ মাশা ০.৮.রতি হয়। ৮ রতিতে ১ মাশা, ১২ মাশায় ১ তোলা হয়। এ হিসেবে দশ দিরহামের পরিমাণ হলো ৩১ মাশা রূপা বা ২ তোলা ৭ মাশা (প্রায় আড়াই ভরি রূপা) অথবা তার সমমূল্য টাকা। এটাই বিবাহের মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ।


আজকের বাজারে প্রতি ভরি রুপার দাম, ১৭১৫ টাকা (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত) হয়, তাহলে দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার মূল্য হবে (১৭১৫×২.৭)=৪৬৩০.৫০ টাকা।


প্রশ্ন: ক। সম্পদ ছাড়া অন্য কিছু মহর নির্ধারণ করা যাবে কী?

উত্তর: ক। ফিকহি হানিফর মতে, সম্পদ ছাড়া অন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করা জায়েয হবে না। দলিল:

واستدل أبو حنيفة بقول الله تعالى : وأحل لكم ما وراء ذلكم أن تبتغوا بأموالكم محصنين غير مسافحين [ النساء : 24 ] ولا يطلق اسم الأموال على ما قل من الدانق والقيراط ، فلم يصح أن يكون ذلك ابتغاء بمال .

অর্থাৎ, ইমাম আবু হানীফা (রাহি.) নিজ মতামতের স্বপক্ষে আল্লাহ তায়ালার এই বাণী দিয়ে প্রমাণ পেশ করেন- উল্লিখিত নারীগণ ব্যতিত অন্যসকল নারীগণকে তোমাদের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার বৈধতা রয়েছে। তবে তোমাদের সম্পদ ব্যায় করে তাদেরকে নিজেদের ( বিবাহভুক্ত করার) কামনা করতে হবে। ( সূরা নিসা-২৪)

আলোচ্য আয়াতে, কোন নারীকে নিজের বিবাহভুক্ত করার জন্য "মাল" তথা সম্পদ প্রদানের শর্তারোপ করা হয়েছে। আর লোকপ্রচলনে "দানিক" ( এক দিরহামের একষষ্ঠমাংশ), এবং "কিরাত" ( দানিকের অর্ধেক তথা এক দিরহামের এক দ্বাদশমাংশ) এর নীচের মূল্যমানের কোন কিছুকে মাল বা সম্পদ হিসেবে অভিহিত করা হয়না। সুতরাং এর চাইতে কম মহর নির্ধারণ করা হলে, 'সম্পদ ব্যায় করে স্ত্রীকে নিজের ( বিবাহভুক্ত করার) কামনা করতে হবে'- এই নির্দেশনাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়না। তাই মোহর নির্ধারণে সর্বজনগ্রাহ্য একটি যৌক্তিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হলে তবেই বক্ষমান আয়াতটির মূল নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে বিবাহকার্য সম্পাদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।


সারকথা হলো,  দশ দিরহামের কম মহর নির্ধারণ হতে পারে না আর দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার  আজকের বাজারের মূল্য হবে ৪৬৩০.৫০ টাকা।



  والله اعلم بالصواب