জিজ্ঞাসা-১৬০: ফযরের সুন্নত জামাতের আগে না পড়তে পারলে, কখন পড়া যেতে পারে? বিষয়টি দালিলিকভাবে স্পষ্ট করা দরকার। তারিখ -১৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবু বকর, মোমেনশাহী থেকে---
জবাব: ওয়লাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ। জাযাকাল্লাহ খয়র আমার স্নেহের ভাইকে তিনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন, (যা আমার মনের কামনা ছিল যে, এ সংক্রান্ত প্রশ্ন আসুক) যা আমাদের সমাজে মহামারি রূপ ধারণ করেছেন। আপনার প্রশ্নকে সহজে বুঝার জন্য কয়েকটিভাবে ভাগ করে উপস্থাপন করছি:
প্রশ্ন: ক। জামাত/ফজরের জামাত শুরু হলে সুন্নাত পড়া যাবে কি?
উত্তর: ক। ফজরের জামাত শুরু হলে সুন্নাত পড়া যাবে কি না এ সম্পর্কে দুটি মত পাওয়া যায়।
প্রথম মত:
আহলে হাদিসের মতে কোনো ওয়াক্তে জামাত শুরু হলে সুন্নাত পড়া যাবে না। তাদের দলীল:
হাদিস শরিফে এসেছে
عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন নামায (জামাত) শুরু হয়, তখন ফরজ নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই। সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪২১
দ্বিতীয় মত:
জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, ফজর সুন্নাত ব্যতিত কোন ওয়াক্তেই জামাত শুরু হলে সুন্নাত পড়া যাবে না। অর্থাৎ শুধু মাত্র ফজরের সুন্নাত ব্যতিক্রম। তাদের দলীল:
হাদিস নং-০১
عن عائشة رضي الله عنها قالت: لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم على شيء من النوافل أشد منه تعاهدا على ركعتي الفجر
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত এর মত কোন নফল নামাযকে এত হিফাযত ও গুরুত্ব প্রদানকারী ছিলেন না। বুখারী-১১১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-২৪৬৩
হাদিস নং-০২
عن عائشة عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال « ركعتا الفجر خير من الدنيا وما فيها
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকে ফজরের দুই রাকাত উত্তম। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭২১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৫০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০৭
হাদিস নং-০৩
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تتركوا ركعتي الفجر ولو طردتكم الخيل
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেও তোমরা ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] ছেড়ো না। তাহাবী শরীফ-১৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ-১২৬০, সুনানে বায়হাকী কুবরা-৪২৫৭, মুসনাদে আহমাদ-৯২৫৩
হাদিস নং-০৪
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لا تدعوهما، وإن طردتكم الخيل.
তোমরা এই দুই রাকাত কখনো ত্যাগ করো না, শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৫৮
সম্মানিত পাঠক, আমরা উপরোক্ত সহিহ হাদিসগুলো দ্বারা ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব উপলদ্ধি করলাম। এরকম তাকীদ আর কোন সুন্নত নামাযের ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) করেননি। আমরা সবাই জানি যে, প্রতিটি বস্তু তার ঠিক সময়ে আদায় করাই উক্ত ইবাদতের দাবি। ফজরের দুই রাকাত আদায়ের সময় হল ফজরের ফরজ পড়ার আগে পরে না, যদি পরে আদায় করতে হয়।
এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো বড় বড় সাহাবিরা কি আমল করেছেন। যেহেতু তারা রসূলের সোহবতে ছিলেন, হাদিস শুনেছেন,আমর করেছেন। সাহাবিদের এক বিশাল জামাত ফরজের জামাত শুরু হওয়ার পরও সুন্নাত পরেছেন। তাদের মধ্যে হলেন, ফক্বীহ সাহাবাগণের অন্যতম হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ, রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ, হযরত আবু দারদা রাঃ, রাসূল (ﷺ) এর একনিষ্ট ভক্ত ও প্রতিটি কাজের একনিষ্ট অনুসারী হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ । দলীল:
আসার নং-০১
عبد الله بن أبى موسى عن أبيه : حين دعاهم سعيد بن العاص دعا أبا موسى وحذيفة وعبد الله بن مسعود رضي الله عنهم قبل أن يصلى الغداة ثم خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة فجلس عبد الله الى أسطوانة من المسجد فصلى الركعتين ثم دخل في الصلاة فهذا عبد الله قد فعل هذا ومعه حذيفة وأبو موسى لا ينكران ذلك عليه فدل ذلك على موافقتهما إياه (شرح معانى الأثار، كتاب الصلاة، باب الرجل يدخل المسجد والإمام في صلاة الفجر ولم يكن ركع أيركع أو لا يركع، رقم الحديث- 2037
আব্দুল্লাহ বিন মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ বিন মুসা হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ, হযরত হুযায়ফা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ কে ডাকলেন ফজরের নামাযের আগে। তারপর তারা বের হলেন তার [সাঈদ বিন মুসা রাঃ] নিকট থেকে এমতাবস্থায় যে, [ফজরের] নামায দাঁড়িয়ে গেছে। তখন আব্দুল্লাহ মসজিদের এক স্তম্ভের কাছে বসে গেলেন। তারপর দুই রাকাত [ফজরের সুন্নাত] নামায পড়লেন। তারপর নামাযে [ফরজের জামাতে] শরীক হলেন। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ একাজটি করলেন। সাথে ছিলেন হুযায়ফা ও আবু মুসা রাঃ। কিন্তু তাদের কেউ এটা বারন করেননি। সুতরাং এটি প্রমাণ বহন করে যে, তারাও এতে রাজি ছিলেন। তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৭
আসার নং-০২
عن أبى إسحاق عن عبد الله بن أبى موسى عن عبد الله : انه دخل المسجد والإمام في الصلاة فصلى ركعتي الفجر (رقم الحديث-2038)
আব্দুল্লাহ বিন আবী মুসা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব ছিলেন নামাযে, তখন তিনি [আগে] ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৮}
আসার নং-০৩
عن أبى مجلز قال : دخلت المسجد في صلاة الغداة مع بن عمر وابن عباس رضي الله عنهم والإمام يصلى فأما بن عمر رضي الله عنهما فدخل في الصف وأما بن عباس رضي الله عنهما فصلى ركعتين ثم دخل مع الإمام (رقم الحديث-3029
আবী মিজলাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের নামাযে একদা ইবনে ওমর রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিল। তখন ইবনে ওমর রাঃ কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবনে আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হলেন। শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-৩০২৯
আসার নং -০৪
عن أبى عثمان الأنصاري قال : جاء عبد الله بن عباس والإمام في صلاة الغداة ولم يكن صلى الركعتين فصلى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما الركعتين خلف الإمام ثم دخل معهم وقد روى عن بن عمر مثل ذلك
আবু উসমান আলআনসারী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এমতাবস্থায় এলেন যে, ইমাম সাহেব ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। আর তিনি ফজরের [সুন্নত] দুই রাকাত পড়েননি। তাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন ইমামের পিছনে। তারপর তিনি ইমামের সাথে শরীক হলেন। ইবনে ওমর রাঃ এর ব্যাপারেও এমনি বর্ণিত। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪০}
আসার নাং-০৫
نافعا يقول : أيقظت بن عمر رضي الله عنهما لصلاة الفجر وقد أقيمت الصلاة فقام فصلى الركعتين
হযরত নাফে বলেনঃ আমি ইবনে ওমর রাঃ কে ফজরের নামাযের জন্য জাগালাম এমতাবস্থায় যে, ফজরের নামায জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪২}
আসার নং-০৬
عن أبى الدرداء : أنه كان يدخل المسجد والناس صفوف في صلاة الفجر فيصلى ركعتين في ناحية المسجد ثم يدخل مع القوم في الصلاة
আবু দারদা থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, লোকেরা ফজরের নামাযের কাতারে ছিল, [তথা নামায শুরু করে দিয়েছে] তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন মসজিদের কিনারায়,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪৪}
আসার নং-০৭
عن أبى عثمان النهدي قال : كنا نأتي عمر بن الخطاب رضي الله عنه قبل أن نصلى ركعتين قبل الصبح وهو في الصلاة فنصلى ركعتين في آخر المسجد ثم ندخل مع القوم في صلاتهم
আবু উসমান আননাহদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এর কাছে এলাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত পড়ার আগে। তখন তিনি নামাযরত ছিলেন। তখন আমরা মসজিদের শেষ মাথায় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লাম। তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলাম। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪৬}
আসার নং-০৮
الشعبي يقول : كان مسروق يجىء الى القوم وهم في الصلاة ولم يكن ركع ركعتي الفجر فيصلى ركعتين في المسجد ثم يدخل مع القوم في صلاتهم
শাবী থেকে বর্ণিত। মাসরূক লোকদের কাছে এমন সময় এলেন যখন তারা নামায পড়ছিল। তিনি সে সময় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়েন নি। তাই তিনি মসজিদে দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। তাহাবী শরীফ-২০৪৮
আসার নং-০৯
يزيد بن إبراهيم عن الحسن : أنه كان يقول إذا دخلت المسجد ولم تصل ركعتي الفجر فصلهما وان كان الإمام يصلى ثم ادخل مع الإمام
ইয়াযিদ বিন ইবরাহীম হাসান [বসরী রহঃ} থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, তুমি যদি এমতাবস্থায় মসজিদে প্রবেশ কর যে, তুমি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়নি, তাহলে তা পড় যদিও ইমাম নামায পড়াচ্ছে। তারপর ইমামের সাথে শরীক হও। তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৫০
আসার নং-১০
উবায়েদ ইবনে হাসান থেকে বর্ণিত, আমি (আবদুর রহমান) ইবনে মাকিল রাহ.-কে দেখেছি, তিনি (মসজিদের) দরজায় ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়েছেন। -প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৬৪৮৭
حدثنا وكيع، عن مسعر، عن عبيد بن الحسن، قال: رأيت ابن معقل صلى الركعتين قبل الفجر في السدة.
এছাড়া ইকরিমা ও ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকেও মসজিদের ভেতরে ফজরের সুন্নত পড়ার কথা প্রমাণিত। ইমাম ইবনে বাত্তাল রাহ. (৪৪৯হি.) তাঁর সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে (২/২৮৬) উমর রা.-এর আমলও অনুরূপ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। আর মসজিদের বাইরে পড়া আরো প্রমাণিত আতা ইবনে আবী রাবাহ ও হাম্মাদ ইবনে আবী সুলায়মান রাহ. থেকে।
সুপ্রিয় পাঠক! যাদের মাধ্যমে আমরা দ্বীন-হাদিস পেলাম, তাদের বুঝ নিরাপদ না আমাদের বুঝ নিরাপদ? বিকেরে কাছে প্রশ্ন থাকল? এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, আমরা হাদিস থাকতে সাহাবি-তাবেয়িদেরকে কেন অনুসরণ করবো, প্রিয় ভাই, আপনার কি এই হাদিস চোখে পড়েনি যে, খুলাফা-সাহাবা-তাবেয়িদেরকে আল্লাহর রসূল অনুসরণ করতে বলেছেন।
অত্রতব, প্রমাণিত হলো শুধু ফজরের বেলায় জামাত শুরু হলেও সুন্নাত পড়া যাবে।
প্রশ্ন: খ। কোন সময় জামাতে শরিক হব?
উত্তর: খ। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ফজরের দুই রাকাত সুন্নত জামাত শুরু হলেও পড়ে নিতে হবে যদি জামাত এক রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে সুন্নত বাদ দিয়ে ফরজ পড়ে নিবে। হেদায়া গ্রন্থকার ইমাম মারগিনানী (৫৯৩হি.) রাহ. বলেন,
(ومن انتهى إلى الإمام في صلاة الفجر وهو لم يصل ركعتي الفجر، إن خشي أن تفوته ركعة ويدرك الأخرى، يصلي ركعتي الفجر عند باب المسجد، ثم يدخل)، لأنه أمكنه الجمع بين الفضيلتين، (وإن خشي فوتهما دخل مع الإمام)، لأن ثواب الجماعة أعظم والوعيد بالترك ألزم، ...والتقييد بالأداء عند باب المسجد يدل على الكراهة في المسجد إذا كان الإمام في الصلاة، والأفضل في عامة السنن والنوافل المنزل، هو المروي عن النبي عليه الصلاة والسلام.
অর্থাৎ, যে মসজিদে গিয়ে দেখে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেছে কিন্তু তার সুন্নত পড়া হয়নি, যদি তার মনে হয় যে, সুন্নত পড়লে জামাতের এক রাকাত ছুটে গেলেও আরেক রাকাত পাওয়া যাবে, তাহলে মসজিদের দরজায় সুন্নত পড়ে নিবে। তারপর জামাতে শরীক হবে। কারণ এখানে উভয় ফযীলতের (ফজরের সুন্নতের ফযীলত ও জামাতের ফযীলত) মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে। আর যদি মনে হয় যে, উভয় রাকাত ছুটে যাবে তাহলে জামাতে শরীক হয়ে যাবে। কারণ জামাতের মর্যাদা বেশি এবং তা পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সতর্কবাণী এসেছে।
প্রশ্ন: গ। ফজরের সুন্নাত কখন আদায় করবে, যা আগে পড়া হয়নি?
উত্তর: গ। উপরোক্ত ছুরতেও যখন ফরজের সুন্নাত আদায় করা সম্ভব হবে না, তখন সুন্নাতটি সূর্যোদয়ের পরে আদায় করবে। দলীল:
হাদিস নং-০১
فى موطا مالك- وحدثني عن مالك أنه بلغه أن عبدالله بن عمرفاتته ركعتاالفجرفقضاهمابعدأنطلعت الشمس( موطا مالك النداءللصلاة،باب ماجاءفي ركعتي الفجر،رقم-422
অনুবাদ-হযরত ইমাম মালেক রহ: বলেন, আমি জেনেছি যে, আবদুল্লাহ বিন ওমর রা: এর ফজরের দুই রাকাআত ছুটে গিয়েছিল। তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করেন। মুয়াত্তা মালিক-৪৫
হাদিস নং-০২
وفى جامع الترمذى- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يصل ركعتي الفجرفليصلهمابعدماتطلع الشمس (جامع الترمذى-أبواب الصلاةعن رسول الله صلى الله عليه وسلم، باب ماجاءفي إعادتهمابعدطلوع الشمس،رقم-423)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেন-যে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত (সময়মতো) পড়ল না সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে। জামে তিরমিজী-৪২৩
হাদিস নং-০৩
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: বলেন-আমি নবীজি (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের নামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই, এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। সহীহ বুখারী-১/৮২
হাদিস নং-০৪
আমর বিন আবাসা আস সুলামী রা: বলেন-আমি বললাম-হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে নামায সম্পর্কে শিক্ষা দিন, রাসুলুল্লাহ সা: বললেন-ফজরের নামায আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যখানে উদিত হয়, এবং সে সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে। সহীহ মুসলিম-১/২৭৬
ফজরের ফরজের পর সুন্নাত আদায়ের দলীল:
কায়েস রা: বলেন-রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মসজিদে) তাশরীফ আনলেন। আমি তাঁর সঙ্গে ফজরের নামায পড়লাম। নামায শেষে প্রস্থানের সময় তিনি দেখলেন, আমি নামায পড়ছি। তিনি তখন বললেন-কায়েস! তুমি দুই নামায একসাথে পড়ছো কেন? আমি বললাম আমার ফজরের দুই রাকআত (সুন্নত) পড়া হয়নি। তখন নবী (ﷺ) فلا اذن তাহলে অসুবিধা নেই/তবুও অনুমতি নেই।
এই হাদিসের জবাব
আমরা ভালো করে খেয়াল করলে বুঝব যে, উক্ত হাদিস দিয়ে দলিল দেয়া শুদ্ধ হবেনা দুটি কারণে। যথা-
১. উক্ত হাদিসের ” فلا اذن “শব্দটি দ্বারা কী উদ্দেশ্য তা স্পষ্ট নয়। এর অর্থ দু’টি হতে পারে তথা-ক. কোন অসুবিধা নেই। খ. তারপরও অনুমতি নেই। সুতরাং যেহেতো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছেনা নবীজির শব্দ দ্বারা কী উদ্দেশ্য তাই এটিকে দলিল ছাড়া মেনে নেবার কোন যুক্তি নেই। অন্যদিকে নিষিদ্ধতার হাদিস স্পষ্ট বুঝাচ্ছে যে, এ সময় নামায পড়া জায়েজ নয়, এবং এর কাযা করবে সূর্য উদিত হবার পর, যেমন পূর্বে বর্ণিত বুখারী মুসলিম ও মুয়াত্তা মালিক ও তিরমিজী শরীফের হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়।
২.উক্ত হাদিসটি মুরসাল তথা এর সূত্র নিরবচ্ছিন্ন নয়। যেমন ইমাম তিরমিজী রহ: এই হাদিস বর্ণনা করার পর উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মন্তব্য করেন-وإنمايروى هذاالحديث مرسلا…….وإسنادهذاالحديث ليس بمتصل
অনুবাদ-বর্ণাটি মুরসাল, এর সনদ মুত্তাসিল(নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে) নয়। কেননা মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম কায়েস থেকে শোনেননি।
প্রশ্ন: ঘ। সুন্নাত/ফজরের সুন্নাত কোথায় আদায় করবে?
উত্তর: ঘ। জামাতের কাতারে সুন্নাত পড়া মাকরুহ। তাই কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন এক জায়গায় সুন্নাত আদায় করবে। কিফায়াতুল মুফতী ৪/৫৫১
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه قال: سمع قوم الإقامة فقاموا يصلون، فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال: أصلاتان معا؟ أصلاتان معا؟ وذلك في صلاة الصبح في الركعتين اللتين قبل الصبح.
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, কিছু সাহাবী ইকামত শুনে (ফজরের সুন্নত) নামায পড়তে দাঁড়ালেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে আগমন করলেন। বললেন, দুই নামায এক সাথে? দুই নামায এক সাথে? -মুয়াত্তা মালেক ১/৯৮
উক্ত হাদিসের ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, একই জায়গায় ফরয ও সুন্নত নামাযের মিশ্রণ হয়ে যায়, এতে জামাতের গুরুত্ব কমে যায়, জামাতের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দেয়, ইমামের বিরোধিতা হয়, তাই জামাতের কাতারে সুন্নাত পড়া নিষেধ। বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/২৫৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,