আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১৬৫: ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর গুলো কেন দেওয়া হয়?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৬৫: সম্মানিত মুফতি সাহেবের কাছে আমার জিজ্ঞাসা! দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর গুলো কেন দেওয়া হয়? কারণ কি এ বিষয়ে জানতে চাই! তারিখ -৩১/০১/২০২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি 


মাওলানা আব্দুল হালিম রংপুর থেকে 


জবাব: প্রথমমত কথা হলো,

 ঈদুল ফিতরের তাকবীরের নির্দেশ:

 রমযান মাসের সমাপ্তি লগ্নে আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দার জন্য তাকবীর দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন: وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ" তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর) এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫] তাকবীর উচ্চারণ কর মানে: তোমাদের অন্তর দিয়ে ও মুখ দিয়ে আল্লাহ্‌র মহত্ব ঘোষণা কর। সেটি তাকবীরের শব্দাবলীর মাধ্যমে হতে পারে। যেমন আপনি এভাবে বলতে পারেন:


الله أكبر ، الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد 


(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)(অনুবাদ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।)


ঈদুল আযহারে তাকবীবের নির্দেশ : 

মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে নির্দেশ দেন-

وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

'আর তোমাদের আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫


সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন। হযরত ইবনে উমর রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের সুর তুলত। ইবনে ওমর রা. পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবীর বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তার তাকবীরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবীরে মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন।-বুখারী-ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬


হযরত ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট আমলের দিক থেকে আশরায়ে যিলহজ্ব হতে শ্রেষ্ঠ ও অধিক প্রিয় কোনো দিন নেই। অতএব তোমরা এতে তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ বেশি বেশি করো।-মুসনাদে আহমদ ২/৭৫ হাদীস : ৫৪৪৬; তাবারানী মুজামে কাবীর, হাদীস : ১১১১৬


 


দ্বিতীয়ত কথা হলো,

প্রিয় নবী (ﷺ) -এর কুরআন অবতীরর্ণ হয়েছেন, তিনি কুরআনের আদেশ-নিষেধ সবচেয়ে ভাল বুঝতেন। দলীল:  

  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দে বলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْأَنَ তাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন।’ তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনি চরিত্রমালার জীবন্ত প্রতীক।


আমার গবেষণায় মনে হয়, এই কারণেই তিনি দুই ঈদে বেশি বেশি তাকবীর বলতেন, আর সেই তাকবীবের অংশ হিসেবে ঈদের নামাজের মধ্যেও অতিরিক্ত তাকবীর বলেছেন।


এখন প্রশ্ন হলো আমরা কেন, ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর বললো, এর জবাব হলো, 


لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ [الاحزاب: ]

নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১


وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي،

অর্থ: আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস হতে , রসূল (ﷺ) বলেন, যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে। বুখারী, হাদীস নং-৬০০৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০


সুতরাং রসূল (ﷺ) যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, আমরাও মুসলিম উম্মাহও সেভাবে নামাজ পড়ি।


আসল কথা হলো,

الله أكبر ، الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر 

، الله أكبر ، ولله الحمد 

 বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহিদ, আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসার কথা; মুসলিম জাতি এ বাক্য/জিকির যা দ্বারা গুঞ্জরিত হয় দুই ঈদে সর্বত্র এটার অংশ হিসেবে নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর বলা হয়।

 


والله اعلم بالصواب

আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।



উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক