আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৯০৭: পুরুষের জন্য তামার আংটি ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯০৭: 

আসসালামু আলাইকুম। একজন ব্যক্তি জানতে চেয়েছে,  হাতের ব্যথার জন্য তামার আংটি ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এটা ব্যবহার করা পুরুষের জন্য জায়েজ হবে কি?


তারিখ:  ২০/০২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  নুরুজ্জামান হাফিজাহুল্লাহু দিনাজপুর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, পুরুষের জন্য সকল প্রকার অলঙ্কার নিষিদ্ধ। আর আংটির মধ্যে কেবলমাত্র রূপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয আছে। তবে তা এই শর্তে যে, রূপার পরিমাণে এক মিসকালের চেয়ে কম অর্থাৎ সাড়ে চার মাশার চেয়ে কম হতে হবে। গ্রামের হিসাবে এক মিসকালের পরিমাণ হল ৪.৩৭৪ গ্রাম। রূপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতব বা বস্তুর আংটি ব্যবহার করা পুরুষের জন্য নিষেধ। দলিল -

হাদিস নং-০১

أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ سُلَيْمَانَ قَالَ حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُسْلِمٍ مِنْ أَهْلِ مَرْوَ أَبُو طَيْبَةَ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ حَدِيدٍ فَقَالَ مَا لِي أَرَى عَلَيْكَ حِلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ فَطَرَحَهُ ثُمَّ جَاءَهُ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ شَبَهٍ فَقَالَ مَا لِي أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ الْأَصْنَامِ فَطَرَحَهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ أَتَّخِذُهُ قَالَ مِنْ وَرِقٍ وَلَا تُتِمَّهُ مِثْقَالًا


৫১৯৪. আহমাদ ইবনে সুলাইমান (রাহঃ) ......... বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এমন এক ব্যক্তি আসলো, যার হাতে ছিল একটি লোহার আংটি। তিনি বললেনঃ তোমার হাতে দোযখীদের পোশাক দেখছি কেন? তখন সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দিল। দ্বিতীয়বার যখন সে আসলো, তখন তার হাতে ছিল পিতলের আংটি। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ আমি তোমার থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? তখন সে তা ফেলে দিল এবং বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তা কী দিয়ে তৈরী করবো? তিনি বললেনঃ রূপা দিয়ে, আর তা এক মিসকাল পূর্ণ করবে না (অর্থাৎ যেন সাড়ে চার মাষা হতে কম হয়)।


’Abdullah bin Buraidah narrated from his father that:

A man came to the Prophet [SAW] and he was wearing an iron ring. He said: "Why do I see you wearing the jewelry of the people of Hell?" He threw it away, then he came and he was wearing a brass ring. He said: "Why do I notice the stench of idols from you?" So he threw it away, and said: "O Messenger of Allah, what should I use?" He said: "Silver, but it should not equal a Mithqal."

সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৫১৯৫ (আন্তর্জাতিক নং ৫১৯৫)



হাদীসের ব্যাখ্যা:

পুরুষের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা


হযরত বারা ইব্ন আযিব রাযি. বলেন- (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন)। এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষের জন্য, নারীর জন্য নয়। পুরুষের জন্য কোনওরূপ স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয নয়, তার পরিমাণ যত অল্পই হোক না কেন। স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয কেবল নারীর জন্য, তাও যদি অহংকার ও প্রদর্শনের জন্য না হয়। অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যায়, পুরুষের জন্য জান্নাতে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাজেই যেসকল পুরুষ দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করবে, জান্নাতে তারা তা পাবে না। এটা তাদের জন্য জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সতর্কবাণী। কাজেই জান্নাতকামী পুরুষদের কর্তব্য দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তা থাকতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে তাদেরকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কার ও সাজসজ্জায় ভূষিত করা হবে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا “তাদেরকে সেখানে স্বর্ণকঙ্কনে অলংকৃত করা হবে। আর তারা উচ্চ আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় মিহি ও পুরু রেশমী কাপড় পরিহিত থাকবে। কতইনা উৎকৃষ্ট প্রতিদান এবং কত সুন্দর বিশ্রামস্থল।

অপর এক আয়াতে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদেরকে সজ্জিত করা হবে সোনার কাঁকন ও মণি-মুক্তা দ্বারা। আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।


হাদীসের বর্ননাকারী: বুরাইদা আসলামী (রাঃ)


হাদিস নং-০২

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ‏:‏ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ، عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ بْنِ وَائِلٍ السَّهْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَفِي يَدِهِ خَاتَمٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَأَعْرَضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْهُ، فَلَمَّا رَأَى الرَّجُلُ كَرَاهِيَتَهُ ذَهَبَ فَأَلْقَى الْخَاتَمَ، وَأَخَذَ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ فَلَبِسَهُ، وَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ‏:‏ هَذَا شَرٌّ، هَذَا حِلْيَةُ أَهْلِ النَّارِ، فَرَجَعَ فَطَرَحَهُ، وَلَبِسَ خَاتَمًا مِنْ وَرِقٍ، فَسَكَتَ عَنْهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏.‏

১০২৯. আম্‌র ইব্‌ন শুয়ায়ব ইব্‌ন মুহাম্মাদ হইতে পর্যায়ক্রমে তাহার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত তিনি তদীয় পিতার প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর দরবারে স্বর্ণ নির্মিত আংটি পরিহিত অবস্থায় উপনীত হইল। নবী করীম (ﷺ) তাহার দিক হইতে মুখ ফিরাইয়া রহিলেন। সেই ব্যক্তি যখন স্বর্ণ ব্যবহারের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর অপসন্দ প্রত্যক্ষ করিল তখন সে ঐ আংটিটি ফেলিয়া দিয়া একটি লোহার আংটি পরিধান করিল এবং পুনরায় নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইল। তিনি বলিলেন, ইহা মন্দ ইহা হইতেছে দোযখবাসীদের অলংকার। তখন সেই ব্যক্তি ফিরিয়া গেল এবং উহাও ফেলিয়া দিয়া একটি রৌপ্য নির্মিত আংটি পরিধান করিল। তখন নবী করীম (ﷺ) এই ব্যাপারে কোনরূপ মন্তব্য করিলেন না।

—আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ১০২৯


হাদিস নং-০৩

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ أَبِي رِزْمَةَ، - الْمَعْنَى - أَنَّ زَيْدَ بْنَ حُبَابٍ، أَخْبَرَهُمْ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُسْلِمٍ السُّلَمِيِّ الْمَرْوَزِيِّ أَبِي طَيْبَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ شَبَهٍ فَقَالَ لَهُ " مَا لِي أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ الأَصْنَامِ " . فَطَرَحَهُ ثُمَّ جَاءَ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ حَدِيدٍ فَقَالَ " مَا لِي أَرَى عَلَيْكَ حِلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ " . فَطَرَحَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَىِّ شَىْءٍ أَتَّخِذُهُ قَالَ " اتَّخِذْهُ مِنْ وَرِقٍ وَلاَ تُتِمَّهُ مِثْقَالاً " . وَلَمْ يَقُلْ مُحَمَّدٌ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُسْلِمٍ . وَلَمْ يَقُلِ الْحَسَنُ السُّلَمِيِّ الْمَرْوَزِيِّ .

৪১৭৫. হাসান ইবনে আলী (রাহঃ) .... বুরায়দা (রাযিঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা জনৈক ব্যক্তি পিতলের আংটি পরে নবী (ﷺ) এর নিকট আসলে তিনি তাকে বলেনঃ ব্যাপার কি, আমি তোমার থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? একথা শুনে সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দেয়। এরপর সে ব্যক্তি একটি লোহার আংটি পরে আসলে, তিনি তাকে বলেঃ আমি তোমাকে জাহান্নামীদের অলংকার পরা অবস্থায় দেখছি! তখন সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দেয় এবং বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি ধরনের আংটি ব্যবহার করবো? তিনি বলেনঃ এক ‘মিছকাল’ ওজনের কম রূপা দিয়ে আংটি তৈরী করে তা ব্যবহার কর।


Narrated Buraydah ibn al-Hasib:


A man came to the Prophet (ﷺ) and he was wearing a signet-ring of yellow copper. He said to him: How is it that I notice the odour of idols in you? So he threw it away, and came wearing an iron signet ring. He (the Prophet) said: What is it that I see you wearing the adornment of the inhabitants of Hell? So he threw it away. He asked: Messenger of Allah, what material I must use? He said: Make it of silver, but do not weigh it as much as a mithqal,


The narrator Muhammad did not say: " ’Abd Allah b. Muslim," and al-Hasan did not say: "al-Sulami al-Marwazi."

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ৪২২৩)

হাদীসের বর্ননাকারী: বুরাইদা আসলামী (রাঃ)


সারকথা হলো,  রুপার ছাড়া অন্য কোন আংটি ব্যবহার করা পুরুষের জন্য জায়েজ নেই, সুতরাং তামা-পিতলের আংটি ব্যবহার করা জায়েয হবে না।



  والله اعلم بالصواب