জিজ্ঞাসা-১৫৬: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার একটি প্রশ্ন : বোট জুতা যেটা সামরিক লোকেরা পরে। তার উপর মাসের করা করা জায়েজ কি না? উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
মাওলানা জুনাইদ জাজিরা, শরীয়তপুর
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকটি ভাবে ভাগ করেছি:-
প্রশ্ন: ক। চামড়ার মুজা ব্যতিত অন্য যে কোন মোজা বা জুতোর মাসেহ করতে শর্ত আছে কি?
উত্তর: ক। মুষ্টিমেয় দু-চার আলেম (ইবনে মুনযির ও ইবনে তাইমিয়া ও বর্তমানে তাদের অনুসারী ) ব্যতিত জমহুর ওলামায়ে কেরাম চামড়ার মুজা ব্যতিত অন্য যে কোন মোজা বা জুতোর মাসেহ করতে শর্তারোপ করেছেন। মোজায় নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর মাসেহ জায়েয হবে। শর্তগুলো হচ্ছে :
ক) মোজা এমন মোটা ও পুরু হওয়া যে, জুতা ছাড়া শুধু মোজা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা যায়। এতে মোজা ফেটে যায় না এবং নষ্টও হয় না।
খ) পায়ের সাথে কোনো জিনিস দ্বারা বাঁধা ছাড়াই তা লেগে থাকে এবং তা পরিধান করে হাঁটা যায়।
গ) মোজা এমন মোটা যে, তা পানি চোষে না এবং তা ভেদ করে পানি পা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
ঘ) তা পরিধান করার পর মোজার উপর থেকে ভিতরের অংশ দেখা যায় না। সচরাচর ব্যবহৃত সুতা বা পশমের মোজায় যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না তাই এর উপর মাসেহ জায়েয হবে না। হেদায়া কিতাবুত তহারাত-১/৬১; বাদাইস সানায়ে-১/১০১
ولا يجوز المسح على الجوربين عند أبي حنيفة إلا أن يكونا مجلدين أو منعلين وقالا يجوز إذا كانا ثخينين لا يشفان “(هداية، كتاب الطهارة، باب المسح على الخفين-1/61)
وفى البدائع- وَأَمَّا الْمَسْحُ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ، فَإِنْ كَانَا مُجَلَّدَيْنِ، أَوْ مُنَعَّلَيْنِ، يُجْزِيهِ بِلَا خِلَافٍ عِنْدَ أَصْحَابِنَا وَإِنْ لَمْ يَكُونَا مُجَلَّدَيْنِ، وَلَا مُنَعَّلَيْنِ، فَإِنْ كَانَا رَقِيقَيْنِ يَشِفَّانِ الْمَاءَ، لَا يَجُوزُ الْمَسْحُ عَلَيْهِمَا بِالْإِجْمَاعِ، وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ.(بدائع الصنائع-1/101
প্রশ্ন: খ। জুতার উপর কি মাসেহ জায়েজ ?
উত্তর: খ। উপরোক্ত শর্তাবলি পাওয়া গেলে জুতোর উপর মাসেহ জায়েজ। যদি কোন জুতা পায়ের টাখনু পর্যন্ত ঢেকে রাখে তাহলে সে জুতার উপর মাসেহ করা জায়েয আছে। কেননা সেটা চামড়ার মোজার সমতুল্য।
তবে, পায়ের যতটুকু স্থান ধৌত করা ফরয জুতা যদি ততটুকু স্থান আচ্ছাদিত না করে, সে স্থানটুকু হচ্ছে- পায়ের টাখনুসহ সম্পূর্ণ পায়ের পাতাদ্বয়; সেক্ষেত্রে জমহুর আলেমের মতে, মাসেহ করা জায়েয হবে না। দেখুন: আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা-৩৭/২৬৪
জামে তিরমিযী ১/১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮২; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪৩-৩৪৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৮; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ১২০; মাজমাউল আনহুর ১/৭৫; আননাহরুল ফায়েক ১/১২৩
এ সম্পর্কে হাদিস:
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ، وَالنَّعْلَيْنِ
মুগীরা বিন শোবা (রা.) বর্ণিত হাদীস: নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) একবার ওযূ করলেন এবং জাওরাব ও দু জুতার উপর মাসাহ করলেন।
আবু দাউদ-১৫৯, তিরমিযী-৯৯, আহমদ -৪/২৫২
প্রশ্ন: গ। মাসেহ পর মোজা বা জুতো খুললে কি মাসেহ বাতিল হবে?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, মাসেহ পর মোজা বা জুতো খুললে কি মাসেহ বাতিল হবে। দলীল:
সফওয়ান বিন আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত,
كَانَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفَرًا أَوْ مُسَافِرِينَ أَنْ لَا نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهِنَّ، إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ، وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍগ্ধ
অর্থাৎ: ‘আমরা যখন সফরে থাকতাম, তখন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে জানাবাতের অপবিত্রতা ছাড়া তিন দিন ও তিন রাত আমাদের মোজা না খুলতে নির্দেশ দিতেন। তবে পেশাব-পায়খানা ও ঘুমের কারণে কোন সমস্যা হত না।
সুতরাং, বুঝা গেল, নিমেণর কারণগুলো সংঘটিত হলে মোজার উপর মাসাহ করা বৈধ হবে না-
১। জানাবাত ও এ জাতীয় বিষয় যা গোসল ওয়াজিব করে। যেমন হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্রতা অর্জন।
২। মাসাহ এর সময়সীমা শেষ হলে।
৩। মোজা খুলে ফেললে এবং মোজা পরিধানের পূর্বেই পবিত্রতা নষ্ট হলে। সূত্র: ইখতিলাফুল উলামা (৩১ পৃ.) আল-আওসাত্ব (১/৪৫৮)
প্রশ্ন: ঘ। সেনাবাহিনীর বুটের ওপর মাসেহ জায়েজ কি না?
উত্তর: ঘ। আমার জানা নেই, তাহকিক নেই, উপরোক্ত শর্তাবলি সেনাবাহিনীর জুতো আছে কি না? সৈনিকদের জিজ্ঞেস করলে , বাস্তবতা জানা যাবে। তবে সতর্কতা হলো, বুট জুতোর ওপর মাসেহ করলে জুতো পড়েই সালাত আদায় করতে হবে, আর খুললে মাসেহ ভঙ্গ হবে আর দেখতে হবে জুতোর তলায় কোন নাপাকি আছে কিনা?
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক