আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

দ্বীনি সচেতনতা-১৭: মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি

No Comments

 



মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি


দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আঃ)। তাঁদের থেকেই দুনিয়াতে মানুষ বিস্তার লাভ করেছে (নিসা ৪/১)। সে হিসাবে পৃথিবীর সকল মানুষ ভাই ভাই। আদর্শিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মুসলমানরা ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর (হজ্জ ২২/৭৮)। সুতরাং যেদিক দিয়েই বিবেচনা করা হোক না কেন পৃথিবীর সকল মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। তাই মানুষ একে অপরকে কিংবা এক মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। কারণ পরস্পরকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ নিবন্ধে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।-


মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ :

মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِيْنًا، ‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (আহযাব ৩৩/৫৮)। মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,


يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِهِ،

‘হে ঐ জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মযবূত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও’।[1] 


মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যম :

মানুষকে প্রধানত কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়ে থাকে। কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে গালি দেওয়া, গীবত-তোহমত, চোগলখুরী করা, খোঁটা দেওয়া, তুচ্ছ জ্ঞান করা ইত্যাদি বোঝায়। আর কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে যুলুম করা, ধোঁকা-প্রতারণা, রাস্তা বন্ধ করা, সম্পদ জবর দখল করা ও হত্যা করা ইত্যাদি বুঝায়।


ক. কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া :

আঘাতের ক্ষত ও ব্যথা দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত ও ক্ষতের নিরাময় সহজে হয় না। সেজন্য কবি বলেন,

جِرَاحَاتُ السِّنَانِ لَهَا الْتِئَامُ * وَلاَ يَلْتَامُ مَا جَرَحَ اللِّسَانُ

‘তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে, কিন্তু জিহবার ক্ষতের কোন প্রতিষেধক নেই’।[2] তাই কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত মানুষ সবচেয়ে বেশী স্মরণে রাখে এবং এ আঘাত সর্বাধিক ব্যথাতুর হয়। কথার দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-


১. গালি দেওয়া :

মানুষকে গালি দেওয়া হ’লে সে কষ্ট পায়। আর এটা কবীরা গোনাহ। পরকালে এর প্রতিকার হবে নেকী প্রদান বা গোনাহ বহনের মাধ্যমে। তাছাড়া কাউকে গালি দেওয়া গোনাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী’।[3] মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করার শামিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَابُّ الْمُؤْمِنِ كَالْمُشْرِفِ عَلَى الْهَلَكَةِ، ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করার ন্যায়’।[4] উভয় গালিদাতাকে রাসূল (ছাঃ) শয়তান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَكَاذَبَانِ وَيَتَهَاتَرَانِ، ‘উভয় গালমন্দকারী দুই শয়তান। এরা পরস্পরের উপর মিথ্যা দোষারোপ করে এবং অসত্য বলে’।[5]


কোন মুসলিমকে গালি দিলে শয়তানকে সহযোগিতা করা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদ পানকারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট হাযির করা হ’ল। তিনি আদেশ দিলেন, ওকে তোমরা মার। আবূ হুরায়রা বলেন, (তাঁর আদেশ অনুযায়ী আমরা তাকে মারতে আরম্ভ করলাম।) আমাদের কেউ তাকে হাত দ্বারা মারতে লাগল, কেউ তার জুতা দ্বারা, কেউ নিজ কাপড় দ্বারা। অতঃপর যখন সে ফিরে যেতে লাগল, তখন কিছু লোক বলে উঠল, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুক। একথা শুনে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, لاَ تَقُولُوْا هَكَذَا لاَ تُعِينُوْا عَلَيْهِ الشَّيْطَانَ ‘এরূপ বলো না এবং ওর বিরুদ্ধে শয়তানকে সহযোগিতা করো না’।[6]


গালিদাতাদের মধ্যে যে প্রথমে শুরু করবে সব গোনাহ তার উপরে বর্তাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِئِ مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُومُ، ‘পরস্পর গালিগালাজকারীর মধ্যে যে প্রথমে আরম্ভ করে উভয়ের দোষ তার উপর বর্তাবে, যতক্ষণ না অপরজন সীমালঙ্ঘন করে’।[7] এমনকি গালিদাতা পরকালে নিঃস্ব হবে এবং নেকী দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে ক্বিয়ামত দিবসে ছালাত, ছিয়াম, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হ’তে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[8] সুতরাং মুসলমানকে গালি দিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হ’তে না হয়।


২. গীবত-তোহমত :

গীবত-তোহমতের মাধ্যমেও মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। গীবত অর্থ দোষচর্চা, পরনিন্দা। আর তোহমত অর্থ মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। এ দু’টিই পরিবারে ও সমাজে নানা বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির জন্য দায়ী। মানুষের মধ্যকার সুসম্পর্কে চিড় ধরাতে এদু’টি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এ দু’টি গোনাহ সমাজের মানুষ হেসে-খেলে করে থাকে। এমনকি অনেকে একে দোষের মনে করে না। অথচ উভয়টিই কবীরা গোনাহ ও বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট। বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ এ গোনাহ মাফ করবেন না। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের ইয্যত-সম্মান নষ্ট হয়, তার হক বিনষ্ট হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। অনেকে দোষচর্চা করে মনে করেন যে, তিনি সঠিক কথাইতো বলছেন। সুতরাং সেটা দোষের হবে কেন? কিন্তু কারো মধ্যে থাকা দোষ-ত্রুটি তার অবর্তমানে আলোচনা করাই গীবত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,


أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِى أَخِى مَا أَقُولُ قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ.

‘তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপসন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, যা আমি বলি? তিনি বললেন, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বিদ্যমান না থাকে, তবে তুমি মিথ্যারোপ করলে’।[9]


গীবত বা দোষচর্চা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ، ‘আর একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপসন্দ করে থাক’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।


অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) গীবত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيْمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِيْنَ- ‘হে ঐসব লোক! যারা কেবল মুখে ঈমান এনেছ। কিন্তু তাদের হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না’।[10]


পার্থিব শাস্তি : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হ’লে লক্ষ্য করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী করীম (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায়)। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন, তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোশত দিয়ে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’।[11]


আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, আপনার জন্য ছাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাফিয়া বেঁটে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহ’লে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে’।[12]


ক্বায়েস বলেন, আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়, তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম’।[13]


পরকালীন শাস্তি : রাসূল (ছাঃ) উম্মতকে গীবতের পরকালীন শাস্তি সম্বন্ধেও অবহিত করেছেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَمَّا عُرِجَ بِى مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِى أَعْرَاضِهِمْ- ‘মি‘রাজে গিয়ে আমাকে এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হ’ল যাদের নখগুলি সব ছিল পিতলের। যা দিয়ে তারা তাদের মুখ ও বুক খামচাচ্ছিল। আমি জিব্রীলকে বললাম, এরা কারা? তিনি বললেন, যারা মানুষের গোশত খেত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের সম্মান নষ্ট করত’।[14]


অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللهَ يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ كُسِىَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ فَإِنَّ اللهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের গীবতের বিনিময়ে এক গ্রাসও খাদ্য ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অপমান করার বিনিময়ে কোন কাপড় পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুন পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে লোকদের নিকট নিজের বড়ত্ব যাহির করে এবং শ্রেষ্ঠত্ব দেখায়, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ স্বয়ং ঐ ব্যক্তির শ্রুতি ও রিয়া প্রকাশ করে দেবার জন্য দন্ডায়মান হবেন’।[15]


তোহমত বা অপবাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَكْسِبْ خَطِيئَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِيئًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا، ‘যে ব্যক্তি কোন অপরাধ কিংবা পাপ করে, অতঃপর তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর চাপায়, সে নিজেই উক্ত অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপভার বহন করবে’ (নিসা ৪/১১২)। তিনি আরো বলেন,إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ، ‘মিথ্যা তো কেবল তারাই রচনা করে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী’ (নাহল ১৬/১০৫)।


৩. চোগলখুরী করা :

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে চোগলখুরী করা। আর তা হচ্ছে দুই ভাই বা বন্ধুর মাঝে সম্পর্ক বিনষ্টের উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে পরস্পরের দোষ উল্লেখ করা। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,


أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيْمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ.

‘মিথ্যা অপবাদ কি জিনিস আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী করা। জনসমক্ষে কারো সমালোচনা করা’।[16] আরেকটি হাদীছে এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনু গানম ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,


خِيَارُ عِبَادِ اللهِ الَّذِيْنَ إِذَا رُءُوْا ذُكِرَ اللهُ وَشِرَارُ عِبَادِ اللهِ الْمَشَّاءُوْنَ بِالنَّمِيْمَةِ الْمُفَرِّقُوْنَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ-

‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা মানুষের পরোক্ষভাবে নিন্দা করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র লোকেদের পদস্খলন প্রত্যাশা করে’।[17] অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,


أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِخِيَارِكُمْ. قَالُوْا بَلَى. قَالَ فَخِيَارُكُمُ الَّذِيْنَ إِذَا رُؤُوْا ذُكِرَ اللهُ تَعَالَى، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِشِرَارِكُمْ. قَالُوا بَلَى. قَالَ فَشِرَارُكُمُ الْمُفْسِدُوْنَ بَيْنَ الأَحِبَّةِ الْمَشَّاءُونَ بِالنَّمِيْمَةِ الْبَاغُوْنَ البُرَآءَ الْعَنَتَ.

‘আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? ছাহাবীগণ বলেন, হ্যঁা। তিনি বলেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরো বলেন, আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যারা চোগলখুরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়’।[18]


চোগলখুরীর পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيْطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِى قُبُوْرِهِمَا، فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيْرٍ، ثُمَّ قَالَ : بَلَى، كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِى بِالنَّمِيْمَةِ- ‘একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনা বা মক্কার একটি বাগানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দু’টি কবর থেকে দু’জন মানুষের শব্দ শোনেন, যাদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। তবে সেটি তেমন বড় কোন কারণে নয়। অতঃপর তিনি বললেন, এদের এক ব্যক্তি পেশাব থেকে আড়াল (সতর্কতা অবলম্বন) পর্দা করত না এবং অন্য ব্যক্তি চোগলখুরী করত’।[19]


৪. মন্দ নামে ডাকা :

মানুষকে মন্দ নামে ডাকা তাকে কষ্ট দেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। যেটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ، ‘আর তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ। যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।


জুরাইরা ইবনুয যাহহাক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের বনী সালিমাহ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ’ (হুজুরাত ৪৯/১১)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আমাদের মাঝে আগমন করেন তখন আমাদের প্রত্যেকেরই দু’-তিনটা করে নাম ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে অমুক! এভাবে ডাকলে তারা বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! থামুন, সে ব্যক্তি এ নামে ডাকলে অসন্তুষ্ট হবে। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হ’ল ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না’।[20]


৫. উপহাস করা :

কোন মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবারই কোন না কোন দিক দিয়ে দুর্বলতা থাকে। তাই কোন মানুষকে উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ মনে অত্যন্ত কষ্ট পায়। এটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।


৬. তুচ্ছজ্ঞান করা :

কোন মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করলে বা হেয় ভাবলে সে যারপর নাই কষ্ট পায়। এ কাজ থেকে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন এবং এর অশুভ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,


لاَ تَحَاسَدُوْا وَلاَ تَنَاجَشُوْا وَلاَ تَبَاغَضُوْا وَلاَ تَدَابَرُوْا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ. التَّقْوَى هَا هُنَا. وَيُشِيْرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.

‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাক্বওয়া এখানে, এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনবার স্বীয় বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইয্যত-আব্রু হারাম’।[21]


তিনি আরো বলেন, إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا اسْتِطَالَةَ الْمَرْءِ فِي عِرْضِ أَخِيهِ. ‘সবচেয়ে বড় সূদ হ’ল অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানহানি করা’।[22]


(চলবে)


[1]. তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৩৯।


[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/১৭৩; মিরক্বাত ৩/৫৯ পৃঃ।


[3]. বুখারী হা/৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।


[4]. বায্যার, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮০।


[5]. আহমাদ হা/১৭৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯৬।


[6]. বুখারী হা/৬৭৭৭; আবূদাঊদ হা/৪৪৭৭; মিশকাত হা/৩৬২৬।


[7]. মুসলিম হা/২৫৮৭; আবূদাঊদ হা/৪৮৯৪; মিশকাত হা/৪৮১৮।


[8]. মুসলিম হা/২৫৮১; তিরমিযী হা/২৪১৮; মিশকাত হা/৫১২৭।


[9]. মুসলিম হা/২৫৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৬; ছহীহাহ হা/১৪১৯।


[10]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪।


[11]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮।


[12]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৫; মিশকাত হা/৪৮৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৩৪।


[13]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩২, সনদ ছহীহ।


[14]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৮-৭৯; মিশকাত হা/৫০৪৬; ছহীহাহ হা/৫৩৩।


[15]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮১; মিশকাত হা/৫০৪৭ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/৯৩৪।


[16]. মুসলিম হা/৬৮০২।


[17]. আহমাদ হা/১৭৯৯৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৬৭০৮; ছহীহাহ হা/২৮৮৯; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৪; মিশকাত হা/৪৮৭১-৭২।


[18]. আহমাদ হা/২৭৬৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩২৩, সনদ হাসান।


[19]. বুখারী হা/২১৬; মুসলিম হা/২৯২; মিশকাত হা/৩৩৮।


[20]. আবূ দাঊদ হা/৪৯৬২; ইবনু মাজাহ হা/৩৭২১।


[21]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৮৫।


[22]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৬; ছহীহাহ হা/১৪৩৩, ৩৯৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/২২০৩, ২৫৩১; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৩৩।





বিষয়সমূহ: পরকাল

জরুরি আমল-০১: মৃত বাবা-মার নাম নেবার সময় সাথে "রহিমাহুল্লাহু" বলার অভ্যেস করুন।

No Comments

 



মৃত বাবার নাম নেবার সময় সাথে "রহিমাহুল্ল-হ্/ রহমাতুল্লাহি আলাইহি" বলার অভ্যেস করুন।

নোট: এটি একটি উত্তম দুআ, অর্থ হলো আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

মায়ের ক্ষেত্রে "রহিমাহাল্ল-হ্/ রহমাতুল্লাহি আলাইহা।"

নোট: এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার ও দুআর পাওয়ার হকদার হলো পিতা-মাতা।


ভাই-বোন, দাদা-দাদী,

বন্ধু, প্রতিবেশী অথবা যেকোনো মৃত মুসলমানের নামের সাথেই এগুলো বলা যাবে। 

আমাদের কাছে কিছুই না। মৃতদের জন্য এটাই অনেক বড় পাওয়া। তারা বছরের পর বছর ধরে চেয়ে থাকে অন্তত এটুকুর জন্য।

আমল ও দুআ-২৫৩: ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অকস্মাৎ মৃত্যু থেকে, সর্পদংশিত হওয়া থেকে, হিংস্র প্রাণী থেকে, ডুবে যাওয়া থেকে, অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে

No Comments

 



দু‘আ-২০৪

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْۤ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَّأَنَاۤ أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَاۤ أَعْلَمُ بِه، وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ يَّدْعُوَ عَلَيَّ رَحِمٌ قَطَعْتُهَا. اَللّٰهُمَّ إِنِّيْۤ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِه، وَمِنْ شَرِّ مَنْ يَّمْشِيُ عَلٰى رِجْلَيْنِ، وَمِنْ شَرِّ مَنْ يَّمْشِيُ عَلٰۤى أَرْبَعٍ. اَللّٰهُمَّ إِنِّۤيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ اِمْرَأَةٍ تُشَيِّبُنِيْ قَبْلَ الْمَشِيْبِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَّلَدٍ يَّـكُوْنُ عَلَىَّ وَبَالًا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ مَالٍ يَّـكُوْنُ عَلَيَّ عَذَابًا. اَللّٰهُمَّ إِنِّيْۤ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّكِّ فِي الْحَقِّ بَعْدَ الْيَقِيْنِ، وَ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ يَوْمِ الدِّيْنِ. اَللّٰهُمَّ إِنِّيْۤ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مَّوْتِ الْفُجَآءَةِ وَمِنْ لَّدْغِ الْحَيَّةِ وَمِنَ السَّبُعِ وَمِنَ الْغَرَقِ وَمِنَ الْحَرَقِ، وَمِنْ أَنْ أَخِرَّ عَلٰى شَيْءٍ وَّمِنَ الْقَتْلِ عِنْدَ فِرَارِ الزَّحْفِ.


ইয়া আল্লাহ! জেনে-শুনে আপনার সাথে কিছুমাত্র শরীক করা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর নিজের অজান্তের শিরক থেকে আপনার কাছে ক্ষমা চাই।২৩৬ আমি আপনার শরণ নিচ্ছি কোনো আত্মীয়ের বদ দু‘আ থেকে, যার আমি হক নষ্ট করেছি।২৩৭ ইয়া আল্লাহ! আপনার আশ্রয় নিচ্ছি বুকের উপর ভর করে চলা প্রাণীর অনিষ্ট থেকে এবং দু’পেয়ে জীব ও চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট থেকে।২৩৮

ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে ঐ নারী থেকে আশ্রয় নিচ্ছি, যে আমাকে বার্ধক্যের আগেই বৃদ্ধ বানিয়ে দেয়, আশ্রয় নিচ্ছি ঐ সন্তান থেকে, যে আমার জন্য বিপদ হয়, আশ্রয় নিচ্ছি ঐ সম্পদ থেকে, যা আমার জন্য আযাব হয়।২৩৯ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি সত্য বিষয়ে বিশ্বাসের পর সন্দেহ থেকে। আশ্রয় নিচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে, আশ্রয় নিচ্ছি প্রতিদান দিবসের কাঠিন্য থেকে। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অকস্মাৎ মৃত্যু থেকে, সর্পদংশিত হওয়া থেকে, হিংস্র প্রাণী থেকে, ডুবে যাওয়া থেকে, অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে, কোনো কিছুর উপর পড়ে যাওয়া থেকে এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নের সময় নিহত হওয়া থেকে।২৪০


-আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলা, আদাবুল মুফরাদ-৭১৬



২৩৬. শিরকের একটি প্রকার হচ্ছে ইচ্ছাকৃত শিরক, যা কঠিনতম অপরাধ। এর থেকে তো পুরোপুরি পানাহ চাওয়া হয়েছে। শিরকের দ্বিতীয় প্রকার নিজের অজান্তে শিরকে লিপ্ত হওয়া এবং যা প্রকৃত অর্থে শিরক নয়। এ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।

২৩৭. আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় না করা ইসলামে এক কঠিন অপরাধ ও নিকৃষ্ট গুনাহ।

২৩৮. অর্থাৎ ইয়া আল্লাহ! আপনার আশ্রয় চাই পেটের উপর ভর করে চলা সরীসৃপের অনিষ্ট থেকে এবং দু’পেয়ে জীব ও চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট থেকে। দুর্বল মানব তো ছোট ছোট কষ্টদায়ক প্রাণীর অনিষ্ট থেকেও পানাহ চাওয়ার মুখাপেক্ষী।

২৩৯. স্ত্রী-সন্তান ও সহায়-সম্পদের চেয়ে অধিক প্রিয় ও শান্তির জিনিস মানুষের আর কী হতে পারে? কিন্তু এগুলোও অনেক সময় বড়-বড় মুসীবতের কারণ হতে পারে এবং হয়েও থাকে। এ কারণে এটিও অতি প্রয়োজনীয় দু‘আ।

২৪০. মোটকথা, এমন প্রত্যেক বস্তু থেকে, যা ধর্মীয় বা জাগতিক যেকোনো বিচারে ভয়ের, তা থেকে আমি আপনার পানাহ চাইছি।

পরকালীন ভাবনা-০৪: যে সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে সেগুলোই আসল সময়

No Comments

 



যে সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে সেগুলোই আসল সময়

-- আবু আবদুর রহীম মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

.

এক এক মুহূর্তের সমষ্টিই তো জীবন। প্রতিটি মুহূর্ত সময়ের একটি অংশ। সময়ের আলাদা কোনো অস্তিত্ব যেহেতু মানুষ অনুভব করে না তাই সময়ের বয়ে চলাও অনুভূত হয় না।


وإنا لفي الدنيا كركب سفينة * نظن وقوفا، والزمان بنا يجري


আমরা দুনিয়ার বুকে যেন নৌকার যাত্রী। মনে হয়, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। অথচ সময় আমাদের নিয়ে বয়ে চলেছে।

নৌকা কিংবা গাড়ির আরোহী কোথাও যাওয়ার সময় মনে করে সে বসে আছে। অথচ সে চলছে। ঠিক তেমনি সময়ও তার কাজ করে চলেছে। সময় শেষ হয়েই যায়। বয়স বাড়ার অর্থ জীবন কমে যাওয়া। অথচ আমরা একটুও ভাবি না। আমাদের অবস্থা হল, কবির ভাষায়


الوقت أنفس ما عُنِيت بحفظه * وأراه أسهل ما عليك يضيع


সংরক্ষণ করা যায় এমন বস্তুর মধ্যে সময় সবচেয়ে মূল্যবান/অথচ দেখছি, এটিই সবচেয়ে সহজে তোমার কাছে নষ্ট হচ্ছে।


আমার শ্রদ্ধেয় আম্মাজান হাফিযাহাল্লাহু

ওয়া রাআহা কে সব সময় দেখেছি, যোহরের পর থেকেই তিনি বলতে থাকেন, নামাযের সময় চলে যাচ্ছে! প্রথমদিকে আরয করতাম, এইমাত্র আপনি নামায পড়লেন!? তিনি বলতেন, আসরের নামাযের সময় চলে যাচ্ছে! ঘড়ির কাটা পাঁচের কোঠা পার হলেই বলতেন, ছ’টা বেজে গেছে। অথচ ডিজিটাল ঘড়িতে ৫টা ৫৯ মিনিট হলেও তা ৫ টাই থাকে। আর এমনটিই হল সাধারণ ধারণা!!


রমযানুল মুবারক শুরু হয়। বুদ্ধিমানেরা আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নেয়, কর্মের প্রস্তুতি গ্রহণ করে, আলাদা নিযামুল আওকাত তৈরি করে। এরপর রমযানের শুরু থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগায়। আর কিছু মানুষ প্রথম দশক পর্যন্ত মনে করে, কেবল তো রমযান শুরু হল। আর অধিকাংশ মানুষ তো প্রথম দুই-চার দিনেই তাদের সব আগ্রহ-উৎসাহ শেষ করে ফেলে। আর সকলের কাছেই শেষ দশক যেন রমযানের পরিশিষ্ট, মূল রমযান তো আগেই শেষ হয়ে যায়! এ কারণে শেষ দশক কাটিয়ে দেওয়া হয় ঈদের প্রস্তুতিতে। এ সময়ের প্রধান ব্যস্ততা থাকে কেনাকাটা, ঘুরে বেড়ানো ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এই তো আমাদের অবস্থা!!


কিন্তু আমাদের আকাবির কী করতেন? তাঁদের রমযান কেমন ছিল? শেষ দশক তারা কীভাবে কাটাতেন এসব তাদের জীবনী-গ্রন্থ থেকে পাঠ করা উচিত। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রাহ.-এর পুস্তিকা ‘আকাবির কা রমযান’ও অধ্যয়ন করা যেতে পারে।


শেষ দশকের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, এটিই হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফের সময়। আর লায়লাতুল কদরেরও প্রবল সম্ভাবনা শেষ দশকেই হওয়ার। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে তো সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪

সুতরাং শেষ দশককে যে নষ্ট করে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের সব কল্যাণ বিসর্জন দেয়।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণনা করেন


كان رسول الله صلى الله عيله وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره.


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৫

তিনি আরো বলেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيا الليلَ، وأيقظ أهلَه، وجّدَّ وَشَدَّ المِئْزَرَ.

শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জাগতেন। পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪

আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه، ومن قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه.

যে সওয়াবের আশায় রমযানের সওম আদায় করে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে জাগরণ করে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন


قال رسول الله صلى الله عيله وسلم : التمسوها في العشر الأواخر، يعني ليلة القدر، فإن ضعف أحدكم أو عجز فلا يُغْلَبَنَّ على السبع البواقي.


তোমরা শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অন্বেষণ কর। তোমাদের কেউ দুর্বল কিংবা অক্ষম হলে সে যেন অবশিষ্ট সাত রাতের বিষয়ে পরাজিত না হয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫ (২৭৪১)

অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন


تّحَيَّنوا ليلة القدر في العشر الأواخر، أو قال : في التسع الأواخر.


তোমরা শেষ দশ রাতে লায়লাতুল কদর তালাশ কর। অথবা বলেছেন, শেষ নয় দিনে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫ (২৭৪৩)


এই হাদীসের মতো অন্য অনেক হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, লায়লাতুল কদর নির্দিষ্ট কোনো রাতের নাম নয়, যে রাতে সবাই মসজিদে সমবেত হবে, কিছু কথা শুনবে, এরপর সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে দুআ করে চলে আসবে!!


লায়লাতুল কদর লাভের জন্য গোটা রমযান বিশেষ করে শেষ দশকে পূর্ণ প্রস্তুত থাকা উচিত এবং এর খোঁজে নিজেকে পূর্ণ মনোযোগী রাখা উচিত। নফল নামায, দুআ-যিকির, ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত ও দরূদ শরীফ ইত্যাদি আমলে সময় কাটানো উচিত। যেন শবে কদরের বরকত হাসিল হয় এবং মাগফিরাতের নিআমত লাভ করা যায়।


এজন্য প্রথম চেষ্টা হওয়া উচিত, শেষ দশকের ইতিকাফ। কমপক্ষে অধিকাংশ সময় মসজিদে ও ইবাদতে কাটানো। আর গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকা তো মুমিনের সবসময়ের কর্তব্য। রমযান মাসে বিশেষ করে শেষ দশকে তা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অনর্থক ও অযথা যে কাজে এই মুবারক সময়টুকু নষ্ট করা হয় তা হল কেনাকাটা, ঘুরে বেড়ানো ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা।


আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে এর অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন এবং রমযান থেকে তাকওয়ার নিআমত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। 

(পুনঃমুদ্রিত)

.

[ মাসিক আলকাউসার » শাবান-রমযান ১৪৩৭ . মে-জুন ২০১৬ ]

.

#রমাযানুল_মুবারক_মাসিক_আলকাউসার

প্রবন্ধ-৫২: আল্লাহর পছন্দ মত বিশ্ব চলছে------?

No Comments

 



আল্লাহর পছন্দ মত বিশ্ব চলছে, সরকারের পছন্দ মত কর্মচারী চলছে, বিশ্ব সেরা মানব জাতি  কার পছন্দ মত চলবে?

*********************************************

ক। আল্লাহর পছন্দ মত সমগ্ৰ বিশ্ব জগৎ চলছে আললাহ বলেন 

هو الذى خلقلكم ما فى الارض جاميعا

তিনি ই সেই মহান আল্লাহ! যিনি এই পৃথিবীর সব কিছু কে তোমাদের উপকারের জন্য তৈরি করেছেন। সূরা বাকারা/২৯

-------------------------------------------------

১। আল্লাহর  পছন্দ মত  ফুলেরা মিষ্টি সৌরভ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

২। পাখিরা কুজনে কুজনে পৃথিবী মুখরিত রাখছে।

৩। রূপালি চাঁদ তাপহীন স্নিগ্ধ আলো সাড়া বিশ্বে বিলিয়ে দিচ্ছে।

৪।সবুজে ভরা গাছপালা প্রানী কুলের জন্য অক্সিজেন  সরবরাহ করছে।।

৫। সূর্য তার কিরণ দিয়ে পৃথিবীর সৃষ্টি কে সতেজ রাখছে।

৬।বহতা নদী চিরকাল মানুষের জন্য সুপেয় পানির জোগান দিচ্ছে।

৭।  সাদাকালো মেঘের ভেলা বৃষ্টি হয়ে জমিনে ছড়িয়ে পড়ছে।

৮।   সবুজ শ্যামল বৃক্ষরাজি সময় মত প্রানীকুলের খাবার হিসেবে ফুলে ফলে ভরে উঠছে।

৯। মৃদুমন্দ বাতাস  নিয়মিত প্রবাহিত হয়ে পৃথিবী শীতল রাখছে।

১০। উত্তাল সাগর পৃথিবীর মানুষের ফেলে দেয়া সব ময়লা আবর্জনা গ্ৰাস করছে।

১১। কাক চিলেরা   জমিনে ছড়িয়ে থাকা পচা ময়লা গুলো খেয়ে খেয়ে  পরিবেশ পরিচ্ছন্ন  রাখছে।

১২। ভোরের পাখিরা   ঘুমন্ত বান্দা কে আল্লাহর ইবাদত  করার জন্য চিরকাল ডেকে যাচ্ছে।


খ।  যেভাবে সরকারের পছন্দ মত   রাজ কর্মচারী চলছে

------------------------------------------------


১।  পুলিশ বিজিবি আর্মি নেভী ইয়ার ফোর্স  যার যার অবস্থানে থেকে সরকারের পছন্দ মত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক রাখছে।

২। সিভিল কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারের ইচ্ছে মত প্রশাসন ব্যবস্থা চালু রাখছে।

৩। কলকারখানার শ্রুমিকরা মালিকের ইচ্ছে মত পন্নদ্রব্য উৎপাদন করছে।

৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষকগন সরকারের সাজানো সিলেবাস মত শিক্ষাদান অব্যাহত রাখছে।


গ। বিশ্ব সেরা মানব জাতি কার পছন্দ মত চলবে?

------------------------------------------

আল্লাহ বলেন

انى جاعل فى الارض خليفة

আমি পৃথিবীতে মানব জাতি কে আমার প্রতিনিধি বানাতে চাই। সূরা বাকারা/৩০

অত এব মানব জাতি চলবে আল্লাহর পছন্দ মত।

-----------------------------------------

১। আল্লাহর রাজ্যে প্রতিটি মানুষ ই রাজ কর্মচারী/ কর্মকর্তা।

২। আল্লাহর পছন্দ অপছন্দ মানুষ কেই বুঝতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩। আল্লাহ কে বিশ্ব জাহানের  রব (মহা ব্যবস্থাপক) হিসেবে অন্তর থেকে মানতে হবে।

৪। তার পাঠানো জীবন ব্যবস্থা কেমন হবে তা সরাসরি কুরআন হাদীস নিয়মিত অধ্যয়ন করে জানতে হবে।

৫। সমাজ থেকে আল্লাহর অপছন্দনীয় সকল হারাম ,গর্হিত ,অশ্লীল -অপকর্ম গুলো হঠিয়ে দিতে হবে।

৬। প্রতিনিধি  হিসেবে আল্লাহর মত ব্যক্তি -পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আদল -ইনসাফ ( ন্যায় বিচার) প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৭। আল্লাহর পছন্দ মত সকল ভালো কাজের পথ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

৮। আধুনিক সকল প্রচার মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে  ভালো কাজের সুফল ও মন্দ কাজের পরিনতি তুলে ধরতে হবে।

৯। আল্লাহর রাজ্যে বসবাস রত সকল নাগরিককে  বাধ্যতামূলক সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে।

১০। সর্বোপরি ব্যক্তি থেকে বিশ্ব জুড়ে আল্লাহর পছন্দ মত জীবন যাপন পদ্ধতি প্রতিষঠার জন্য সর্বাত্মক উপকরণ সহ আত্মনিয়োগ  করতে হবে।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন আমীন।

সংকলনে আরসিও আলিফ হোসাইন 

তারিখ ২৯/৪/২০২৪

যশোর।

মনীষীদের বাণী-০৮: কিভাবে বুঝবেন আপনার তওবাহ পরিশুদ্ধ হয়নি - ইবনুল কাইয়ুম রহ.

No Comments

 



*কিভাবে বুঝবেন আপনার তওবাহ পরিশুদ্ধ হয়নি?* 


ইবনুল কাইয়ুম রহঃ তাওবা কবুল না  হওয়ার কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছেন :


১। তাওবাকারীর সংশোধনে দুর্বলতা। পাপ কাজের আনন্দ তার মনে পড়ে যায় এবং তার মন তাতে ডুবে যায়।


*২। তাওবাকারী নিজের তাওবা কবুল হবার বিষয়ে এতোটাই নিশ্চিত হয়ে যায় যে সে মনে করে তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।*


৩। চোখে পানি আসে না, গুনাহের শাস্তির কথা ভুলে যায়, মন শক্ত হয়ে যায়।


৪। তাওবাকারী নিজের নেক আমল বাড়ানোর কোন চেষ্টা করে না।

জিজ্ঞাসা-১৭১: ধনী লোকের সন্তান কি যাকাতের মাল গ্রহণ করতে পারবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৭১: একজন ব্যক্তি যাকাত গ্রহনের মত আর্থিক অসচ্ছল না কিন্তু তার সন্তান কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ তার নেই। এমন ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি? তারিখ -১৩/০৬/২০২২ ইংরেজি 

মাওলানা ইব্রাহীম সাহেব, দিনাজপুর থেকে----


জবাব: সাহেবে নিসাব ব্যক্তি কখনও যাকাতের টাকা গ্রহণ করতে পারবে না, চাই সে বালেগ হোক আর নাবালেগ হোক। নাবালেগ সন্তানের পিতা ধনী হলে ঐ নাবালেগকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। তবে বালেগ সন্তান যদি গরীব হয়, তাহলে তার পিতা ধনী হলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন,

والأَصْلُ فِي وُجُوبِ النَفَقَةِ على الولد الْكِتَابُ وَالسُّنَّةُ وَالْإِجْمَاعُ :

أَمَّا الْكِتَابُ فَقَوْلُ اللَّهِ تَعَالَى : فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ الطلاق /6. فأَوْجَبَ أَجْرَ رَضَاعِ الْوَلَدِ عَلَى أَبِيهِ , وَقَالَ سُبْحَانَهُ : وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ البقرة/233 .        

وَمِنْ السُّنَّةِ قَوْلُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لِهِنْدٍ : خُذِي مَا يَكْفِيك وَوَلَدَك بِالْمَعْرُوفِ . البخاري (5364 ) ومسلم (1714 ) .

وأما الإجماع فقد تقدمت حكايته .

واتفقوا على أن الوالد يلزمه نفقة أبنائه العجزة من الذكور والإناث حتى يستغنوا كبارا كانوا أو صغارا .

সন্তানের উপর খরচ করার বাধ্যবাধকতার ভিত্তি হল কুরআন, সুন্নাহ এবং ঐক্যমতঃ

কুরআনের বাণী -

আয়াত নং -০১

فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَىٰ

যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। সূরা তালাক-০৬

আয়াত নং-০২

: وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ البقرة/233

আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। সূরা তালাক-২৩৩


হাদিস নং-০১ 

5364 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ هِنْدَ بِنْتَ عُتْبَةَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلَيْسَ يُعْطِينِي مَا يَكْفِينِي وَوَلَدِي، إِلَّا مَا أَخَذْتُ مِنْهُ وَهُوَ لاَ يَعْلَمُ، فَقَالَ: «خُذِي مَا يَكْفِيكِ [ص:66] وَوَلَدَكِ، بِالْمَعْرُوفِ»

৪৯৭৩। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... ‘আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, হিনদা বিনতে ‘উতবা বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবু সুফিয়ান একজন কৃপন লোক। আমাকে এ পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট; তবে তার অজান্তে যা আমি (চাই) নিতে পারি। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য নিয়মানুসারে যা যথেষ্ট হয়, তা তুমি নিতে পার।

Narrated `Aisha:

Hind bint `Utba said, "O Allah’s Messenger (ﷺ)! Abu Sufyan is a miser and he does not give me what is sufficient for me and my children. Can I take of his property without his knowledge?" The Prophet (ﷺ) said, "Take what is sufficient for you and your children, and the amount should be just and reasonable.

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৭৩ (আন্তর্জাতিক নং ৫৩৬৪)

ফোকাহায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে পিতা তার দুর্বল সন্তান, পুরুষ এবং মহিলা, যতক্ষণ না তারা স্বাবলম্বী না হয়, বৃদ্ধ বা অল্পবয়সী হোক না কেন তাদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। 


اتفق الفقهاء على أنه لا يجب على الأب أن ينفق على ولده البالغ، إذا كان قادراً على الكسب،

ইসলামি আইনবিদরা একমত যে, পিতা যদি ধনী হয় তবে তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জন্য ব্যয় করা বাধ্যতামূলক নয়। সূত্র: সুওয়াল ওয়া জওয়াব-১৩৪৬৪; শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনজিদ হাফিজাহুল্লাহু 

আপনার বর্ণিত ছুরতে, অসুস্থ ছেলেটি যদি বালেগ ও সে সাহেবে নিসাব না হয়, তাহলে ঐ ছেলে যাকাতের টাকা গ্রহণ করতে পারবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া : ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার :৩/২৯৪, ২৯৫




والله اعلم بالصواب

আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।


জিজ্ঞাসা-০১: রিজিক বলতে কি শুধু  খাদ্য-টাকা-পয়সাইকে বুঝায় ?

জিজ্ঞাসা-০১: রিজিক বলতে কি শুধু খাদ্য-টাকা-পয়সাইকে বুঝায় ?

No Comments

 



:  রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছেঃ টাকাপয়সাঅর্থ এবং সম্পদ।


 রিজিকের এর সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছেঃ শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা।


 রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হচ্ছেঃ পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেক সন্তান এবং


 রিজিকের পরিপূর্ণ স্তর হচ্ছে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।

  এই চারটা লাইন সরাসরি কোন হাদিস কিনাঅথবা এর কোনো রেফারেন্স আছে কি নাথাকলে জানালে উপকৃত হব।

তাং-০৬-০৬-২২ ঈসায়ি

 

শহীদুল ইসলাম যশোর থেকে।  মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।


উত্তর:  আমার জানে মতে,  না, এটা কোনো সরাসরি হাদিস বা আসার নয়।  তবে  আপনার উল্লেখিত প্রতিটি স্তর যে রিজিকের অন্তর্ভুক্ত তা পবিত্র কুরআন হাদিসের নস দ্বারা প্রমাণিত।  আমার মনে হয় কোনো মনীষী/আলেম এ গুলোর তারতিব দিয়েছেন (স্তর ভাগ করেছেন)।

 

(সম্ভবত শাহদাত ফয়সাল (রহ.) নামক একজন আলেম এ স্তর ভাগ করেছেন) । আসুন আমরা প্রথমে রিজক শব্দের অর্থ জেনে নেই।

ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين


রিজিকের পরিচয়:

 ﺭِﺯْﻕﺟﻤﻊ ﺃَﺭﺯﺍﻕ : 1 - ﺍﺳﻢ ﺍﻟﺸّﻲﺀ ﺍﻟﻤُﻌﻄَﻰ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻣﻦ ﺭﺑﺢ ﺃﻭ ﻣﻜﺴﺐ ﺃﻭ ﺛﺮﻭﺓ ﺃﻭ ﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ -: ﺃﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﺭِﺯﻗًﺎ ، - ﻗﻄﻊ ﺭﺯﻕَ ﻓﻼﻥ : ﻣﻨﻊ ﻋﻨﻪ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻟﻌﻴﺶ ، (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﻠﻐﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﻤﻌﺎﺻﺮ

 রিযক তার বহুবচন হয় আরযাকুন। রিযক ঐ দানকৃত জিনিষকে বলা হয়,যাদ্বারা মানুষ উপকৃত হয়।ঐ দানকৃত জিনিষ ব্যবসার মুনাফা বা নিজ উপার্জন বা ধনসম্পত্তি ইত্যাদি হতে পারে।

 

ﺃﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﺭِﺯﻗًﺎ অর্থ তাকে জীবনোপকরণ দেয়া হয়েছে।

ﻗﻄﻊ ﺭﺯﻕَ ﻓﻼﻥ অর্থ হলোতার জীবনোপকরণ কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সূত্র: আল-লুগাতুল আরাবিয়্যাতুল মু'আসিরাহ

 ﺭِﺯْﻕُ ـ ﺭِﺯْﻕُ : ﻣﺎ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑﻪ ، (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﻘﺎﻣﻮﺱ ﺍﻟﻤﺤﻴﻂরিযক যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। সূত্র: আল-কামূসুল মুহিত

 ﺭﺯﻕ : ﻣﺎ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﻣﻦ ﻣﺎﻝ ﺃﻭ ﺯﺭﻉ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻫﻤﺎ (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﺮﺍﺋﺪধনসম্পত্তিশস্যক্ষেত্র ইত্যাদি দ্বারা যে উপকৃত হওয়া যায় তাকেই রিযক বলে। সূত্র: আল-মু'জামুর রায়িদ

 ﻭﺍﻷَﺭﺯﺍﻕُ ﻧﻮﻋﺎﻥِ : ﻇﺎﻫﺮﺓ ﻟﻸَﺑﺪﺍﻥ ﻛﺎﻷَﻗْﻮﺍﺕ ، ﻭﺑﺎﻃﻨﺔ ﻟﻠﻘﻠﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨُّﻔﻮﺱ ﻛﺎﻟﻤَﻌﺎﺭِﻑ ﻭﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ؛ 

 রিজিক দুই প্রকার যথাঃ-(১)প্রকাশ্য রিজিক যা শরীরকে প্রদান করা হয়,যেমন খাদ্য।(২) অপ্রকাশ্য রিজিক যা রুহকে প্রদান করা হয়যেমন আল্লাহর মা'রেফতজ্ঞানবিজ্ঞান ইত্যাদি। লেসানুল আরব


ক। টাকাপয়সাঅর্থ এবং সম্পদ রিজিক হওয়ার দলিল:

 الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ

অর্থ: গায়েবের প্রতি ঈমান আনেসালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। সূরা বাকারা-০৩

 

یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ

হে রাসুলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো। সূরা মুমিনুন-৫১

 


খ।   শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা ‍রিজিক হওয়ার দলিল:  


আরবি হাদিস عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «نِعْمَتَانِ مَغبونٌ فِيهِمَا كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ، وَالفَرَاغُ». رواه البخاري

 

 অর্থ:  ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ () বলেনএমন দুটি নিয়ামত আছেবহু মানুষ সে দুটির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর। বুখারি৬৪১২তিরমিযি ২৩০৪ইবন মাজাহ ৪১৭০আহমদ ২৩৩৬৩১৯৭দারেমি ২৭০৭


নোট: উপরোক্ত হাদিসে সুস্থতাকে নেয়ামত/অনুগ্রহ বলেছেন। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহর অনুগ্রহকেও রিজক বলা হয়েছে। যেমন,


 فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ   অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করযাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০

মুফাসসিরে কেরামগণ, এখানে অনুগ্রহ বলতে রিজিক বলেছেন।

 

গ।   পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেক সন্তান  রিজিক হওয়ার দলিল:


  الدُّنيا متاعٌ وخيرُ متاعِها المرأةُ الصَّالحةِ

الراوي : [عبدالله بن عمرو] | المحدث : الزرقاني | المصدر : مختصر المقاصد | الصفحة أو الرقم : 466 | خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه مسلم (1467)


অর্থাৎ  রাসুলুল্লাহ () ইরশাদ করেছেন, দুনিয়া পরোটা হলো  উপভোগের বস্তু। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্তু) সতী-সাধ্বী নারী। সহিহ মুসলিমহাদিস : ১৪৬৭মুসনাদে আহমদহাদিস : ৬৫৬৭সহিহ ইবনে হিব্বানহাদিস : ৪০৩১

 

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন। সূরা সাফফাত-১০০

 

নোট:  

 نْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

 আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতআল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনআদম সন্তান মারা গেলে তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়অবশ্য তিনটি আমল বিচ্ছিন্ন হয় নাসদকাহ জা-রিয়াহ (ইষ্টাপূর্ত কর্ম)উপকারী ইলমঅথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে থাকে। মুসলিম ৪৩১০আবূ দাঊদ ২৮৮২


 আমরা রিজকের সংজ্ঞা জেনেছি যে, যা দ্বারা উপকৃত যায়।  মৃত্যুর  পরও নেক সন্তানের দুআ দ্বারা পিতা-মাতা উপকৃত হচ্ছে। সুতরাং সন্তান সন্তান (নেককার) শ্রেষ্ঠ রিজকের অন্তর্ভুক্ত।

 

ঘ।   মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি রিজিক হওয়ার দলিল:

 أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عنْه قالَ: اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً في سَبيلِكَ، واجْعَلْ مَوْتي في بَلَدِ رَسولِكَ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ.

الراوي : أسلم مولى عمر بن الخطاب | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري | الصفحة أو الرقم : 1890 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]

অরথ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার পথে শাহাদাত নসিব করো। বুখারি-১৮৯০


নোট: এই হাদিস শরিফে রিজিক শব্দটি দান করো অর্থে ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তষ্টি (শহীদি মৃত্যু) কামনা করা হয়েছে।  আর জীবন-মরণ সবই তো আল্লাহর সমীপে-নিমিত্তে। দলিল:

 

قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ

 

অর্থ: নিশ্চয়ইআমার নামাজআমার কুরবানীআমার জীবন এবং আমার মরণ বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। সূরা আনআম-১৬২

 

 

আসলাফের আমল:

 হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ থানভি রহ. বলেন,  টাকা হলো সবচেয়ে বড় রিজিক। কারণ টাকা হলে সবই পাওয়া যায়। (সমস্ত খাদ্য, দ্রব্য টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় কিন্তু দ্রব্রের/মালের বিনিময়ে সব কিছু পাওয়া যায় না)। তাই আমি কখনও টাকা বাম হাতে গ্রহণ (লেনদেন) করি না।

 

 

والله اعلم بالصواب

                                   وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله و اصحابه و جميع المؤمن وسلم                                 وتسليما  

আল্লাহ তাআলাই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর