প্রশ্ন-১৮৬: কিস্তিতে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মোবাইল, ফ্রিজ ইত্যাদি কিনলে সুদ হবে কি না ? এভাবে কেনা বেচায় তাকওয়ার খেলাফ নয় কী ? তারিখ-১৮/০৬/২০২২
মাওলানা ইউনুছ আলী হাফিজাহুল্লাহ তাআলা, সুদান থেকে
উত্তর: প্রথম কথা হলো: নির্দিষ্ট শর্তাপেক্ষে কিস্তিতে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মোবাইল, ফ্রিজ ইত্যাদি কিনলে জায়েজ হবে, সুদ হবে না। সূত্র: জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : الدِّينُ النَّصِيحَةُ
হযরত তামীম আদ-দারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন যে, ‘দ্বীন হ’ল নছীহত’। মুসলিম হা/৫৫; মিশকাত হা/৪৯৬৬। নছীহা অর্থাৎ কল্যাণকামিতা এর উসূলের ওপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম বিশেষ করে ফুকাহায়ে আহনাফ যেখানে সম্ভব উম্মাহর জন্য জায়েজের রাস্তা করেছেন। এটা ইসলামি দ্বীনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় কথা, একটি প্রসিদ্ধ বাণী আছে, حسنات الابرار سيئات المقربين
অর্থাৎ “নেককারদের জন্য পূণ্য হলেও; নৈকট্যশীলদের জন্য তা পাপ।”
পবিত্র কুরআনুল কারিমে নবিদের বিষয়ে এ ধরণের বর্ণনা এসেছে। সাধরণ মানুষের জন্য যা করা জায়েজ, বিশেষ লোকদের জন্য তা করা ঠিক নয়। উপরোক্ত মাসয়ালাটিও ঐ রকম বলা যায়।
ইমাম আল-গাযালী (র) তাকওয়ার চারটি স্তর বর্ণনা করেছেন।
{এক} শরীআতে যে সকল বস্তুকে হারাম করা হয়েছে, আল্লাহ্র ভয়ে সকল বস্তু থেকে বিরত থাকা। যেমন, মদ্যপান, ব্যভিচার, জুয়াখেলা ও সুদ খাওয়া প্রভৃতি হারাম কাজ থেকে আত্মরক্ষা করা। এটি সাধারণ মুমিনের তাকওয়া। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে বলা হয় মুমিন।
{দুই} হারাম বস্তুসমূহ হতে বিরত থাকার পর সন্দেহযু্ক্ত হালাল বস্তুসমূহ হতেও দূরে থাকা। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে বলা হয় সালিহ।
তিন. সকল হারাম বস্তু ও সন্দেহযু্ক্ত হালাল বস্তুসমূহ হতে দূরে থাকার পর আল্লাহ্র ভয়ে অনক সন্দেহবিহীন হালাল বস্তুও পরিত্যাগ করে, এ শ্রেণীকে মুত্তাকী বলা হয় ।
চার. তিন শ্রেণীর তাকওয়া আয়ত্ত করার পর এমন সকল হালাল বস্তু পরিত্যাগ করা যা ইবাদাতে কোনরূপ সহায়তা করে না। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে বলা হয় সিদ্দীক । ইসলামী বিশ্বকোষ, পৃ. ১০৮-১০৯
হাদিস:
হযরত আয়েশা রা. একদিন তাই জানতে চাইলেন- আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ কি আপনার আগে-পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেননি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বললেন,
أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا
আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চাই না? -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৩৭
আসলাফের আমল:
শায়খুল আরব ওয়াল আজাম হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ. জীবনে কখনও কালো রংয়ের জুতো পরিধান করেননি। কারণ হলো পবিত্র কাবার গিলাফ হলো কালো। কালো রংয়ের জুতো তো না জায়েজ নয়। কিন্তু তিনি কাবার প্রতি আজমত, ভক্তির কারণে তিনি এটা করেছেন।
পরিশিষ্ট: উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা বুঝাতে চাচ্ছি যে, যেটা ফুকাহায়ে উম্মত বিভিন্ন উসূল ও দলিলের ভিত্তিতে জায়েজ বলেছেন, সেটা নাজায়েজ বলা যাবে না (یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللّٰهُ لَکَ ۚ- হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, তুমি তা অবৈধ করছ কেন? সূরা তাহরিম-০১)। তাকওয়ার যেহেতু অনেক স্তর আছে; সবার জন্য একই হুকুম প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্র ভয়ে অনক সন্দেহবিহীন হালাল বস্তুও পরিত্যাগ করে; তাতো অধিক উত্তম।
والله اعلم بالصواب
আল্লাহ তাআলাই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী