আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৬৮: স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্বশুর-শাশুড়ির হকগুলো কী কী?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৬৮: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

সম্মানিত মুফতি সাহেব। দলীল সহ নিম্নের প্রশ্নদুটির উত্তর জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

وفقكم الله سبحانه وتعالى.

১. (স্বামীর বাবা-মা) শ্বশুর-শ্বাশুরির উপর পুত্রবধূর জন্য কি কি অধিকার বা হক্ব রয়েছে?

2. (স্ত্রীর বাবা-মা) শ্বশুর-শ্বাশুরির উপর জামাইয়র জন্য কি কি অধিকার বা হক্ব রয়েছে?

তারিখ:  ২২/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন বগুড়া থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলোশ্বশুর-শাশুড়ির হক সম্পর্কে ইসলামে আলাদা কোন নির্দেশনা বর্ণনা হয়নি। 


আত্মীয়তার হক সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে আর শ্বশুর শাশুড়ি হলো নিকটতম আত্মীয়র অন্যতম সুতরাং সেই হকগুলি প্রযোজ্য হবে। যেমন-

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا

আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। সূরা নিসা -৩৬

6138 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ»

৫৭০৮। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নতুবা নীরব থাকে। তাখরিজ: বুখারি -৬১৩৮


দ্বিতীয় কথা হলো, ইসলামী শরীয়তে শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য আলাদা কোন হুকুম বিধান অবতীর্ণ না হলেও, বাস্তবতা হল স্বামী স্ত্রী পরস্পর শশুর-শাশুড়িকে যদি সম্মান-ইজ্জত, সেবা-শুশ্রুষা, খেদমত করে, তাহলে স্বামী স্ত্রীর মধ্য ভালোবাসা, আন্তরিকতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, এতে বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। 


স্ত্রী স্বামীর পূর্ণ  আনুগত্য  সন্তুষ্টি ইসলামী শিক্ষা, অপর পক্ষে সর্বোত্তম পুরুষ সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। স্ত্রীর বাবা-মার খেদমত-ভালোবাসার মাধ্যমে তার মন সন্তুষ্টি এবং ভালো মানুষ হওয়ার অন্যতম উপায়।

নিম্নের হাদিস থেকে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর ভালবাসা, আনুগত্য এবং সন্তুষ্টির গুরুত্ব বোঝা যায়।


হাদিস নং-০১ 

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ

৩২৩৪. কুতায়বা (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন মহিলা উত্তম? তিনি বললেনঃ যে মহিলার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তা সম্পন্ন করে, এবং তার বাড়ীর ও তার মালের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে, এমন কাজ করে তার বিরোধিতা করে না।

Narrated Abu Hurairah:

It was narrated that Abu Hurairah said: "It was said to the Messenger of Allah: ’Which woman is best?’ He said: ’The one who makes him happy when he looks at her, obeys him when he commands her, and she does not go against his wishes with regard to herself nor her wealth.’"

—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৩২৩১ (আন্তর্জাতিক নং ৩২৩১)

হাদিস নং-০২ 

,أَلاَ أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হ’ল, নেককার স্ত্রী। সে (স্বামী) তার (স্ত্রীর) দিকে তাকালে স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়, তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হেফাযত করে’। আবুদাউদ হা/১৬৬৪; মিশকাত হা/১৭৮১


হাদিস নং-০৩

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي، وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ» هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَرُوِيَ هَذَا عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرْسَلًا

৩৮৯৫। মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইয়াহ্ইয়া (রাহঃ)... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম হল সে, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম । তোমাদের এ সঙ্গী (অর্থাৎ আমি) যখন মারা যাবে, তার জন্য তোমরা দু'আ করবে। 

—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৩৮৯৫ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৯৫)

হাদীসটি হাসান-সাহীহ।


প্রশ্ন: ক। স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত করা স্ত্রী কি বাধ্য? 

উত্তর: খ। পুত্রবধূর জন্য তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা শরীয়তে ওয়াজিব নয়। দলিল -

 ليس للرجل أن يستخدم امرأته الحرة (المطيح البرهانى-4/237، رقم-4151، الفتاوى التاترخانية-4/309، رقم-6271)

অর্থাৎ মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব— কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)


لا يجب على الزوجة أن تعامل والدي زوجها كما تعامل والديها ، وليس لهما من الحقوق ما لوالديها ، بل لا يجب عليها القيام على خدمتهما ، إلا أن تتطوع هي بذلك ، وتطوعها بذلك ، وبذلها له بطيب نفس ، هو من تمام الإحسان إلى زوجها ، والرفق به ، والتودد إليه ، وهو من أعظم ما يحببها إلى زوجها ، ويقربها منه .

অর্থাৎ,

প্রথমত. প্রত্যেক স্ত্রী নিজ পিতামাতার সাথে যেরূপ আচরণ করে থাকে, তার স্বামীর পিতামাতার সাথে সেরূপ আচরণ করাটা তার জন্য আবশ্যক নয়। স্বামীর বাবা-মা নিজ পুত্রবধূ থেকে তার পিতা-মাতাসুলভ আচরণের অধিকার রাখেননা। এমনকি শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা-শুশ্রূষা করাটাও স্ত্রীর উপর আবশ্যক নয়। তবে স্ত্রী যদি স্বচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে স্বতস্ফূর্তভাবে নিজ শশুর-শাশুড়ির খেদমতে নিয়োজিত হয়। তাহলে এটি হবে নিজ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দয়া ও করুণা, নিজ জীবনসঙ্গীর প্রতি হৃদ্যতা ও ভালোবাসার পরিচায়ক। স্ত্রীর এই সহমর্মিতামূলক আচরণই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেমময় সম্পর্ককে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবে।   এবং স্বামীর মন জয় করে তার একান্ত আন্তরিক সান্নিধ্যে লাভের অপার সৌভাগ্য অর্জনে সক্ষম হবে। সূত্র: আলহুকুকুল যাওজা-১২০২৪৩ , শায়েখ সালেহ আল-মুনজিদ


সারকথা হলো,  ইসলাম মানবতার ধর্ম। ওর পক্ষে আত্মীয়তার হক আদায় সম্পর্কে কঠিন নির্দেশনার রয়েছে। সে নির্দেশনা গুলি স্বামী-স্ত্রী আদায় করলে পারস্পরিক ভালোবাসা-আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে, অশান্তি দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

আর স্ত্রীর কর্তব্য হলো- নৈতিকতাবোধ ও দায়বদ্ধতা রক্ষা করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে, কার দায়িত্ব কতটুকু এবং নৈতিকতার চাহিদা কী? নৈতিকতার ভিত্তিতে স্ত্রী যা করবে— তা মর্যাদার চোখে দেখতে হবে। তার আন্তরিকতা ও সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে।



  والله اعلم بالصواب