আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেব, অনেক ইমামকে দেখা যায়, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বলে মুনাজাত শেষ করে। এটা কি সুন্নাহ, দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ: ১৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন বিভিন্ন জায়গায় মুনাজাতের শেষে ইমাম সাহেবদেরকে এভাবে বলতে শোনা যায়,
হে আল্লাহ! মৃত্যুর সময় যবানে জারি করে দিও- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। অথবা বলেন,
اجعل آخر كلامنا عند الموت "لا إله إلا الله، محمد رسول الله".
অর্থাৎ কালিমার মাধ্যমে তারা দুআ শেষ করেন।
প্রথম কথা হলো, মৃত্যুর সময় যেন কালেমা নসিব হয় এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, আর হাদিসের ভাষ্য অনুসারে যার শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে যাবে। দোয়ার মধ্যে এভাবে বলা দোষের কিছু নয়, বরং কাম্য। দলিল:
حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ عَبْدِ الْوَاحِدِ الْمِسْمَعِيُّ، حَدَّثَنَا الضَّحَّاكُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنِي صَالِحُ بْنُ أَبِي عَرِيبٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ " .
অর্থ: মালিক ইবনে আবদিল ওয়াহিদ মাসমাঈ (রাহঃ) .... মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সর্বশেষ কালিমা (কথা) হবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১০২ (আন্তর্জাতিক নং ৩১১৬)
নোট: মৃত্যুপথযাত্রীর নিকট “কালিমায়ে তাওহীদ" পাঠ করাকে 'তালকীন' বলে।
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
প্রশ্ন: ক। 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলা দ্বারা মোনাজাত শেষ করা কি সূন্নাহ?
উত্তর: ক। না, এটি দুআর সুন্নাহ বা আদব নয়; বরং এর কারণে দোয়া সমাপ্ত করার মাসনুন আমল ছুটে যায়।
প্রশ্ন: খ। কি বাক্য দ্বারা দোয়া- মোনাজাত শেষ করা সুন্নাহ বা আদব?
উত্তর: খ। দুআর একটি আদব বা সুন্নাহ হল, আল্লাহর হামদ-ছানা (প্রশংসা) ও দরূদ শরীফ দ্বারা দুআ শুরু করা এবং শেষ করা। তাছাড়া হাদীস থেকে এ-ও বুঝা যায় যে, দুআ সমাপ্ত হবে ‘আমীন’-এর মাধ্যমে । দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ، حُمَيْدُ بْنُ هَانِئٍ أَنَّ أَبَا عَلِيٍّ، عَمْرَو بْنَ مَالِكٍ حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ، صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يَدْعُو فِي صَلاَتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ اللَّهَ تَعَالَى وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " عَجِلَ هَذَا " . ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ " إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ رَبِّهِ جَلَّ وَعَزَّ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ " .
আহমাদ ইবনে হাম্বল
(রাহঃ) ....... ফাদালা ইবনে উবাইেদ (রাযিঃ) নবী করীম (ﷺ) এর সাবাহী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুনতে পান যে, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা ও নবী করীম (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ ব্যতিরেকে দুআ করতে শুরু করে। তিনি বলেনঃ সে তাড়াহুড়া করেছে।
রাবী বলেন, অতঃপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে বা অন্য কাউকে ডেকে বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামায আদায় করবে, তখন সে যেন সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর উপর দরূদ পাঠ করে। তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৮১ (আন্তর্জাতিক নং ১৪৮১)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا رِشْدِينُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي هَانِئٍ الْخَوْلاَنِيِّ، عَنْ أَبِي عَلِيٍّ الْجَنْبِيِّ، عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدًا إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهَ صلى الله عليه وسلم " عَجِلْتَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي إِذَا صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ وَصَلِّ عَلَىَّ ثُمَّ ادْعُهُ " . قَالَ ثُمَّ صَلَّى رَجُلٌ آخَرُ بَعْدَ ذَلِكَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ تُجَبْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ رَوَاهُ حَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِي هَانِئٍ الْخَوْلاَنِيِّ وَأَبُو هَانِئٍ اسْمُهُ حُمَيْدُ بْنُ هَانِئٍ وَأَبُو عَلِيٍّ الْجَنْبِيُّ اسْمُهُ عَمْرُو بْنُ مَالِكٍ
অর্থ: কুতায়বা (রাহঃ) ...... ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে সেখানে নামায আদায় করল এরপর এ দু’আ করলঃ (اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي) - হে আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও তুমি আমাকে রহম কর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হে নামায আদায়কারী তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত তারীফ করবে এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।
ফাযালা (রাযিঃ) বলেনঃ এরপর আরেক ব্যক্তি এসে নামায আদায় করে। আল্লাহর হামদ করল এবং নবী (ﷺ) এর উপর নামায ও দরুদ পাঠ করল। নবী (ﷺ) তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে নামায আদায়কারী! এখন দু’আ কর। তোমার দু’আ কবুল হবে। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৬ (আন্তর্জাতিক নং ৩৪৭৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০৩
باب مَا جَاءَ فِي فَضْلِ الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، سُلَيْمَانُ بْنُ سَلْمٍ الْمَصَاحِفِيُّ الْبَلْخِيُّ أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، عَنْ أَبِي قُرَّةَ الأَسَدِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لاَ يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صلى الله عليه وسلم .
অর্থ: আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে মুসলিম আল-মুসহিফী আল-বালখী (রাহঃ) ...... উমর উবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ)-এর উপর সালাত (দরূদ) পাঠ না করা পর্যন্ত দু’আ আসমান ও যমীনের মাঝে মওকূফ অবস্থায় থাকে এবং এর কিছুই আল্লাহর নিকটে উত্থিত হয় না। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৪৮৬ (আন্তর্জাতিক নং ৪৮৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
ব্যাখ্যা: এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে
وقد ذكر العلماء أن الصلاة على الرسول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مع الدعاء على ثلاث مراتب :
قال الشيخ بكر أبو زيد حفظه الله في كتابه (تصحيح الدعاء ص : 23) :
"وأكمل المراتب الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم في فاتحة الدعاء ووسطه وخاتمته . وإنها للدعاء كالجناح يصعد بخالصه إلى عنان السماء .
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর দরবারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দোয়াসহ দোয়া পাঠানো তিনটি স্তরের:
শেখ বকর আবু যায়েদ, আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন, তার বইতে বলেছেন (তাহেহ আল-দুআ পৃ. 23):
এবং প্রার্থনার শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে নবীর উপর দরুদ পাঠ করা এবং দ্বিতীয় স্থান: শুরুতে এবং শেষে। সূত্র: তাছহিহুদ দুআ-২৩
قال الإمام النووي رحمه الله في الأذكار ص ١٧٦: (أجمع العلماء على استحباب ابتداء الدعاء بالحمد لله تعالى والثناء عليه، ثم الصلاة على رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكذلك تختم الدعاء بهما، والآثار في هذا الباب كثيرة مرفوعة) .
অর্থাৎ ইমাম নববি রহ. বলেন,
আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসা ও প্রশংসার মাধ্যমে দো‘আ শুরু করা, তারপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। এবং এভাবেই তথা হামদ ও দরুদ এর মাধ্যমে দোয়া শেষ করা। সূত্র: কিতাবুল আজকার-১৮৬ পৃষ্ঠা, ইমাম নববি রহ.
وقال أبو سليمان الداراني : ( من أراد أن يسأل الله حاجته فليبدأ بالصلاة على النبي ، وليسأل حاجته ، وليختم بالصلاة على النبي ، فإن الصلاة على النبي مقبولة ، والله أكرم أن يرد ما بينهما )
হযরত আবু সুলাইমান জার্মানি রহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন পুরো করার ইচ্ছা রাখে। সে যেন আল্লাহর নবীর প্রতি দরুদ-সালাম এর মাধ্যমে শুরু করে এবং নিজে প্রয়োজন পেশ করে এবং নবীর প্রতি সালামের মাধ্যমে দোয়া শেষ করে। কেননা নবীর প্রতি দরুদ নিশ্চিত কবুল হয়। সূত্র: আদাবুজ জিকরি ওয়াদ দুআ-৩০০৯৭০ (ফাতওয়া নং)
শেষ কথা হলো, কালিমার মাধ্যমে দুআ শেষ করা একটি রসম, সুন্নাহ নয়।
বাহক্কে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বা এ জাতীয় শব্দ বলে মুনাজাত শেষ করা, এরূপ সব সময় করতে থাকা বিদ’আত।
- والله اعلم بالصواب