জিজ্ঞাসা-২৬০:
আসসালামু আলাইকুম,
কোন এক স্থানে একটি কবর আছে, সেখানে একটি স্থাপনা তৈরি করবে, এ ক্ষেত্রে ঐ করবটি উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে কবরস্থানে স্থানান্তরিত করতে চাচ্ছে,
প্রশ্নঃ কবর স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা? যদি করা যায় তাহলে পদ্ধতিটা কেমন হবে? তারিখ-২৪/০৮/২০২২ ইং
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যশোর থেকে---
জবাব:
عليكم السلام ورحمه الله وبركاته.
بسم الله الرحمن الرحيم. نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হল, একজন মুমিন জীবিত থাকতে যেন সম্মানিত , তেমনি মৃত্যুবরণ করার পরও সম্মানিত। তাই মুমিনের ইজ্জতের কারণে স্বাভাবিক অবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা জায়েজ নেই। যেমন, হাদিস শরীফে এসেছে,
وعن عائشة رضي الله عنها: أن رسول الله ﷺ قال: كسر عظم الميت ككسره حيًّا.
رواه أبو داود بإسنادٍ على شرط مسلم.
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সমান। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩২০৭
অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল বারী ৯/১১৩)
তবে শরিয়ি ও বিশেষ জরুরতে জায়েজ আছে। দলিল:
মু‘আবিয়া (রাঃ) একটি পানির নহর প্রবাহিত করার জন্য ওহোদ যুদ্ধে শহীদ কতিপয় ছাহাবীর কবর খনন করে তাঁদের লাশ অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করেন। সূত্র: ইবনুল মুবারাক, কিতাবুল জিহাদ হা/৯৮
যাইহোক, আপনি উল্লেখ করেননি যে উক্ত কবরটা কি ওয়াকফকৃত কিনা,পুরাতন না নতুন? আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কবরটি যদি ওয়াকফকৃত হয়, তাহলে স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা?
উত্তর: ক। যদি কেউ কোনো জায়গাকে কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ্ করে থাকে, তাহলে সে জায়গাকে অন্য কোনো কাজে লাগানো জায়েয হবে না। কেননা ওয়াক্বিফের শর্ত শরীয়তের বিধানের মতই কর্যকর হিসেবে ধর্তব্য হবে।হ্যা রেফাহে আম তথা জনস্বার্থে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়,যেমন রাস্তা ইত্যাদি তাহলে এমতাবস্থায় কবররের জন্য ওয়াক্বফের জায়গাকেও জনস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে এবং কবরকে স্থানান্তরিত করা যাবে। সূত্র: রদ্দুল মুখতার -৪/৩৬৬
প্রশ্ন: খ। নতুন কবরের হুকুম কি?
উত্তর: খ। নতুন কবর বলতে যার লাশ এখন অবশিষ্ট আছে, জায়গার প্রকৃত মালিক সে কবর সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, তাহলে শুধু সে ক্ষেত্রে মাইয়েত কিংবা মাইয়েতের দেহাবশেষ অন্যত্র স্থানান্তর করার অবকাশ আছে, অন্যথায় জায়েজ নেই। সূত্র:হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর ১/৩৮২, রদ্দুল মুহতার ২/২৩৯, তাতারখানিয়া ৩/৮০
প্রশ্ন: গ। পুরাতন কবরের হুকুম কি?
উত্তর : গ।
وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167
إذا غلب الماء على القبر فقيل يجوز تحويله لما روي أن صالح بن عبيد الله رؤي في المنام وهو يقول حولوني عن قبري فقد آذاني الماء ثلاثا فنظروا فإذا شقه الذي يلي الماء قد أصابه الماء فأفتى ابن عباس رضي الله عنهما بتحويله (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، باب احكام الجنائز، فصل في حملها ودفنها-61
অর্থাৎ যতদিন লাশ একেবারে মাটি না হবে, ততদিন কবরের সম্মান বাকি থাকে। যখন লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে তখন কবর সমতল করে দিয়ে সে জায়গা মসজিদ, রাস্তা বা বাড়ি-ঘর অন্য কোন কাজেও ব্যবহার করা যাবে। এমতাবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা কোন প্রয়োজন নেই। সূত্র: তাতাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতহুল কাদীর ২/১০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬
সারকথা হল, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত কবরটি যদি ওয়াককৃত জায়গা এবং নতুন কবর না হয়, কবরটি পুরাতন হয় অর্থাৎ তার দেহ মাটির সাথে মিশে গিয়েছে ধারণা করা হয়, তাহলে সেখানে যেকোন স্থাপনা,ঘরবাড়ি কোন বিল্ডিং তৈরি করা যাবে কোন সমস্যা নেই এবং কবর স্থানান্তরিত করার কোন প্রয়োজন নেই।