আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৭৬: খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান জায়েজ হবে কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৭৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ছেলেদের সুন্নাতে খাতনা দিয়ে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে ইসলামের বিধি নিষেধ সম্পর্কে জানালে উপকৃত হব। অগ্রিম জাঝাকাল্লাহ। 

তারিখ:  ২৯/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আসাদ ঢাকা থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, খাটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং শিয়ারে ইসলাম। দলিল- 

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ‏:‏ قَصُّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَنَتْفُ الإِبْطِ، وَالسِّوَاكُ‏.‏

ফিতরাত (তথা নবীদের সা. সুন্নত) পাঁচটি- খতনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা। তাখরিজ: আদাবুল মুফরাদ-১২৬৯


দ্বিতীয় কথা হলো, খাতনা বা মুসলমানী উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান শরীয়তের নস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিয়াসি দলিল হিসেবে জায়েজ বলেছেন।


এ বিষয় নিয়ে ফোকাহাদের মধ্যে দুটি মতামত রয়েছে, 

কেউ বলেছেন মাকরুহ কেউ বলেছেন জায়েজ। যেমন,

وقد اختلف أهل العلم في حكم حضور الطعام الذي يقام بمناسبة الختان ونحوه، فأباح ذلك بعضهم وكرهه بعضهم، قال الحطاب في مواهب الجليل: ..... وقال في جامع الذخيرة: مسألة فيما يؤتى من الولائم، ثم قال صاحب المقدمات: هي خمسة أقسام: واجبة الإجابة إليها وهي وليمة النكاح، ومستحبة الإجابة وهي المأدبة وهي الطعام يعمل للجيران للوداد، ومباحة الإجابة وهي التي تعمل من غير قصد مذموم؛ كالعقيقة للمولود والنقيعة للقادم من السفر والوكيرة لبناء الدار والخرس للنفاس والإعذار للختان ونحو ذلك، ومكروه وهو ما يقصد به الفخر والمحمدة لا سيما أهل الفضل والهيئات، لأن إجابة مثل ذلك يخرق الهيئة، وقد قيل: ما وضع أحد يده في قصعة أحد إلا ذل له، ومحرمة الإجابة وهو ما يفعله الرجل لمن يحرم عليه قبول هديته كأحد الخصمين للقاضي

খাতনা উপলক্ষে দাওয়াত দেওয়া বা খাবার খাওয়ানো এ বিষয়ে আহলে ইলমের মধ্যে রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ মুবাহ বা জায়েজ আবার কেউ মাকরুহ বলেছেন।



মেহমানদারী পাঁচ রকমের :


১. ওয়াজিব। যে মেহমানদারী গ্রহণ করা জরুরি। যেমন وليمة النكاح বিবাহের ওয়ালিমা।


২. মুস্তাহাব। যে মেহমানদারীতে সাড়া দেয়া উত্তম। যেমন مأدبة মা'দুবাহ অর্থাৎ প্রতিবেশী আন্তরিকতার টানে যে মেহমানদারীর আয়োজন করে।


৩. মুবাহ। যে মেহমানদারীতে সাড়া দেয়া নিষেধ নয় অর্থাৎ বৈধ। যেসব মেহমানদারীর পেছনে অসৎ কোন উদ্দেশ্য নেই। যেমন عقيقة নবজাতকের আকিকা। نقيعة নাক্বীআহ, সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর যে খাবারের আয়োজন করা হয়। وكيرة ওয়াকিরাহ, ঘর নির্মাণের পর আয়োজিত খাবার। خرس খরস, বাচ্চা প্রসবের পর আয়োজিত খাবার। إعذار ই'যার, খতনার পর আয়োজিত খাবার।


৪. মাকরূহ। প্রশংসা কুড়ানোর জন্য যে মেহমানদারীর আয়োজন করা হয়।


৫. হারাম। ঘুষ হিসেবে যে মেহমানদারী করা হয়। যেমন বিচার চলাকালীন বাদী-বিবাদীর কেউ একজন বিচারককে দাওয়াত করে খাওয়ানো।


সারকথা হলো, উপরোক্ত চার এবং পাঁচ নম্বর দাওয়াত এর কারণে হারাম হবে।


তৃতীয় কথা হল, খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান সুন্নত মনে করে করলে বেদআত হবে।

তবে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতাকে সুন্নত মনে না করে কেবল সৌন্দর্যের জন্য কিংবা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ ও আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সাদামাঠাভাবে দাওয়াত-অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দোষের কিছু নেই। 


যেমন ইবনে কুদামা রহ. বলেন,


حُكْمُ الدَّعْوَةِ لِلْخِتَانِ وَسَائِرِ الدَّعَوَاتِ غَيْرِ الْوَلِيمَةِ : أَنَّهَا مُسْتَحَبَّةٌ ؛ لِمَا فِيهَا مِنْ إطْعَامِ الطَّعَامِ ، وَالْإِجَابَةُ إلَيْهَا مُسْتَحَبَّةٌ غَيْرُ وَاجِبَةٍ. وَهَذَا قَوْلُ مَالِكٍ ، وَالشَّافِعِيِّ ، وَأَبِي حَنِيفَةَ وَأَصْحَابِهِ وَإِجَابَةُ كُلِّ دَاعٍ مُسْتَحَبَّةٌ ، وَلِأَنَّ فِيهِ جَبْرَ قَلْبِ الدَّاعِي ، وَتَطْيِيبَ قَلْبِهِ ، وَقَدْ دُعِيَ أَحْمَدُ إلَى خِتَانٍ ، فَأَجَابَ وَأَكَلَ فَأَمَّا الدَّعْوَةُ فِي حَقِّ فَاعِلِهَا، فَلَيْسَتْ لَهَا فَضِيلَةٌ تَخْتَصُّ بِهَا؛ لِعَدَمِ وُرُودِ الشَّرْعِ بِهَا، وَلَكِنْ هِيَ بِمَنْزِلَةِ الدَّعْوَةِ لِغَيْرِ سَبَبٍ حَادِثٍ ، فَإِذَا قَصْدَ فَاعِلُهَا شُكْرَ نِعْمَةِ اللَّهِ عَلَيْهِ، وَإِطْعَامَ إخْوَانِهِ ، وَبَذْلَ طَعَامِهِ ، فَلَهُ أَجْرُ ذَلِكَ ، إنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

বিয়ের অলিমা ব্যতীত খতনাসহ যে কোন উপলক্ষে খাওয়ার দাওয়াত করা মুস্তাহাব। যেহেতু এর মাধ্যমে খাদ্য খাওয়ানোর নেক আমল অর্জিত হয়। এ ধরনের দাওয়াত গ্রহণ করাও মুস্তাহাব; তবে ওয়াজিব নয়। এটি ইমাম মালেক রহ., শাফেয়ি রহ., আবু হানিফা রহ. ও তাঁর ছাত্রদের অভিমত। যে কোন দাওয়াতকারীর দাওয়াত গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেহেতু দাওয়াত গ্রহণ করলে দাওয়াতকারীর কাছে ভাল লাগে, তার মন প্রশান্ত হয়। ইমাম আহমাদকে একবার খতনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং খাবার খান। তবে এ ধরনের দাওয়াত খাওয়ানোর বিশেষ কোনো ফজিলত নেই। যেহেতু এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো শরয়ি দলিল উদ্ধৃত হয়নি। কোনো কারণ ছাড়া দাওয়াত খাওয়ানোর সাধারণ যে মর্যাদা এ আয়োজনেরও সে মর্যাদা। যদি দাওয়াতকারী এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মুসলমান ভাইদের খাবার খাওয়ানোর আমল পালনের উদ্দেশ্য করে, স্বীয় খাদ্যসামগ্রী ব্যয় করার নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ চাহেত তিনি সে সওয়াব পাবেন। সূত্র: আলমুগনি ৭/২৮৬


চতুর্থ কথা হলো, বিয়ের/খাতনার অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায় প্রবেশ পথে গিফট বুথ স্থাপন করা হয়। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিম্নরুচির পরিচায়ক। এতে আগত মেহমানরা লজ্জায় পড়ে যায়। যেসব উপঢৌকন দেওয়া হয়, তা যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা অবৈধ। আর যদি প্রফুল্লচিত্তে ভালোবাসার স্মারকস্বরূপ দেওয়া হয় এবং না দিলে কোনো ধরনের অপমান করা না হয়, তাহলে ওই উপহারসামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ। (সুনানে বায়হাকি: ১১৫৪৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৩৮৩)

দলিল-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسِهِ»

হজরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কোন মুসলমানের সম্পদকে তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। তাখরিজ: সুনানে দারা কুতনি-২৮৮৫

মূল কথা হলো, খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান যদি কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে জায়েজ নেই। আগেই দাওয়াতি মেহমানকে বলে দিতে হবে, আমরা কিছু নিবো না, শুধু দাওয়াতই উদ্দেশ্য।


সারকথা হলো,  খাতনা উপলক্ষে ভোজ আয়োজন শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ। তবে বর্তমানে খতনা উপলক্ষে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমিত ইসলাম দেয় না। এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরিয়তবিরোধী কিছু থাকলে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয।



  والله اعلم بالصواب