প্রশ্ন:-১৮৪: হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ বগুড়া ---
١- واذكر "اسم ربك" بكرة و أصيلا..
٢- اذكر "الله" ذكرا كثيرا ....
٣- ألا بذكر الله تطمئن القلوب..
٤- لا تقوم الساعة على أحد يقول :"الله الله". رواه مسلم
... ইত্যাদি আয়াত ও হাদীস সমূহ আমাদেরকে যিকিরের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং এর গুরুত্ব বোঝায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি নেক আমল।
------ কিন্তু ?
যিকিরের সময় লাফঝাঁপ, গাছে ওঠা, নৃত্য করা, ব্যায়াম করা.. ইত্যাদি কুরআন ও হাদীসের কোথাও রাসূল সা ও সাহাবায়ে কেরামদের থেকে এই পদ্ধতি বর্ণিত নেই বলেই জানি (জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাও হতে পারে)।
তাই কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম এভাবে যিকির করাকে সুন্নাহ সম্মত বলেননি।
তবে জোরে বা আস্তে যিকির / আল্লাহর স্মরণ কুরআন ও হাদীসে আছে। যেমন-
١- دعوا ربكم تضرعا وخفية...
٢- فإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ..
এ পর্যন্ত বিষয়ে অধিকাংশ আলেমগণ একমত।
--- প্রশ্ন হলো ??
যদি কেউ এভাবে লাফিয়ে/ নৃত্য করে যিকির করে , তার হুকুম কী ?
কেউ বলেন, বিদআত।
আবার কেউ বলছেন, জায়েজ কিন্তু সুন্নাহ নয়।
কোনটি সঠিক?
উল্লেখ্য,
১. কেউ ধরুন বিনোদন এর উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করে করছে।
২. কেউ আল্লাহর মহব্বত অনুভব করে সরলমনে ইচ্ছা করে করছে এবং যিকিরের স্বাদ অনুভব করতে চাচ্ছে।
৩. সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় এমনটি হয়ে যাচ্ছে।
৪. কেউ আবার তার পীর সাহেবের পক্ষ থেকে আদেশ ও নির্দেশনা রক্ষার্থে করছে?
সবার জন্যই কি ঐ একই বিধান প্রযোজ্য?
সব সুরতই বিদআত! অথবা সব সুরতই জায়েজ!
নিম্নে প্রদত্ত (স্ক্রিনশর্ট ইমেজ) কুরআন ও হাদীসের বিবেচনা রেখে এ বিষয়ে সঠিক সমাধান প্রার্থনা করছি
উত্তর: সম্মানিত শায়েখ, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়ে সওয়াল করেছেন। এ সম্পর্কে হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলি থানভি রহ. বলেন, সে সমস্ত লোক আল্লাহ আল্লাহ জিকির করে (আল্লাহ তাআলার জিকির করে) তাদের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিতে আমার অন্তর কাঁপে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে ফাতওয়া যে খুবই সতর্কতা থাকতে হবে, তা সহজেই অনুমেয়। যাই হোক, আপনি বিষয়টিকে পরিস্কার করার জন্য কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করেছেন। (এর মধ্যে দলিলও এসেছে) আপনার প্রশ্নকে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করেছি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ১. কেউ ধরুন (জিকিরের মধ্যো লাফালাফি-নৃত্য) বিনোদন এর উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করে করছে।
উত্তর: ১. ইবাদত তো কেবল আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্টির জন্য; বিনোদনের জন্য নয়। দলিল:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
নিশ্চয়ই, আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। সূরা আনআম-১৬২
প্রশ্ন: ২. কেউ আল্লাহর মহব্বত অনুভব করে সরলমনে ইচ্ছা করে করছে এবং যিকিরের স্বাদ অনুভব করতে চাচ্ছে।
প্রশ্ন: ৩. সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় এমনটি হয়ে যাচ্ছে।
উত্তর: ২ ও ৩ । ইবাদতে তথা আল্লাহ তাআলার নাম মোবারক নিতে অন্তর প্রকম্পিত হওয়া হওয়ায় স্বাভাবিক এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করতে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে তাদেরকে খাঁটি মুমিন বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ اِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُهٗ زَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ
أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
অর্থাৎ “বিশ্বাসী (মুমিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় কম্পিত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।” সূরা আনফালে-০২
“তারাই হলেন সেই প্রকৃত মোমিন যাদের জন্যে মহান প্রতিপালকের কাছে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।” সূরা আনফালে-০৪
কিন্তু যদি ভুলবশতঃ, অসতর্কতাবশতঃ পা লেগে যায় তাহলে এক্ষেত্রে গুনাহ হবে না এবং কোনো কাফফারা দিতে হবে না। বরং শুধু তাওবা ও ইস্তেগফার করে নিলেই হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
আর তোমরা কোন ভুল করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আহযাব ০৫)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বান্দার যবানে বলেন,
رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
‘হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।’ (সূরা বাকারা ২৮৬)
আবু হুরায়ারা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা এর জবাবে বলেন,نعم ‘হ্যাঁ’। (মুসলিম ১২৫)
ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা এর জবাবে বলেন, قد فعلت ‘আমি কবুল করেছি’। (মুসলিম ১২৬)
আর শরিয়ত আমাদেরকে এই শিক্ষা
সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় ( লাফালাফি, বেহুশ, অচেতন ইত্যাদি) এমনটি হয়ে গেলে মাফ । যেমনটি আল্লাহ বলেন,
لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ
আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। সূরা বাকারা-২৮৬
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ قَالَ وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ قَالُوا نَعَمْ قَالَ ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ
সাহাবীদের একদল লোক রাসূল (ﷺ)এর কাছে আগমন করে জিজ্ঞাসা করল, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূল (ﷺ)বললেন যে, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূল (ﷺ) বললেন, এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ। (সহীহ মুসলিম)
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لأُمَّتِي عَمَّا وَسْوَسَتْ أَوْ حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَكَلَّمْ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মাতের সে সমস্ত ওয়াসওয়াসা মাফ করে দিয়েছেন যা তাদের মনে উদয় হয় বা যে সব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষন না তা কাজে পরিণত করে বা সে সম্পর্কে কারও কাছে কিছু বলে। সহীহ বুখারী-৬২০৯ অধ্যায়, ৭১/ শপথ ও মানত (كتاب الأيمان والنذور ইসলামিক ফাউন্ডেশন
,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إنِّى اُحَدِّثُ نَفْسِى بِالشَّيْءِ لَأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَن ْ يَتَكَلَّمَ بِهِ فَقَالَ النبي صلى الله عليه وسلم الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ أَمْرَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ
নবি (ﷺ) এর কাছে একজন লোক আগমন করে বলল, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশী ভাল মনে হয়। রাসূল (ﷺ) বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এই বিষয়টিকে নিছক একটি মনের ওয়াস্ওয়াসা (কুমন্ত্রণা) হিসাবে নির্ধারণ করেছেন অর্থাৎ কোন গুনাহ হবে না। সুনানে আবু দাউদ
উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিস শরিফ দ্বারা ইশারাতুন নস প্রমাণিত হয় যে, অনচ্ছিায়-মনের অজান্তে-অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, অনুভূতি, গালিবে হাল, অস্বাভাবিক আচরণ মাফ যোগ্য।
প্রশ্ন: ৪। কেউ আবার তার পীর সাহেবের পক্ষ থেকে আদেশ ও নির্দেশনা রক্ষার্থে করছে?
উত্তর: ৪। পীর-মুরুব্বি-উস্তাদ বাবা-মা যাই হোক না কেন, তাদের আদেশ শরিয়ত বিরোধী হলে তা মান্য করা যাবে না (জিকিরে লাফালাফি, নৃত্য হারাম সামনে তার আলোচনা আসছে)। দলিল:
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوف»
আলী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নাফরমানির ক্ষেত্রে আনুগত্য নেই। আনুগত্য শুধু সৎকর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বুখারী ৭২৫৭, মুসলিম ১৮৪০, আবূ দাঊদ ২৬২৫, নাসায়ী ৪২০৫, আহমাদ ৭২৪
প্রশ্ন: ৫। ইচ্ছা করে জিকিরে লাফালাফি, নাচানাচি-নৃত্য, গানের মত করা কি জাযেজ?
উত্তর: ৫। আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি যে, অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন হাল প্রকাশ পেলে, তা মাফ যোগ্য। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, উক্ত ব্যক্তি মাজূর মনে করা হবে। তাকে ভর্ৎসনা করা যাবে না। সূত্র: আওয়ারিফুল মাআরিফ-১১৮-১১৯, আলইতিসাম-১/৩৫৬
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে উপরোক্ত আচরণ করা হারাম। যেমন,
وَأَمَّا مَا ابْتَدَعَهُ الصُّوفِيَّةُ فِي ذَلِكَ فَمِنْ قَبِيلِ مَا لَا يُخْتَلَفُ فِي تَحْرِيمِهِ لَكِنَّ النُّفُوسَ الشَّهْوَانِيَّةَ غَلَبَتْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ يُنْسَبُ إِلَى الْخَيْرِ حَتَّى لَقَدْ ظَهَرَتْ مِنْ كَثِيرٍ مِنْهُمْ فِعْلَاتُ الْمَجَانِينِ وَالصِّبْيَانِ حَتَّى رَقَصُوا بِحَرَكَاتٍ مُتَطَابِقَةٍ وَتَقْطِيعَاتٍ مُتَلَاحِقَةٍ وَانْتَهَى التَّوَاقُحُ بِقَوْمٍ مِنْهُمْ إِلَى أَنْ جَعَلُوهَا مِنْ بَابِ الْقُرَبِ وَصَالِحِ الْأَعْمَالِ وَأَنَّ ذَلِكَ يُثْمِرُ سِنِيِّ الْأَحْوَالِ وَهَذَا عَلَى التَّحْقِيقِ مِنْ آثَارِ الزَّنْدَقَةِ وَقَوْلُ أَهْلِ الْمُخَرِّفَةِ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ اه
তথাকথিত সূফীরা উক্ত বিষয়ে এমন সব বিদআত সৃষ্টি করেছে, যেগুলোর হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। সঠিক পথের দাবীদারদের অনেকে উপর প্রবৃত্তি প্রাধান্য লাভ করেছে। সে ফলশ্রুতিতে অনেকেরই পক্ষ থেকে পাগল ও বালকসূলভ আচরণ, যেমন তালে তালে নৃত্য ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। এর অশুভ পরিণতি এতদূর পর্যন্ত গড়ায় যে, তাদের কেউ কেউ একে ইবাদতে শামিল করে এবং আমলে সালেহ তথা পূণ্যকর্ম বলে সাব্যস্ত করে। আরো বলে যে, এটা অবস্থার উন্নতি সাধন করে। অতএব, নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে, এগুলো চরম ইসলামবিদ্বেষী যিন্দিকদের প্রভাব এবং নির্বোধদের প্রলাপ। ফাতহুল বারী-২/৩৬৮, রিসালাতুল মুসতারশিদীন এর টিকা-১১৩-১১৪
আল্লামা শাতেবী রহ. তার আলইতসাম গ্রন্থে আল্লামা আবূ বকর আজুররী থেকে উদ্ধৃত এক দীর্ঘ আলোচনার এক স্থানে উল্লেখ করেনঃ
كَمَا يَفْعَلُ كَثِيرٌ مِنَ الْجُهَّالِ؛ يَصْرُخُونَ عِنْدَ الْمَوَاعِظِ وَيَزْعَقُونَ، وَيَتَغَاشَوْنَ ـ قَالَ: وَهَذَا كُلُّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ يَلْعَبُ بِهِمْ، وَهَذَا كُلُّهُ بِدْعَةٌ وَضَلَالَةٌ،
ওয়াজ নসীহতের সময় অধিকাংশ মুর্খরা যে চিৎকার করে উঠে লাফ-ফাল দেয়, মাতাল মাতাল ভাব করে, এ সবই শয়তানী কর্মকান্ড। শয়তান ওদের সাথে খেলা করে। এগুলো বিদআত ও ভ্রষ্টতা। আলইতিসাম-১/৩৫৬
ইলমে তাসাওউফের প্রসিদ্ধ ইমাম ইমাম শাইখ সোহরাওয়ার্দী রহঃ তার “আওয়ারিফুল মাআরিফ” গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোকপাত করে লিখেনঃ
এ ব্যাপারে গোনাহের ব্যাখ্যা হবে অনেক দীর্ঘ। [জিকিরকারী বা জিকিরের মজলিসে উপস্থিত ব্যক্তি] আল্লাহ তাআলাকে ভয় করবে। ইচ্ছেপূর্বক সামান্যও নড়বে না। [লাফালাফি, নাচানাচি করবে না] তবে যদি তার অবস্থা এমন রোগীর মত হয়, যে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া ইচ্ছে করলেও বন্ধ করতে পারে না। কিংবা হাঁচিদাতার মত হয়, যে হাঁচিকে রোধ করতে পারে না, অথবা তার নড়াচড়া যদি শ্বাসের ন্যায় হয়ে যায়, যে শ্বাস গ্রহণে সে প্রকৃতিগতভাবে বাধ্য [তাহলে ভিন্ন কথা]। আওয়ারিফুল মাআরিফ-১১৮-১১৯
প্রশ্ন: ৬। সবার জন্যই কি ঐ একই বিধান প্রযোজ্য? সব সুরতই বিদআত! অথবা সব সুরতই জায়েজ!
উত্তর: ৬। সুহৃদয় পাঠক! আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ইচ্ছায় আর অনিচ্ছায় জিকিরে মধ্যে কাইফিয়াত এক নয়। সুতরাং সবার জন্য এক হুকুম নয়। সুতরাং কোন পীর যদি স্বাভাবিক অবস্থায় নৃত্যের মত করে জিকির তালিম দেয় তা বিদআত ও হারাম।
প্রশ্ন: ৭। বুঝলাম অনিচ্ছায় মাফ/জায়েজ; কিন্তু বুঝবো কি করে সে ইচ্ছায় করেনি?
উত্তর: ৭। কে ইচ্ছায় করলো আর অনিচ্ছায় করলো সেটা নির্ণয় করা মশকিল, তালাশ করাও নিষেধ। এ ক্ষেত্রে মুমিনের প্রতি সুধারণায় নিরাপদ রাস্তা।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাক, কারণ কোন কোন ধারণা পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না। হুজুরাত-১২
রাসূল (ﷺ) ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَ الظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، لاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, ধারণা ভিত্তিক কথাই হল সবচেয়ে বড় মিথ্যাকথা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান কর না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না এবং পরস্পর দুশমনি কর না, বরং তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও হে আল্লাহর বান্দারা। বুখারী হা/৪৮৪৯, ৫১৪৩
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, حُسْنُ الظَّنِّ مِنْ حُسْنِ الْعِبَادَةِ সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ। আহমাদ হা/৮০৩৬; আবুদাঊদ হা/৪৯৯৩, সনদ হাসান
قَالَ سَمِعْتُ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْحُرَقَةِ فَصَبَّحْنَا الْقَوْمَ فَهَزَمْنَاهُمْ وَلَحِقْتُ أَنَا وَرَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ رَجُلًا مِنْهُمْ فَلَمَّا غَشِيْنَاهُ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَكَفَّ الْأَنْصَارِيُّ فَطَعَنْتُهُ بِرُمْحِيْ حَتَّى --------------.
অর্থ: ওসামা ইবনে জায়েদ রা বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে হুরকা গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যুষে গোত্রটির উপর আক্রমণ করি এবং তাদেরকে পরাজিত করি। এ সময়ে আনসারদের এক ব্যক্তি ও আমি তাদের হুরকাদের একজনের পিছু ধাওয়া করলাম। আমরা যখন তাকে ঘিরে ফেললাম তখন সে বলে উঠল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এ বাক্য শুনে আনসারি তার অস্ত্র সামনে নিলেন। কিন্তু আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললাম। আমরা মদিনায় ফিরার পর এ সংবাদ নবি (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছালে তিনি বললেন, হে ওসামা! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ? আমি বললাম, সে তো জান বাঁচানোর জন্য কালিমা পড়েছিল। এর পরেও তিনি এ কথাটি হে ওসামা! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ বারবার বলতে থাকলেন। এতে আমার মন চাচ্ছিল যে, হায়, যদি সেই দিনটির পূর্বে আমি ইসলামই গ্রহণ না করতাম। তাখরিজ : বুখারি-৪২৬৯; মুসলিম-৯৬, আহমাদ ২১৭৪৫; আবু দাউদ-২৬৪৩
অপর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,লা ইলাহা ইল্লাল্লা বলেছে এবং তাকে হত্যা করেছো? আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল! সে কেবলমাত্র অস্ত্রের ভয়ে এই (কালেমা) বলেছে। তিনি বললেন, তমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিল যে, সে এ (কালেমা ) অন্তর থেকে বলেছিল কি না ? অতঃপর একথা পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আমি আজ মুসলমান হতাম। তাখরিজ : মুসলিম-৯৭
প্রশ্ন: ৮। আল্লাহর ইবাদতে বিশেষ করে নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির, আল্লাহ ও আখেরাতের ভয়ে কন্দন করা, বেহুশ হওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ প্রকাশ করা কুরআন-হাদিস ও পূর্বসুরি বুজুর্গদের মধ্যে পাওয়া যায় কি?
উত্তর: ৮। আল্লাহ ও আখেরাতের ভয়ে, ইবাদতে বিভিন্ন কাইফিয়াত পবিত্র কুরআন-হাদিস পূর্বসুরি সাহাবা-তাবেয়ি-তাবা-তাবেয়ি, আওলিয়া কেরামের মধ্যে হাজারো ঘটনা পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে মাওলানা রফিকুল ইসলাম রচিত, “প্রিয় নবির (ﷺ) অশ্রু” ও “সাহাবিদের কান্ন ” কিতাব পড়লে জানা যাবে যে, আমাদের প্রিয় নবি এবং তার সাহাবারা কখন, কি পরিস্থিতে কেদেছেন তা বিস্তারিত রয়েছে। তাছাড়া “আওলিয়াদের কান্না” ও “আওলিয়াদের এক হাজার ঘটনা” কিতাব দেখো যেতে পারে।
কুরআন থেকে দলিল,
আল্লাহ তাআলা তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে বলেন,
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا
আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। সুরাবনি ইসরাঈল-১০৯
হাদিস থেকে দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْرَأْ عَلَيَّ سُورَةَ النِّسَاءِ قَالَ: قُلْتُ: أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ، قَالَ: إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي، قَالَ: فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ حَتَّى إِذَا انْتَهَيْتُ إِلَى قَوْلِهِ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ) [النساء: ٤١] الْآيَةَ، فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا عَيْنَاهُ تَهْمِلَانِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। বুখারি, হাদিস : ৫০৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৯০৩
আয়াতটি হলো, فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيْدًا যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে? সূরা নিসা-৪১
হাদিস নং-০২
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের পাঠকদের মধ্যে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ সর্বোত্তম, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় যে সে কাঁদছে। ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৯
হাদিস নং-০৩
মুত্বাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ বিন শিখখীর (রহঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি নবী করীম (ﷺ) এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে ছালাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর বুকের মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হ’তে থাকত। আবূ দাঊদ হা/৯০৪; নাসাঈ হা/১২১৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৪৪; মিশকাত হা/১০০০
হাদিস নং-০৪
ইরবায বিন সারিয়াহ (রহঃ) বলেন,صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَة... রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ফজরের ছালাতের পর আমাদেরকে মর্মস্পর্শী ওয়ায শুনালেন, যাতে (আমাদের) সকলের চোখে পানি এল এবং অন্তর কেঁপে উঠল। কোন একজন বলল, এটা তো বিদায়ী ব্যক্তির নছীহতের মত। হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এখন আপনি আমাদেরকে কি উপদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির ----। তিরমিযী হা/২৬৭৬; আবু দাঊদ হা/৪৬০৭; আহমাদ হা/১৭১৪৪।
আসার থেকে দলিল:
নং-০১
কাসিম (রহ.) একবার আয়েশা (রা.)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখেন, আয়েশা (রা.) একটি আয়াত বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দোয়া করছেন। আয়াতটি হলো, অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। সুরা তুর-২৭
নং-০২
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। আয়াতটি হলো, আর মৃত্যুর যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে।সুরা : ক্বফ, আয়াত : ১৯
নং-০৩
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন এ আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেন। আয়াতটি হলো, আর তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি তোমরা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। সুরা : বাকারা -২৮৪
নং-০৪
ওছমান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হানী বলেন,
كَانَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ يَبْكِيْ حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُ: تَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَلاَ تَبْكِي، وَتَبْكِيْ مِنْ هَذَا؟ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ قَالَ: وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلاَّ وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ-
‘ওছমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত বেশী কাঁদতেন যে, তাঁর দাঁড়ি ভিজে যেত। তাঁকে প্রশ্ন করা হ’ল, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দর্শনে এত বেশী কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আখেরাতের মনযিলগুলোর মধ্যে কবর হল প্রথম মনযিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো বেশী কঠিন হবে। ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, ‘আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি। ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; তিরমিযী হা/২৩০৮; মিশকাত হা/১৩২।
নং-০৫
কায়েস বিন আবু হাযেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. স্বীয় স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎ কাঁদতে লাগলেন, তার সাথে তার স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন কাঁদছ? স্ত্রী বললেন, তোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে। স্বামী বললেন, (কান্নার কারণ হল) আমার আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ হল যে, (অর্থ) ‘তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই, যে জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (মারইয়াম : ৭১) আর আমার জানা নেই যে, জাহান্নামের উপর স্থাপন করা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় আমি (দোযখ থেকে) রক্ষা পাব না পাব না।’-মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস ৮৭৮৬
নং-০৬
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একবার দোযখের কথা স্মরণ করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কে তোমাকে কাঁদাল? আয়েশা রা. বললেন, আমি দোযখের ভয়ে কাঁদছি। আপনি কি কেয়ামতের দিন আপনার পরিবারের কথা স্মরণ রাখবেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখতে পারবে না- এক. মীযানের (আমল পরিমাপক যন্ত্র) নিকট যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়েছে না হালকা, দুই. আমলনামা পেশ করার সময়, যখন বলা হবে আস তোমার আমলনামা পাঠ কর, যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হচ্ছে না পিঠের পিছন থেকে বাম হাতে। তিন. পুলসিরাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় যখন তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে।’- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৭২
নং-০৭
আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার-পরহেযগার, খুব বেশী ইবাদতগুজার। তিনি দিনে রোজা রাখতেন, রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং প্রচুর কুরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন আল্লাহ্র ভয়ে কম্পিত ব্যক্তি। (একদিন সূরা ইয়াসিনের এ আয়াত-
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ
হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। সূরা ইয়াসিন-৫৯
পড়ে কাদতে কাদতে সারারাত কাটিয়ে দেন।) সূত্র: মুহাম্মদ আবু যাহরার ইমাম আবু হানীফা হায়াতুহু ওয়া আসরুহু আ-রাউহু ওয়া ফিক্হুহু
নং-০৮
আল্লামা শারণি রহ. বলেন, বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ. যখন বয়ান করতেন, মজলিস শেষে অনেক লাশ পাওয়া যেত।অর্থাৎ আল্লাহর মহব্বত ও ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে মারা যেত। সূত্র: সিরাতুল আওলিয়া, হাকিমুল উম্মত প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা।
আসলাফ থেকে দলিল:
নং-০১
আবু হাযেম বললেন, সে আয়াতটি কি? ইবনু মুনকাদির বললেন, আয়াতটি হচ্ছে-وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوْءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ ‘যদি যালেমদের কাছে পৃথিবীর সকল সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তাহ’লে অবশ্যই তারা ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে সবই দিয়ে দিবে। অথচ সেদিন আল্লাহর পক্ষ হ’তে তাদের জন্য এমন শাস্তি প্রকাশ করা হবে, যা তারা কল্পনাও করত না’ (যুমার ৩৯/৪৭)। ইবনু মুনকাদির থেকে উক্ত আয়াত শুনে আবু হাযেম কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তারা উভয়ে কঠিনভাবে কাঁদতে লাগলেন। সূত্র: হাফেয যাহাবী, তারীখুল ইসলাম
নং-০২
ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক (ওমর বিন আব্দুল আজিজের স্ত্রী) বললেন, আমি গত রাত্রে ওমর বিন আব্দুল আযীযকে ছালাতরত অবস্থায় দেখেছি। অতঃপর তিনি আল্লাহর বাণী,يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ، وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ- ‘যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’ (ক্বারি‘আহ ১০১/৪-৫) এই আয়াত পাঠ করে চিৎকার করে উঠলেন এবং মাটিতে পড়ে গেলেন। অতঃপর কঠিনভাবে চিৎকার করতে থাকলে আমার মনে হ’ল তাঁর রূহ বের হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি থামলে আমার মনে হ’ল তিনি হয়ত মারা গেছেন। এরপর তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলেন, হায়! মন্দ সকাল! এরপর তিনি লাফিয়ে উঠে ঘরের মধ্যে ঘুরতে থাকলেন আর বলতে লাগলেন, ‘হায়! আমার জন্য দুর্ভোগ। সেদিন কোন লোক হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত? সূত্র: জামালুদ্দীন আল-জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল উমাম ওয়াল মুলূক
প্রশ্ন: ৯। أكثروا ذكر الله عز و جل حتى يقال إنه مجنون হাদিসটির ব্যাখ্যা/সীমানা কি?
উত্তর:
عن أبي سعيد الخدري عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : أكثروا ذكر الله عز و جل حتى يقال إنه مجنون(مسند عبد بن حميد، من مسند أبي سعيد الخدري، رقم الحديث-925
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫২৩
অনেকে এ হাদিস দ্বারা লাফালাফি-নৃত্য ইত্যাদি জায়েজ বলতে চান। কোন হাদিসের ব্যাখ্যা-প্রয়োগ-মাসয়ালা আমাদেরকে আসলাফ-ফুকাহায়ে কেরামের মত জানতে হবে, নিজে নিজে ব্যাখ্যা করলে হবে গুমরাহি (তবে ব্যাখ্যাটা যদি তাদের সাথে মিলে, তাহলে গ্রহণযোগ্য)। যেমন যাব। যেমন ইমাম তিরমিজি রহমতুল্লাহি বলেছেন الفقهاء و هم اعلم يعني الحديث অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম হাদিসের অর্থ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।তিরমিজি-৩/৩১৫পৃ.
১নং মত
ইবনে কাইয়্যিম রাহ বলেন,
" قيد الأمر بالذكر بالكثرة والشدة ؛ لشدة حاجة العبد إليه ، وعدم استغنائه عنه طرفةَ عين ، فأي لحظة خلا فيها العبد عن ذكر الله عز وجل كانت عليه لا له ، وكان خسرانه فيها أعظم مما ربح في غفلته عن الله . وقال بعض العارفين : لو أقبل عبد على الله تعالى كذا وكذا سنة ، ثم أعرض عنه لحظة ، لكان ما فاته أعظم مما حصله " انتهى." الوابل الصيب " (ص/89)
অর্থাৎ এই হাদীসে উদ্দেশ্য হল,বেশী বেশী করে আল্লাহর যিকির করা। সর্বদা আল্লাহর যিকির করা। সূত্র: " انتهى." الوابل الصيب " (ص/89
২নং-মত
শায়খুল হাদিস মুহিাজিরে মাদানি আল্লামা জাকারিয়া কান্ধলভি রহ. বলেন, মোনাফেক এবং বেওকুফ লোক যদি জিকিরকারীকে রিয়াকার এবং পাগল বলে তবুও জিকির হইতে বিরত থাকিবে না বরং এত বেশী এবং গুরুত্ব সহকারে জিকির করিতে থাকিবে যেন বাস্তবিকই লোকে পাগল বলিয়া ছাড়ে। এবং পাগল তখনই বলা হয় যখন খুব বেশী এবং জোরে জোরে জিকির করা হয়, আস্তে আস্তে জিকির করিলে কেহ পাগল বলে না। ফাজায়েলে জিকির - ২৯৭ পৃঃ
অর্থাৎ উক্ত দ্বারা জলি বা জোরে জিকির প্রমাণিত হয়।
والله اعلم بالصواب
আল্লাহ তাআলাই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।