জিজ্ঞাসা-১২৯৬৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মালয়েশিয়ায় ঈদের সালাতে সবই সহি হাদিসের সাথে মিল রয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস মিলাতে পারলাম না। সেখানে ঈদের সালাত শুরু করার আগে আকামত দেয়া হয়। এ দলিলটি কারো জানা থাকলে অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন।
মায়াছসালামা
তারিখ: ২৩/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আমিনুর রহমান যশোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জমহুর তথা অধিকাংশ আলেমদের মতে দুই ঈদের নামাজের জন্য আজান-ইকামত শরিয়ত সম্মত নয়। যেমন,
حُكمُ النِّداءِ لصلاةِ العِيدينِ بـ"الصَّلاةَ جامعةً"
لا يُشرَعُ قولُ: (الصَّلاةَ جامعةً) في النِّداء لصلاةِ العيدين، وهذا مذهبُ الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، وروايةٌ عن أحمدَ، واختارَه ابنُ قُدامةَ، وابنُ تَيميَّة، وابنُ القيِّم، والصَّنعانيُّ، وابنُ بازٍ، وابنُ عُثيمين فتح القدير)) للكمال ابن الهمام (2/84).((زاد المعاد)) (1/442
الأدلَّة:
ঈদের নামাযের আযানের ক্ষেত্রে এটা বলা জায়েয নয়: এটি হানাফী ও মালেকী মাযহাবের মতবাদ এবং আহমাদের সনদে এটি ইবন কুদামাহ (রহ.) দ্বারা বাছাই করা হয়েছে। তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিম, আল-সানআনী, ইবনে বায এবং ইবনে উসাইমীন রহ. প্রমুখ মতে। সূত্র: ফাতহুল কাদীর-২/৮৪; যাদুল মাআদ-১/৪৪২
জমহুর দলিল-
হাদিস নং-০১
958 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، قَالَ: أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، أَنَّ ابْنَ جُرَيْجٍ أَخْبَرَهُمْ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَطَاءٌ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ الفِطْرِ، فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ قَبْلَ الخُطْبَةِ»
হাদিস নং-০২
959 - قَالَ: وَأَخْبَرَنِي عَطَاءٌ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، أَرْسَلَ إِلَى ابْنِ الزُّبَيْرِ فِي أَوَّلِ مَا بُويِعَ لَهُ «إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ يُؤَذَّنُ بِالصَّلاَةِ يَوْمَ الفِطْرِ، إِنَّمَا الخُطْبَةُ بَعْدَ الصَّلاَةِ»
হাদিস নং-০৩
960 - وأَخْبَرَنِي عَطَاءٌ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالاَ: «لَمْ يَكُنْ يُؤَذَّنُ يَوْمَ الفِطْرِ وَلاَ يَوْمَ الأَضْحَى»
হাদিস নং-০৪
961 - وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ خَطَبَ النَّاسَ بَعْدُ، فَلَمَّا فَرَغَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ، فَأَتَى النِّسَاءَ، فَذَكَّرَهُنَّ وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى يَدِ بِلاَلٍ، وَبِلاَلٌ بَاسِطٌ ثَوْبَهُ يُلْقِي فِيهِ النِّسَاءُ صَدَقَةً» قُلْتُ لِعَطَاءٍ: أَتَرَى حَقًّا عَلَى الإِمَامِ الآنَ: أَنْ يَأْتِيَ النِّسَاءَ فَيُذَكِّرَهُنَّ حِينَ يَفْرُغُ؟ قَالَ: «إِنَّ ذَلِكَ لَحَقٌّ عَلَيْهِمْ وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يَفْعَلُوا»
অর্থ: ... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন। এরপর খুতবার আগে নামায শুরু করেন। রাবী বলেন, আমাকে আতা (রাহঃ) বলেছেন যে, ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) এর বায়’আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের নামাযে আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হতো নামাযের পরে।
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে প্রথমে নামায আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন নবী (ﷺ) খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাযিঃ) এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাযিঃ) তার কাপড় প্রসারিত করলে, মহিলাগণ এতে সাদ্কার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা (রাহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি এখনো জরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগণের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কি হয়েছে যে, তারা (উক্ত সুন্নত পালন) করবে না?
Narrated Ibn Juraij:
`Ata’ said, "Jabir bin `Abdullah said, ’The Prophet (ﷺ) went out on the Day of `Id-ul-Fitr and offered the prayer before delivering the Khutba, Ata told me that during the early days of Ibn Az-Zubair, Ibn `Abbas had sent a message to him telling him that the Adhan for the `Id Prayer was never pronounced (in the life time of Allah’s Messenger (ﷺ)) and the Khutba used to be delivered after the prayer. Ata told me that Ibn `Abbas and Jabir bin `Abdullah, had said, "There was no Adhan for the prayer of `Id-ul-Fitr and `Id-ul-Aqha." `Ata’ said, "I heard Jabir bin `Abdullah saying, ’The Prophet (ﷺ) stood up and started with the prayer, and after it he delivered the Khutba. When the Prophet (ﷺ) of Allah (p.b.u.h) finished (the Khutba), he went to the women and preached to them, while he was leaning on Bilal’s hand. Bilal was spreading his garment and the ladies were putting alms in it.’ " I said to Ata, "Do you think it incumbent upon an Imam to go to the women and preach to them after finishing the prayer and Khutba?" `Ata’ said, "No doubt it is incumbent on Imams to do so, and why should they not do so?"
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯১০ (আন্তর্জাতিক নং ৯৫৮-৯৬১)
হাদিস নং-০৫
عن جابرِ بنِ سَمُرةَ رَضِيَ اللهُ عنه، قال: ((شهدتُ مع النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم العيدينِ غيرَ مرَّةٍ، ولا مرَّتينِ بغيرِ أذانٍ ولا إقامةٍ
জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে এক-দুইবারের অধিক উভয় ঈদের নামায বিনা আযান ও ইকামতে পড়েছি। মুসলিম ৮৮৭, আবূ দাঊদ ১১৪৮, তিরমিযী ৫৩২নং
উম্মাহর ইজমা: ঈদের নামাজে জন্য কোন আজান- ইকামত নেই, এ বিষয়ে আলেমদের ইজমা হয়েছে। যেমন,
نقَل الإجماعَ على ذلك: ابنُ عبد البَرِّ، والباجيُّ، وابنُ رُشد، وابنُ قُدامةَ، والنوويُّ والحديث) ((التمهيد)) (10/243). وقال أيضًا:
ইবন আবদ আল-বার, আল-বাজি, ইবন রুশদ, ইবন কুদামাহ এবং আল-নওয়াবী এই বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সূত্র: আত-তামহিদ-১০/২৪৩
قال النوويُّ: (وأجمَعوا أنه لا يُؤذَّن لها ولا يُقام) ((شرح النووي على مسلم)) (6/189).
ইমাম নববি রহ বলেন, আলেমরা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ঈদের নামাজে আজান-ইকামত নেই। সূত্র: শারহুল নববি আলা মুসলিম-৬/১৮৯
দ্বিতীয় কথা হলো, কিছু আলেমের মতে ঈদের নামাজের জন্য আজান-ইকামত দেওয়া জায়েজ। তাদের কোন দলিল নেই কিয়াস হিসেবে দলিল গ্রহণ করেছেন।
পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজের উপর কিয়াস করে। যেহেতু ঈদের নামাজেও লোক সমায়েত হয়।
সারকথা হলো, ঈদের নামাজের জন্য আজান-ইকামত দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়, জমহুরের এই মতটাই শক্তিশালী, অপরপক্ষের কোনো দলিল নেই।
والله اعلم بالصواب