আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

প্রবন্ধ-৫০: ইফতার করার সময় জবরদস্ত শক্তিশালী আত্বিক আনন্দ লাভ করার উপায় সম্পর্কে-*

No Comments

 




*ইফতার করার সময় জবরদস্ত শক্তিশালী আত্বিক আনন্দ লাভ করার উপায় সম্পর্কে-*


বিসমিল্লাহি ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু 'আলা রাসূলিল্লাহ্।

মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এসেছে, রোযাদারের জন্য দুইটা আনন্দ। এক হচ্ছে ইফতারের সময় আর এক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। তো এই বিষয়ে কিছু কথা এর আগে বলা হয়েছিল। ইফতারের সময় সব মুমিনের আনন্দ এক বরাবর হয় না এবং এর কারন সম্পর্কেও বলা হয়েছিল।


তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইফতারির সময় এই আনন্দ বৃদ্ধি করার উপায় কি? সেটাও মূলত আলোচনা হয়ে গেছে। আনন্দের কারণ অর্জন হলেই আনন্দ পাওয়া যাবে। ইফতারের সময় বড় আনন্দ পাওয়ার অর্থাৎ খুব মজাদার আনন্দ পাওয়ার, শানদার আনন্দ পাওয়ার উপায় হল সারাদিন নিজেকে তামাম গুনাহ থেকে বাঁচানো, সকল অহেতুক কাজকর্ম থেকে বাঁচানো এবং এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে জবানকে, অন্তরকে যিকিরে রাখা। হয় জবানে, না হয় অন্তরে আল্লাহ্ পাকের স্মরণ জারি রাখা এবং সকল কাজকর্ম সুন্নত মুতাবেক করা।

এভাবে যার সারাটা দিন যাবে এবং এরপর বান্দা যখন ইফতার নিয়ে বসবে, তখন তার দিলে আনন্দই আনন্দ থাকবে; যেহেতু সে সারাটা দিন মুজাহাদা করেছে। তার গুনাহ করার অনেক সুযোগ ছিল। তার জবান দ্বারা গুনাহ করার, চোখ দ্বারা গুনাহ করার, হাত-পা দ্বারা গুনাহ করার, ক্বলব দ্বারা গুনাহ করার অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু সে স্রেফ আল্লাহর ভয়ে গুনাহ করেনি। তো এরকম বান্দাকে আল্লাহ্ পাক অনেক বড় আনন্দ দান করেন ইফতারের সময়। 


তো ইফতারের সময় আনন্দ অন্তরের মধ্যে উপলব্ধি হওয়া তো একটা অনিচ্ছাকৃত বিষয়, গায়রে এখতেয়ারি বিষয়। কিন্তু এই বিশাল আনন্দ পাওয়ার কারন হচ্ছে নিজেকে তামাম গুনাহ থেকে বাঁচানো; এটা কিন্তু ইচ্ছাধীন বিষয়। আনন্দ পাওয়াটা অনিচ্ছাধীন। কিন্তু আনন্দ পাওয়ার উপকরনটা ইচ্ছাধীন। উপকরনটা কি?  উপকরনটা হচ্ছে নিজেকে তামাম গুনাহের কাজ থেকে বাঁচানো।


তো বুঝা গেল আনন্দ পাওয়াটা যদিও অনিচ্ছাধীন কিন্তু এর কারনটা ইচ্ছাধীন। সুতরাং আনন্দ অনেক বেশি ব্যাপক হওয়া; এটাও কেমন যেন ইচ্ছাধীন।

বিষয়টার ভিতরে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। আনন্দ পাওয়া হলো অনিচ্ছাধীন বিষয়। এটা জোর করে কেউ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ্ পাক যাকে দান করবেন, সেই পাবে। কিন্তু এই অনিচ্ছাকৃত আনন্দ টা লাভ করার উপায় হলো নিজেকে তামাম গুনাহ থেকে বাঁচানো, এটা কিন্তু ইচ্ছাধীন, বান্দার এখতিয়ারের ভিতরে। তার কারন, যে কাজটা গুনাহ; সেটা না করারও বান্দার সুযোগ আছে। গুনাহের কাজ মানেই সেটা বান্দার করারও এখতিয়ার আছে, না করারও এখতিয়ার আছে। আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দাকে সাধ্যের বাইরের কোনো কাজ দেন না।


তো যেই কাজটা গুনাহ, সেই কাজটা বান্দার করার যোগ্যতাও আছে, না করার যোগ্যতাও আছে। তো বুঝা গেল, তামাম গুনাহ থেকে বাঁচার যোগ্যতা বান্দার অবশ্যই আছে। আর তামাম গুনাহ থেকে বান্দা যদি বাঁচতে পারে, এই হালতে সারাদিন পার করার পর  যখন সে ইফতার নিয়ে বসবে তখন তার দিলের ভিতরে আনন্দের ঢেউ খেলতে থাকবে।


বাহারহাল মূল কথা হল আনন্দ তার ততটা ব্যাপক হবে, বেশি হবে, মজাদার হবে, শানদার হবে, উচ্চ মাকামের হবে; সারাদিন যে যতটা নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারবে এবং তামাম অহেতুক কাজ থেকে নিজেকে বাঁচাবে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নফল আমল- কিছু নফল নামায পড়া, কিছু সময় জিকির করা, কিছু তেলাওয়াত করা।

এক তো হল চলাফেরা, উঠাবসায় আল্লাহকে স্মরণ করা- হয় জবানের দ্বারা, না হয় অন্তরের দ্বারা। অন্তরের জিকির কি? আল্লাহ্ আমাকে দেখতেছেন। সর্বহালতে আমি যেখানেই থাকি না কেন, আল্লাহ্ আমাকে দেখতেছেন। এই ধ্যান-খেয়াল সর্ব হালতে জাগ্রত রাখা আল্লাহ্ পাকের হক। আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় আমাদের সকলকে বহুত তৌফিক দান করেন। 


দুনিয়া হল আল্লাহ্ পাকের মহব্বত কামাই করার জায়গা। এই দুনিয়ার জিন্দেগী একবার যখন খতম হয়ে গেলে কস্মিনকালেও আর এই সুযোগ আসবে না।  আল্লাহর মহব্বত অন্তরে আর একটু বাড়ানোর সুযোগ কস্মিনকালেও পাওয়া যাবে না। এজন্য দুনিয়ার হায়াত অত্যন্ত মূল্যবান। এজন্য প্রত্যেকটা মূহুর্তের কদর করা চাই। আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় আমাদের সকলকে বহুত তৌফিক দান করেন।


আর রমযানের প্রত্যেকটা মূহুর্ত আরও অনেক বেশি মূল্যবান বাকি এগারো মাসের তুলনায়। এজন্য রমযানের প্রত্যেকটা মুহুর্তকে আমরা খুব কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। কাজে লাগানোর সব থেকে বড় কথা হল নিজেকে কমছেকম তামাম গুনাহ থেকে বাঁচাই। গুনাহের ব্যাপারে খুব সতর্ক হই। আর অহেতুক কাজকর্ম, অহেতুক দেখা, শোনা, ধরা ইত্যাদি থেকে নিজেকে রক্ষা করি। আর এর সঙ্গে সঙ্গে তামাম কাজকর্ম সুন্নত মুতাবেক করি। যখনই কোনো ভুলচুক হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গেই তওবা-এস্তেগফার করি। আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় আমাদের প্রত্যেককেই কবুল করেন, বহুত তৌফিক দান করেন।

21 April 2022


- মুহাম্মাদ রবিউল আকরাম


সহযোগীতায় : মুহাম্মাদ ইনামুল হাসান