আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৫৭: মাল হস্তগত হওয়ার আগে বিক্রি করা জায়েজ আছে কি এবং দালালি পেশা জায়েজ আছে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৫৭: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম একজন ব্যক্তি ৫ বিঘা জমি ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করলো কিন্তু ১০ লক্ষ টাকা অগ্রীম বায়না করলো এবং চুক্তি হলো ৩ মাসের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে। জমি রেজিষ্ট্রি ছাড়া ক্রেতা বায়নাকৃত জমি অন্য একজন ক্রেতার কাছে ৬০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করলো। পরবর্তিতে প্রথম বিক্রেতার বাকি টাকা পরিশোধ করে দিল। ২য় ক্রেতার কাছে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সাহায্য করলো। প্রশ্ন হলো জমির মালিকানা ছাড়া ২য় ক্রেতার কাছে জমি বিক্রয় বৈধ হয়েছে কি না এবং ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে টাকা দেয়া হল সেটা বৈধ কি না?

তারিখ:  ১৪/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, যশোর।  থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজে বোঝার জন্য দুটিভাবে ভাগ করছি। যেমন -

প্রশ্নঃ ক। জমির মালিকানা ছাড়া ২য় ক্রেতার কাছে জমি বিক্রয় বৈধ হয়েছে কি না?


উত্তর: মাল কবজা বা হস্তগত হওয়ার আগে বিক্রি করা জায়েজ নেই। এ বিষয়ে সকল ইমাম একমত। দলিল-

হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلاَ يَبِعْهُ حَتَّى يَسْتَوْفِيَهُ ". زَادَ إِسْمَاعِيلُ " مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلاَ يَبِعْهُ حَتَّى يَقْبِضَهُ ".

২০০৩. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, খাদ্য খরিদ করে পুরোপুরী মেপে না নিয়ে। রাবী ইসমাঈল (রাহঃ) আরো বলেন, খাদ্যদ্রব্য খরিদ করে নিজের অধিকারে না এনে কেউ যেন তা বিক্রি না করে।

Narrated Ibn `Umar:

The Prophet (ﷺ) said, "The buyer of foodstuff should not sell it before it has been measured for him." Isma`il narrated instead, "He should not sell it before receiving it."

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৩ (আন্তর্জাতিক নং ২১৩৬)


হাদিস নং-০২

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ - يَعْنِي الدَّسْتُوَائِيَّ - حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ ، عَنْ رَجُلٍ ، أَنَّ يُوسُفَ بْنَ مَاهَكَ أَخْبَرَهُ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَصْمَةَ أَخْبَرَهُ، أَنَّ حَكِيمَ بْنَ حِزَامٍ أَخْبَرَهُ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَشْتَرِي بُيُوعًا، فَمَا يَحِلُّ لِي مِنْهَا وَمَا يُحَرَّمُ عَلَيَّ ؟ قَالَ : " فَإِذَا اشْتَرَيْتَ بَيْعًا فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ ".

 হাকিম ইবনে হিযাম রা. বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করি। এর কোন পন্থাটি হালাল, কোনটা হারাম?


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তুমি কোনো পণ্য ক্রয় করবে, তখন তা হস্তগত করার আগে অন্যত্র বিক্রি করবে না। (মুসনাদে আহমদ : ১৫৩১৬)


দ্বিতীয় কথা হলো, সব মালের ওপর হস্তগত শর্তারোপ নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন -

যেমন- ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর কাছে পণ্য খাদ্যদ্রব্য হোক বা অন্য বস্তু হোক, স্থাবর হোক বা অস্থাবর, হস্তগত করার আগে তা বিক্রি করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। (


ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেন, অস্থাবর জিনিস, চাই তা খাদ্যদ্রব্য হোক বা অন্যকিছু, হস্তগত করার আগে বিক্রি করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তবে স্থাবর জিনিস হস্তগত করার আগে বিক্রি করা জায়েজ।


ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, শুধু খাদ্যদ্রব্য হস্তগত করার আগে বিক্রি করা নাজায়েজ।


ইমাম মালেক রহ. খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ওজন-পরিমাপিত ও পরিমাণ-পরিমাপিত বস্তু হস্তগত করার আগে বিক্রি করা নাজায়েজ। তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম ১/৩৩৮; আলমুগনী ৪/১১৩)।


প্রশ্ন: খ। ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে টাকা দেয়া হল সেটা বৈধ কি না?

উত্তর: খ। দালালি পেশা জায়েজ। দলিল-

ولم ير ابن سيرين وعطاء وإبراهيم والحسن بأجر السمسار بأسا. وقال ابن عباس: لا بأس أن يقول: بع هذا الثوب فما زاد على كذا وكذا فهو لك. وقال ابن سيرين : إذا قال: بعه بكذا فما كان من ربح فهو لك، أو بيني وبينك، فلا بأس به. وقال النبي - صلى الله عليه وسلم - "المسلمون عند شروطهم"

ইমাম আল-বুখারী রহ  - তাঁর "সহীহ" তে বলেছেন: "ইবন সিরিন, আতা', ইব্রাহিম এবং আল-হাসান দালালের মজুরিতে কোন ভুল দেখেননি এবং ইবনে আব্বাস বলেছেন: "এখানে আছে তার এ কথা বলায় কোন ক্ষতি নেই: এই পোশাকটি বিক্রি করে দাও, এবং অমুক-অমুকের বেশি যা তোমার, এবং ইবনে সিরীন বলেছেন: "যদি সে বলে: অমুক অমুককে বিক্রি করে দাও এবং তোমার বা তোমার এবং আমার মধ্যে যা লাভ হয়।" , এতে কোন সমস্যা নেই” এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুসলিমরা তাদের শর্ত মেনে চলে। সূত্র: ফাতহুল বারী-৪/৫২৮


وجاء في "فتاوى اللجنة الدائمة": "يجوز للدلال "السمسار" أخذ أجرة بنسبة معلومة من الثمن الذي تستقر عليه السلعة مقابل الدلالة عليها، ويستحصلها من البائع أو المشتري، حسب الاتفاق، من غير إجحاف ولا ضرر"

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াতে” বলা হয়েছে: “দালালের (দালাল) জন্য জায়েজ আছে যে পণ্যটি প্রদর্শনের বিনিময়ে যে মূল্যে স্থির করা হয় তার একটি পরিচিত শতাংশের ফি নেওয়া এবং তার কাছ থেকে তা আদায় করা। বিক্রেতা বা ক্রেতা, চুক্তি অনুসারে, অন্যায় বা ক্ষতি ছাড়াই”

সূত্র: আলমুগনি : ৮/৪২, ফাতাওয়াল লাজনাতিত দায়িমা : ১৩/১২৫, ফাতওয়া শায়খ ইবনে বাজ : ১৯/৩৫৮)


সারকথা হলো, ফিকহি হানিফির মতে অস্থাবর মালিকানার আসার আগে বিক্রি জায়েজ, তাই আপনার প্রশ্নে বর্ণিত সুরত জায়েজ হয়েছে। কারণ বায়নার টাকা দেওয়ার দ্বারাই তাদের মধ্যকার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। 

আর ইসলামের দৃষ্টিতে দালাল হলো আজিরে মুশতারিক বা সময়মুক্ত শ্রমিক। অতএব অন্যান্য শ্রমিকের মতোই দালালি করে মজুরি নেয়া জায়েজ। তবে শর্ত হলো, কত টাকা মজুরি দিতে হবে তা আগেই নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। 


  والله اعلم بالصواب