জিজ্ঞাসা-১২৯৭১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামুআলাইকুম, হজ্জের নিয়্যাত আরবীতে বলতে হবে? এর সপক্ষে দলিল আছে কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবাগণ কী আরবীতে নিয়্যাত করেছেন। একজন জেনারেল জানতে চেয়েছেন।
তারিখ: ২৩/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন হাদিস শরিফে এসেছে -
عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى المِنْبَرِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ»
আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে- সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১]
দ্বিতীয় কথা হলো, নিয়ত বিষয়টা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন,
معنى النيّة في اللغة على القصد، والإرادة، والعزم، والتحوّل والجهة، أ اصطلاحًا فيرى الأحناف أن النيّة أن يقصد المسلم طاعة الله والتقرب منه في إيجاد الفعل.
অর্থাৎ নিয়ত" বলা হয় অন্তরের সংকল্পকে। কোন কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন, মনে মনে "ইরাদাহ" করলেন, এটা কে আরবিতে বলা হয় نيّة "নিয়্যাহ" (নিয়ত)। পরিভাষায়: নেক কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার ইচ্ছা পোষণ করাকে নিয়ত বলা হয়। সূত্র: কিতাবুল ওয়াজিযি ফি ইজাহি কাওয়ায়িদুল ফিকহি-১২৫ পৃ.
তৃতীয় কথা হলো, নামাজ-রোজা হজ-ওমরা ইত্যাদি ইবাদতে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয় সকল ইমামদের মতে।
আবার মুখে উচ্চারণ কেউ মুস্তাহাব বলেছেন, কেউ বিদআত বলেছেন। যেমন
إلا أن بعض متأخري أصحاب الشافعي خرج وجها في ذلك ، وغلطه فيه أئمة أصحابه ، ولكن تنازع العلماء هل يستحب اللفظ بالنية ؟ على قولين : فقال طائفة من أصحاب أبي حنيفة ، والشافعي ، وأحمد : يستحب التلفظ بها لكونه أوكد .
وقالت طائفة من أصحاب مالك ، وأحمد ، وغيرهما : لا يستحب التلفظ بها ؛ لأن ذلك بدعة
যাইহোক, আল-শাফি’র পরবর্তী কিছু অনুচর এ মত প্রকাশ করেন এবং তাঁর অনুসারীর ইমামগণ এতে ভুল করেছিলেন, কিন্তু আলেমগণ মতভেদ করেছেন যে, নিয়ত উচ্চারণ করা মুস্তাহাব কি না? দুটি মত অনুসারে: আবু হানিফা, আল-শাফিঈ এবং ইমাম আহমদ রহ অনুসারীর একটি দল বলেছেন: এটি উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। কারণ এটি আরও জোরদার।
মালেক, আহমাদ ও অন্যান্য অনুসারীদের একটি দল বলেছেন: এটি উচ্চারণ করা মুস্তাহাব নয়; কারণ এটা বিদআত। সূত্র: মাজমাউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২২/২৪৬
প্রশ্ন: ক। হজ্জের নিয়্যাত আরবীতে বলতে হবে? এর সপক্ষে দলিল আছে কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবাগণ কী আরবীতে নিয়্যাত করেছেন।
উত্তর: ক। হজ-ওমরার নিয়ত মুখে উচ্চারণ এবং আরবিতে করা জরুরি নয়। হজের নিয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে উচ্চারণ করেছেন, এরকম একটি হাদিস আছে, কিন্তু অন্য আলেমগণ এটা নিয়ত হিসেবে অস্বীকার করেছেন। দলিল -
عَنْ أَنَسٍ، - رضى الله عنه - قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يُلَبِّي بِالْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ جَمِيعًا . قَالَ بَكْرٌ فَحَدَّثْتُ بِذَلِكَ ابْنَ عُمَرَ فَقَالَ لَبَّى بِالْحَجِّ وَحْدَهُ . فَلَقِيتُ أَنَسًا فَحَدَّثْتُهُ بِقَوْلِ ابْنِ عُمَرَ فَقَالَ أَنَسٌ مَا تَعُدُّونَنَا إِلاَّ صِبْيَانًا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا " .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি। (অধঃস্তন রাবী) বাক্র বলেন, আমি এ হাদীস ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন।
অতঃপর আমি (বাক্র) আনাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করি। তখন আনাস (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদেরকেও শিশুই মনে কর। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি। (ই.ফা. ২৮৬১, ই.সে. ২৮৬০)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮৮৫
وأما ما ثبت به الحديث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم مِن قوله : " إن جبريل أتاني وقال : صلِّ في هذا الوادي المبارك ، وقل : عمرة في حجة ، أو عمرة وحجة " : فليس معنى ذلك أنه يتلفظ بالنية ، ولكن معنى ذلك أنه يذكر نسكه في تلبيته ، وإلا فالنبي عليه الصلاة والسلام ما تلفَّظ بالنية .
" فتاوى إسلامية " ( 2 / 216 ) .
পক্ষান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে যে এসেছে, “আমার নিকটে জিব্রাইল এসে বলেন: আপনি এই মোবারকময় উপত্যকায় নামায আদায় করুন এবং বলুন: “উমরাতান ফি হাজ্জা” (অর্থ- উমরাসহ হজ্জ) কিংবা “উমরাতান ওয়া হাজ্জা” (অর্থ- হজ্জ ও উমরা)। এর মানে এ নয় যে, তিনি নিয়ত উচ্চারণ করেছেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে- তিনি তাঁর তালবিয়ার মধ্যে হজ্জের প্রকারটি উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ত উচ্চারণ করেননি।[ইসলামী ফতোয়াসমগ্র (২/২১৬)]
সারকথা হলো, মুখে/আরবিতে নিয়ত করা জরুরী নয়। কিন্তু অনেক মানুষই নিয়ত না করেই নামায/হজ-ওমরা শুরু করে দেন। তাই তাদের জন্য ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, মুখে নিয়ত করার অভ্যাস করতে। যাতে করে নিয়ত ছাড়া নামায/হজ-ওমরা পড়া থেকে রক্ষা পেতে পারে। কারণ, মুখে বলার পাবন্দ হলে, কখনো নিয়ত ছাড়া হজ-ওমরা/নামাজ পড়া হবে না।
والله اعلم بالصواب