জিজ্ঞাসা-১২৯৫৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম। ফজরের ফরজ দুই রাকাত কেন? মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত কেন? বেতরের নামাজ তিন রাকাত কন? দলিলসহ জানালে ভাল হয়।
তারিখ: ১৩/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আরসিও শাকুর হাসান,খোলাহাটি, দিনাজপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামের শুরু থেকে মুসলমানদের আমলে দাওয়াতির, নিরবিচ্ছিন্ন আমল ফজর দুই রাকাত ও মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ।
দ্বিতীয় কথা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর দিনকে আমাদেরকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূল বলেছেন আমি যেভাবে নামাজ পড়ি তোমরা সেভাবে নামাজ পড়। দলিল-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা হাশর-০৭
6008 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَبِي سُلَيْمَانَ مَالِكِ بْنِ الحُوَيْرِثِ، قَالَ: أَتَيْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ شَبَبَةٌ مُتَقَارِبُونَ، فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً، فَظَنَّ أَنَّا اشْتَقْنَا أَهْلَنَا، وَسَأَلَنَا عَمَّنْ تَرَكْنَا فِي أَهْلِنَا، فَأَخْبَرْنَاهُ، وَكَانَ رَفِيقًا رَحِيمًا، فَقَالَ: «ارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيكُمْ، فَعَلِّمُوهُمْ وَمُرُوهُمْ، وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي، وَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ»
৫৫৮৩। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... আবু সুলাইমান মালিক ইবনে হুওয়ায়রিস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা কয়েকজন নবী (ﷺ) এর নিকটে এলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তার কাছে অমরা অবস্থান করলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি, তাদের সম্পর্কে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ালু, তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, (সৎকাজের) আদেশ কর এবং *যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখেছ, ঠিক সেভাবে নামায আদায় কর।* যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড়, সে ইমামতি করবে। তাখরিজ: বুখারি-৬০০৮
بعث جبريل -عليه السّلام- ليُبيّن للرسول محمد -صلى الله عليه وسلّم- كيفيَّة الصلاة وأوقاتها وعدد ركعاتها، فحدّدها له، وهي: سبعة عشر ركعةً مفروضةً في اليومِ والليلة،[١] وبيان ذلك فيما يأتي:[١]
مجموعة من المؤلفين (1992)، كتاب الفقه المنهجي على مذهب الإمام الشافعي (الطبعة 4)، دمشق:دار القلم للطباعة والنشر والتوزيع، صفحة 128، جزء 1. بتصرّف. ^ أ ب محمد التويجري (2009)، كتاب موسوعة الفقه الإسلامي (الطبعة 1)، صفحة 590، جزء 2.-
তিনি জিব্রাইল (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন - রাসূল মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যাখ্যা করার জন্য - আল্লাহর নামায ও সালাম - কিভাবে নামায পড়তে হবে, তার সময় এবং রাকাত সংখ্যা, তাই তিনি তার জন্য সেগুলি নির্দিষ্ট করেছেন, যা হল: সতেরোটি। দিনে ও রাতে ফরজ রাকাতসমূহ, [1] এবং এটি নিম্নলিখিতটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
ফজরের দুই রাকাত ----। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি মুনহাজি-১/১২৮
তৃতীয় কথা হল, হযরত আদম আলাইহিস সালাম ফজরের সময় দুরাকাত নামাজ আদায় করে ছিলেন আর মাগরিবের সময় হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তিন রাকাত মাগরিবের নামাজ পড়েছেন। সে কারণে আমাদের নামাজকে এইভাবে রাকাত নির্ধারণ করা হয়েছে, বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। দলিল -
1046 - مَا حَدَّثَنِي الْقَاسِمُ بْنُ جَعْفَرَ , قَالَ: سَمِعْتُ بَحْرَ بْنَ الْحَكَمِ الْكَيْسَانِيَّ يَقُولُ: سَمِعْتُ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ مُحَمَّدٍ ابْنَ عَائِشَةَ يَقُولُ: " إِنَّ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , لَمَا تِيبَ عَلَيْهِ عِنْدَ الْفَجْرِ , صَلَّى رَكْعَتَيْنِ فَصَارَتِ الصُّبْحَ , وَفُدِيَ إِسْحَاقُ عِنْدَ الظُّهْرِ فَصَلَّى إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَرْبَعًا , فَصَارَتِ الظُّهْرَ , وَبُعِثَ عُزَيْرٌ فَقِيلَ لَهُ كَمْ لَبِثْتَ؟ فَقَالَ: يَوْمًا , فَرَأَى الشَّمْسَ فَقَالَ: أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ , فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَصَارَتِ الْعَصْرَ " وَقَدْ قِيلَ غُفِرَ لِعُزَيْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ , وَغُفِرَ لِدَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ , عِنْدَ الْمَغْرِبِ , فَقَامَ فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ , فَجُهِدَ فَجَلَسَ فِي الثَّالِثَةِ , فَصَارَتِ الْمَغْرِبُ ثَلَاثًا. وَأَوَّلُ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ , نَبِيُّنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَلِذَلِكَ قَالُوا الصَّلَاةُ الْوُسْطَى هِيَ صَلَاةُ الْعَصْرِ. فَهَذِهِ عِنْدَنَا مَعْنًى صَحِيحٌ , لِأَنَّ أَوَّلَ الصَّلَوَاتِ إِنْ كَانَتِ الصُّبْحُ , وَآخِرَهَا الْعِشَاءُ الْآخِرَةُ , فَالْوُسْطَى فِيمَا بَيْنَ الْأُولَى وَالْآخِرَةِ هِيَ الْعَصْرُ , فَلِذَلِكَ قُلْنَا: إِنَّ الصَّلَاةَ الْوُسْطَى , صَلَاةُ الْعَصْرِ , وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى
১০৪৬। কাসিম ইব্ন জা’ফর (রাযিঃ)..... আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যখন ফজরের সময় আদম (রাযিঃ)-এর তাওবা কবূল হয় তখন তিনি (কৃতজ্ঞাতা স্বরূপ) দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন, এটা ফজরের সালাত হয়ে গেল।ইসহাক১ (আ)-এর কুরবানী যুহরের সময় পেশ করা হয়, এতে (কৃতজ্ঞতা সরূপ ইবরাহীম (আ) চার রাক’আত সালাত আদায় করলেন।এটা যুহরের সালাত হয়ে গেল।উযায়র (আ)-কে পুনঃ জীবিত করে তাঁকে বলা হল, আপনি কত দিন (সময়) আবস্থান করেছেন? তিনি বললেন, একদিন।তারপর সূর্য দেখে বললেন, অথবা দিনের কিছু অংশ।এরপর তিনি চার রাক’আত সালাত আদায় করলেন।এটা আসরের সালাত হয়ে গেল।এটাও বলা হয়েছে যে, উযায়র (আ)-কে হ্মমা করে দেয়া হয়।মাগরিবের সময় দাউদ (আ) হ্মমাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তখন চার রাক’আত আদায় করার জন্য দাঁড়িয়েছেন, যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তখন তৃতীয় রাক’আতে বসে গেছেন।তাই মাগরিবের তিন রাক’আত হয়ে গেল।ইশার সালাত সর্বপ্রথম আমাদের নবী(ﷺ) আদায় করেছেন। বস্তুত এ জন্যই তাঁরা আসরের সালাতকে ‘সালাতুল উস্তা’ (মধ্যবর্তী সালাত) বলেন।
সুতরাং আমাদের মতে এ বিশ্লেষণ বিশুদ্ধ। কেননা যদি ফজরের সালাত প্রথম সালাত এবং ইশার সালাত আখেরী সালাত হয় তাহলে প্রথম এবং শেষের মাঝে মধ্যবর্তী সালাত আসরের সালাত হবে।এ জন্যই আমরা বলি যে, মধ্যবর্তী সালাত হল আসরের সালাত।আর এটাই হচ্ছে, ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসূফ (রাহঃ) ও ইমাম মাহাম্মদ (রাহঃ)-এর অভিমত।
নোট:
১. বিশুদ্ধ মতে ইসমাইল যবীহুল্লাহ (আ)-কে কুরবানীর জন্যই ইবরাহীম (আ) আদিষ্ট হয়েছিলেন (দ্র. তাফসীরে ইব্ন কাছীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬) -সম্পাদক।
—ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ১০৪৬
সারকথা হলো, নামাজের রাকাত আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত, তবে পূর্বের যামানার নবিদের আদায় করা সালাতের ওয়াক্ত ও রাকাত আমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন।
والله اعلم بالصواب