জিজ্ঞাসা-১২৯৬২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মুসলিম একজন মেয়ে হিন্দু ছেলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে ।এ ব্যাপারে ইসলামের শরীয়তের বিধান কি?
তারিখ: ১৭/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কোনো মুসলমান যখন ইসলাম ত্যাগ করে নাস্তিকতা বা অন্য ধর্ম অবলম্বন করে তখন তাকে ইসলামী পরিভাষায় মুরতাদ বলে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বাণী হলো-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনের অনুসরণ করবে, তার পক্ষ থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (আলে ইমরান ৩ : ৮৫)
দ্বিতীয় কথা হলো, মুরতাদের দুনিয়াবী শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
বিচারকের জন্য নিয়ম হল, মুরতাদকে প্রথমে তওবা করার সুযোগ দিবে। তওবা করলে তো ভালো। অন্যথায় নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করবে।
মুরতাদের তওবা কবুল করা এবং এ উসিলায় তার শাস্তি মওকুফ করা শরীয়তে মুহাম্মদীর বিধান। নতুবা তাওরাতের শরীয়তে তওবা করলেও এ শাস্তি মাফ হত না। বরং তওবার মাধ্যমে পরকালীন শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য দুনিয়াবী শাস্তি গ্রহণ করা অপরিহার্য ছিল। দলিল-
হাদিস নং-০১
عن عكرمة قال : أتي علي رضي الله عنه بزنادقة فأحرقهم. فبلغ ذلك ابن عباس فقال : لو كنت أنا لم أحرقهم، لنهي رسول الله صلى الله عليه وسلم : لا تعذبوا بعذاب الله، ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : من بدل دينه فاقتلوه.
১. ইকরিমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. এর নিকট কয়েকজন মুরতাদ-যিন্দীককে ধরে আনা হল। তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ-খবর ইবনে আববাস রা এর নিকট পৌছলে তিনি বললেন, আমি হলে পুড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ পাকের শাস্তি দানের বস্ত্ত (আগুন) দ্বারা শাস্তি দিও না।’ আমি বরং এদেরকে হত্যা করতাম। কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯২২, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১)
হাদিস নং-০২
عن عبد الله قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : لا يحل دم امرء مسلم يشهد أن لا إله إلا الله، وأني رسول الله، إلا بإحدى ثلاث : النفس بالنفس، والثيب الزاني، والمفارق لدينه، التارك للجماعة.
২. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তিন কারণের কোনো একটি ব্যতীত তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয় : অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করা, ইসলাম ত্যাগ করে উম্মত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৮৭৮, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪০২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৮৭০৪, বায়হাকী ৮:১৯৪ ইত্যাদি)
ফকিহদের মতামত:
ইমাম তিরমিযী (মৃত্যু ২৭৯- হি.) তার জামে তিরমিযীর ১৪৫৮ নম্বর হাদীস-من بدل دينه فاقتلوه অর্থাৎ যে তার দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে-এর অধীনে লিখেছেন,
والعمل على هذا عند أهل العلم في المرتد
অর্থাৎ মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে ইলমের সকল ধারক-বাহকের নিকট এটাই অনুসৃত বিধান।
ইবনে আরাবী (মৃত্যু ৫৪৩ হি.) ইমাম তিরমিযীর উপরোক্ত বক্তব্যের প্রসঙ্গে লিখেছেন,
لا خلاف في أن المرتد يقتل.
অর্থাৎ মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড-এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।-আরিযাতুল আহওয়াযী ৬/২৪৩
ইবনে কুদামা হাম্বলী (মৃত্যু ৬২০ হি.) লিখেছেন,
وأجمع أهل العلم على وجوب قتل المرتدين. وروي ذلك عن أبي بكر، وعثمان، وعلي، ومعاذ، وأبي موسى، وابن عباس، وخالد وغيرهم، ولم ينكر على ذلك. فكان إجماعا.
অর্থাৎ সব ধরনের মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ বিষয়ে আলেমগণের ইজমা তথা মতৈক্য রয়েছে। হযরত আবু বকর, উসমান, আলী, মুআয, আবু মুসা, ইবনে আববাস এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ প্রমুখ সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এ শাস্তির উপর কোনো সাহাবী আপত্তি করেননি। অতএব মৃত্যুদন্ডের এ বিধানের উপর সাহাবায়ে কেরামেরও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।-আলমুগনী ১২ : ২৬৪
সারকথা হলো, ইসলাম ধর্মে কোন ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে গেলে প্রথমে তাকে তওবা করার আহবান করা হবে, যদি সে তওবা না করে, তাহলে তার শাস্তি হলে মৃত্যুদণ্ড। তবে মনে রাখতে হবে এই হদটি প্রয়োগ করবে রাষ্ট্র, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। কেননা ফেতনা হত্যার চেয়েও মারাত্মক। যেমন,
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। সূরা বাকারা-১৯১
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত মেয়েটিকে নিজ ধর্মে ফিরে আসার জন্য প্রেষণা দিতে হবে এবং তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে।
والله اعلم بالصواب