: রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছেঃ টাকা, পয়সা, অর্থ এবং সম্পদ।
■ রিজিকের এর সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছেঃ শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা।
■ রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হচ্ছেঃ পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেক সন্তান এবং
■ রিজিকের পরিপূর্ণ স্তর হচ্ছে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।
তাং-০৬-০৬-২২ ঈসায়ি
শহীদুল ইসলাম যশোর থেকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।
উত্তর: আমার জানে মতে, না, এটা কোনো সরাসরি হাদিস বা আসার নয়। তবে আপনার উল্লেখিত প্রতিটি স্তর যে রিজিকের অন্তর্ভুক্ত তা পবিত্র কুরআন হাদিসের নস দ্বারা প্রমাণিত। আমার মনে হয় কোনো মনীষী/আলেম এ গুলোর তারতিব দিয়েছেন (স্তর ভাগ করেছেন)।
(সম্ভবত শাহদাত ফয়সাল (রহ.) নামক একজন আলেম এ স্তর ভাগ করেছেন) । আসুন আমরা প্রথমে রিজক শব্দের অর্থ জেনে নেই।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
রিজিকের পরিচয়:
ﺭِﺯْﻕﺟﻤﻊ ﺃَﺭﺯﺍﻕ : 1 - ﺍﺳﻢ ﺍﻟﺸّﻲﺀ ﺍﻟﻤُﻌﻄَﻰ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻣﻦ ﺭﺑﺢ ﺃﻭ ﻣﻜﺴﺐ ﺃﻭ ﺛﺮﻭﺓ ﺃﻭ ﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ -: ﺃﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﺭِﺯﻗًﺎ ، - ﻗﻄﻊ ﺭﺯﻕَ ﻓﻼﻥ : ﻣﻨﻊ ﻋﻨﻪ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻟﻌﻴﺶ ، (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﻠﻐﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﻤﻌﺎﺻﺮ)
রিযক তার বহুবচন হয় আরযাকুন। রিযক ঐ দানকৃত জিনিষকে বলা হয়,যাদ্বারা মানুষ উপকৃত হয়।ঐ দানকৃত জিনিষ ব্যবসার মুনাফা বা নিজ উপার্জন বা ধনসম্পত্তি ইত্যাদি হতে পারে।
ﺃﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﺭِﺯﻗًﺎ অর্থ তাকে জীবনোপকরণ দেয়া হয়েছে।
ﻗﻄﻊ ﺭﺯﻕَ ﻓﻼﻥ অর্থ হলো, তার জীবনোপকরণ কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সূত্র: আল-লুগাতুল আরাবিয়্যাতুল মু'আসিরাহ
ﺭِﺯْﻕُ ـ ﺭِﺯْﻕُ : ﻣﺎ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑﻪ ، (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﻘﺎﻣﻮﺱ ﺍﻟﻤﺤﻴﻂ) রিযক যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। সূত্র: আল-কামূসুল মুহিত
ﺭﺯﻕ : ﻣﺎ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﻣﻦ ﻣﺎﻝ ﺃﻭ ﺯﺭﻉ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻫﻤﺎ (ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﺮﺍﺋﺪ) ধনসম্পত্তি, শস্যক্ষেত্র ইত্যাদি দ্বারা যে উপকৃত হওয়া যায় তাকেই রিযক বলে। সূত্র: আল-মু'জামুর রায়িদ
ﻭﺍﻷَﺭﺯﺍﻕُ ﻧﻮﻋﺎﻥِ : ﻇﺎﻫﺮﺓ ﻟﻸَﺑﺪﺍﻥ ﻛﺎﻷَﻗْﻮﺍﺕ ، ﻭﺑﺎﻃﻨﺔ ﻟﻠﻘﻠﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨُّﻔﻮﺱ ﻛﺎﻟﻤَﻌﺎﺭِﻑ ﻭﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ؛
রিজিক দুই প্রকার যথাঃ-(১)প্রকাশ্য রিজিক যা শরীরকে প্রদান করা হয়,যেমন খাদ্য।(২) অপ্রকাশ্য রিজিক যা রুহকে প্রদান করা হয়, যেমন আল্লাহর মা'রেফত, জ্ঞানবিজ্ঞান ইত্যাদি। লেসানুল আরব
ক। টাকা, পয়সা, অর্থ এবং সম্পদ রিজিক হওয়ার দলিল:
الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ
অর্থ: গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। সূরা বাকারা-০৩
یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ
‘হে রাসুলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো। সূরা মুমিনুন-৫১
খ। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা রিজিক হওয়ার দলিল:
আরবি হাদিস عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «نِعْمَتَانِ مَغبونٌ فِيهِمَا كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ، وَالفَرَاغُ». رواه البخاري
অর্থ: ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দুটির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর। বুখারি৬৪১২, তিরমিযি ২৩০৪, ইবন মাজাহ ৪১৭০, আহমদ ২৩৩৬, ৩১৯৭, দারেমি ২৭০৭
নোট: উপরোক্ত হাদিসে সুস্থতাকে নেয়ামত/অনুগ্রহ বলেছেন। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহর অনুগ্রহকেও রিজক বলা হয়েছে। যেমন,
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০
মুফাসসিরে কেরামগণ, এখানে অনুগ্রহ বলতে রিজিক বলেছেন।
গ। পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেক সন্তান রিজিক হওয়ার দলিল:
الدُّنيا متاعٌ وخيرُ متاعِها المرأةُ الصَّالحةِ
الراوي : [عبدالله بن عمرو] | المحدث : الزرقاني | المصدر : مختصر المقاصد | الصفحة أو الرقم : 466 | خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه مسلم (1467)
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়া পরোটা হলো উপভোগের বস্তু। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্তু) সতী-সাধ্বী নারী। সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৬৭; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪০৩১
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন। সূরা সাফফাত-১০০
নোট:
نْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তান মারা গেলে তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অবশ্য তিনটি আমল বিচ্ছিন্ন হয় না; সদকাহ জা-রিয়াহ (ইষ্টাপূর্ত কর্ম), উপকারী ইলম, অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে থাকে। মুসলিম ৪৩১০, আবূ দাঊদ ২৮৮২
আমরা রিজকের সংজ্ঞা জেনেছি যে, যা দ্বারা উপকৃত যায়। মৃত্যুর পরও নেক সন্তানের দুআ দ্বারা পিতা-মাতা উপকৃত হচ্ছে। সুতরাং সন্তান সন্তান (নেককার) শ্রেষ্ঠ রিজকের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি রিজিক হওয়ার দলিল:
أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عنْه قالَ: اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً في سَبيلِكَ، واجْعَلْ مَوْتي في بَلَدِ رَسولِكَ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ.
الراوي : أسلم مولى عمر بن الخطاب | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري | الصفحة أو الرقم : 1890 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অরথ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার পথে শাহাদাত নসিব করো। বুখারি-১৮৯০
নোট: এই হাদিস শরিফে রিজিক শব্দটি দান করো অর্থে ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তষ্টি (শহীদি মৃত্যু) কামনা করা হয়েছে। আর জীবন-মরণ সবই তো আল্লাহর সমীপে-নিমিত্তে। দলিল:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
অর্থ: নিশ্চয়ই, আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। সূরা আনআম-১৬২
আসলাফের আমল:
হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ থানভি রহ. বলেন, টাকা হলো সবচেয়ে বড় রিজিক। কারণ টাকা হলে সবই পাওয়া যায়। (সমস্ত খাদ্য, দ্রব্য টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় কিন্তু দ্রব্রের/মালের বিনিময়ে সব কিছু পাওয়া যায় না)। তাই আমি কখনও টাকা বাম হাতে গ্রহণ (লেনদেন) করি না।
والله اعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله و اصحابه و جميع المؤمن وسلم وتسليما
আল্লাহ তাআলাই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।