জিজ্ঞাসা-১২৯৭৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল গরমের কারণে মসজিদের ভিতরে নামাজের জামাত না করে বাইরে উন্মুক্ত স্থানে জামাতে নামাজ আদায় করলে সহি হবে কি? এক্ষেত্রে মসজিদের ভিতরে জামাত না করার কারণে মসজিদের হক আদায় হবে কি? এবং উক্ত বাহিরের জামাত সহি হবে কি?
তারিখ: ০২/০৫/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ বাগেরহাট থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মসজিদে নামাজের জামাত কায়েম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। দলিল-
فإن إقامة صلاة الجماعة في المساجد سنةٌ مؤكدةٌ، قال الدردير رحمه الله: “(الْجَمَاعَةُ) أَيْ فِعْلُ الصَّلَاةِ جَمَاعَةً أَيْ بِإِمَامٍ وَمَأْمُومٍ (بِفَرْضٍ) وَلَوْ فَائِتَةً (غَيْرَ جُمُعَةٍ) (سُنَّةٌ) مُؤَكَّدَةٌ”، قال الدسوقي رحمه الله محشيًا: “(قَوْلُهُ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةُ)… وَظَاهِرُهُ أَنَّهَا سُنَّةٌ فِي الْبَلَدِ وَفِي كُلِّ مَسْجِدٍ وَفِي حَقِّ كُلِّ مُصَلٍّ وَهَذِهِ طَرِيقَةُ الْأَكْثَرِ… وَقَالَ
অর্থাৎ মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। -----প্রতিটি শহর/মহল্লায় এবং প্রতিটি মসজিদে জামাত কায়েম করা সুন্নাত। সূত্র: দারুল ইফতা, লাইবিয়া-৪৬৪১ ( ফতোয়া নং)
তবে কোনো কারণে বাইরে জামাতে নামাজ আদায় করলে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। দলিল-
438 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارٌ هُوَ أَبُو الحَكَمِ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ الفَقِيرُ، قَالَ: حَدَّثَنَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الأَنْبِيَاءِ قَبْلِي: نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ، وَجُعِلَتْ لِي الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ، وَأُحِلَّتْ لِي الغَنَائِمُ، وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً، وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً، وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ "
৪২৫। মুহাম্মাদ ইবনে সিনান (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।
১. আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়।
২. সমস্ত জমিন আমার জন্য নামায আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে নামাযের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন নামায আদায় করে নেয়।
৩. আমার জন্য গনিমত হালাল করা হয়েছে।
৪. অন্যান্য নবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।
৫. আমাকে (ব্যাপক) শাফাআতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
Narrated Jabir bin `Abdullah: Allah’s Messenger (sallallahu ’alaihi wa sallam) said, "I have been given five things which were not given to any amongst the Prophets before me. These are: 1. Allah made me victorious by awe (by His frightening my enemies) for a distance of one month’s journey. 2. The earth has been made for me (and for my followers) a place for praying and a thing to perform Tayammum. Therefore my followers can pray wherever the time of a prayer is due. 3. The booty has been made Halal (lawful) for me (and was not made so for anyone else). 4. Every Prophet used to be sent to his nation exclusively but I have been sent to all mankind. 5. I have been given the right of intercession (on the Day of Resurrection.)
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৫ (আন্তর্জাতিক নং ৪৩৮)
দ্বিতীয় কথা হলো, মসজিদ রেখে বাইরে নামাজ আদায় করলে মসজিদে হক আদায় হবে না। এটা মসজিদ বিরানের অন্তর্ভুক্ত হবে। দলিল-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ
যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? সূরা বাকারা-১১৪
মুফতী শফী রাহ. সূরা বাকারার ১১৪ নং আয়াত (অর্থাৎ যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে...)-এর অধীনে লিখেছেন, ‘(এ থেকে) বোঝা গেল যে, মসজিদ বিরান করার যত পন্থা আছে সবই নিষিদ্ধ। এতে খোলাখুলিভাবে মসজিদ বিধ্বস্ত করা যেমন শামিল তেমনি এমন কোনো উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করাও শামিল, যাতে তা বিরান হয়ে যায়। মসজিদের বিরান এই যে, তাতে নামাযের জন্য মানুষজন আসে না বা কম হয়। কেননা মসজিদের প্রকৃত আবাদ প্রাচীর বা কারুকার্য দ্বারা নয়, আল্লাহর যিকিরকারীদের দ্বারা...।’ সূত্র: তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/৩০০
সাহাবায়ে কেরামের যুগে কেরামের যুগে গরমের কারণে বাইরে জামাত করার কোন নজির পাওয়া যায় না; বরং তারা গরমের মধ্যে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। দলিল-
385 - حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ هِشَامُ بْنُ عَبْدِ المَلِكِ، قَالَ: حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ المُفَضَّلِ، قَالَ: حَدَّثَنِي غَالِبٌ القَطَّانُ، عَنْ بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «كُنَّا نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَضَعُ أَحَدُنَا طَرَفَ الثَّوْبِ مِنْ شِدَّةِ الحَرِّ فِي مَكَانِ السُّجُودِ»
৩৭৮। আবুল ওলীদ হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক (রাহঃ) ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমরা নবী (ﷺ) এর সাথে নামায আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদার সময় অধিক গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত সিজদার স্থানে রাখতো।
Narrated Anas bin Malik: We used to pray with the Prophet and some of us used to place the ends of their clothes at the place of prostration because of scorching heat.
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৫)
তৃতীয় কথা হলো, মসজিদের রহমত ও বরকত থেকে মাহরুম হবে। দলিল-
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " صَلاَةُ أَحَدِكُمْ فِي جَمَاعَةٍ تَزِيدُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي سُوقِهِ وَبَيْتِهِ بِضْعًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً، وَذَلِكَ بِأَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ، لاَ يُرِيدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ، لاَ يَنْهَزُهُ إِلاَّ الصَّلاَةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَ بِهَا دَرَجَةً، أَوْ حُطَّتْ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ، وَالْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ الَّذِي يُصَلِّي فِيهِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ، مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ ". وَقَالَ " أَحَدُكُمْ فِي صَلاَةٍ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ ".
১৯৮৭. কুতায়বা (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কারো জামা'আতে নামায আদায় নিজ ঘরের নামাযের চাইতে বিশ গুণেরও অধিক মর্তবা রয়েছে। কারণ সে যখন উত্তমরূপে উযু করে মসজিদে আসে, নামায আদায় ছাড়া অন্য কোন অভিপ্রায়ে আসে না, নামায ছাড়া অন্য কিছুই তাকে উদ্বুদ্ধ করে না। এমতাবস্থায় তার প্রতি কদমে এক মর্তবা বৃদ্ধি করা হবে এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর ফিরিশতাগণ তোমাদের সে ব্যক্তির জন্য (এ মর্মে) দুআ করতে থাকবেন, যতক্ষণ সে যেখানে নামায আদায় করেছে, সেখানে থাকবে: আয় আল্লাহ, আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করুন, তার প্রতি রহম করুন। যতক্ষণ না সে তথায় উযু ভঙ্গ করে, যতক্ষণ না সে তথায় কাউকে কষ্ট দেয়। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের সে ব্যক্তি নামাযরত গণ্য হবে, যতক্ষণ সে নামাযের অপেক্ষায় থাকে।
Narrated Abu Huraira:
Allah’s Messenger (ﷺ) said, "The congregational prayer of anyone amongst you is more than twenty (five or twenty seven) times in reward than his prayer in the market or in his house, for if he performs ablution completely and then goes to the mosque with the sole intention of performing the prayer, and nothing urges him to proceed to the mosque except the prayer, then, on every step which he takes towards the mosque, he will be raised one degree or one of his sins will be forgiven. The angels will keep on asking Allah’s forgiveness and blessings for everyone of you so long as he keeps sitting at his praying place. The angels will say, ’O Allah, bless him! O Allah, be merciful to him!’ as long as he does not do Hadath or a thing which gives trouble to the other." The Prophet (ﷺ) further said, "One is regarded in prayer so long as one is waiting for the prayer."
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৭ (আন্তর্জাতিক নং ২১১৯)
সারকথা হলো, গরমের কারণে মসজিদের বাইরে জামাত আদায় করলে নামাজ আদায় হবে ঠিকই, কিন্তু মসজিদের হক নষ্ট হবে, মসজিদ বিরান করার জন্য গুনাহগার এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হবে।
والله اعلم بالصواب