আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪৩৭: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার থেকে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়া কি জরুরি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪৩৭:

আসসালামু আলাইকুম।

মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার থেকে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়া কি জরুরি? যদি জরুরি হয়, তাহলে কিভাবে দিতে হবে? এ বিষয়ে শারয়ি সমাধান দিলে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান। তারিখ: ২৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

  মাওলানা  আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলোএ বিষয়ে ওলামায়ে দ্বীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সালাম দেওয়া সুন্নাত আর জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব। দলিল: 

Surah An-Nisa, Verse 86:

وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া (সালাম দেয়) করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।  সূরা নিসা -৮৬


وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ الله ﷺ قَالَ حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ وَعِيَادَةُ المَريض وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ وَإجَابَةُ الدَّعْوَة وتَشْميتُ العَاطِسِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

অর্থ: আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিমের উপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ (১) সালামের জবাব দেওয়া, (২) রোগী দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, (৪) দাওয়াত গ্রহণ করা এবং (৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া। তাখরিজ: বুখারী ১২৪০, মুসলিম ৫৭৭৬


প্রশ্ন:  ক। লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়া কি জরুরি? 

উত্তর: ক।  

فما جاءك من سلام مكتوب عبر البريد أو رسائل الهاتف، أو عبر وسائل التواصل على الإنترنت، يكفيك رده كتابة، ولك رده باللفظ، ويجب أن يكون الرد بهذا أو هذا : على الفور.ফুকাহায়ে উম্মত কলম বা আধুনিক মেসেজ এর মাধ্যমে লিখিত সালাম, মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেন। অর্থাৎ সরাসরি/সাক্ষাতে সালামের মত। দলিল উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস এবং নিম্নের হাদিসদ্বয়


হাদিস নং-০১

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « هَذَا جِبريلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلاَمَ» قَالَتْ: قُلْتُ: وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ . متفقٌ عَلَيْهِ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ’’এই জিব্রীল (জিব্রাইল/জিবরাঈল) আলাইহিস সালাম তোমাকে সালাম পেশ করছেন।’’ তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ’অআলাইহিস সালামু ওয়ারহমাতুল্লহি অবারাকাতুহ।’ তাখরিজ: বুখারী ৩১১৭, ৩৭৬৮,৬২০১, ৬২৪৯, ৬২৫৩, মুসলিম ২৪৪৭, তিরমিযী ২৬৯৩, ৩৮৮১, ৩৮৮২, নাসায়ী ৩৯৫২, ৩৯৫৩, ৩৯৫৪, আবূ দাউদ ৫২৩২, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৬, আহমাদ ৩২৭৬০, ২৩৯৪১, ২৪০৫৩, ২৫৩৫২


হাদিস নং-০২

عَنْ سَعِيدِ بْنِ كَثِيرٍ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ، تَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمًا مَعَ صَاحِبِ فَرَسٍ أَبْيَضَ أَخَذَ بِمَعْرِفَةِ فَرَسِهِ، فَلَمَّا أَتَانِي قُلْتُ: مَنْ صَاحِبُ الْفَرَسِ؟ قَالَ: «وَقَدْ رَأَيْتِيهِ؟» ، قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «وَمَنْ يُشْبِهُهُ؟» ، قُلْتُ: دِحْيَةُ بْنُ خَلِيفَةَ الْكَلْبِيُّ، قَالَ: «ذَاكَ جِبْرِيلُ وَهُوَ يُقْرِئُكِ السَّلَامَ» ، قُلْتُ: وَعَلَى مَنْ أَرْسَلَهُ وَعَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ (المعجم الكبير للطبرانى، رقم الحديث-84) 

নোট: হজরত আয়েশা রা. হজরত জিবরাঈল আ.এর সালাম জওয়াব দিয়েছেন, সালামটি সরাসরি ছিল না।

ফিকহি দলিল:

وَيَجِبُ رَدُّ جَوَابِ كِتَابِ التَّحِيَّةِ كَرَدِّ السَّلَامِ.

وفى رد المحتار- (قَوْلُهُ وَيَجِبُ رَدُّ جَوَابِ كِتَابِ التَّحِيَّةِ) لِأَنَّ الْكِتَابَ مِنْ الْغَائِبِ بِمَنْزِلَةِ الْخِطَابِ مِنْ الْحَاضِرِ مُجْتَبًى وَالنَّاسُ عَنْهُ غَافِلُونَ ط. أَقُولُ: الْمُتَبَادَرُ مِنْ هَذَا أَنَّ الْمُرَادَ رَدُّ سَلَامِ الْكِتَابِ لَا رَدُّ الْكِتَابُ. لَكِنْ فِي الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِلسُّيُوطِيِّ رَدُّ جَوَابِ الْكِتَابِ حَقٌّ كَرَدِّ السَّلَامِ قَالَ شَارِحُهُ الْمُنَاوِيُّ: أَيْ إذَا كَتَبَ لَك رَجُلٌ بِالسَّلَامِ فِي كِتَابٍ وَوَصَلَ إلَيْك وَجَبَ عَلَيْك الرَّدُّ بِاللَّفْظِ أَوْ بِالْمُرَاسَلَةِ وَبِهِ صَرَّحَ جَمْعُ شَافِعِيَّةٍ؛ وَهُوَ مَذْهَبُ ابْنِ عَبَّاسٍ (رد المحتار، كتاب الصلاة، فصل فى البيع)


প্রশ্ন: খ। লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়ার পদ্ধতি কি?

উত্তর: খ।  লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব লিখেও দেওয়া যায় আবার মুখে উচ্চারণ করে দেওয়া যায়। 

উল্লেখ্য যে, লিখিতভাবে জওয়াব দেওয়া জরুরি নয়।  সূত্র: ফয়যুল কাদির-৪র্থ খণ্ড,৩১ পৃষ্ঠা; ফওয়ায়ে শামি-৬ষ্ঠ খণ্ড,৪১৫ পৃষ্ঠা


 শেষ কথা হলো, সালামের জওয়াব ওয়াজিব, সালামটি সরাসরি/ কারও মাধ্যমে/লিখিত/মেসেজ মাধ্যমে প্রাপ্ত হোক না কেন।


পরামর্শ:  পত্রের/মেসেজ এর  জবাব/রিপ্লাই দেবার ইচ্ছে থাকলে লিখার সময় জবাব লিখে দিবেন। আর না দেবার ইচ্ছে থাকলে মুখে জবাব দিয়ে দিবেন। তবে উত্তম ও উচিত হল, পত্রটি পড়ার পর পরই মৌখিক জবাব দিয়ে দেবে। কারণ পরে যদি পত্রের জবাব দেয়া না হয়, তাহলে যেন ওয়াজিব ছুটে যাবার গোনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

 


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক