জিজ্ঞাসা-১৩১২০:
আসসালামু আলাইকুম। জনাব,কিবলা সামনে বা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করার বিধান বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। কোন স্থানে স্থায়ী ভাবে এই সিস্টেমে ওয়াশরুম তৈরী করা থাকলে এর বিধান কী? অগ্রীম কৃতজ্ঞতা।
তারিখ:১০/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা হোসাইন আলী থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, খোলা মাঠে বা খোলা জায়গায় কিবলার দিকে মুখ-পিঠ করে প্রস্রাব-পায়খানা করা চার ইমামের নিকট সর্বসম্মতভাবে হারাম বা নাজায়েজ।
তবে ঘেরা স্থানে জায়েজের ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
أبو حنيفة واختاره شيخ الإسلام ابن تيمية رحمهما الله ) إلى تحريم استقبال القبلة واستدبارها عند قضاء الحاجة مطلقاً ، في الفضاء والبنيان .
ইমাম আবু হানিফা রহ. এবং শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ. এর মতে সর্বাবস্থায় হারাম, খোলা জায়গায় হোক আর বন্ধ জায়গায় হোক। দলিল-
394 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَتَيْتُمُ الغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا القِبْلَةَ، وَلاَ تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا» قَالَ أَبُو أَيُّوبَ: «فَقَدِمْنَا الشَّأْمَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ بُنِيَتْ قِبَلَ القِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ، وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ تَعَالَى» ، وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا أَيُّوبَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125]
৩৮৬। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম।
যুহরী (রাহঃ) আতা (রাহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবু আইয়ুব (রাযিঃ)-কে নবী (ﷺ) এর নিকট থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি।
Narrated Abu Aiyub Al-Ansari: The Prophet said, "While defecating, neither face nor turn your back to the Qibla but face either east or west." Abu Aiyub added. "When we arrived in Sham we came across some lavatories facing the Qibla; therefore we turned ourselves while using them and asked for Allah’s forgiveness."
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৬ (আন্তর্জাতিক নং ৩৯৪)
তৃতীয় কথা হলো, ইমাম মালেক, শাফি ও হাম্বল রহ. এর মতে, ঘেরা স্থানে কিবলার দিকে মুখ-পিঠ করে প্রস্রাব-পায়খানা করা জায়েয। দলিল-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْحَاقَ، يُحَدِّثُ عَنْ أَبَانَ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ نَهَى نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِبَوْلٍ فَرَأَيْتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْبَضَ بِعَامٍ يَسْتَقْبِلُهَا .
১৩. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার .... জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ নবী (ﷺ) কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ইন্তিকালের এক বছর পূর্বে আমি তাকে কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব করতে দেখেছি।*
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩ (আন্তর্জাতিক নং ১৩)
হানাফিদের পক্ষে জবাব:
হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা. হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ করেছেন যে, সিরিয়ার ইসিত্মঞ্জাখানাগুলো কিবলার দিকে ফিরিয়ে নির্মিত ছিল। তাঁরা তা ব্যবহারের সময় শরীর ঘুরিয়ে বসতেন, তার পরও আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ থেকে বুঝা গেলো যে, খোলা ময়দানের মত ইসিত্মঞ্জাখানার ভেতরেও কিবলার প্রতি সম্মান দেখানো জরম্নরী এবং ওযর ব্যতীত কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করা মাকরূহ। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আলমগিরী: ১/৫০)
এর বিপরীতে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত হাফসার ঘরের ছাদে উঠে রসূল স.কে ইসিত্মঞ্জাখানার মধ্যে কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করতে দেখেছেন। (বুখারী-১৪৭) এ হাদীসের তুলনায় আমরা পূর্ববর্ণিত হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীসকে এ কারণে প্রাধান্য দিয়ে থাকি যে, কা’বার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সকলের জন্য ব্যাপক। আর হযরত ইবনে উমার রা. কর্তৃক বর্ণিত রসূল স.-এর উক্ত কাজটি তাঁর ব্যক্তিগত। সুতরাং হতে পারে এটা রসূল স.-এর বৈশিষ্ট্য যা অন্যদের জন্য বৈধ নয়। অথবা এটা তিনি কোন ওযরের কারণে করেছেন। উপরন্তু হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীস অনুসরণ করলে কা’বার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন: ১। কোন স্থানে স্থায়ী ভাবে এই সিস্টেমে ওয়াশরুম তৈরী করা থাকলে এর বিধান কী
উত্তর: ১। প্রথমত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করার চেষ্টা করবে। তারপর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে একটু বাঁকা হয়ে বসবে, যাতে ৪৫ ডিগ্রি মধ্যে না থাকে এবং ইস্তেগফার করবে। দলিল-
إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا بِبَوْلٍ وَلَا غَائِطٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময় কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।” আবু আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কা’বার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা তা ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম। বুখারি -৩৯৪
সারকথা হলো, দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণযোগ্য।
والله اعلم بالصواب