জিজ্ঞাসা -১২৩৩০:
আসসালামু আলাইকুম
কোনো কোনো এলাকায় পাঠা ছাগল খায় না । কারণ অমুসলিমগণ পাঠা ছাগল বলি দেয় । আমার প্রশ্ন হলো । পাঠা ছাগল খাওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কি ?
তারিখ: ০৪/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মিজানুর রহমান সাভার থেকে -----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
তাসলিম ও হামদ-দরুদ পর প্রথম কথা হলো, দয়াময় আল্লাহ তাআলা যেসব চতুষ্পদ জন্তু আমাদের জন্য হালাল করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো ছাগল আর পাঠা ছাগলের অন্তর্ভুক্ত।
দলিল:
وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
‘আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বিবিধ উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ কর।’ সূরা নাহল-০৫
হাদিস শরিফে এসেছে,
حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ الْحَنَفِيُّ، حَدَّثَنَا الضَّحَّاكُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ، يَقُولُ سَأَلْتُ أَبَا أَيُّوبَ الأَنْصَارِيَّ كَيْفَ كَانَتِ الضَّحَايَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّي بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ فَيَأْكُلُونَ وَيُطْعِمُونَ حَتَّى تَبَاهَى النَّاسُ فَصَارَتْ كَمَا تَرَى
আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) বলেন, আবু আইয়ুব (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় কুরবানীর বিধান কেমন ছিল। তিনি বললেন, কোন লোক তার ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে একটি ছাগল দ্বারা কুরবানী আদায় করত এবং তা নিজেরাও খেত, অন্যান্য লোকদেরকেও খাওয়াত। অবশেষে মানুষেরা গর্ব ও আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ফলে পরিস্থিতি যা দাড়িয়েছে তা তুমি নিজেই দেখতে পাচ্ছ। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৩১৪৭,তিরমিজি- ১৫০৫
আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে পাঠা ছাগলেরই প্রজাতির। সুতরাং প্রমানিত হলো, পাঠার গোশত খাওয়া জায়েজ, কোন ধরনের সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয় কথা হলো, সাধারণ অবস্থায় কোন মুসলিম যদি দুর্গন্ধ বা অন্য কোন কারণে পাঠার গোশত না খায়, এতে কোন সমস্যা নেই। যেমন অনেকে ইলিশ মাছ খেতে পারে না।
কিন্তু হিন্দুরা/সনাতন ধর্মের লোকেরা বলি দেয়, এজন্যই খাওয়া যাবেনা, খাওয়া হারাম। এটা মূর্খতা, কুসংস্কার এবং শরীয়তে দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ ।
দলিল:
আয়াত নং -০১
Surah At-Tahrim, Verse 1:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
সূরা তাহরিম -০১
আয়াত নং -০২
-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ‘হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ সুরা বাকারা-২০৮
আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট: যে সকল ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তাদের কতিপয় চেয়েছিল ইয়াহুদী ধর্মের কিছু কাজ আগের মতই পালন করবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়। নির্দেশ দেওয়া হয় যে, দেহমনে, চিন্তা-চেতনায় এবং বিশ্বাস ও কর্মে সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। কুরআন-সুন্নাহয় তোমাদেরকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। কাজেই কেবল তারই অনুসরণ কর। এর বাইরে অন্য কোনও ধর্ম ও মতবাদ থেকে কিছু গ্রহণ করা বা মনগড়া রীতি-নীতি, বিদ‘আত, কুসংস্কার ইত্যাদি অনুসরণ করার মানসিক দুর্বলতা সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেল। সূত্র: তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন-১৫৩ নং টিকা, মুফতি তাকি উসমানি দা.বা.
আয়াত নং -০৩
قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّا أَنْزَلَ اللهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَاماً وَحَلاَلاً قُلْ اللهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللهِ تَفْتَرُونَ-
‘আপনি বলুন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে রূযী দান করেছেন, তন্মধ্যে তোমরা যে সেগুলির কতক হারাম ও কতক হালাল করে নিয়েছ, তা কি তোমরা ভেবে দেখেছ? আপনি বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এতদ্বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর নামে মনগড়া কথা বলছ’ । ইউনুস- ৫৯
হাদিস শরিফে এসেছে-
من قرأ القرآنَ فاستظهَره فأحَلَّ حلالَه وحرَّم حرامَه أدخله اللهُ به الجنَّةَ وشفَّعه في عشرةٍ من أهلِ بيتِه كلُّهم قد وجبت له النَّارُ
المزيد..
الراوي : علي بن أبي طالب | المحدث : الترمذي | المصدر : سنن الترمذي
الصفحة أو الرقم : 2905 | | أحاديث مشابهة
التخريج : أخرجه الترمذي (2905) واللفظ له، وابن ماجه (216)، وعبدالله بن أحمد في ((زوائد المسند)) (1268).
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করেছে এবং তা মুখস্থ রেখেছে আর এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে, তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ’ তাখরিজ: তিরমিজি- ২৯০৬; ইবনে মাজাহ-২১৬
উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও হাদিসে নববি দ্বারা জানা গেল শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত হালালকে হালাল আর হারামকে হারাম জানা মুমিনের দায়িত্ব।
সারকথা হলো, কোন মুসলমান যদি দুর্গন্ধ/অরুচি হওয়ার কারণে না খায়, এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি অন্য ধর্মের লোকেরা বলি দেওয়ার কারণে খাওয়া যাবে না, হারাম হয়ে গিয়েছে ইত্যাদি আকিদা-বিশ্বাস সহিহ না। কারণ আল্লাহ তাআলা যেটা হালা
ল করেছেন, সেটা হারাম করার কারও নেই। এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য, মূর্খতা ও কুসংস্কার।