জিজ্ঞাসা-১৩১৩১:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হল "যে ব্যক্তি দাড়িতে খুর দিল সে যেন নবী করীম (সা:) গলায় খুর দিল" এই ধরনের কোন হাদিস আছে কিনা জানালে উপকৃত হব। অগ্রিম জাযাকুমুল্লাহ।
তারিখ:২৪/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শাহীনুর রহমান জামালপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বেতর, দুই ঈদের নামাজ যেমন ওয়াজিব। এ বিষয়ে আলেমদের কোন দ্বিমত নাই।
يَحرُمُ حَلقُ اللِّحيةِ، وهو مذهَبُ الجُمهورِ: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والحَنابِلة، وبعضِ الشَّافعيَّة، وحُكيَ الإجماعُ على ذلكفتح الباري)) لابن حَجَر (10/350)، ((حاشية ابن عابدين)) (1/100)، ((مجموع فتاوى ابن باز)) (5/290)، ((مجموع فتاوى ورسائل العثيمين)) (11/125).
দাড়ি কামানো হারাম, এবং এটি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতবাদ: হানাফী, মালেকী, হাম্বলী এবং কিছু শাফেয়ী মাযহাবের মতবাদ এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য/ইজমা রয়েছে। সূত্র: ফাতহুল বারী-১০/৩৫০; মাজমাউল ফাতাওয়া-১১/১২৫
অবশ্য দুএকজন বিছিন্ন মত দিয়েছেন তা উম্মতের কাছে পরিত্যাজ্য। দলিল-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ( রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।’ (সহীহ বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ৬২৫)
এই হাদিস শরিফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর রাসূলের আদেশকে মান্য করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। দলিল-
Surah Al-Anfal, Verse 20:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنتُمْ تَسْمَعُونَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। সূরা আনফাল-২০
দ্বিতীয় কথা হলো, এ ধরনের উক্তি হাদিস শরিফে সরাসরি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে আমাদের আমলনামা শুক্রবার রাতে নবি-রাসূল এবং পিতা-মাতাকে দেখানো হয়, সেই দৃষ্টিতে কোন গুনাহের কারণে নবিজি কষ্ট পান। এই কথাটাই হয়তো কোন কোন বক্তা বাড়িতে বলেছে। দলিল-
وروى الحكيم الترمذي في نوادر الأصول: وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ: «تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الإثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ عَلَى اللهِ تَعَالَى، وَتُعْرَضُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ وَعَلَى الْآبَاءِ وَالأُمَّهَاتِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَيَفْرَحُونَ بِحَسَنَاتِهِمْ، وَتَزْدَادُ وُجُوهُهُمْ بَيَاضَاً وَإِشْرَاقَاً؛ فَاتَّقُوا اللهَ وَلَا تُؤْذُوا مَوْتَاكُمْ»
অর্থাৎ জুমাআর রাতে সকল নবী-আম্বিয়াদের কাছে তাদের জাতির এবং পিতা-মাতার কাছে (কবরে) সন্তানদের আমল দেখানো হয়। সূত্র: কানজুল আমাল-৪৫৪৯৩; নাওয়াদিরুল উসূল-২১৩ পৃ.; শরহুস সুদুর-২৭৫
সারকথা হলো, "যে ব্যক্তি দাড়িতে খুর দিল সে যেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গলায় খুর দিল" এটা হাদিস শরিফ নয়। তবে তিনি কষ্ট পান, কথাটি সঠিক।
তাছাড়া দাড়ি পুরুষদের মুখমন্ডলের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ। গুরুত্ত্বপূর্ণ বলার কারণ হচ্ছে দাড়ি রাখা বা না রাখার ইসলামিক ও বৈজ্ঞানিক উপকারী ও ক্ষতিকর উভয় দিক রয়েছে।
والله اعلم بالصواب