আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১৩৭: জানাজা নামাজে সানাতে ওয়াজাল্লা সানাউকা সংযোগ করা হাদীস বা শরীয়াহ সম্মত কি না

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৩৭:  

আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমার একটা বিষয় জানা প্রয়োজন, আমরা হানাফী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে জানাজা নামাজে সানাতে ওয়াজাল্লা সানাউকা ও দরুদে ওয়াসাল্লামতা ওয়া বারাকতা এই শব্দ সমূহ জানাজা নামাজে সংযোগ করা হাদীস বা শরীয়াহ সম্মত কি না, জানাবেন। 

তারিখ:৩০/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  মোঃ আমিনুল ইসলাম, বগুড়া  থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ওয়াজাল্লা সানাউকা শব্দটি নতুন সংযোজন নয়, বরং এটি স্বতন্ত্র একটি সানা। দলিল- 


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِهْرَانَ الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ عَبْدَةَ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، كَانَ يَجْهَرُ بِهَؤُلاَءِ الْكَلِمَاتِ يَقُولُ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ . وَعَنْ قَتَادَةَ أَنَّهُ كَتَبَ إِلَيْهِ يُخْبِرُهُ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ حَدَّثَهُ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَكَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ بِـ ( الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) لاَ يَذْكُرُونَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ فِي أَوَّلِ قِرَاءَةٍ وَلاَ فِي آخِرِهَا .


৭৭৭। মুহাম্মাদ ইবনুল মিহরান আর রাযী (রাহঃ) ......... আব্দা থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) এই বাক্যগুলি সরবে পাঠ করতেনঃ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

কাতাদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে লিখিতভাবে আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে জানান যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বকর, উমর ও উসমান (রাযিঃ) এর পেছনে নামায আদায় করেছি। তারা সবাই নামায আরম্ভ করতেন الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ পাঠ দিয়ে। তারা কিরাআতের শুরুতেও بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ উল্লেখ করতেন না, শেষেও না। তাখরিজ: মুসলিম-৩৯৯


ব্যাখ্যা:

নামাযে তাকবীরে তাহরিমার পর ছানা পড়া সুন্নত। হাদীস শরীফে একাধিক ছানার কথা উল্লেখ রয়েছে। তার যে কোনওটি পড়লেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনটি পড়া উত্তম সে নিয়ে মতভিন্নতা আছে। ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম আহমাদ র. দুজনেরই মত হলো, নামাযে তাকবীর (আল্লাহু আকবার ) বলার পর এভাবে ছানা পড়া উত্তম:


سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

এমতের পক্ষে প্রমাণগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো: 


১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, وسبح بحمد ربك حين تقوم অর্থ: যখন তুমি দাঁড়িয়ে যাবে, তখন তোমার প্রতিপালকের সপশংস পবিততা ও মহিমা ঘোষণা করবে। (সূরা তূর, ৪৮)


দাহহাক র. বলেছেন, উক্ত আয়াতের মর্ম হলো নামাযে এই ছানা পাঠ করা: 


سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

ইবনুল জাওযী, যাদুল মাসীর ৪খ. ১৮২পৃ.। 


ইমাম তিরমিযী র. লিখেছেন, والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم من التابعين وغيرهم অর্থাৎ তাবেয়ীন ও অন্যান্য আলেমগণের অধিকাংশের আমল হলো- এই ছানা পাঠ করা।


২. 

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا افتتح الصلاة قال: سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك، أخرجه النسائي(٨٩٩،٩٠٠) والترمذي (٢٤٢) وأبو داود (٧٧٥) وابن ماجه(٨٠٤)، كلهم من طريق جعفر بن سليمان عن علي بن علي عن أبي المتوكل عنه.

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় বলতেন,

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ৮৯৯,৯০০; তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৪২; আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৭৫; ইবনে মাজা শরীফ, হাদীস নং ৮০৪। হাদীসটি সহীহ।


হাফেজ ইবনুল কায়্যিম র. ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে এই ছানা পাঠ করা উত্তম হওয়ার দশটি কারণ উল্লেখ করেছেন। আগ্রহী পাঠক সেটিও দেখতে পারেন।


হাসান ইবনে যিয়াদ রাহ.-এর সূত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে

 سُبْحَانَك اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِك وَتَبَارَكَ اسْمُك وَتَعَالَى جَدُّك وَلَا إلَهَ غَيْرُك 

-এ ছানাটি জানাযা নামাজে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৪-৭৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৩-৪৫; আলইখতিয়ার লি তালীলিল মুহতার ১/১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২১; রদ্দুল মুহতার ৩/১০৯-১১০


দ্বিতীয় কথা হলো, জানাযা নামাজে দরুদ পাঠ করা সুন্নাত। যে কোন দরুদ পাঠ করলেই চলবে, তবে দরুদে ইব্রাহিম উত্তম। কোন কোন আলেম কিছু শব্দ বৃদ্ধি করেছেন। এর কোন দলিল নেই, যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন। দলিল- 

حدثنا وكيع، عن سفيان، عن أبي هاشم، عن الشعبي قال : سمعته يقول: في الأولى ثناء على الله تعالى، وفي الثانية صلاة على النبي صلى الله عليه وسلم، وفي الثالثة دعاء للميت، وفي الرابعة تسل

يم.

আবু হাশিম (আররুম্মানী) থেকে বর্ণিত, আমি শাবী রাহ.-কে বলতে শুনেছি, প্রথম তাকবীরে আল্লাহর প্রশংসা (তথা সানা), দ্বিতীয় তাকবীরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ, তৃতীয় তাকবীরে মায়্যিতের জন্য দুআ আর চতুর্থ তাকবীরে সালাম ফেরানো হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং ১১৪৯৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা নং ৬৪৩৪


 ‘لف الناس في القراءة في صلاة الجنازة، فقال مالك وأبو حنيفة : ليس فيها قراءة إنما هو الدعاء. وقال مالك: قراءة فاتحة الكتاب فيها ليس بمعمول به في بلدنا بحال، قال : وإنما يحمد الله ويثني عليه بعد التكبيرة الأولى، ثم يكبر الثانية فيصلى على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم يكبر الثالثة فيشفع للميت، ثم يكبر الرابعة ويسلم.

অর্থাৎ, ‘জানাযার নামাযে কুরআন পড়া বিষয়ে ইমামদের মতভেদ হয়েছে। ইমাম মালেক ও আবু হানীফা রাহ. বলেন, এতে কুরআন পড়া হবে না। এ তো হল দুআ। ইমাম মালেক বলেন, এতে সূরা ফাতেহা পড়ার প্রচলন আমাদের শহরে (মদীনায়) একেবারেই নেই। তিনি আরো বলেন, প্রথম তাকবীরের পর আল্লাহর হামদ ও ছানা করবে। দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়বে। তৃতীয় তাকবীর দিয়ে মায়্যিতের জন্য সুপারিশ করবে। তারপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফেরাবে।’ বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাছিদ’ গ্রন্থে (১/২৯৪) 



সারকথা হলো, আমাদের সমাজে প্রচলিত জানাযা নামাজে ওয়াজাল্লা সানাউকা শব্দটি নতুন সংযোজন নয়, বরং এটি স্বতন্ত্র একটি সানা। যা অসংখ্য হাদিস-আসার দ্বারা প্রমাণিত।

আর দরুদে ওয়াসাল্লামতা ওয়া বারাকতা কোন কোন আলেম বৃদ্ধি করেছেন, অসুবিধা নেই।



  والله اعلم بالصواب