*কুদৃষ্টির ক্ষতি এবং পরিণাম
(কুদৃষ্টির চিকিৎসা)*
━━━━━ • পর্ব-১১ • ━━━━━
● কুরআন মাজীদের আলোকে
পবিত্র কুরআনের আলোকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার সাতটি পন্থা উল্লেখ করা হলো:
০১। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
قُلْ لِّـلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُـضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ
"মুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু রাখে।" (সূরা: নূর; আয়াত: ৩০)
কুদৃষ্টি থেকে মুক্তির সর্বোত্তম ওষুধ হচ্ছে দৃষ্টি নিচু রাখা। সুতরাং আধ্যাত্মিক পথের পথিকদের উচিত রাস্তাঘাটে, বাজারে চলার সময় স্বীয় দৃষ্টি নিচু রাখার অভ্যাস গড়বে। পায়ে হেঁটে চলার সময় শুধু পথের দিকে দেখবে। বাহনে আরোহণ অবস্থায় দৃষ্টি এই পরিমাণ উঠাবে যাতে অন্যান্য বাহন ও পথিকদের অতিক্রমণ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। কারও চেহারার দিকে দেখবে না। কেননা ফিতনার সূচনা এখান থেকেই হয়। যদি ভুলে দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে ইস্তেগফার পড়বে এবং পুনরায় দৃষ্টি নিচু করে নেবে। এতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে, যাতে তা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। যদি অফিসিয়াল কোনো কাজ বা কেনাকাটার সময় কোনো নারীর সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেবে না। যেমন পরস্পরের প্রতি অসন্তুষ্ট দুই ব্যক্তি কোনো অপারগতার কারণে কথা বললেও কেউ কারও মুখের দিকে তাকায় না, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। অনুরূপভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, পরনারীর প্রতি আল্লাহ তাআলার জন্য আমি অসন্তুষ্ট। সুতরাং তার চেহারা দেখা যাবে না।
০২। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَـكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ
'নারীদের থেকে যাকে তোমাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও।' (সূরা: নিসা; আয়াত: ৩)
যত দ্রুত সম্ভব হয় দ্বীনদার, বাধ্যগত, সুন্দরী কোনো মেয়ে বিয়ে করে নেবে। যাতে জৈবিক প্রয়োজন পূরণ করা যায়। কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যদি তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য মনে করে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিই, ক্ষুধা মিটে যাবে, তাহলে তার নিজের চিকিৎসা করানো উচিত। ক্ষুধার ওষুধ হলো আহার করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষুধা নিবারণের দুআ করবে।
অনুরূপ দৃষ্টি পবিত্র রাখার ওষুধ হলো বিয়ে করে নেবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট পবিত্র দৃষ্টি লাভের দুআ করবে। যখন সুযোগ হয় নিজ স্ত্রীকে মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখবে। আর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে যে, যদি এই নেয়ামত না পেতাম তাহলে কতই-না মুশকিল হয়ে যেত। যে লোলুপ দৃষ্টি অলিগলিতে, বাজারে বেপর্দা ঘুরে বেড়ানো নারীদের দিকে দিত, তা নিজ স্ত্রীর দিকে দেবে। স্ত্রীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার তাগিদ দেবে, ভালো কাপড়- চোপড় কিনে দেবে।
পরনারীর কাছে যা আছে তা সবই স্ত্রীর কাছেও আছে। মনে মনে ভাববে, আমি যদি পরনারীকে দেখি তাহলে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হবেন। আর যদি নিজ স্ত্রীকে দেখি তাহলে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। যা হালাল তা প্রাণভরে দেখে নেবে, যাতে হারামকে দেখার আগ্রহই না জাগে। যখনই চোখ পরনারীকে দেখার ইচ্ছা করবে তখনই কল্পনায় নিজ স্ত্রীর চেহারা ভাবতে থাকবে। (ইনশাআল্লাহ) গুনাহের খেয়াল দূর হয়ে যাবে।
০৩। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طٰۤٮِٕفٌ مِّنَ الشَّيْطٰنِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَۚ
'নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে, শয়তানের কোনো দল যখন তাদের ঘিরে ধরে, তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। সুতরাং তাদের অনুভূতি চলে আসে।' (সূরাঃ আ'রাফ; আয়াতঃ ২০১)
এই বরকতপূর্ণ আয়াত থেকে এই রহস্য উদ্ঘাটিত হয় যে, যখনই শয়তান মানুষের ওপর হানা দেয় বা অন্তরে গুনাহের কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়, মানুষ যেন আল্লাহ তাআলার যিকিরের মাধ্যমে তা প্রতিহত করে। সুতরাং বাজার দিয়ে অতিক্রমের সময় যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সম্ভব হলে হাতে তাসবীহ রাখবে। অন্যথায় মনে মনে তো যিকির করতেই থাকবে। উদাসীনতা গুনাহের ভূমিকা। যিকিরের দ্বারা উদাসীনতাকে দূর করবে। যিকিরের নূর ধীরে ধীরে অন্তরে এমন প্রশান্তি আনয়ন করবে যে, অন্যের দিকে দৃষ্টি দিতে ইচ্ছে করবে না।
০৪। আল্লাহ তাআলা বলেন:
اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللّٰهَ يَرٰىؕ
'সে কি জানে না আল্লাহ তাআলা দেখছেন?' (সূরাঃ আলাক; আয়াতঃ ১৪)
আধ্যাত্মিক সাধনাকারীর মন যখনই পরনারীর দিকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করবে তৎক্ষণাৎ সে ভাবতে থাকবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। দৃষ্টি সংযত রাখা সহজ হয়ে যাবে। বিষয়টি এই দৃষ্টান্ত থেকে বুঝে নাও, যদি ওই নারীর বাবা অথবা স্বামী আমাদেরকে দেখতে থাকে তাহলে এমতাবস্থায় আমরা কি ওই নারীর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারব? আমাদের অস্বস্তিবোধ হবে। মনে হবে এই নারীর বাবা বা স্বামী আমাদের ওপর মারাত্মক রেগে যাবে। এমনইভাবে এরূপ ভাবা চাই যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দেখছেন এবং পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দিতে আমাদেরকে নিষেধও করেছেন। এতৎসত্ত্বেও যদি আমরা দেখতে থাকি তাহলে নিশ্চিত আল্লাহ তাআলার রাগ আসবে। আর যদি আমাদের পাকড়াও করেই ফেলেন তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে?
🔰 এখন যৌবন যার | পৃষ্ঠা-৮৪