জিজ্ঞাসা-১২৩৬৪:
আসসালামু আলাইকুম
একজন মা জীবিত অবস্থায় তার নিজের সম্পত্তি বন্টন করতে পারবেন কিনা??
পারলে ছেলে মেয়ে কত অংশ পাবে? তারিখ: ০৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহমুদুল হাসান চাঁদপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের দুটি মত পায়।
প্রথম মত: ওলামাদের একটি জামাত বলেন, জীবদ্দাশায় ওয়ারিশদের মধ্যে সমভাবে (প্রাপ্যানুয়ায়ী) বণ্টন করা নাজায়েজ। সুতরাং এ কাজটি তিনি যদি করে থাকেন, তিনি কবিরা গুনাহ করেছেন। আর এ জন্য তাঁকে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।
তাদের যুক্তি হলো, তার কারণ হচ্ছে, তিনি তো জানেন না কারা ওয়ারিশ আর কারা ওয়ারিশ নন। উত্তরাধিকার তো মৃত্যুর পরে হবে। মৃত্যুর আগে দিয়ে দিলে এমন হতে পারে যে, যখন মৃত্যু হবে তখন হয়তো কেউ মারা যাবে বা থাকবে না, তখন এটি ইনসাফপূর্ণ হবে না।
দ্বিতীয় মত: ওলামাদের অপর জামাত বলেন, মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে সম্পদের বণ্টন নিয়ে ঝগড়া মিটানোর নিমিত্তে জীবিত থাকতে । প্রাপ্যতানুযায়ী বণ্টন করা জায়েজ হবে। যেমন, এ বিষয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম-মুফতি, সৌদি শরিয়াহ বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা. বলেন, যদি জীবিত অবস্থায় সম্পদ বণ্টনের উদ্দেশ্য হয় পিতার ইন্তেকালের পর যেন সন্তানদের মাঝে ঝগড়া না হয় সে জন্য মিরাছসূত্রে অগ্রিম সম্পদ বণ্টন করে দেয়া, তাহলে সেখানে শরীয়তের ফারায়েয নীতি অনুসারে ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেয়া যাবে। তিনি বলেন, এই মাসআলাটি যদিও আমি স্পষ্টভাবে ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্যে পাইনি তবুও আশা করি মাসআলাটি তাঁদের মূলনীতির বাইরে যাবে না। সূত্র: তাকমেলায়ে ফাতহুল মুলহিম শরহুল মসলিম-২খণ্ড; ৭৫ পৃ.; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৬৩
প্রশ্ন: ক। জীবিত অবস্থায় বণ্টন করে দিলে ছেলে মেয়ে কত অংশ পাবে?
উত্তর: ক। কতিপয় ওলামাদের মতে, কোনো ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় নিজ সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করে তাহলে তার জন্য সব ছেলে-মেয়ের মাঝে সমানহারে সম্পদ বণ্টন করা মুস্তাহাব। মেয়েকেও ছেলের সমান সম্পদ দিবে।
কিন্তু জুমহুর ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সম্পদ বণ্টনে ছেলে-মেয়ের মাঝে বৈষম্য না করার বিষয়টি শরয়ী দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী এবং অগ্রগণ্য এবং এর ওপরই ফতোয়া। সূত্র: ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩০১; আলবাহরুর রায়েক ৭/৪৯০; কিতাবুন নাওয়াযেল ১২/১৮৫, ১৮৭
দলিল:
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
অর্থ: আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন। একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। সূরা নিসা-১১
সারকথা হলো, ত্যাজ্য সম্পদ বা মীরাছের সম্পর্ক মৃত্যুর পরের সাথে। অর্থাৎ ব্যক্তি মারা যাবার পর তার সম্পদে মীরাছ জারী হয়। জীবিত অবস্থায় সম্পদ বন্টন করলে তা মূলত হেবা হয়। তাই সাধারণ দানের ক্ষেত্রে সকলকে সমান সমান করে দেয়া যাবে। যেমন,
قال ابن قدامة رحمه الله : " يجب على الإنسان التسوية بين أولاده في العطية , إذا لم يختص أحدهم بمعنى يبيح التفضيل , فإن خص بعضهم بعطيته , أو فاضل بينهم فيها أثم , ووجبت عليه التسوية بأحد أمرين ; إما رد ما فَضَّل به البعض , وإما إتمام نصيب الآخر . قال طاوس : لا يجوز ذلك , ولا رغيف محترق . وبه قال ابن المبارك وروي معناه عن مجاهد , وعروة " انتهى من "المغني" (5/ 387) .
ইবনে কুদামা (রহ.) বলেছেন: একজন ব্যক্তি অবশ্যই তার সন্তানদের উপহারের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করতে হবে, যদি সে তাদের একটিকে পছন্দের অনুমতি দেয় এমন অর্থে আলাদা না করে অন্যটির অংশ। তাওউস বলেছেন: এটি জায়েজ নয়, এমনকি পোড়া রুটিও নয়। ইবনুল মুবারক এটিই বলেছেন এবং এর অর্থ মুজাহিদ ও উরওয়াহ থেকে বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: আল-মুগনী -৫/৩৮৭
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ يَقُولُ: أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً، فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لاَ أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً، فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا؟»، قَالَ: لاَ، قَالَ: «فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ»، قَالَ: فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-১/৩৫২, হাদীস নং-২৫৮৭, ই’লাউস সুনান-১৬/১১৬, হাদীস নং-৫২৭৭
আর জীবিত অবস্থায় মিরাসের বনণ্টনের ক্ষেত্রে - يجوز للإنسان أن يقسم ماله بين ورثته في حياته بشرط ألا يقصد الإضرار ببعض الورثة ، فيمنع بعضهم أو يعطيهم دون حقهم إضراراً بهم .
ويعتبر هذا هبة منه لأولاده ، ويلزمه العدل بينهم وعدم تفضيل أحدهم إلا لمسوّغ .
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার অর্থ বণ্টন করা জায়েজ, এই শর্তে যে, সে কোন কোন উত্তরাধিকারীর ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করবে না, তাদের কিছুকে আটকে রেখে বা তাদের ক্ষতি করার অধিকার ছাড়াই প্রদান করবে। সূত্র: আলইসলামু সুওয়াল ওয়া জওয়াব-১২২৯৭(প্রশ্ন নং)
বর্তমানে যেহেতু মৃত্যুর পরের বন্টন পূর্বে করে দেয়া হয়, তাই মিরাস অনুযায়ী (দুই মেয়ে সমান এক ছেলে) বন্টন করাই শ্রেয়। সূত্র: সূরা নিসা-১১
والله اعلم بالصواب