জিজ্ঞাসা-১৩১১৯:
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত মুফতি সাহেব। প্রসিদ্ধ আছে, পিতা-মাতা চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। একথা আর কোন ভিত্তি আছে কি?
তারিখ:০৯/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া সিলেট থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ, কথাটির ভিত্তি আছে। দলিল-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً “، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ “
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন পিতা মাতার ভক্ত সন্তান নিজের পিতা মাতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বদৌলতে তার জন্য [আমলনামায়] একটি হজ্জ্বে মাবরূর [কবুল হজ্ব] এর সওয়াব দান করেন। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দৈনিক একশবার দৃষ্টি করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারও। আল্লাহ মহান ও পবিত্র। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৭৪৭২, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৫৫৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৯৪৪}
নোট: ইমাম সূয়ুতি রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ জয়িফ বা দুর্বল।
জয়িফ বা দুর্বল হাদিসের হুকুম:
নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস সর্বজন স্বীকৃত। নিচে কয়েকটি মুহাদ্দিসে কিরামের মতামত তুলে ধরা হলো।
০১.ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন-
إذا روينا في الحلال والحرام شددنا وإذا روينا في الفضائل ونحوها تساهلنا
“যখন আমরা হালাল – হারামে রেওয়ায়েত করি (সনদে খুব) কড়াকড়ি করি। আর যখন ফযীলাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে রেওয়ায়েত করি শিথিলতা করি”।(হাফেয সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৯৮)
০২. ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله عليه) বলেন, যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের নিকট।
তিনি অন্যত্র বলেন, ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীসের উপর সর্বসম্মতিক্রমে আমল করা হবে। এজন্যই আমাদের আয়িম্মায়ে কেরাম বলেছে, মাথা মাসেহ করা সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব। (আলমাউজূআত, মোল্লা আলী কারী,পৃঃ ৭৩)
০৩. আল্লামা নববী (رحمة الله عليه) বলেন-
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام
“হাদীস বিশারদকারীদের নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ তা’য়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়”। (তাক্বরীবে নববী, পৃষ্ঠা ১৯৬)
والله اعلم بالصواب