জিজ্ঞাসা-১৩১৩৫:
আসসালামু আলাইকুম। নাবালেগ সন্তান এর ভালো আমলের সওয়াব বাবা মায়ের আমলনামায় লিখা হয় এবং গুনাহ করলে একই হুকুম প্রযোজ্য হয় এমন কোন বর্ণনা আছে?
তারিখ:২৬/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, শিশু তথা অপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়ে যদি কোন নেক আমল করে, তাহলে তারা নিজেরা সাওয়াব পাবে কিনা এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে রয়েছে। তবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে ছোট বাচ্চারা কোন সাওয়াব পাবে না। দলিল-
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الْمُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبَرَ " .
উছমান ইবনে আবু শায়রা (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে (অর্থাৎ যাদের ভাল-মন্দ আমল লেখা হয় না)। এরা হলোঃ
(১) নিদ্রিত ব্যক্তি- যতক্ষণ না সে জাগরিত হয়।
(২) পাগল ব্যক্তি- যতক্ষণ না সুস্থ হয় এবং
(৩) নাবালক ছেলে মেয়ে- যতক্ষণ না তারা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৪৬ (আন্তর্জাতিক নং ৪৩৯৮)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
দ্বিতীয় কথা হলো, শিশুদের আমলের সাওয়াব পিতা-মাতা, অভিভাবক বা যিনি করাবেন তিনি পাবেন। ইমাম মুসলিম রহ স্বীয় কিতাবে এই মর্মে একটি বাব (অধ্যায়) নামকরণ করেছেন। আর পিতা-মাতা বা অভিভাবক সাওয়াবের অধিকারী হলে এর এর বিপরীতে তাদের (শিশুদের ) গুনাহের কারণে পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা গুনাহগার হবে যা সহজে অনুমেয়, যদি তারা (পিতা-মাতা) তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে। দলিল-
باب صِحَّةِ حَجِّ الصَّبِيِّ وَأَجْرِ مَنْ حَجَّ بِهِ
নাবালকের হজ্জ করা জায়েয এবং যে ব্যক্তি তাকে নিয়ে হজ্জ করে, তার সাওয়াব। সূত্র: মুসলিম ২য় খণ্ড, ৯৭৪ পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ، عُيَيْنَةَ - قَالَ أَبُو بَكْرٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، - عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ كُرَيْبٍ، مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ رَكْبًا بِالرَّوْحَاءِ فَقَالَ " مَنِ الْقَوْمُ " . قَالُوا الْمُسْلِمُونَ . فَقَالُوا مَنْ أَنْتَ قَالَ " رَسُولُ اللَّهِ " . فَرَفَعَتْ إِلَيْهِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا فَقَالَتْ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ " نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ "
৩১২৩। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা, যুহাইর ইবনে হারব ও ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাওহা নামক স্থানে একদল আরেহীর সাক্ষাত পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসুল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করল, এর জন্য হজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।
Ibn Abbas reported that Allah’s Apostle (ﷺ) met some riders at al-Rauha and asked who they were. They replied that they were Muslims. They said:
Who art thou? He said: (I am) Messengef of Allah. A woman (then) lifted up a boy to him and said: Would this child be credited with having performed the Hajj? Thereupon he said: Yes, and you will have a reward.
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১২৩ (আন্তর্জাতিক নং ১৩৩৬-১)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْقِنْطَارُ اثْنَا عَشَرَ أَلْفَ أُوقِيَّةٍ كُلُّ أُوقِيَّةٍ خَيْرٌ مِمَّا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الرَّجُلَ لَتُرْفَعُ دَرَجَتُهُ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُولُ أَنَّى هَذَا فَيُقَالُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ
৩৬৬০। আবু বাকর ইব্ন আবু শায়বা (রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ কিনতার হলো বার হাজার উকিয়ার সমান। আর একেক উকিয়া হলো আসমান যমিনের মাঝে যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ অবশ্যই মানুষের মর্যাদা জান্নাতে বুলন্দ করা হবে, তখন বলবেঃ এটা কিভাবে হলো? তখন তাকে জানানো হবেঃ তোমার জন্য তোমার সন্তানের (বালেগ-নাবালেগের) ইস্তিগফারের কারণে।
Abu Hurairah, may Allah be pleased with them, narrated that:
Allah’s Messenger said: "Qintar is twelve thousand ’Uqiyah, each ’Uqiyah of which is better than what is between heaven and earth." And the Messenger of Allah(ﷺ) said: "A man will be raised in status in Paradise and will say: ’Where did this come from?’ And it will be said:’From your son’s praying for forgiveness for you.’"
—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ৩৬৬০ (আন্তর্জাতিক নং ৩৬৬০)
হাদিস নং-০৩
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه
সন্তান জন্মগ্রহণের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব হল তার সুন্দর নাম রাখা এবং দীন শিক্ষা দেয়া, আর বালেগ হয়ে গেলে বিবাহ করিয়ে দেয়া। যদি বালেগ হওয়ার পরও বিবাহ না করায়, আর সন্তান কোন গুনাহে লিপ্ত হয়, তাহলে এর দায়ভার পিতার উপরই বর্তাবে। তাখরিজ: বায়হাকী, হাদীস নং ৮২৯৯
সারকথা হলো, নাবালেগ সন্তান এর ভালো আমলের সওয়াব বাবা মায়ের আমলনামায় লিখা হয় এবং গুনাহ করলে একই হুকুম প্রযোজ্য হয়, এমন বর্ণনা পাওয়া যায়।
والله اعلم بالصواب