জিজ্ঞাসা-১৩১২৯:
আসসালামু আলাইকুম। হযরত একটা বিষয় জানার ছিল। বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান কেমন হলে সবচেয়ে ভালো হয় ?
তারিখ:২১/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মুহাম্মদ হুযাইফা ঢাকা উত্তরা থেকে থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পবিত্র কোরআনে জান্নাতে স্বামী-স্ত্রী/হুরদের বয়স সম্পর্কে সমমানার কথা বলা হয়েছে এবং একটি হাদিসে কুমারী মেয়েকে বিবাহ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন-
আয়াত-০১
وَ عِنۡدَهُمۡ قٰصِرٰتُ الطَّرۡفِ اَتۡرَابٌ
(জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না (জান্নাতি রমণী)। (সুরা সাদ, আয়াত: ৫২)
আয়াত-০২
إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاءً
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا
عُرُبًا أَتْرَابًا
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা। সূরা ওয়াকিয়া,৩৫-৩৭
হাদিস নং-০১
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «هَلْ نَكَحْتَ يَا جَابِرُ؟» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «مَاذَا أَبِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا؟» قُلْتُ: لاَ بَلْ ثَيِّبًا، قَالَ «فَهَلَّا جَارِيَةً تُلاَعِبُكَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَتَرَكَ تِسْعَ بَنَاتٍ، كُنَّ لِي تِسْعَ أَخَوَاتٍ، فَكَرِهْتُ أَنْ أَجْمَعَ إِلَيْهِنَّ جَارِيَةً خَرْقَاءَ مِثْلَهُنَّ، وَلَكِنِ امْرَأَةً تَمْشُطُهُنَّ وَتَقُومُ عَلَيْهِنَّ، قَالَ: «أَصَبْتَ
জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জাবির! তুমি বিয়ে করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কেমন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না (কুমারী নয়) বরং অকুমারী। তিনি বললেন, কোনো কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সাথে আমোদ–প্রমোদ করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার আব্বা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। এবং রেখে গেছেন নয়টি মেয়ে। এখন আমার নয় বোন। এ কারণে আমি তাদের সাথে তাদেরই মত একজন অনভিজ্ঞ মেয়েকে এনে একত্রিত করা পছন্দ করলাম না। বরং এমন একটি মহিলাকে (বিয়ে করা পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়িয়ে দিতে পারবে এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। (এ কথা শুনে) তিনি বলেছেন, ঠিক করেছ। তাখরিজ: বুখারি-৪০৫২
উপরোক্ত দুটি আয়াত ও হাদিস শরিফ থেকে ইশারাতুন বুঝা বলা যায় স্বামী স্ত্রীর বয়স কাছাকাছি (২-৫) হওয়া উচিত।
দ্বিতীয় কথা হলো, অনেকে স্বামী-স্ত্রীর বয়স আদর্শ পার্থক্য হল ১০ বছর। এর কারণ হলো মেয়েদের যৌবনের ভাটা পড়ে আগে। উদাহরণ: সর্বোচ্চ ৫৫ বছর পর্যন্ত নারীদের পিরিয়ড/হায়েজ হয়, তারপর আর হয় না। ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা শেষ হয়ে যায় এবং যৌবনে ভাটা পড়ে।
তৃতীয় কথা হলো, স্বামীর বয়স বেশি হওয়ার প্রমাণ আছে। যেমন, আয়েশা রা. ৯ বছর বয়সে বাসর হয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বয়স ৫২/৫৩ বছর।
চতুর্থ কথা হলো, আবার স্ত্রীর বয়স বেশি হওয়ার প্রমাণ আছে। যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খাদিজা রা. এর মাঝে ব্যবধান ছিল ১৫ বছর।
সারকথা হলো, বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের তারতম্য অল্প হওয়ায় উচিত। তবে ক্ষেত্র বিশেষে পারস্পরিক পছন্দের ভিত্তিতে বা সমাঝোতায় কমবেশি হওয়া দোষের কিছু নেই।
হজরত আলী ও ফাতেমা রা. এর বয়স আমাদের আদর্শ হতে পারে। যথাক্রমে ২১:১৫/২৫:১৮ বছর
والله اعلم بالصواب