জিজ্ঞাসা-১২৩৪৩
আসসালামু আলাইকুম।
ফজরের নামাজের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার কোন হাদীস আছে নাকি? তারিখ: ১৭/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহফুজুর রহমান চাদপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ, হাদিস আছে। তবে হাদিসের ভাষা ফজরের নামাজের পর নয়, সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠের কথা উল্লেখ রয়েছে। দলিল:
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، وَقَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْحَشْرِ؛ وُكِّلَ بِهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإِنْ مَاتَ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ مَاتَ شَهِيدًا، وَإِنْ قَالَهَا حِينَ يُمْسِي؛ كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْزِلَةِ)).
تخريج الحديث وتحقيقه:
ضعيف: أخرجه أحمد (5/ 26)، والترمذي (2922)، وابن السني في ((عمل اليوم والليلة)) (81، 682)، والأصبهاني في ((الترغيب والترهيب)) (1309)، وابن الضريس في ((فضائل القرآن)) (231)، وابن بشران في ((الأمالي)) (209)، والمزي في ((تهذيب الكمال)) (29/ 295)، وابن حجر في ((نتائج الأفكار)) (2/ 382)، والدارمي (2/ 458)، والطبراني في ((المعجم الكبير)) (20/ 383، 537)، و((الدعاء)) (308)، والبيهقي في ((الشعب)) (2502)، والرافعي في ((التدوين في أخبار قزوين)) (2/ 495)، والبغوي في ((تفسيره)) (8/ 88
অর্থ: হযরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার পড়বে “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম”। তারপর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত [ হুয়াল্লাহুল্লাজী লা-ইলাহা শেষ পর্যন্ত] তিলাওয়াত করবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন। যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দ্আু করতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। [তথা মাগরিব থেকে সকাল পর্যন্তের জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা গুনাহ মাফীর জন্য দুআ করে, আর সে সময়ে মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে]। তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২৯২২,কানযুল উম্মাল-৩৫৯৭; আত তারগীব ওয়াত তারহীব-৩৭৯; সুনানে দারেমি-৩৪২৫; শুয়াবুল ঈমান-২৫০২
নোট: কতক মুহাদ্দিস বলেন, এ হাদীসটি হাসান পর্যায়ের হাদীস আবার কেউ কেউ জয়িফ বলেছেন।
নোট: বলা বাহুল্য যে, ফজরের পর সময়টুকু সকালের অন্তর্ভুক্ত। সকাল হলো দিনের প্রথমাংশ। একে পূর্বাহ্ন ও বলা হয়ে থাকে। স্থানভেদের কারণে সকালের সংজ্ঞার কোন ভিন্নতা নেই। ভোরের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে বেলা ১২:০০টা পর্যন্ত সময়কে এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ও ভারতীয় উপমহাদেশে সকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উল্লেখ যে, হাদিসের সনদ নির্ণয়টা ইজতিহাদি বিষয়(গবেষণালব্ধ)। আর আমলের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। যেমন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন, “হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকি। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি।” ইমাম নববি(রহ.) বলেন, “ফজিলত, উৎসাহ বা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জয়িফ (দুর্বল) হাদিসের আমল করা উত্তম। কিন্তু জাল হাদিস থেকে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন।” সূত্র : আল-আজকার,১১-১২
আরেকটি বিষয় স্মরণীয় যে, সূরা হাশরটি ইনফিরাদি আমল (ব্যক্তিগত আমল) ; ইজমায়ি আমল নয় (দলবদ্ধভাবে আমল নয়)। তবে ইমাম বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য সম্মিলিতভাবে পাঠ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো সারাজীবন কি শুধু সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত শিক্ষা দিবেন? সুতরাং আমাদের সমাজে যেটা চালু আছে তা সুন্নাহ নয়। দলিল উপরের হাদিস, এখানে জামাতবদ্ধ হয়ে আমলের কথা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং দলবদ্ধভাবে পাঠ করা সুন্নাহ মনে করলে বিদআত হবে। সূত্র: উমদাতুল কারি শরহুল বুখারি- ৫ম খণ্ড, ৩৫৬ পৃ.
والله اعلم بالصواب