জিজ্ঞাসা-১৩১২৩:
আসসালামু আলাইকুম। আসসালামু আলাইকুম হযরত একটা বিষয় জানতে চাই 73 দলে মানুষ বিভক্ত হবে ওই দল গুলো কাদের মধ্যে হবে কাদের মধ্যে কত দল হবে একটু বললে উপকৃত হতাম দয়া করে জানাবেন
তারিখ:০২/১১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ৭২ দল কারা এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম এর মত ভেদ রয়েছে। কেউ কেউ নির্দিষ্ট করেছেন আবার কেউ নির্দিষ্ট করেনি, আবার কাকে বলেছিলেন ৭২ দ্বারা সংখ্যাধিক্য উদ্দেশ্য । কিয়ামত চলমান থাকবে। হাদিসটি নিম্নরূপ:
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمَ الإِفْرِيقِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ
২৬৪২. মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ বনু ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল আমার উম্মতরাও ঠিক তাদেরই অবস্থায় পতিত হবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনু ইসরাঈলরা তো বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মতরা বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে। এদের একটি দল ছাড়া সব দলই হবে জাহান্নামী। সাহাবীগণ (রাযিঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এরা কোন দল? তিনি বললেনঃ আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৪১ (আন্তর্জাতিক নং ২৬৪১)
ব্যাখ্যা:
আল্লামা কুরতুবী রহঃ তার প্রণীত তাফসীরে কুরুবীতে শক্তিন-
. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة. ( الجامع لأحكام القرآن
المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفي : 671)
যেই ফিরক্বাটি উম্মাতে মুহাম্মদীদেব বাড়বে তারা-ওলামাদের সাথে সাথে থাকবে, আর ফুক্বাহাদের প্রতি রাখবে বিদ্বেষ। এই গ্রপটি পূর্ব উম্মতের ছিল না। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}
বাহাত্তর দ্বারা কি বাহাত্তর উদ্দেশ্য: হাদিসে যে বাহাত্তর কথা উল্লেখ করা, এর দ্বারা আধিক্য উদ্দেশ্য হতে পারে। বাহাত্তর সংখ্যাই উদ্দেশ্য নয়। আরবি ওয়াল প্রচলন আছে, সত্তর দ্বারা আধিক্য উদ্দেশ্য উদ্দেশ্য হয়। (রুহুল মাআনী ১০/২৯৪)।
واعلم أن أصول أهل البدع، كما نقل في "المواقف" ثمانية:
মাওয়াকেফ গ্রন্থে প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক বিদয়াতী সম্প্রদায় মৌলিকভাবে আটটি শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা-
1- المعتزلة: القائلون بأن العباد خالقوا أعمالهم وبنفي الرؤية، وبوجوب الثواب والعقاب، وهم عشرون فرقة.
(১) মু'তাযিলা: তাদের বক্তব্য হলো, বান্দা নিজেই স্বীয় কর্মসমূহের স্রষ্টা, আল্লাহকে স্বচক্ষে অবলোকন করা অসম্ভব, বান্দার কৃতকর্মের প্রতিদান হিসেবে পুরস্কার কিংবা শাস্তি প্রদান করা আল্লাহর জন্য অবশ্যপালনীয় কর্তব্য, ইত্যাদি। এই জনগোষ্ঠীর প্রায় বিশটি শাখা-উপশাখা রয়েছে।
2- والشيعة: المفرطون في محبة علي كرم الله وجهه، وهم اثنتان وعشرون فرقة.
(২) শীয়া: তাঁরা আলী (রা:) এর প্রতি ভালোবাসার আতিশয্য প্রদর্শন করে। তাদের উপদল রয়েছে বাইশটি।
3- والخوارج: المفرطة المكفرة له، ومن أذنب كبيرة، وهم عشرون فرقة.
(৩) খারেজী: তারা ধর্ম নিয়ে চরম আকারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। কেউ কবিরা গুনাহ করে বসলে তাকে কাফের ফতোয়া দিতেও পিছপা হয়না। এদের রয়েছে বিশটি উপদল।
4- والنجارية: الموافقة لأهل السنة في خلق الأفعال، والمعتزلة في نفي الصفات، وحدوث الكلام، وهم ثلاث فرق.
(৪) নাজ্জারিয়্যাহ: বান্দার কর্মের স্রষ্টা নিরূপণের ব্যাপারে তারা আহলুস সুন্নাতের সাথে একাত্মতা পোষণ করে। আবার অন্যদিকে আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলি নাকচ করার ক্ষেত্রে এবং পবিত্র কুরআন সৃষ্ট হবার বিষয়ে মু'তাজিলা সম্প্রদায়ের সাথে সহমত পোষণ করে থাকে। তাদের তিনটি সমমনা সম্প্রদায় রয়েছে।
5- والجبرية: القائلة بسلب الاختيار عن العباد فرقة واحدة.
(৫) জাবারিয়্যাহ: তাদের বক্তব্য হলো, বান্দা হতে ইচ্ছাশক্তি বিলোপ করে নেয়া হয়েছে।
বান্দার সর্বপ্রকার কর্মপদচারনায় আল্লাহর ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে থাকে। তারা শাখা-প্রশাখাবিহীন এক ও অভিন্ন জাতিগোষ্ঠী।
6- والمشبهة: الذين يشبهون الحق بالخلق في الجسمية، وهم خمس فرق.
(৬) মুশাব্বিহা: যারা দেহাবয়বের বিবেচনায় সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সাদৃশ্য নিরূপণে সচেষ্ট থাকে। এদের রয়েছে পাঁচটি উপদল।
7- والحلولية: فرقة أيضًا، فتلك اثنتان وسبعون فرقة، كلهم في النار، والفرقة الناجية هم أهل السنة.
(৭) হালাওয়িয়্যাহ: এটাও একটা বিদয়াতী জনগোষ্ঠী। এজাতীয় ভ্রান্তদল ৭২টি রয়েছে। যার প্রত্যেকটি জাহান্নামে যাবে। আর নিষ্কৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র দল হলো, আহলুস সুন্নাহ।
والحاصل: أن أصل هذه الاثنتين والسبعين فرقة الضالة من الأمة المسلمة سبع فرق، كما أخبر رسول الله صلى الله عليه وسلم؛ اهـ.
সারকথা হলো, মুসলিম সসম্প্রদায়ের মাঝে বিদ্যমান ৭২ টি ভ্রান্ত দলের মূল শেকড় হলো, বর্ণিত ৭ টি দল। সেখান থেকে নানারকম দল-উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের অমীয় বাণী একথারই সত্যতা বহন করে।
সারকথা হলো, কিছু কিছু আলিম ফিরকাগুলো নির্ধারণ না করাই উত্তম মনে করেছেন। কারণ, যারা গণনা করেছেন তাদের গণনাকৃত ফিরকার বাইরেও বহু ফিরকা রয়েছে যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হওয়া লোকদের থেকেও বেশি পথভ্রষ্ট হয়েছেন। আর এ বাহাত্তর ফিরকা গণনার পরেও অনেক ফিরকার উৎপত্তি হয়েছে। তারা আরও বলেন, এ সংখ্যা শেষ হবার নয়।
والله اعلم بالصواب