আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

হযরত আমির খসরু (রহ.)-২ (ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান) -ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

No Comments

 



হযরত আমির খসরু (রহ.)-২ (ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান)

 -ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন হাফিজাহুল্লাহু 



হযরত আমির খসরু অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। সংরক্ষিত না হওয়ায় অনেক পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে :

১. তুহফাত উস-সিঘর (শৈশবের উপহার), ১২৭১- এটা তাঁর প্রথম দিওয়ান, যা ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে রচিত। ২. ওয়াস্ত উল-হায়াত (জীবনের মধ্যকাক), ১২৭৯ - তাঁর দ্বিতীয় দিওয়ান। ৩. কিরান উস-সা’দাইন (দুটি শুভ নক্ষত্রের মিলন), ১২৮৯ - তাঁর প্রথম মসনভি, যা দীর্ঘ শত্রুতার পর বুগরা খান এবং তার পুত্র মুইজ উদ্দীন কায়কাবাদের ঐতিহাসিক বৈঠকের বিস্তারিত বর্ণনা করে। ৪. মিফতাহ উল-ফুতুহ (বিজয়ের চাবিকাঠি), ১২৯০- জালাল উদ্দীন ফিরুজ খলজির বিজয়ের প্রশংসায় দ্বিতীয় মসনভি। ৫. ঘুররাত উল-কামাল (দ্য প্রাইম অফ পারফেকশন), ১২৯৪-১২৩৪ থেকে ৪১ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর রচিত কবিতা। ৬. খাজাইন উল-ফুতুহ (বিজয়ের ধন), ১২৯৬- আলাউদ্দিন খলজির নির্মাণ কাজ, যুদ্ধ এবং প্রশাসনিক পরিষেবার বিবরণ। ৭. খামসা-ই-খসরু (খুসরাউয়ের খামসা), ১২৯৮- পাঁচটি মসনবীর একটি পঞ্চক (খামসা): মাতলা উল-আনোয়ার, খুসরু-শিরিন, লায়লা-মাজনুন, আইনা-ই-সিকান্দারি এবং হাশত-বিহিশত (যার মধ্যে তিন যুবরাজ রয়েছে)। ৮. সাকিয়ানা- কুতুবউদ্দিন মুবারক শাহ খলজির জন্মবৃত্তান্ত সম্বলিত মসনভি। ৯. দুভাল রানী- খিজর খান (দুভাল রানী এবং খিজর খান), ১৩১৬- আলাউদ্দিন খলজির পুত্র খিজর খানের সাথে রাজকুমারী দুভাল রানীর বিবাহ সম্পর্কে একটি ট্র্যাজেডি।


১০. নুহ সিপিহর (নয়টি আকাশ), ১৩১৮ - কুতুবউদ্দিন শাহ খলজির শাসনামলে আমির খসরু-এর মসনভি, যাতে ভারতবর্ষ এবং এর সংস্কৃতির প্রাণবন্ত উপলব্ধি রয়েছে। ১১. ইজাজ-ই-খুসরাভি (খুসরার অলৌকিক ঘটনা)- পাঁচটি খণ্ডের গদ্যের একটি ভাণ্ডার। ১২. বাকিয়া-নাকিয়া (বিশুদ্ধতার অবশিষ্টাংশ), ১৩১৭ সালে খসরু দ্বারা সংকলিত সাহিত্যকর্ম। ১৩. আফজাল উল-ফাওয়াইদ (সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ), ১৩১৯- নিজামুদ্দিন আউলিয়ার শিক্ষাসম্বলিত একটি গদ্যকর্ম। ১৪. তুঘলক নামা (তুঘলকদের ইতিবৃত্ত), ১৩২০- তুঘলক রাজবংশের রাজত্বের একটি ঐতিহাসিক মসনভি। ১৫. নিহায়াত উল-কামাল (পূর্ণতার শিখর) ১৩২৫- তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে সংকলিত।


 

১৬. আশিকা- আমির খসরু হিন্দি ভাষার প্রতি উজ্জ্বল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং এর সমৃদ্ধ গুণাবলীর কথা বলেছেন। এটি একটি মসনভি, যা দেবল দেবীর ট্র্যাজেডি বর্ণনা করে। ১৭. কিসা চাহার দরবেশ (চার দরবেশের গল্প)- একটি দাস্তান যা খসরু শায়খ নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে বলেছিলেন। ১৮. হালিক বারী- ফার্সি, আরবি এবং হিন্দি এবং বাক্যাংশের একটি বহুমুখী শব্দকোষ। ১৯. জওয়াহির-ই-খুসরাভি- এটা একটি দিওয়ান।


হযরত আমির খসরু (রহ.) রচিত ‘নমি দানম চে মনযিল’ শীর্ষক একটি সুগভীর আধ্যাত্মিক কবিতা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। তরিকতপন্থীরা এটা প্রায়শ আবৃত্তি করে থাকেন।


 

‘আজব এক জায়গায়

ছিলাম কাল রাতে।

প্রেমে আধেক-খুন-হওয়া

লোকেরা ছিল আমার চারপাশে;

মনোবেদনায় তারা

ঘুরে বেড়াচ্ছিল ইতস্তত।

পরির মতন

এক রূপবতী ছিল,

শালপ্রাংশু ছিলো সে,

গোলাপের মতো ছিল মুখ।


তার প্রেমিকদের হৃদয় নিয়ে সে নিষ্ঠুরভাবে খেলছিল ধ্বংসের লীলা।

সেই জান্নাতি জলসায়

আল্লাহ নিজেই

কর্তা ছিলেন সমস্ত অনুষ্ঠানের;

ওহ খসরু,

সেই মাহফিলে

নবিজিও প্রদীপের মতন

আলো ছড়াচ্ছিলেন।’

(বাংলা অনুবাদ : সৈয়দ তারিক)

গযল, গদ্য ও পদ্যসাহিত্যের মাধ্যমে ইন্দো-ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতা নির্মাণে সুফী কবি হযরত আমির খসরু হযরত আমির খসরু (রহ.)-এর অবদান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। ১৩২৫ সালে ৭১ বছর বয়সে এই বিখ্যাত সুফী কবি দিল্লিতে ইন্তেকাল করেন। শায়খ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার খানাকাসন্নিহিত এলাকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।


সূত্র: ০৩ ফেব্রুয়ারি, ইনকিলাব বিশেষ প্রতিবেদন