আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৯৫২: মুসাফাহের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি কোনটা? এক হাত নাকি দুই হাত মিলিয়ে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৯৫২: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ঈদ উপলক্ষে কয়েকটি জরুরি মাসয়ালা জানা প্রয়োজন 

ক) মুসাফাহের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি কোনটা? 

এক হাত নাকি দুই হাত মিলিয়ে? 

তারিখ:  ১১/০৪/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মো: কামরুল হাসান যশোর  থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, একহাতে না দুই হাতে মুসাফাহ করার সুন্নাত, এ বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

ফিকহি হানিফ ও মালিকির মতে দুই হাতে মুসাফাহ করা মুস্তাহাব/সুন্নাত।

আহলে হাদিসদের মধ্যে একহাতে সুন্নত।


প্রশ্ন:ক। আহলে হাদিসের দলিল কি?

উত্তর: ক। 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,لَقِيَنِى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا جُنُبٌ، فَأَخَذَ بِيَدِىْ، فَمَشَيْتُ مَعَهُ حَتَّى قَعَدَ فَانْسَلَلْتُ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন আমি অপবিত্র ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন। তারপর আমি তাঁর সাথে হাঁটতে থাকলাম। তিনি যখন বসলেন, তখন আমি সরে পড়লাম’। তাখরিজ: বুখারি-২৮৫

ব্যাখ্যা: এখানে يد শব্দটি অর্থ হলো এক হাত। এভাবে “সালামের কিছু হাদীসের মাঝে اخذ باليد، اخذ بيدهতথা হাত ধরেছেন, ইত্যাদী শব্দ এসেছে। আর يدশব্দটি এক বচন। যার দ্বারা বুঝা যায় যে, এক হাতেই মুসাফাহা করা উচিত।


প্রশ্ন: খ। ইমাম আবু হানিফা ও মালিক রহ. এর দলিল কী?

উত্তর: খ। ইমামদ্বয়ের দলিল নিম্নরূপ:

وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سَيْفُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا، يَقُولُ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَخْبَرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ عَلَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التَّشَهُّدَ كَفِّي بَيْنَ كَفَّيْهِ كَمَا يُعَلِّمُنِي السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ . وَاقْتَصَّ التَّشَهُّدَ بِمِثْلِ مَا اقْتَصُّوا .

ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় সহীহ বুখারীর ২ নং খন্ডের ৯২৬ নং পৃষ্ঠায় “বাবুল মুসাফাহা”নামে পরিচ্ছেদ স্থাপন করেছেন। যাতে তিনি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে তালীকান এ বর্ণনা এনেছেন যে, علمنى النبى صلى الله عليه وسلم التشهد وكفى بين كفيه، অর্থাৎ “হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহুদ শিখালেন, এমতাবস্থায় যে, আমার হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উভয় হাতের মাঝে ছিল”। তাখরিজ: বুখারি-৬২৬৫; মুসলিম-৪০২


মুহাদ্দিস কিরামের দুহাতে মুসাফাহর আমল ও মতামত:


ইমাম বুখারী রহঃ তার তারীখের কিতাবে বলেন-

حدثنى اصحابنا يحيى وغيره عن اسماعيل بن ابراهيم قال رأيت حماد بن زيد وجاء ابن المبارك بمكة فصافه بكلتا يديه، (حاشية —–بخارى-২/৯২৬)

অর্থাৎ ইসমাঈল বিন ইবরাহীম রহঃ বলেন-আমি হাম্মাদ বিন জায়েদ রহঃ কে দেখেছি যে, তার কাছে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহঃ মক্কা মুকার্রমায় এসেছেন, তখন তিনি উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন। {হাশিয়ায়ে সহীহ বুখারী-২/৯২৬}


ইমাম বুখারী রহ. তার কিতাব ‘আত তারীখুল কাবীরে’ লেখেন, اسماعيل بن ابراهيم بن المغيرة الجعفي، أبو الحسن : رأى حماد بن زيد، صافح ابنَ المبارك بكلتا يديه অর্থাৎ ইসমাঈল (ইমাম বুখারী রহ. এর পিতা) ইবনে ইবরাহীম রহ. বলেন, তিনি হাম্মাদ ইবনে যায়েদ রহ. কে দেখেছেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. এর সাথে উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন। এখানে জ্ঞাতব্য যে, এই উভয় ব্যক্তিই স্বীয় যামানার মুহাদ্দিসীনে কেরামের ইমাম ছিলেন। ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী রহ. বলেন যে, ‘(হাদীস শাস্ত্রের) ইমাম হলেন চারজন। যথা, ১. মালেক রহ. ২. সুফিয়ান সাউরী রহ. ৩. হাম্মাদ ইবনে যায়েদ রহ. ও ৪. আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.।’


অন্যান্য মুহাদ্দিসও উভয় হাতে মুসাফাহার কথা উল্লেখ করেছেন।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মহিলাকে বললেন, قد بايعتك অর্থাৎ আমি তোমাকে বাই‘আত করলাম। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন যে, তাকে শুধু কথার দ্বারা বাই‘আত করেছেন, হাত ধরে বাই‘আত করেননি।


আল্লামা কস্তল্লানী রহ. ও আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. হযরত আয়েশা রাযি. এর উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় লেখেন, اى لا باليد كما كان يبايع الرجال بالمصافحة باليدين অর্থাৎ হাত দিয়ে বাই‘আত করেননি, যেমন পুরুষদের বাই‘আত করতেন উভয় হাতে দিয়ে মুসাফাহার মাধ্যমে।


ফিকহের আলোকে দুই হাতে মুসাফাহার দলীল


মুহাদ্দিসীনে কেরামের সাথে সাথে ফুক্বাহায়ে কেরাম; যাদের অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন ও হাদীসে এসেছে, তারাও উভয় হাতে মুসাফাহা করাকে সুন্নাত বলেন। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে শামীতে লেখেন, والسنة فيها ان تكون بكلتا اليدين অর্থাৎ মুসাফাহার সুন্নাত হলো, (মুসাফাহা) দুই হাতে হওয়া।


গ। ফিকহি হানিফির জবাব কী?

উত্তর: গং। ফিকহি হানিফির পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়েছে যে, يد তথা এক হাত বা ডান হাত অর্থ ঠিক নয়। দলিল -


وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا [١٧:٢٩

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরূ তোমাকে নিন্দাযোগ্য ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হয়। {সূরা ইসরা-২৯}

এ আয়াতে কি এক হাতই উদ্দেশ্য? আর সে হাত ডান হাত?!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দুআ করতেন, আর অন্যদেরও শিখাতেন যে, اللهم اجعل فى بصرى نورا واجعل فى سمعى نورا তথা হে আল্লাহ! আমার চোখে নূর দাও! আমার কানে নূর দাও! {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৮৩৫}


আর المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده তথা প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যার হাতও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০} এবং من رأى منكم منكرا فليغيره بيده তথা যে ব্যক্তি কোন নিষিদ্ধ কাজ দেখে তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে, {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৮৬} এসব হাদীসে يد এক বচন আসায় কি এক হাতই উদ্দেশ্য? এক্ষেত্রেও অন্য হাত ব্যবহার করা সুন্নাতের খেলাফ হবে?


সারকথা হলো,  এক হাতে মুসাফাহর কোন সরাসরি দলিল নেই, এক বচন শব্দ ব্যবহার করে মাত্র। আমরা প্রমাণ করলাম এক শব্দ ব্যবহার করলেও উদ্দেশ্য দুই হাত। সাহাবী-তাবেঈ-মুহাদ্দিসদের আমল হলো দুহাতে মুসাফাহ করা।

দুই হাতে যেমন মুসাফাহ করা জায়েজ তেমনি এক হাতে করতেও কোনো বাধা নেই। তবে উত্তম এবং সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে দুই হাতে মুসাফা করা।


  والله اعلم بالصواب