আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

শিক্ষার্থীদের পাতা-১৪: কিভাবে পড়বেন কুরআনের অনুবাদ!*

No Comments

 



*আসুন কুরআনের মাসে!*

*কুরআনের অনুবাদ পড়ি*

(সংশোধিত ও সংযোজিত কপি)


**কিভাবে পড়বেন কুরআনের অনুবাদ!*


চার ভাবে কুরআনের অনুবাদ পড়তে পারেনঃ

১) বিষয়ভিত্তিক কুরআনের অনুবাদ। 

২) সূরা ভিত্তিক কুরআনের অনুবাদ।

৩) ধারাবাহিক ভাবে সম্পূর্ণ কুরআনের অনুবাদ।

৪)অথবা কমপক্ষে ১২টি সূরা।১নং সূরা থেকে ধারাবাহিক ৭ নং সূরা, ১০,১৬,১৭,২১, ও ৩৯ নং সূরাটি সহ মোট ১২টি সূরার অনুবাদ পড়লে মোটামুটি পুরো কুরআনের অর্ধেক বিষয়বস্তু আপনার আয়ত্তে এসে যাবে ইনশাআল্লাহ 

উল্লেখিত ৪টি পদ্ধতির যে কোনোটিই পড়ুন না কেন, কুরআন বুঝার জন্য সবার আগে ** দুটি সূত্র জেনে নিই**


৩নং সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াত ও ৫ নং সূরা আল-মায়ীদার ৩ নম্বর আয়াত। এই দুটি আয়াতের অনুবাদ আগে ভালভাবে বুঝে এর উপলব্ধি হর্দয়ে ধারণ করুন তারপর নিম্নের নিয়মানুযায়ী আল- কুরআনের অনুবাদ পড়ুন, তাহলে অসংখ্য বার অনুবাদ পড়ার শিক্ষা ও বুঝটুকু একবার পড়াতেই আয়ত্তে এসে যাবে। অর্থাৎ আল কুরআনের মুল বক্তব্যটি আপনার পরিপূর্ণভাবে বুঝে আসবে ইনশাআল্লাহ।


*** আল-কুরআনের অনুবাদ পড়ার সময় আরও কিছু বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করুন**

 

১। জীবন বিধান সংক্রান্ত আয়াত সমূহ চিহ্নিত করুন। 

২। মান্য ও অমান্য সংক্রান্ত আয়াত সমূহ একত্রিত করুন।

৩। নবী ও রাসুল সংক্রান্ত আয়াত সমূহ একত্রিত করুন। 

৪। শির্ক ও বিদ'আত সংক্রান্ত, আয়াতসমূহ একত্রিত করুন। 

৫। আল্লাহর ওয়াদা সংক্রান্ত আয়াতসমূহ একত্রিত করুন।

৬। জান্নাত ও জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াতসমূহ একত্রিত করুন।


*** বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ***

আমাদের মনে রাখতে হবে যে,আল কুরআনের মৌলিক আমল ২টি। 

১। বেবুঝ তিলাওয়াত! যা অনেকেই করে থাকেন কেবলমাত্র সাওয়াবের উদ্দেশ্যে।

২। অনুবাদ পাঠের মাধ্যমে এর বক্তব্য বুঝে তার আলোকে জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে! আর এটাই হচ্ছে আল-কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য! যদিও আমরা সে বুঝ থেকে অনেক দূরে সিটকে পড়েছি।


** তিলাওয়াতের অর্থ কি **?বিখ্যাত অভিধান A Dictionary of Modern Written Arabic এর মতে ২১টি যা, নিম্নে উল্লখ করা হলো

১। পাঠ করা ২। বুঝতে পারা 

৩। অনুসরন করা ৪। অনুকরণ করা ৫। অধ্যয়ন করা ৬। দেখতে পাওয়া ৭। উপলব্ধি করা ৮। অর্থোদ্বার করা ৯। খুঁজে বের করা ১০। নির্ণয় করা ১১। শিক্ষা দেওয়া ১২। উচ্চস্বরে পাঠ করা ১৩। মেনে নেয়া ১৪। গ্রহণ করা ১৫। আবৃত্তি করা ১৬। বহন করা ১৭। উন্নতি লাভ করা ১৮। উত্তরাধীকারি হওয়া ১৯। পশ্চাতে আসা ২০। উদ্ভাসিত হওয়া ২১। পাঠ করে শোনানো। 

এভাবে কুরআন মাজীদে ৬৩ বার তিলাওয়াত শব্দটি এসেছে এবং ৭ বার তিলাওয়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বেবুঝ তিলাওয়াত নয় বরং বুঝে কুরআন পড়ার নির্দেশই পরিলক্ষিত হয়।


*** মহান আল্লাহ তায়ালা ৫৪ নং সূরা আল ক্বামার এ ৪ বার (১৭, ২২, ৩২ ও ৪০) আয়াতে বলেছেন “আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?"। 

আর কুরআনে ৩টি শব্দের মাধ্যমে আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার জন্য একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। (২:১২১, ১৮:২৭, ২৯:৪৫) শব্দ ৩টি অতি পরিচিত, ১। তিলাওয়াত ২। কিরা'আত ৩। রাতালা। দূর্ভাগ্যবশত: শব্দগুলোর ভুল ব্যাখ্যর কারণে আমরা আজ কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। সূরা ২ আল-বাকারার ১২১ নং আয়াতে "কুরআনের হক আদায়" করে পড়ার কথা বলা হয়েছে। যার ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্দুস শহীদ নাসিম "হক আদায়ের" অর্থ বুঝাতে গিয়ে তার ১৭টি মতামত ব্যক্ত করেছেন যা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো 

১। যথারীতি কুরআন পাঠ করা। ২। কুরআনকে যথাযথ ভাবে উপলব্ধি করা। 

৩। কুরআনে নির্দেশিত প্রকৃত সত্যকে দেখতে পাওয়া বা প্রত্যক্ষ করা। 

৪। কুরআনের যথার্থ অর্থ, মর্ম ও তাৎপর্য্য উদ্ধার করা। 

৫। কুরআনের প্রকৃত মর্ম বুঝতে পারা। 

৬। মনযোগ ও মননিবেশ সহকারে কুরআন অধ্যয়ন করা। ৭। কুরআনের সঠিক মর্ম ও শিক্ষা খুঁজে বের করা। 

৮। কুরআন নিয়ে গবেষণা করা। ৯। কুরআনের ভিত্তিতে জীবন পদ্ধতি নির্ণয় করা। 

১০। মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেওয়া। 

১১। কুরআনের বক্তব্য সঠিক ভাবে বুঝা ও তা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। 

১২। উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা। ১৩। মানুষের কাছে কুরআনের বাণী "হুবহু" পৌঁছে দেওয়া। 

১৪। কুরআনকে সুকণ্ঠে আবৃতি করা। 

১৫। কুরআনের নির্দেশনাবলী অনুসরন করা। 

১৬। কুরআনে বর্নিত করনীয় গুলো বাস্তবায়ন করা। 

১৭। কুরআনে বর্নিত বর্জনীয়গুলোকে বর্জন করা।


*** আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক মুসলিমের নিকট আল কুরআনের মৌলিক দাবীও ৫টি যা,পাকিস্তানের মাওলানা ডা. ইসরার আহমদ তার লিখিত বই! (মুসলমানদের নিকট আল-কুরআনের দাবী পৃষ্ঠা ১১) কিতাবে উল্লেখ করেছেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো। 

১। কুরআনের বিধান মেনে নেওয়া। 

২। কুরআন পাঠ করা। 

৩। কুরআন অনুধাবন বা উপলব্ধি করা। 

৪। কুরআনের নির্দেশানুযায়ী আমল বা কাজ করা। 

৫। অন্যের কাছে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী!

يا أيها الرسول بلغ ما انزل إليك من ربك،وان لم تفعل فما بلغت رسالته، والله يعصمك من الناس،ان الله لا يهدى القوم الكافرين، 

হে আল্লাহর রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছাও।যদি তুমি এমনটি না করো তাহলে তোমার দ্বারা তার রিসালাতের হক আদায় হবে না। মানুষের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো,তিনি কখনো কাফিরদেরকে (তোমার মোকাবিলায়)সফলতার পথ দেখাবেন না। 

(৫ আল-মায়ীদাহ্ আয়াত-৬৭)


*** প্রশ্ন! শয়তানের ১ নম্বর কাজ কি? ***

উওর: শয়তানের এক নম্বর কাজ হচ্ছে!- (আল-কুরআন থেকে মানব জাতীকে দূরে রাখা বা সরিয়ে দেয়া।) কারণ আদম (আঃ) যখন “জান্নাত থেকে বিতাড়িত হন,তখন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে যে হেদায়াতের বাণী আসবে যারা সেই হেদায়াত বাণী মান্য করবে,তাদের এই জান্নাতে ফিরে আসতে কোন ভয় ও শংকা নেই। 

(সূরা ২ আল-বাকারা,আয়াত ৩৮)  

ইবলিশ শয়তান সুচতুর ভাবেই মানব জাতীকে কুরআন থেকে সরিয়ে দিতে সফল হয়েছে। কারণ!সে জানে,মানুষ যদি কুরআনের বক্তব্য বুঝে,তাহলে কুরআনে বর্নিত করনীয় গুলো তারা বাস্তবায়ন করবে এবং বর্জনীয় গুলো তারা বর্জন করবে। তাই শয়তান উল্টো বুঝিয়েছে এবং নেক সুরতে মানবজাতীকে ধোকা দিয়েছে এ বলে যে, কুরআনের অনুবাদ পড়ার দরকার নাই আর পড়লেও তোমরা তা বুঝবে না। তার সুরে সুর মিলিয়ে কিছু মানুষও (যাদেরকে মানুষ শয়তান বলা হয়) একই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সামান্য অসতর্কতা হেতু শয়তানের কাজটিই এ বলে প্রচার করে যাচ্ছে যে, কুরআন পড়তে ১৫টি বিদ্যা লাগে,এই ১৫টি বিদ্যা ছাড়া কুরআন বুঝবে না। অথচ কথাটি ১০০% সত্য! আবার ১০০% ই মিথ্যা। ১০০% সত্য! এই অর্থে যে, তাঁরাই কুরআনের অনুবাদ করবেন, (যারা আরবী ভাষা জানেন এবং বুঝেন, তাদের জন্যই ঐ ১৫টি বিদ্যার্জন করা কর্তব্য। যাতে তারা কুরআনের সঠিক অনুবাদ করতে পারেন।)

(পক্ষান্তরে যারা আরবী ভাষা জানেন না তাদের জন্য ঐ ১৫টি বিদ্যার কোনোই প্রয়োজন নেই। তাদের কাজ হচ্ছে ১৫টি বিদ্যা সম্পন্ন আলেমদের অনুবাদ পড়া।)


*** সুতরাং বুঝা গেল!

(আলিমদের প্রধান!কাজ ২টি

এক. ১৫টি বিদ্যার আলোকে কুরআনের অনুবাদ করা। 

দুই. নিজেরাও সেই অনুবাদ নিয়মিত পড়া,বুঝা ও সে অনুযায়ী অপরকে অনুবাদ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা)

আর বেআলিম বা যারা আরবী ভাষা ও ঐ ১৫টি বিদ্যা জানেন না, তাদের কাজ হচ্ছে শুধু অনুবাদ পড়া! তবে অনুবাদ করা নয়। 

অথচ আমরা অনুবাদ করা ও অনুবাদ পড়াকে খিচুরীর মত মিলিয়ে ফেলার কারণে দুটোকে এক ও অভিন্ন অর্থে গ্রহণ করে অনুবাদ পড়া থেকে বিরত রয়েছি এবং অপরকেও বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করে কতবড়! পাপে লিপ্ত রয়েছি। আর এই অসতর্কতা হেতু কুরআন পড়ার প্রতি উৎসাহিত করার জায়গায় অনুৎসাহিত করে মনের অজান্তেই মানবরূপী ইবলিশ শয়তানের কাজটি করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত এবং মানব জাতীকে কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে সূরা বাকারার ৩৮ ও ১২১নং আয়াতের বিরুদ্ধাচারনে মেহনত করে চলছি, এবং নিজেকে অনেক বড় দায়ী হিসেবে পেশ করছি এবং ইবলিশ শয়তানের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যা চরম দূর্ভাগ্যই বলতে হবে।

*** প্রসিদ্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন দুই ব্যক্তির ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা যায়। 

১.যাকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের "ইলম (জ্ঞান)" দান করেছেন এবং সে সারারাত সেই জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত থাকে। 

২.যাকে আল্লাহ তায়ালা "সম্পদ" দান করেছেন এবং সে উহা দিবারাত্র আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে। (বু-৫০২৫,৭৫২৯,মু-৮১৫)


(এর মাধ্যমে মুসলিমরা দুইভাগে বিন্যস্ত হবে।

এক.আলিমরা ইলম বিতরণের জন্য "মুহাজিরের" ভূমিকা পালন করবেন।

দুই.আর ধনীরা তাদের সম্পদ দিয়ে কুরআনের দাওয়াতে "আনসারদের" ভূমিকা পালন করবেন।)


রাসূল (সাঃ) বলেন “ যদি কেউ "ইলম" শিক্ষার মানসে কোনো পথে চলে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। ফিরিশতাগণ ইলম শিক্ষার্থীর এই কর্মের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তার জন্য তাদের পাখাগুলি বিছিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীর জন্য আসমান ও জমিনের সকলেই ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারকারাজির উপরে চাঁদের যেমন মর্যাদা, ইবাদাত-বন্দেগিতে লিপ্ত 'আবিদের' উপরে আলিমদের মর্যাদা তেমনই। "আলিমরাই" হচ্ছেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীরা (আঃ)গণ!কোনো টাকা পয়সা, দিনার-দিরহাম উত্তরাধিকার রেখে যান নি। তাঁরা শুধু "ইলম" এর উত্তরাধিকার রেখে যান। কাজেই যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করল,সে নবীদের উত্তরাধিকার থেকে একটি বড় অংশ গ্রহন করলো।

(বুখারী আস-সহীহ ১/৩৭)

মহান আল্লাহ বলেন:

انما يخشى الله من عباده العلماء،ان الله عزيز غفور، 

নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাকে অধিক ভয় করে। নি:সন্দেহে আল্লাহ পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল 

(৩৫ ফাতির,আয়াত-২৮)

মহান আল্লাহ আরও বলেন:

قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون، انما يتذكر أولوا الألباب، 

এদের জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? কেবলমাত্র 

বিবেক বুদ্ধিমানরাই উপদেশ গ্রহণ করে। 

(৩৯ আয-যুমার, আয়াত-৯)


এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কিছু হাদীস উল্লেখ করছি যা আপনাকে বিষয়টি জানতে আরও সাহায্য করবে।


১.হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “ তোমরা বলতে পার, দান-খয়রাতের দিক দিয়ে সব চেয়ে বড় দানশীল কে? সাহাবাগন উত্তরে বললেন,আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাঃ অধিক জানেন! মহানবী সাঃ বলেন! দান-খয়রাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন আল্লাহ তায়ালা। আর বনী আদমের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাতা হলাম আমি। আমার পরে সেই ব্যক্তি হলো বড় দানশীল যে, ইলম শিখল এবং এই ইলমের প্রসার ঘটাল। কিয়ামতের দিন সে একজন আমীর অথবা বলেছেন একটি উম্মত হয়ে উঠবে।” (বায়হাকী)


২.হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবীগন আরয করলেন, হে আল্লাহ রাসুল তাঁরা কারা? তিনি বলেন, যারা কুরআন পাঠকারী এবং উহার উপর আমলকারী। তাঁরা হলেন আল্লাহর পরিবার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ( ইবনে মাজা-২১৫)


৩.রাসূল (সাঃ) বলেন হে আবু যর!(রাঃ) “তুমি যদি যেয়ে কুরআনের ১টি আয়াত শিক্ষা কর, তবে তা তোমার জন্য ১০০ রাক'আত নফল সালাত আদায় করার থেকেও উত্তম। আর যদি তুমি ইলমের ১টি অধ্যায় শিক্ষা কর-আমল কৃত অথবা আমলকৃত নয় তবে তা তোমার জন্য ১০০০ রাক'আত নফল সালাত আদায় করার থেকেও উত্তম।

৪.রাসুলুল্লাহ সা: বলেন: যদি কোনো ব্যাক্তি সকাল সকাল বা দ্বিপ্রহরের পূর্বে মসজিদে গমন করে, তার গমনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়(খতীবের খুতবাহ থেকে) কোনো ভালো কিছু শিক্ষা করা অথবা শিক্ষা দেওয়া, তবে সেই ব্যাক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ্জের সাওয়াব লাভ করবে।(মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৫৯)


৫.মহানবী সা: বলেন:যে ব্যক্তি আমার মসজিদে আগমন করবে, তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে কোনো ভাল বিষয় শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেওয়া,সেই ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণের মর্যাদা লাভ করবেন। 

(ইবনে মাজাহ, আস-সুনান ১/৮২)

আমরা দেখেছি যে,মহান আল্লাহ্ ঈমানের পরে “ইলমকে" মর্যাদার মূল উৎস বলেছেন। 

হাদীস শরীফে রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, "সকল সৃষ্টি আলিমদের ও শিক্ষকদের জন্য দু'আ করে। সকল মুমিনদের দায়িত্ব আলিমদের ও শিক্ষকদের সম্মান করা। রাসূল (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করেনা এবং আলেমদের বা জ্ঞানীদের মর্যাদার অধিকার বুঝে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়"

(আহমদ,আল-মুসনাদ ৫/৩২৩)


আমরা দুনিয়াতে যত নেক আমল করি, সেগুলির সাথে ইলম শিক্ষার নেক আমলের দুইটি বিশেষ পার্থক্য আছে। প্রথমত,অন্যকে শিখালে ইলম এর সাওয়াব চক্রবৃদ্ধিহারে বৃদ্ধি পায়। 

দ্বিতীয়ত, ইলমের সাওয়াব মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে। রাসূল (সাঃ) বলেন-যদি কেউ কোনো ইলম শিক্ষা দেয়, তবে সেই শিক্ষা অনুসারে যত মানুষ কর্ম করবে সকলের সমপরিমান সাওয়াব ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, কিন্তু এতে তার সাওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না।"

(ইবনে মাজাহ্ আস-সুনান ১/৮৮)


আমাদের সকল নেক আমল মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ইলমের সাওয়াব মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে। রাসূল (সাঃ) বলেন “ যখন কোন আদম সন্তান মৃত্যুবরন করে, তখন তার সকল কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ৩টি কর্মের সাওয়াব সে অব্যাহত ভাবে পেতে থাকে, 

১. প্রবাহমান দান (সাদকায়ে জারিয়া), 

২. উপকারী ইলম

৩. নেককার সন্তান! যে তাঁর পিতামাতার জন্য দোয়া করে।  


আমাদের মনে রাখা দরকার। নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা যেমন ফরজে আইন, তেমনি প্রত্যেক পিতা মাতার উপর ফরজে আইন হচ্ছে নিজেদের সন্তানদেরকে প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেওয়া। এজন্য সর্বোত্তম পন্থা হলো নিজেদের সন্তানকে আলিম বনানো বা দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া। আমরা অনেক সময় গৌরব করে বলি যে, আমি শিক্ষিত না হলেও আমার ৫টি সন্তান এম.এ পাশ। বা উচ্চ শিক্ষিত। কিয়ামতের দিন এরূপ আমাদের অনেকেই গৌরব করবেন, আমি আলিম হতে পারিনি!তবে আমার ৫টি সন্তানই আলিম। 

ভাইয়েরা, দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী গৌরবের চেয়ে আখিরাতের চিরস্থায়ী গৌরব কি বড় নয়?

আমরা হয়ত মনে করতে পারি যে, এই মহান মর্যাদা বোধ হয় শুধুমাত্র মাদ্রাসায় যারা পড়েন অথবা যারা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইলম শিক্ষা করেন, তাদের জন্যই খাস! প্রকৃত বিষয় তা নয়। যে কোনো বয়সের যে কোনো মুমিন! ওয়াজ মাহফিলে,মসজিদে খুতবার আলোচনায়, আলেমের নিকট প্রশ্ন করে,বই পড়ে বা যে কোনো ভাবে ইলম শিক্ষা করতে গেলেই এই মর্যাদা ও সওয়াব লাভ করবে। 

প্রিয় পাঠক বন্ধু!ইসলামী ইলমের মূল উৎস হলো আল-কুরআন। এর মূল ব্যখ্যাতা হচ্ছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ। সুতরাং তাঁর কথা,কাজ,মৌনসম্মতিই হচ্ছে হাদীসে রাসূল সাঃ যা দ্বিতীয় উৎস। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো, কুরআন কারীম পাঠ করা এবং তার অর্থ অনুধাবন করা। কুরআন কারীম সকল মুসলিমের সার্বক্ষণিক পাঠের জন্য। আর বুঝে পড়াকেই মূলতঃ পাঠ বলা হয়। এছাড়াও মহান আল্লাহ কুরআনে বারংবার কুরআন মাজীদ বুঝে পড়তে এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আসুন আজ থেকেই শরু হোক কুরআনের সঙ্গে পথচলা! যা পূর্ণতা পাবে আসন্ন মাহে রমজানে।

মহান আল্লাহ বলেন:

الذين يستمعون القول فيتبعون أحسنه، أولئك الذين هداهم الله و أولئك هم اولوا الألباب، 

যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং ভাল দিকটি অনুসরণ করে।এরাই সেসব লোক যাদের আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন এবং এঁরাই বুদ্ধিমান। 

(৩৯ আয-যুমার, আয়াত-১৮)

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মাহে রমজানে ১ম ৬ দিন দেড় পাড়া করে ৯পাড়া তারাবির নামাজে তিলাওয়াত করা হয় এবং ৭ম রমজান থেকে ২৭শে রমজান পর্যন্ত ১ পারা করে প্রতিদিন তারাবিহতে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। ইচ্ছা করলে আমরা ঐ নিয়মে রমজান মাসে কুরআনের অনুবাদ টুকুও একবার শেষ করে ফেলতে পারি।


প্রিয় পাঠক, আমরা ইহকালীন জীবনে সফলতার জন্য অনেক বই-ই পড়েছি কিন্তু ততটুকু গুরুত্ব দিয়ে কখনো কি আল কুরআনের অনুবাদ পড়েছি? অথচ ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সফলতার চাবি হচ্ছে -আল কুরআন! যা 

আমদের কাছেই রয়েছে। আসুন না? তা একবার হলেও বুঝে পড়ার চেষ্টা করি আগত রমজানে!নিয়ত করি ও সিদ্বান্ত নিই যে,এবারই কুরআনের অনুবাদ পড়বো ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন, আমীন ছুম্মা আমীন। 


মীর মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ বিন আবদুল হাই লিবিয়ানী

Mir Emdadullah Libyani 

Contact: 01711458538

শেয়ার ও কপি করে এর বহুল প্রচার করে কুরআন অধ্যয়নে সবাইকে উৎসাহিত করতে পারেন।