*কবীরা গুনাহসমূহ-*
মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস,
জামিয়া রহমানিয়া,মুহাম্মাদপুর,ঢাকা।
গুনাহে কবীরা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না এবং একটি গুনাহই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে কিছু কবীরা গুনাহের তালিকা দেওয়া হল। যথা-
(১) শিরক করা।
(২) মা-বাপকে কষ্ট দেওয়া।
(৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।
(৪) যিনা ব্যভিচার করা।
(৫) চুরি করা।
(৬) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
(৭) মিথ্যা অপবাদ লাগানো।
(৮) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
(৯) না হক যাদু করা।
(১০) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(১১) আমানতের খেয়ানত করা।
(১২) গীবত করা।
(১৩) বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ, অধীনস্থদেরকে মালিকের বিরুদ্ধে উস্কানী দেয়া।
(১৪) নেশাযুক্ত জিনিষ পান করা।
(১৫) অবৈধ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
(১৬) জুয়া খেলা ও লটারী ধরা।
(১৭) সূদ খাওয়া।
(১৮) ঘুষ খাওয়া।
(১৯) জোর-জুলুম করে অর্থ-সম্পদ লুটে নেয়া।
(২০) অনাথ এতিম, বিধবার মাল খাওয়া। (২১) আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।
(২২) মিথ্যা কসম খাওয়া।
(২৩) কোন মুসলমানকে গালি দেয়া।
(২৪) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা। (২৫) ধোঁকা দেয়া।
(২৬) অহংকার করা।
(২৭) বাদ্য বাজনা সহ নাচ-গান করা।
(২৮) ডাকাতি করা, লুন্ঠন করা।
(২৯) স্বামীর নাফরমানী করা।
(৩০) জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করা।
(৩১) শ্রমিকের মজুরী কম দেয়া।
(৩২) মাপে কম দেয়া।
(৩৩) দ্রব্য-সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা। (৩৪) খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়া।
(৩৫) স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে শর্তের সাথে হীলা করা।
(৩৬) নিজের অধীনস্থ মহিলাদিগকে পরপুরুষের সাথে অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ দেয়া।
(৩৭) ঘোড় দৌড় বা রেস খেলা।
(৩৮) সিনেমা-টিভি ইত্যাদি দেখা।
(৩৯) পেশাব করে পানি না নেয়া বা পবিত্রতা অর্জন না করা।
(৪০) চোগলখুরী ও কূটনামী করা।
(৪১) গণকের কাছে যাওয়া।
(৪২) মানুষ বা জীবের ফটো তোলা, ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো। উল্লেখ যে আজকাল অনেকে মনে করে যে, ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি অতি মারাত্মক ভুল, কেননা হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে কাপড়ে অংকিত ছবির কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তির ব্যাপারেও ধমকি এসেছে। দেখুন: বুখারী শরীফ হা: নং ৫৯৬১। আর জানা কথা যে কাপড়ে অংকিত ছবি ও ক্যামেরার দ্বারা তোলা ছবির মধ্যে পার্থক্য করার কোন কারণ নেই। অনুরূপভাবে ভিডিওতে রেকর্ড করা ছবিও যেহেতু ছবির সকল উদ্দেশ্য খুব ভালভাবে পুরা করে কাজেই ভিডিওর ছবিও নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত।
(৪৩) পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি বা যে কোন ধরনের অলংকার পরা।
(৪৪) পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরা।
(৪৫) মেয়ে লোকের জন্য শরীরের রূপ ও গঠন প্রকাশ পায় এমন পোশাক পরিধান করা।
(৪৬) ঝগড়া-বিবাদে মিথ্যা মোকাদ্দমা দায়ের করা।
(৪৭) মৃত ব্যক্তির জায়িয ওসীয়ত পালন না করা।
(৪৮) কোন মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়া।
(৪৯) গুপ্তচরবৃত্তি করা অর্থাৎ, মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রের গোপন কথা অন্য সমাজ বা রাষ্ট্রের নিকট প্রকাশ করা।
(৫০) নর হয়ে নারীর এবং নারী হয়ে নরের বেশ-ভূষা অবলম্বন করা।
(৫১) টাকা বা নোট জাল করা।
(৫২) অন্তর এত শক্ত করা যে, গরীব দুঃখীর সীমাহীন কষ্ট দেখেও দরদ না লাগা।
(৫৩) ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারায় ত্রুটি করা এবং দেশের জরুরী খাদ্য বা হাতিয়ার পাচার করা।
(৫৪) রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নীচে পায়খানা করা।
(৫৫) ঘরবাড়ী, আঙ্গিনা, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, কাপড়-চোপর নোংরা রাখা এবং ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনায় মন-মস্তিস্ক গান্ধা করে রাখা। (৫৬) হায়িয বা নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ করা।
(৫৭) যাকাত না দেয়া।
(৫৮) ইচ্ছা করে কোন নামায কাযা করা। (৫৯) রমযানের কোন রোযা ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা।
(৬০) জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করা। (৬১) ষাঁড় দ্বারা গাভীর এবং পাঠার দ্বারা ছাগীর পাল দিতে না দেওয়া।
(৬২) পাড়া-প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।
(৬৩) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করা। (৬৪) পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া।
(৬৫) জনগণ যাকে চায়না সে ব্যক্তির বাদশাহী বা নেতৃত্ব করা।
(৬৬) নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখা।
(৬৭) বদগুমানী বা কারো প্রতি খারাপ ধারনা রাখা।
(৬৮) ইলমে দীনকে তুচ্ছ মনে করে অর্জন না করা।
(৬৯) বিনা জরুরতে জনসম্মুখে সতর খোলা।
(৭০) মেহমানের খাতিরে আদর যত্ন ও অভ্যর্থনা না করা।
(৭১) ছেলেদের সঙ্গে কুকর্ম বা সমকাম করা। (৭২) আমানতের যোগ্য সৎকর্মীকে নিযুক্ত বা নির্বাচন না করে স্বজন প্রীতি করা।
(৭৩) নিজে ইচ্ছা করে বা দাবী করে জোরপূর্বক কোন পদ গ্রহণ করা।
(৭৪) ইসলামী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী হওয়া।
(৭৫) নিজের পরিবার-পরিজনের খবর না নিয়ে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্টে ফেলা। (৭৬) খতনা না করা।
(৭৭) অসৎ কাজ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা না দেয়া।
(৭৮)অন্যায়ের সমর্থন করা।
(৭৯) আত্মহত্যা করা।
(৮০) ফরয গোসলে অনর্থক দেরী করা। (৮১) পেশাব-পায়খানা করে ঢিলা-কুলুখ বা পানি ব্যবহার না করা।
(৮২) নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম, নখ বর্ধিত করে রাখা।
(৮৩) উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, এবং আলেম ও হাফেজদের অমর্যাদা করা। (৮৪) শুকরের গোশত খাওয়া।
(৮৫) হস্ত মৈথুন করা।
(৮৬)তামাশা দেখার জন্য ষাঁড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদি লড়াইয়ের আয়োজন করা। (৮৭) কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া। (৮৮) কোন জীবন্ত ও জানদার জীবকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ,মারা।
(৮৯) আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া। (৯০) আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া। (৯১) হালাল জানোয়ারকে গাইরুল্লাহর নামে যবেহ করা বা ভিন্ন উপায়ে মেরে খাওয়া। (৯২) অপচয় বা অপব্যয় করা।
(৯৩) বখিলী কানজূসী করা।
(৯৪) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন না করা।
(৯৫) ইসলামের নিয়মানুসারে আইন-কানুন জারী হওয়া সত্ত্বেও কোন আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।
(৯৬) ডাকাতি, লুটতরাজ, পকেটমারী করা। (৯৭) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সহিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে কাউকে ডাকা, যেমন- হে জোলা, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি।
(৯৮) বিনা অনুমতিতে কারো বাড়ীতে বা ঘরে বা খাস কামরায় প্রবেশ করা।
(৯৯) মানুষের কষ্ট হয় এমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে খুশী হওয়া।
(১০০) সুরত-শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারী করা।
(১০১) বিদআত কাজ করা বা জারি করা। (১০২) দুনিয়া হাসিলের জন্য ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া।
(১০৩) ইলম গোপন করা।
(১০৪) জাল হাদীস বর্ণনা করা।
(১০৫) গুনাহের কাজে মান্নত করা।
(১০৬) প্রজাদের অধিকার খর্ব করা, জনগণের হক আদায় না করা।
(১০৭) অবৈধ ট্যাক্স উসূল করা।
(১০৮) বিনা ঠেকায় ঋণ করে ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
(১০৯) দুমুখো স্বভাব ইখতিয়ার করা।
(১১০) মহিলাদের খুশবু লাগিয়ে বাহিরে বের হওয়া।
(১১১) বিজাতিদের অনুকরণ করা।
(১১২) গোঁফ বড় করে রাখা।
(১১৩) অন্যের চুল ব্যবহার করা।
(১১৪) যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে অভিশাপ দেয়া।
(১১৫) অহেতুক কুকুর প্রতিপালন করা।
(১১৬) মাতম ও শোক প্রকাশ করা।
(১১৭) একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।
(১১৮) সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা বা সমালোচনা করা।
(১১৯) হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণ করা।
(১২০) বিনা দাওয়াতে মেহমান হয়ে আহার করা।