সুফী কবি আমির খসরু (রহ.) দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আইকনিক ফিগার হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। তিনি ছিলেন চিশতিয়া তরিকার মরমি সাধক ও শায়খ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার অন্যতম শিষ্য। আমৃত্যু তিনি শায়খ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সান্নিধ্যে অবস্থান করে আধ্যাত্মিকতার উচ্চমার্গে আরোহণ করতে সক্ষম হন। সুফী আমির খসরু (রহ.) ভারত উপমহাদেশে ফার্সী ও উর্দূভাষার শক্তিমান কবি। গযলের রীতিতে তিনি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন, যা অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। গযল ছাড়াও তিনি মাছনভী, কাতাআ, রুবাঈ, দো বাইতিবও তারকিব বন্দ অনুসরণ করে ভাষা ও ছন্দের উৎকর্ষ সাধন করেন। তুর্কি ও আরবি ভাষায়ও দখল ছিল তাঁর।
সুফী আমির খসরু দিল্লি সালতানাতের সাতটিরও বেশি শাসকের রাজদরবারের সাথে যুক্ত ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ শাস্ত্রীয় কবি হিসেবে। তিনি অনেক কৌতুকপূর্ণ ধাঁধা, গান এবং কিংবদন্তি লিখেছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। তাঁর ধাঁধাগুলি আজ হিন্দি কবিতার অন্যতম জনপ্রিয় রূপ। এটি এমন একটি ধারা, যার সাথে শব্দের খেলা জড়িত। কবির অসংখ্য ধাঁধা গত সাত শতাব্দীতে মৌখিক ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে চলে এসেছে। হযরত আমির খসরুকে ‘ভারতের কণ্ঠস্বর’ বা ‘ভারতের তোতা’ (তুতি-ই-হিন্দ) হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং ‘উর্দু সাহিত্যের জনক’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।
রাজদরবারের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও সুফী-দরবেশ বিশেষত শায়খ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সাথে তাঁর আধ্যাত্মিক যোগাযোগ ছিল সুদৃঢ় ও প্রগাঢ়। দুই মেরুর সমন্বয় প্রক্রিয়া ছিল বিস্ময়জাগানিয়া।
দিল্লি সালতানাতের আমলে আমির খসরু ১২৫৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের কাসগঞ্জ জেলার পাতিয়ালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আমির সাইফ-উদ-দীন মাহমুদ, একজন তুর্কি এবং তাঁর মা বিবি দৌলত নাজ একজন ভারতীয়। আমির সাইফউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম। তিনি উজবেকিস্তানের সমরকন্দের কাছে একটি ছোট শহর কেশে বড় হয়েছেন। তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন মধ্য এশিয়ায় চেঙ্গিস খানের আক্রমণে এই অঞ্চলটি ধ্বংস ও বিধ্বস্ত হয়েছিল। তখন তিনি দিল্লি অভিমুখে রওনা হন।
হযরত আমির খসরু শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের ভাগ্নে মালিক ছাজ্জুর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর কবিতা রাজসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তাঁর দিওয়ানের একটি অংশে রূহানিয়তের ছোঁয়া লক্ষ করা যায়:
‘হে খসরু, ভালোবাসার নদী ছুটছে অদ্ভুত দিকে। যে এতে ঝাঁপ দেয় সে ডুবে যায়, আর যে ডুবে যায়, সে পার হয়ে যায়। প্রেমের পথে যে দুঃখ-কষ্ট তা সহ্য না করা পর্যন্ত দর্শনপ্রাপ্তি হয় না।’ সমাহিত করা হয়।
সূত্র: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ দৈনিক ইনকিলাব