জিজ্ঞাসা-১৮৭:
মাগরিবের জামাত শুরু হয়েছে , এখন আছরের নামাজ ( কাযা হয়েছে) আগে পড়বে না জামাতে শরীক হবে। তারিখ -০৮/০৭/২০২২
হাফেজ মাওলানা নুরুল হক সাউথ সুদান থেকে
উত্তর। হাদীসের দলীল : ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যকতার ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের আমল পাওয়া যায়।
عن عبد الله بن مسعود قال كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فحبسنا عن صلاة الظهر والعصر والمغرب والعشاء فاشتد ذلك علي فقلت في نفسي نحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي سبيل الله فأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم بلالا فأقام فصلى بنا الظهر ثم أقام فصلى بنا العصر ثم أقام فصلى بنا المغرب ثم أقام فصلى بنا العشاء ثم طاف علينا فقال ما على الأرض عصابة يذكرون الله عز وجل غيركم وقتها (رواه النسائي، رقم621)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এই চার ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা হতে আমরা বাঁধাপ্রাপ্ত হলাম। এটা আমার নিকট কষ্টদায়ক হলো। মনে মনে ভাবলাম আমরা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদ করছি (এরপরও কি আমাদের এরূপ দুর্ভাগ্য?) তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রা.) কে ইকামত দিতে আদেশ করলেন। ইকামত বললে আমাদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে আসরের নামাজ আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। পুনরায় ইকামত বললে ইশার নামাজ আদায় করলেন। তারপর আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেনঃ ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদের ছাড়া এমন কোন জামাত নেই যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে। (নাসায়ী শরীফ;৬২১ নং হাদীস)
عن أبي سعيد عن قال شغلنا المشركون يوم الخندق عن صلاة الظهر حتى غربت الشمس وذلك قبل أن ينزل في القتال ما نزل فأنزل الله عز وجل {وكفى الله المؤمنين القتال} فأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم بلالا فأقام لصلاة الظهر فصلاها كما كان يصليها لوقتها ثم أقام للعصر فصلاها كما كان يصليها في وقتها ثم أذن للمغرب فصلاها كما كان يصليها في وقتها (رواه النسائي، رقم 660)
হাদীসের বহু প্রসিদ্ধ কিতাবে এ ঘটনার উল্লেখ আছে। এই হাদীসে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নামাজ ছুটে যাবার পর তারা সকলে ধারাবাহিক ভাবে ছুটে যাওয়া নামাজ পড়েছেন। ২য় হাদীস দ্বারা এটাও বুঝা যাচ্ছে সূর্য ডুবার পরও পূর্বের কাযা নামাজ পড়ে এরপর মাগরিবের নামাজ পড়েছেন। এই হাদীস থেকেই গবেষক মুজতাহিদ ইমামগণ ছুটে যাওয়া নামাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক, একথা বলে থাকেন।
হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের নিকটই নামাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক।
في الموسوعة الفقهية الكويتية (11/ 164 (الترتيب في قضاء الفوائت: جمهور الفقهاء من الحنفية والمالكية والحنابلة قالوا بوجوب الترتيب بين الصلوات الفائتة، وبينها وبين الصلاة الوقتية إذا اتسع الوقت. فمن فاتته صلاة أو صلوات وهو في وقت أخرى، فعليه أن يبدأ بقضاء الفوائت مرتبة،
কাযা নামাজ বলতে ইসলামে কিছুই না থাকলে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাগণ (রাযি.) কেন কাযা নামাজ আদায় করলেন? তাদের সকলের আমলও কী ইসলামের কোন বিষয় হিসেবে গণ্য হবেনা? আল ইসতিযকার ১/৩০২-৩০৩আদ্দুর রুল মুখতার ২/৫২৩ ও ২/৫২৫-৫২৭; আল মাওসূয়াতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়া ১১/১৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়্যা ২/৪৪০-৪৪৫
ফিকহি দলীল: কোন ব্যক্তির যিম্মায় যদি ৬ ওয়াক্ত নামাযের কম কাযা হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে ফিক্বহী পরিভাষায় “সাহেবে তারতীব” তথা এরকম ব্যক্তি বলা হয়, যার উপর সিরিয়াল ঠিক রাখা আবশ্যক হয়। অর্থাৎ যে নামায আগে কাযা হয়েছে, তা আগে আদায় করা আবশ্যক, পরেরটা পরে। সেই হিসেবে কাযা নামায আদায় করার আগেই যদি অন্য নামাযের সময় হয়ে যায় তাহলে প্রথমে কাযা আদায় করা আবশ্যক। তারপর বর্তমান আসা নামায আদায় করবে।
আর যদি ৬ ওয়াক্ত থেকে বেশি নামায কাযা হয়ে থাকে। তাহলে তারতীব বা সিরিয়াল রক্ষা করা জরুরী নয়। সুতরাং সে কাযা আদায় না করেই নতুন আসা ওয়াক্তি নামায পড়তে পারবে। ফাতওয়ায়ে-২/৫২৩-৫২৭ ২. ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/১২১ বাদায়েউস সানায়ে’-১/৫৬০-৫৬
فى رد المحتار-الترتيب بين الفروض الخمسة والوتر أداء وقضاء لازم ) يفوت الجواز بفوته
للخبر المشهور من نام عن صلاة……. ( إلا ) استثناء من اللزوم فلا يلزم الترتيب …… ( أو فاتت ست اعتقادية ) لدخولها في حد التكرار المقتضي للحرج ( بخروج وقت السادسة ) على
الأصح ولو متفرقة)رد المحتار-كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة، -2/523-527)
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক যদি স্মরণ থাকে, তাহলে আগে আসরের কাজা নামাজ আগে আদায় করতে হবে, তারপর মাগরিবের জামাআতে শরিক হবে।
উত্তর দিচ্ছেন,